রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে নিজেদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছে। সাংবাদিকরাও নিজেদের মতো করে মতামত প্রকাশ করছে। এ বিষয়ে আমি মোটেই অভিজ্ঞ না হওয়ার পরও আমার নিজের ধারণা থেকে যেটা মনে হচ্ছে-
ইউক্রেনের এই পরিণতির জন্য তাদের রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাই দায়ী। এই সামান্য হিসাবটুকু যদি না থাকে তাহলে তার পরিনতি এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে এতোটুকু যদি না বুঝে থাকে তাহলে রাষ্ট্রপরিচালনা করবে কিভাবে? ইউরোপ কখনো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সরাসরি তাদের কোন সদস্য রাষ্ট্রের উপর আঘাত আসে। ইউরোপের প্রধান গ্যাস যোগানদাতা রাশিয়া। ইউরোপের সবচেয়ে বড় দুই দেশের মধ্যে জার্মানির ৫০% ও ফ্রান্সের প্রায় ২০% গ্যাসের যোগানদাতা রাশিয়া। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে চেক রিপাবলিকসহ কোনো কোনো দেশের ১০০% আবার কোনো কোনো দেশের অধিকাংশ গ্যাসের যোগান দেয় রাশিয়া। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বড় রকমের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা রয়েছে রাশিয়ার সাথে। এই সম্পর্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন গায়ে পড়ে কখনো নষ্ট করতে চাইবে না।
আমেরিকা কখনোই রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না। শুধু রাশিয়া নয় কোন পরাশক্তিই কখনো সরাসরি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ জড়াবে না এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে শীতল যুদ্ধ হয়তো রয়েছে। সেটা কখনো কখনো বাক যুদ্ধে পরিণত হয়। ঠিক ওই পর্যন্ত গিয়েই তাদের যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। তবে মাঝেমধ্যে দেখা যায় আমেরিকা যখন কোন দেশকে আক্রমণ করে (যেমনঃ আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি) তখন রাশিয়া অন্যপক্ষের হয়ে কথা বলে মূলত নিজেদের অস্ত্র বিক্রির জন্য এবং ঠিকই অন্য পক্ষের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে। আর এসব যুদ্ধ-বিগ্রহ মূলত পরাশক্তিদের ব্যবসা। একপক্ষ আক্রমণ করে ওই দেশের ধন-সম্পদ, তেল বা খনিজ সম্পদ লুটেপুটে নেওয়ার জন্য। আর অন্য পক্ষ বিরোধিতা করে মূলত নিজেদের অস্ত্র বিক্রির জন্য। এখানে দুই পক্ষেরই লাভ রয়েছে। বাস্তবে রাশিয়া এবং আমেরিকা সরাসরি কখনোই যুদ্ধে লিপ্ত হবে না। কারণ সেখানে কোনো লাভ নেই বরং মারাত্মক ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে উভয় পক্ষেরই।
রাজনীতিতে শত্রুর শত্রু মানেই হলো আমার মিত্র। যেমন ভারতের শত্রু পাকিস্তান আবার ভারতের শত্রু চীন। এ কারণে চীন এবং পাকিস্তানের মধ্যে যতই নীতিগত পার্থক্য থাকুক না কেন তারা দুটো মিত্র। কারণ দুজনেরই শত্রু ভারত। মূলত শত্রুকে কোণঠাসা করার জন্যই কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে পরাশক্তিরা ব্যবহার করে থাকে। এখানে ইউক্রেন ঠিক একইভাবে আমেরিকার দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। আমেরিকা কখনোই রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করবে না। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। সুতরাং এখানে ন্যাটোও সৈন্য পাঠাবে না। তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য নয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার সাথে বেশি। মুখে যত বিরোধিতাই করুক না কেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে সেই সম্পর্ক নষ্ট করবে না। তাই তারা শুধুমাত্র মৌখিক বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আর আমেরিকার জন্য এটাতো স্বাভাবিক ব্যাপার রাশিয়ার বিরুদ্ধে মৌখিক বিবৃতি দেওয়া। একেতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ দ্বিতীয়তঃ ইউক্রেনের তেমন কোনো পেট্রোল বা স্বর্ণ বা হীরার মতো কোনো দামি খনিজ সম্পদও নেই। আমেরিকা কিজন্য ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে? এই সামান্য বুদ্ধি না থাকার কারণে হয়তো ইউক্রেনের আংশিক বা পুরোটাই রাশিয়ার পেটে চলে যাবে।
অবশ্য তাদের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতিগত তেমন কোন পার্থক্য নেই। যে কারণে সাময়িক বিরোধিতা থাকলেও একটা সময় জনগণ স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৫