somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নাস্তিকতার শুরু ও বিবর্তন

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় একজন ব্লগার নাস্তিকের ধর্মকথার আহ্বানে সাড়া দিয়া এই পুস্ট লেখলাম ।

নিজের কিছু ব্যক্তিগত কপচানি আসতে পারে সেইজন্য আগে থাইকা পাঠকদের ক্ষমা চাইয়া নিচ্ছি । তারপরও সেইগুলা দেয়ার কারণ হৈল তাইলে ঘটনার পরম্পরাটা ভালোভাবে বুঝা যাইতে পারে সেইগুলা থাইকা ।

আমার পরিবার তেমন ধার্মিক না । আম্মাজান ধর্মে আছেন কিন্তু মুল্লাগিরীতে নাই । নামায-রোযার জন্য তাগাদা দিলেও খুবই কম, কালেভদ্রে তাও আব্বাজানেরটা রিলে কৈরা । নিজে থাইকা না ।

আব্বা ব্যাপক ধার্মিক । দিনদিন আরও বাড়তাছে । ছুডকাল থাইকা দেখতাছি পাঁচ ওয়াক্ত পিলাস টুকটাক নফল নামায(এশরাক, আওয়াবিন) আর সক্কালে কুরান-পাঠ নিয়মিত আছে তার । তয় পুলাপানরে মাদরাছায় পাঠাইয়া দেয়ার লেভেলের না ।

ধর্ম শিক্ষা পরিবার থাইকাই শুরু আমরার সব-ভাইবইনের । তাও ছুডকালে যেই কমন আইলসামি সেইটা কাটাইয়া যায় নাই । নামায পড়তাম তয় সব ওয়াক্ত না । আবার সবদিনও না । রোযায় বাড়ে রোযার পরে কমে এই টাইপের ।

আমাগো আত্নীয়গো মাঝে আবার মুল্লা পাব্লিক বেশি । দুয়েকটা পরিবার আছে পুরাটাই মাদরাছা যাওইন্যা টাইপের তাবলিগী । তাগো সংস্পর্শে থাইকা ধর্ম , মূলত ইসলাম সংক্রান্ত জানাশোনা এম্নিতেই মোটামুটি যদ্দুর হয় তার চাইতে কিঞ্চিৎ বেশি ছিল । যদ্দুর মনে পড়ে কিলাশ সেভেনে পড়ার সময় ধর্ম নিয়া সিরিয়াসলি চিন্তা শুরু করি । তারপর একদিন থাইকা নিয়মিত নামায পড়া , রোযা রাখা , কোরান-পাঠ সবই শুরু করি । তাবলিগে কখনো না গেলেও এলাকার মসজিদে যেই তালিমের আসর বা গাশত হৈত সেইগুলাতে অংশ নিতাম মোটামুটি নিয়মিত । উল্টাপাল্টা বই পড়তাম না । শামসুর রহমান, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ , কবির চৌধরিরে ঘৃণা করতাম । অথচ শেষের দুইজনের কুনো লেখা আইজ পর্যন্ত পড়া হয় নাই আমার । বড় মুল্লা কাজিন যারা ছিলো তাগো থাইকা শুইনা শুইনা রিলে করা ঘৃণা ।

তিন গোয়েন্দা বা সেবা রোমান্টিক এর বাইরে প্রথম উল্টাপাল্টা বই পড়ি আমি কিলাশ টেনে থাকার সময় । তসলিমা নাসরিনের নির্বাচিত কলাম । কিছু কিছু কথা তখন মনে ধরছিল, তয় বেশির-ভাগ কথাই মনে হৈল উল্টাপাল্টা । নারীর পর্দা কত গুরুত্বপূর্ণ অথচ হারামজাদি কয় কি এইগুলা , এইধরণের আছিল পরথম প্রতিক্রিয়া । তারপর অনেকদিন সেইভাবেই পইড়া ছিলাম । ধর্মকর্মে একটু আইলসামি চৈলা আইছিল কিন্তু বিশ্বাস ছিল অটল । আইলসামিটা আসলে প্রথম যৌবনের নিঃসঙতা থাইকা মূলত । ধর্মবিশ্বাসের ঘাটতি বা ক্রিটিকাল থিংকিং থাইকা না ।

কলেজে ভর্তি হওয়ার পর শুরু হৈল মূল সমস্যা । উল্টাপাল্টা বই গোগ্রাসে গিলা শুরু করলাম । কারণ বোধহয় প্রচুর খালি সময় হাতে পাওয়া । ইশকুলের বন্ধুবান্ধব সব লুকাল কলেজে পড়ে , নতরদামে আমি একা । ইশকুলে দিনের ছয়-সাত ঘন্টাই কাটত বন্ধু-বান্ধবগো লগে বিটলামি কৈরা, টাংকি মাইরা । এখন ঐ সময়ের পুরাটাই অবসর ।

আমার চিন্তাজগতে প্রথম ড্রামাটিক পরিবর্তন আসে একটা বই থাইকাই । হুমায়ুন আজাদের 'নারী' । এইচএসসির জন্য পড়ালেখা সব শেষ হৈয়া গেছিল টেস্টের প্রস্তুতি নিতে গিয়াই । টেস্টের পরে দেখি আরো ছয়মাস সময় প্রায় কিছুই নাই করার । প্রথম দুইমাস খালি উল্টাপাল্টা বই পড়ছি । নারী বইটা তৃতীয়বার পইড়া শেষ করনের পর মনে হৈল ব্যাটার কথায়তো যুক্তি আছে । ইসলামের বিশ্বাসে প্রথম চিড় আমার এই নারী ইস্যু নিয়াই । শুধু ইসলাম কেন যেকোন ধর্মেই নারীর অবস্থানটা এমন জায়গায় ঠিক করা , যেইটা কোনোভাবেই একজন সকলের সৃষ্টিকর্তার ধারণার সাথে খাপ খায় না । বরং মানুষই ধর্মগুলা বানাইছে এইটা ধৈরা আগাইলেই ব্যাপারগুলা একটা ফরম্যাটে পড়ে । নারীবাদ নিয়া এরপরে আমার ধারণা অনেক বিবর্তিত হৈছে । নারীর অধিকার কিভাবে কে কখন ফিরাইয়া দিব এইগুলা তখনকার ধারণার সাথে এখন অনেক পার্থক্য আছে , কিন্তু এইটা এখনো বদলায় নাই যে ধর্মের কাঠামোর ভিতরে সেইটা অসম্ভব । এবং ইসলাম মূলত নারীকে সম্মানিত যৌনদাসি বানাইয়া রাখার একটা সিস্টেম ছাড়া আর কিছু না ।

এইসময়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়াও একটু ঘাঁটাঘাটি শুরু করি । ক্লু সম্ভবত এইরকমই কোনো উল্টাপাল্টা বইয়ে এই ঘটনার উল্লেখ থাইকাই । আমাগো বায়োলজি বই থাইকা ঐ চ্যাপ্টারটা সরাইয়া নেয়া হৈছিল আমাগো বছর থাইকাই । পুরান কিছু বায়োলজির বই, কিছু আংরেজি পুস্তক থাইকা , ডারউইনের মতবাদ নিয়া টুকটাক ধারণা পাই । মজার ব্যাপার হৈল ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়া এখনো আমার সুনির্দিষ্ট নিশ্চিতি নাই । তার বড় কারণ হৈল, এই ফিল্ডে আমার জানাশোনাই নাই তেমন । কিন্তু যেই দিকটা আমার ধর্মবিশ্বাসরে কচুকাটা করছে সেইটা হৈল, আমাগো অস্তিত্বের ব্যাপারে একটা থিওরি দাঁড় করাইতে হৈলে হাতে যেইসব উপাত্ত আছে সেইসব নিয়াই শুরু করতে হৈব । ডারউইনের থিওরি একটু বেশি ফার-ফেচড মনে হৈছে তখন কিন্তু আমাগো হাতে যদ্দুর নিশ্চিত জ্ঞান আছে সেইটুক থাইকা এর চে ভালো আর কোনো ব্যাখ্যা নাই । একটা স্রষ্টারে দিয়া একটা হাইপোথেসিস দাঁড় করানো যায় । সেইটা দেখতে সুন্দর এবং আশা-জাগানিয়া হয় সেইটাও ঠিকাছে । কিন্তু প্রমাণ, তথ্য, উপাত্ত শূণ্য যেইখানে সেইখানে খালি সৌন্দর্যের গুণেতো কুনো থিওরি পার পায় না ।

এইসময়ে আরেকটা ব্যাপার মাথার মইধ্যে চুলকাইতে থাকে আমার, আরজ আলীর নাম শুনারও আগে থাইকা । সেইটা হৈল, দুইন্যাইডা কত বড়, কত রকমের মানুষ, কত রকমের সভ্যতা, কিন্তু নবী-রাসুল সব খালি আরবের কথাই শুনা যায় । চীনের সভ্যতা নাকি লাখ-বছরের পুরান কিন্তু সেইখানের একটা নবীর কথাওতো শুনা যায় না । সেইখানে এখনো কোটি কোটি মানুষ আছে যারা ইস্লাম বৈলা কুনো ধর্মের কথাই শুনে নাই পুরা জীবনে । তাইলে তাগোরে কিয়ের ভিত্তিতে বিচার করা । তাগোর যদি বিচার না হয়, এবং বেশত-দুযখ কিছুই না পায় বা দুযখে যায় তাইলে তাগো উপর ফেয়ার প্লে হয় না । আবার তারা যদি বেশতে যায়, তাইলে তুই হারামজাদা আমারে ইস্লামের কথা শুনাইলি ক্যান, আমি অগো মত থাকলেই তো ভালো হৈত । হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বেশতে যাইতে পারতাম । দুইটা সম্ভাব্য সমাধানের কুনোটাই গ্রহণযোগ্য না । তাইকে সবচে সহজে অনুমানযোগ্য তৃতীয় সমাধানটাই হয়ত সঠিক । সেইটা হৈল আরব অঞ্চলের কিছু প্রচলিত রুপকথারে কাটপেস্ট কইরা মোহাম্মদ একটা গল্প ফাঁদছে । তাইলে সবকিছু এখন ব্যখ্যাযোগ্য হয় ।

উপরের তিনটা হৈল আমার মূল কারণ ইসলামে বিশ্বাস থাইকা সইরা আসনের । মুসলিম থাকনের সময় অন্য-ধর্মগুলার বিপক্ষে যেইসব যুক্তি শুইনা আসছি সেইগুলা ঐভাবেই রাখলে তাইলে সবগুলা ধর্মই বাতিল হৈয়া যায় ।

তারপরে ইনতারনেত দুনিয়ায় ঢুকার পর পড়াশোনা করছি ম্যালা । হাদিস-কোরান-সিরাত-তাফসির-ইস্লামি ইতিহাস । সবগুলা থাইকা এই ধারণাই হৈল, মোহাম্মদ নিজের খ্যাতির তীব্র মোহ এবং মানসিক অসুস্থতা থাইকা কোরান নামক জিনিসটা নিজে পয়দা করছে বা এইজাতীয় হাবিজাবি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৬
৫৬টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×