somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিগম্যালিওন ও গ্যালিতিয়াঃ সৃষ্টি ও স্রষ্টার অবিনশ্বর ভালোবাসা

১৬ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পিগম্যালিওন ও গ্যালিতিয়া এর কাহিনীটি গ্রিক মিথে বর্ণিত অসাধারণ এক প্রেম উপাখ্যান। রোমান কবি ওভিড তার অনবদ্য সৃষ্টি “মেটামরফোসিস’ কাব্যে এই কোমল প্রেম কাহিনী বর্ণনা করেছেন সুনিপুনভাবে।

এই প্রেম উপখ্যানটি অন্য যেকোনো প্রেম কাহিনীর থেকেই আলাদা। স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রেমের গভীর সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় এখানে।

সাইপ্রাসের এক তরুন যুবক পিগম্যালিওন। ভাস্কর্য নির্মাণে সে ছিল অদ্বিতীয়। পাথর কেটে অদ্ভুত সুন্দর আর নিখুত সব মূর্তি তৈরিই ছিল তার একমাত্র কাজ। তার তৈরি ভাস্কর্য গুলো যেকোনো দর্শকের চোখেই ফুটিয়ে তুলত মুগ্ধতা। দেখতেও পিগম্যালিওন ছিলেন বেশ সুপুরুষ। তার কর্ম গুনেই হোক,আর রুপের কারনেই হোক , বহু সুন্দরী নারীরই স্বপ্নপুরুষ হয়ে উঠলো পিগম্যালিওন।

কিন্তু পিগম্যালিওন কোন এক কারনে হয়ে উঠলেন চরম নারী বিদ্বেষী। নারীদের সংকীর্ণতা কিংবা চারিত্রিক ত্রুটি এই ভাস্করের চোখে যেন স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে উঠলো ধীরে ধীরে। তিনি বিয়ে না করার সংকল্প করলেন। তিনি আরও গভীরভাবে মনোনিবেশ করলেন তার সৃষ্টিতে। আনন্দ ধরা দিল তার কাছে তারই সৃষ্টিশীলতার মাঝে। তিনি ঠিক করলেন তিনি তৈরি করবেন এমন এক ভাস্কর্য যা ছাড়িয়ে যাবে সব ভুল ত্রুটি,হবে সর্বশ্রেষ্ঠ। ভাস্কর্য হিসেবে তিনি বেছে নিলেন নারী রুপকেই ,এবং সৃষ্টি করতে চাইলেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুত নারীকে ,যা তাকে অন্য সব ত্রুটিপূর্ণ নারী থেকে আলাদা করে। তিনি দেখাতে চাইলেন, বস্তুত নারীদের মাঝে কি কি জিনিসের অভাব।



দীর্ঘদিন ধরে চলল তার সাধনা। সৃষ্টির চিন্তায় বিভোর পিগম্যালিওন এর হাতে গড়ে উঠতে লাগলো সেই নারীমূর্তি যার সাথে তুলনা চলেনা পার্থিব কোন রমণীর। শিল্পীর জাদুর ছোঁয়ায় পরিপূর্ণতা পেতে লাগলো সেই ভাস্কর্য। সমস্ত ত্রুটি ছাড়িয়ে শ্রেষ্ঠত্ব এর পরিপূর্ণতা যখন শুধুমাত্রই সময়ের ব্যাপার ,ঠিক এসময় পিগম্যালিওন প্রেমে পড়লেন তার নিজের সৃষ্টির। যার হৃদয়ে ছিল নারীদের প্রতি তীব্র অনিহা , তার আকাশেই নামলো ভালবাসার বৃষ্টিধারা। তিনি বিশ্বাস করতে চাইলেন না তার সৃষ্টি শুধুমাত্রই এক আইভরি বা পাথরের। ধীরে ধীরে এই নারীমূর্তিই হয়ে উঠলো সব।

পিগম্যালিওন তার সৃষ্টিকে সাজালেন অনেক উজ্জ্বল উজ্জ্বল পোশাক পরিচ্ছদ দিয়ে ,পরালেন দামি দামি সব রত্ন। চাইলেন একটু খানি হাসি , কিন্তু পাথরের মূর্তির মুখে সেই হাসি তো ফোটেনা। তিনি জড়িয়ে ধরতে চাইলেন তাকে আবেগ ভরে , সে তো সাড়া দিলো না। নির্ঘুম রাত কাটে পিগম্যালিওন এর মূর্তিকে নিজের পাশে শুয়ে রেখে দিয়ে ,কই,কেউ তো কথা বলেনা। প্রেমে মত্ত পিগম্যালিওন হয়ে উঠলেন চরম অসুখী। জগতের পার্থিব কোন সুখই তাকে দিতে পারলো না একটু স্বস্তি। ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ার বেদনা তাকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো। প্রাণহীন এই মূর্তির তিনি নাম দিলেন গ্যালিতিয়া। গ্যালিতিয়া শব্দের অর্থ– ঘুমন্ত ভালবাসা।



তার এই প্রেমময় আকুলতা গোপন রইলো না প্রেমের দেবীর কাছেও। আফ্রোদিতি পিগম্যালিওন এর প্রেম দেখে বিস্মিত হলেন। তার মন চাইলো এই যুবককে সাহায্য করার।

আফ্রোদিতির কাছে প্রার্থনা উৎসব ছিল সাইপ্রাসে একটি বিশেষ দিন। বেশ জমকালো ভাবেই পালন করা হয় এই দিনটি। সবরকম সুখী ও অসুখী প্রেমিক ও প্রেমিকারাই আসেন, আফ্রোদিতির সাহায্য লাভ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। পিগম্যালিওন ও সেই উৎসবে যোগ দিলেন। তিনি চলে গেলেন আফ্রোদিতির মন্দির প্রাঙ্গনে। এতদিন ধরে লালন করে আসা বিদ্বেষ এর জন্য তিনি ক্ষমা চাইলেন প্রেমের দেবীর কাছে। হাঁটু মুড়ে বেদীর সামনে বসে তিনি আফ্রোদিতির কাছে জানতে চাইলেন, যে তিনি মূর্তিটির মতো কোন কুমারী তার জীবনে কখনো খুজে পাবেন কিনা।

কিন্তু দেবী জানতেন আসলে পিগম্যালিওন কি চাইছেন। দেবী আরও কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। আসলেই কি সেই হাতে গড়া প্রাণহীন নারী এতো সুন্দর যে সে হারিয়ে দিতে পারে সকল নারীকুল কে? সবার অলক্ষ্যে তিনি ভ্রমন করলেন পিগম্যালিওন এর গৃহে, যেখানে রয়েছে গ্যালিতিয়া।

দেবী আফ্রোদিতি পিগম্যালিওন এর সৃষ্টি দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন। তিনি মঞ্জুর করলেন পিগম্যালিওন এর ভালোবাসা। মন্দিরে বেদীর সামনের আগুনের টুকরোটি প্রজ্বলিত হয়ে উঠলো। পিগম্যালিওন বুঝতে পারলেন, হয়তো সাড়া দিয়েছেন দেবী।
গৃহে ফিরে পিগম্যালিওন হাঁটু মুড়ে বসলো তার গ্যালিতিয়ার সামনে। পরম ভালবাসায় সিক্ত দৃষ্টি দিয়ে চাইলো গ্যালিতিয়ার দিকে, এক মুহূর্তের জন্য মনে হল ,তিনি ভুল দেখছেন, এবং পরবর্তীতে তার কাছে আসলেই মনে হল ,গ্যালিতিয়াও ঠিক তার দিকে চেয়ে আছে হাস্যজ্জল মুখে।

তিনি কাছে টেনে নিতে চাইলেন গ্যালিতিয়াকে। তার বাহুকে আর পাথরের মতো শক্ত মনে হল না এখন। বরং তিনি অনুভব করতে পারছিলেন কোমল বাহুর স্পর্শ। তিনি গ্যালিতিয়ার ঠোটে একে দিলেন , এক দীর্ঘ চুম্বন , এবং অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলেন সেই ঠোটে প্রানের অস্তিত্ব। দেবীর ইচ্ছায় পাথরের মূর্তি পেলো জীবন। পিগম্যালিওন এর ভালোবাসা পেলো পূর্ণতা।



খুব শীঘ্রই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন পিগম্যালিওন এবং গ্যালিতিয়া। তারা ভুলে গেলেন না দেবীর কথা। কৃতজ্ঞতা জানাতে তারা হাজির হলেন দেবীর মন্দিরে ,দেবীর কাছ থেকে পেলেন আশীর্বাদ । তাদের জীবন হয়ে উঠলো অন্তহীন সুখের এবং প্রেমময়। গ্যালিতিয়ার গর্ভে এলো পিগম্যালিওন এর সন্তান, তার নাম রাখা হল প্যাফোস। পরবর্তীতে অবশ্য প্যাফোস এর নামানুসারেই প্যাফোস নগরীর নামকরন করা হয়।



পিগম্যালিওন এবং গ্যালিতিয়া এর এই অবিনশ্বর প্রেম কাহিনী তাই আজও ঘুরে ফিরে ঘুরে লোকমুখে। যুগে যুগের অসংখ্য প্রেমিক প্রেমিকারা স্মরণ করে গেছে এই প্রেমের কথা।



ছবিঃ ইন্টারনেট
তথ্যঃ ইন্টারনেট




Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Galate
http://en.wikipedia.org/wiki/Pygmalion
http://thanasis.com/pygmal
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×