somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগর চন্দন চাষ

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগর ও চন্দন চাষের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই উপযোগী। ইহা দ্বারা পাহাড়ি অঞ্চলের অর্থনীতিতে যোজনা ঘটিতে পারে নূতন মাত্রা। এই অভিমত বিশেষজ্ঞ ও কৃষিবিদদের। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এতদসংক্রান্ত এক রিপোর্টে বলা হয়, আগর ও চন্দনের বাগান সৃজনে পার্বত্যবাসীদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভবপর হইলে এইখানে আগর ও আতর শিল্পের বিকাশ ঘটিবার সমূহ সম্ভাবনা। প্রসঙ্গক্রমে ওই রিপোর্টে উলেস্নখ করা হয় যে, বান্দরবান জেলার আলীকদমে জনৈক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আগর গাছের বাগান গড়িয়া তুলিয়াছেন। মাত্র বছর তিনেকের ব্যবধানে গাছে ফুল আসিয়াছে। তিনি এখন চোলাই পদ্ধতিতে আতর তৈরির প্রস্তুতি লইতেছেন। এই শিক্ষকের বিশ্বাস, এ দ্বারা তিনি যথেষ্ট লাভবান হইবেন।

বলাবাহুল্য, দেশে-বিদেশে এবং সুপ্রাচীন কাল হইতে আগরের কদর রহিয়াছে। আমরা যতদূর জানি আগর শব্দটি আসিয়াছে সংস্কৃত 'অগুরু' হইতে। ইহাকে বাংলায় কৃষ্ণচন্দনও বলা হইয়া থাকে। সুগন্ধীযুক্ত এই কাঠের বহুবিধ ব্যবহার রহিয়াছে। ইহার সুগন্ধী দ্বারা আতর প্রস্তুত হইয়া থাকে। ধূপকাঠি বা আগরবাতির মূল উপাদান পাওয়া যায় এই গাছ হইতে। কথিত আছে যে, ভাস্কো দা গামা এই উপমহাদেশে আসার পর এখান হইতে ইউরোপে মূল্যবান পণ্যের যে চালান গিয়াছিল তাহা আগরের, যদিও ইহার অকাট্য কোনো প্রমাণ নাই। সে যাহা হউক, আগর বা চন্দন বলিয়া কথা নয়, এমন অনেক গাছগাছালি আছে, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে যেসবের চাষ করার সমূহ সুবিধা রহিয়াছে এবং সেইসব গাছের চাষ হইতে অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক দিয়া অধিক লাভবান হইবার সুযোগ রহিয়াছে। সেইসব গাছ বেশী বেশী লাগাইলে শুভ ফলোদয় অসম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত এইখানে উলেস্নখ করা বাঞ্ছনীয় যে, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য পাহাড়ি অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বেশীরভাগই দরিদ্র। তাহাদের আয়-রোজগারের পথ সংকীর্ণ। ইহার পশ্চাতে নানাবিধ কারণ থাকিলেও প্রধান কারণটি এই যে, পার্বত্য অঞ্চলের প্রচলিত অর্থকরি শস্য আবাদের সুযোগ কম। দুই পাহাড়ের মধ্যবতর্ী সমতল ভূমিতে ধান, সরিষা, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য ফসলের আবাদ সম্ভব হইলেও, এইরূপ জমির পরিমাণ খুব বেশী নাই। পাহাড়ের ঢালে জুম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করিয়া কিছু ফসল ফলানো সম্ভবপর হইলেও উহাতে পাহাড়ি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার শ্রীবৃদ্ধি ঘটিবার সুযোগ নাই। বাংলাদেশের দৰিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। ইহার আয়তন 23,184 বর্গ কিলোমিটার। এখানকার পাহাড়সমূহের বেশীরভাগই জঙ্গলাকীর্ণ। সেই জঙ্গলে কিছু কিছু মূল্যবান গাছ থাকিলেও বাঁশ, বেত এবং ছনের মত ঘাস বিচালিরই আধিক্য। এমতাবস্থায় বাঁশ-বেতের ঝুঁড়ি তৈয়ারি, মাদুর বানানো, বেতের রশি তৈয়ারি, কোমর তাতে কাপড় বোনা- এইসব করিয়াই তাহারা জীবিকা নির্বাহ করিয়া থাকে। বোধগম্য কারণেই তাহাদের জীবনমান যতেষ্ট উন্নত নয়।

এই পরিস্থিতিতে পাহাড় জনপদে যেসমসত্দ বৃক্ষাদির চাষ করা সহজ-সম্ভব এবং লাভজনক, সেসব চিহ্নিত করিয়া সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামে আগর-চন্দন ছাড়াও রং-এর গাছের বাগান সৃজন সম্ভবপর। ইহা দ্বারা স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে রঞ্জন শিল্পের বিকাশ ঘটিতে পারে। রাবার চাষের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম যে যথেষ্ট উপযোগী, তাহা ইতিমধ্যে অনেকটাই প্রমাণিত হইয়াছে। সেখানে বহু রাবার বাগান হইয়াছে এবং সেসব লাভজনকও বটে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চা চাষেরও সুযোগ রহিয়াছে। পঞ্চগড়ের ন্যায় এইখানেও ছোট বড় বাগান হইতে পারে। এইভাবে পার্বত্য এলাকায় লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। তথ্যাভিজ্ঞমহলের অনেকেই বলিয়া থাকেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জঙ্গলে এমনিতেই অনেক ভেষজ উদ্ভিদ-গুল্ম জন্মাইয়া থাকে। পরিকল্পিত উপায়ে এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এইসবের বাগানও হইতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভেষজের চাহিদা রহিয়াছে বিশ্ব জুড়িয়া। এশিয়ার অনেক দেশ ভেষজ পণ্য রফতানি করিয়া প্রতিবছর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করিয়া থাকে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এইদিকে আমাদের প্রতিবেশী ভারত ভেষজ দ্রব্যাদি রফতানীর ৰেত্রে অগ্রসর অবস্থানে রহিয়াছে। আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলের জনগণকে ভেষজ উদ্ভিদ-গুল্মাদির চাষ এবং উহার বাণিজ্যিকীকরণের ব্যাপারে সচেতন করিয়া তোলা গেলে সুফল যে পাওয়া যাইবে, তাহাতে সন্দেহ কী! এই ব্যাপারে কৃষিবিভাগ ও বনবিভাগসহ সংশিস্নষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী ভূমিকা লইয়া আগাইয়া আসা উচিত।

ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ 05.11.2006 ঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×