somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সমস্যায় পড়ে গেছি জানেন তো। যেদিনই লিখব ঠিক করি, সকাল থেকে অনেক কিছু ভেবে রাখি , কিন্ত ঠিক`লেখার আগেই ব্যাস, পুরো ঘেঁটে ঘ। তাই আজ ভেবেছি যে আর ঘাঁটাঘাঁটি করব না , বরং চলুন , হ য ব র ল যা মাথায় আসছে লিখতে শুরু করি , একসময় ঠিক শেষ ও হয়ে যাবে, তবে তা আপনারা পড়বেন কিনা তা অবশ্য জানি না।

সেদিন রাস্তায় একজনের সাথে পরিচয় হল। আমি বরাবরের মতই কলকাতায় আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ধর্মতলায় ঘোরাঘুরি করছিলাম। হঠাৎই তাঁকে দেখতে পেলাম। মজার ব্যাপার , এতদিন ধর্মতলা আসছি , অথচ তাঁকে কোনোদিন দেখিনি। মাথার চুল গুলো ধবধবে সাদা , মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি, পড়নে ময়লা ফতুয়া ও পাজামা। ভদ্রলোক মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করছিলেন। কিন্ত ধারে কাছে কোনো customer কেও দেখতে পেলাম না , তাঁকেও খুব একটা উদ্যোগ নিয়ে নিজের বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করতে দেখলাম না, চুপচাপ বসে ছিলেন পার্কিং করে রাখা গাড়ি গুলোর সামনে। বেশ কৌতূহল হল , আর জানেন ই তো কৌতূহল বড় বিষম বস্তূ। তাই একটু ইতস্তত করে চলেই গেলাম তাঁর কাছে।

গিয়ে যখন পাশে গিয়ে বসলাম , তখন বুঝলাম ভদ্রলোকের পোশাক খুব একটা সাধারণ নয় , বরং বলা ভাল এরকম বিচিত্র design আমি অন্তত কোনোদিন দেখিনি। যেচেই যখন পরিচয় দিলাম , নিজের কৌতুহলের কথাও বললাম , তখনই তাঁর চোখের ঝিলিক টা নজরে পড়ল। আস্তে আস্তে তিঁনি যে কাহিনী টা শোনালেন , তা বোধহয় আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি।

পুরো নাম আশিষ গাইকোড়ে। ১৯৫২ সালে তৎকালীন বোম্বে তে জন্ম। বাবা ছিলেন সদ্য স্বাধীন ভারতবর্ষের সেনাবাহিনীর কর্ণেল , আর মা ছিলেন নার্স। ছোটো থেকেই পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না , বেড়ানোর নেশা টানতো তাঁকে। ইচ্ছা গোটা পৃথিবী ঘোরার , কিন্ত সুযোগ ছিল না বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে। ম্যাট্রিক পাশ করে Geography নিয়ে পড়া শুরু করলেন , যদিও পড়া তেমন হত না , শুধুই পড়তেন বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে , সংগ্রহ করতেন ভ্রমণ কাহিনী। এই কলেজেই পেলেন জীবনের সবথেকে বড় উপহার , Professor Saiyad Anwar Ali এসে যোগ দিলেন তাঁদের কলেজে। প্রথম থেকেই তাঁর পড়ানো বেশ আকর্ষনীয় লাগত আশীষের , তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা খুব নজর কাড়তো। তাই নিজেই একদিন Teachers Room এ গিয়ে সাহস করে তাঁর কৌতুহলের কথা বললেন। সেই শুনে Sir স্মিত হেসে সেদিন রাতেই তাঁকে আমন্ত্রণ জানালেন নিজের বাড়িতে। স্বাভাবিক ভাবেই আহ্লাদে আটখানা হয়ে আশীষ ছুটে চললেন তাঁর বাড়িতে। গিয়ে তো তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। ওটা বাড়ি নয় , বরং সংগ্রহশালা বলা যেতে পারে। গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন souvenir যেমন আছে , তেমনই আছে অসংখ্য ছবি। জানতে পারলেন যে তাঁর প্রিয় Professor এর ও শখ ঘুরে বেড়ানো , সমগ্র পৃথিবী -ই প্রায় ঘোরা তাঁর , যা যা বাকি আছে তা বাকি দশ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারবেন আশা করা যায়। Sir এর বাড়িতে সেদিন রাতে যে নেশা আশীষের লেগেছিল , তা আর তিনি কাটাতে পারেননি। পড়াশোনা শেষ করে স্থানীয় কলেজে পড়ানো শুরু করেন। ভালোই চলছিল, প্রতি তিন-চার মাস অন্তর বেড়িয়ে পড়তেন নতুন নতুন জায়গার খোঁজে, তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত একদিন সেই কলেজ থেকে তাঁকে transfer করে দেওয়া হল অন্যত্র, যেখানে আগের মত বারবার ছুটি নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্ত নেশা তো নেশাই নাকি , আশীষ বাবু করলেন কী , চাকরী টি ছেড়ে দিলেন। ততদিনে তাঁর বাবা-মা ও গত হয়েছেন , শুরু হল এক নতুন সংগ্রাম। শুরু করলেন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ। প্রতিটি দেশে যেতেন , কাজ নিতেন , ততদিন কাজ করতেন যতদিন না পরবর্তী দেশে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সম্বল যোগাড় হয়, আর একবার যোগাড় হয়ে গেলেই আবার বেরিয়ে পড়তেন পরবর্তী লক্ষে। এভাবেই একে একে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। যেমন দেখেছেন North Pole এর আকাশের রঙের খেলা , তেমনই দেখেছেন Greenland এর উদিত সূর্য। পেটের টানে Iceland এর সমুদ্রে মাছ ধরেছেন, মিশরে সেজেছেন ফেরিওয়ালা। স্পেনে কাজ করেছেন রেস্তোরাঁয় , আবার France এ ছিলেন Gatekeeper। Kenya-এর সিংহ যেমন দেখেছেন , তেমনই সাহারা মরুভূমি তে "জাহাজ" চড়েছেন। Indonesia -এর প্রত্যন্ত গ্রামের উপজাতিদের সাথে রাত কাটিয়েছেন , Africa -এর অরণ্যে শিকার দেখেছেন। এত দেশ ঘুরে কোথাও যেমন পেয়েছেন মধুর আতিথেয়তা , আবার কখনও দুর্বৃত্ত রা কেড়ে নিয়েছে সমস্ত কিছু। কিন্ত এত কিছুর পরেও পেয়েছেন এক বিশাল আনন্দ , যা তাঁর পরবর্তী অভিযানের সঙ্গী। এরপরে তাঁর গন্তব্য দক্ষিণ আমেরিকা। আমাজনের জঙ্গল, চিলির পাহাড়, প্যারাগুয়ের কফি সবই চাক্ষুস করতে চান তিনি। এরকম ঘুরতে ঘুরতেই শিখে নিয়েছেন স্প্যানিশ , ফ্রেঞ্চ , জার্মান সহ মোট দশটি ভাষা। এমনকি গত দুমাস যাবৎ কলকাতায় থাকার কারণে ভাঙা ভাঙা বাংলাও বলতে পারছেন। আর শুধু এক মাস , তারপর ই চলে যাবেন চেন্নাই। ওখানে কাটাবেন আরো তিনমাস, তারপর দিল্লীতে আরো তিনমাস কাটিয়ে বেরিয়ে পড়বেন তাঁর অজানা সফরে।

আশীষ বাবু বলা শেষ করার পর ও কিছুক্ষণ বসে ছিলাম চুপচাপ। বলাই বাহুল্য পরবর্তী একমাসে আরও বারচারেক দেখা করেছি তাঁর সাথে, একসাথে Victoria Memorial ও ঘুরেছি , শুনেছি আরও অনেক অজানা গল্প, যেগুলোর সবই দাগ কেটে গেছে আমার মনে। তাঁর সহচর্য আমার নিজের পরিব্রাজনার ইচ্ছাতেও যে ইন্ধন জুগিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি যে আমায় এক বিরাট অনুপ্রেরণা দিয়ে গেলেন , যে অনুপ্রেরণা আমার আগামী জীবনে চলার পথে আমার সঙ্গী হয়ে উঠবে।

ইস , জীবনে যদি আরও কয়েকজন আশীষ বাবু কে পেতাম, তাহলে হয়ত জীবনটাই অন্যরকম হত। তবে এটাও ঠিক, আশীষ বাবুর মত মানুষ পৃথিবীতে হাতে গোনা, যিনি নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্যে রাস্তার ফেরিওয়ালা হতেও পিছপা হননা।

সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×