somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্ডারস্ট্যান্ডিং মোহাম্মদ -৪ (মূল : আলি সিনা , অনুবাদ : দুরের পাখি)

২৯ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব -৩ এখানে (Click This Link)

পর্ব-৪
সূচনা
***
৯/১১ আক্রমণের পর এক পাগলপ্রায় আমেরিকার মা আমাকে তার দুঃখের কাহিনী বলছিলেন, যে তার ২৩ বছর বয়সী ছেলে ১৪ বছর বয়সের সময় ইসলামে দীক্ষা নিয়েছে । বিয়ে করেছে এক অদেখা মুসলিম মেয়েকে , তার ঈমামের আয়োজনে । এখন এই এক বাচ্চার বাবা বলছে আফগানিস্থানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে শহিদ হতে চায় । বছর কয়েক আগে সে বলেছিলো ইসলামি হুকুমত কায়েম হয়ে গেলে যদি সব কাফেরদের হত্যার নির্দেশ আসে তাহলে সে নিজের মা’কে খুন করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না
***
শিক্ষিত বুদ্ধিদীপ্ত ২৫ বছর বয়েসি, পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত সাইমা নাযির ছুরিকাঘাতে খুন হন নিজ পরিবারের লোকদের দ্বারা । পিত্রালয়ে নিজের ৩০ বছর বয়েসি ভাই আর ১৭ বছর বয়েসি কাজিন তার গলায় ছুরি চালায় । অনেকের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে নিজের পছন্দমত এক নিচু বংশের আফগানকে ভালোবেসে পরিবারের সম্মানে কালিমা দেয়া ছিলো তার অপরাধ(!) । ২০০৫ এর এপ্রিলে বাড়িতে(পাকিস্তানে) ডেকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা মিলেই এই কাজ ঘটায় । এক প্রতিবেশি তাকে পালানোর চেষ্টা করতে দেখেন, কিন্তু চুলের মুঠি ধরে ঘরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় তার নিজ পিতা । “তুমি আর আমার মা নও” এই চিৎকার শুনে সেই প্রতিবেশি ধারণা করেন যে এই কুকর্মে মেয়েটির মা’ও জড়িত ছিলো । তার ২ এবং ৪ বছর বয়েসি ভাতিজিদেরও এই ঘটনা দেখতে বাধ্য করা হয় । বাচ্চাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ দেখে ধারণা করা যায় তাদের মাত্র কয়েকফুট দূরত্বের মধেই ঘটে এই বর্বর হত্যাকান্ড । এই পরিবার ছিলো স্বচ্ছল এবং উচ্চশিক্ষিত ।

***
মোহাম্মদ আলি আল আয়াদ নামে ২৩ বছর বয়স্ক এক ছৌদি কোটিপতির আমেরিকা নিবাসী ছেলে ২০০৩ এর অগাস্টের এক সন্ধ্যায় তার মরক্কান ইহুদি বন্ধু সেলুক কে দেখা করার জন্য ডেকে আনে । দুজনে বারে মদ খেয়ে মধ্যরাতে আলি আল আয়াদের এপার্টমেন্টে ফিরে আসে । সেখানে আলি আয়াদ ছুরি নিয়ে আক্রমণ করে তার ইহুদি বন্ধুকে এবং ধড় থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তার মাথা । পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে আলি আয়াদের রুমমেট বর্ণনা করে হত্যার আগে দুজনের মধ্যে কোন তর্ক বিতর্ক হয়নি । আয়াদের আইনজীবি এই ঠান্ডা মাথার খুনের কারণ হিসাবে বলেন, “ধর্মীয় মতপার্থক্য”
***
ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে পাশ করা ২৫ বছর বয়েসি মোহাম্মদ তাহেরি আযার । ২০০৬ এর মার্চে এক দিনে সে একটি এস ইউ ভি ভাড়া করে ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে ঢুকে । তারপর আচমকা গতি বাড়িয়ে গাড়িটিকে নিয়ে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে । উদ্দেশ্য যত বেশি পারা যায় খুন করা। থামার আগে সে নয়জনকে আঘাত করে যার মধ্যে ছয়জন আহত হয় ।
***
করাচি নিবাসী হিন্দু দম্পতি সানাও মেনঘোয়ার এবং তার স্ত্রী একদিন সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে দেখেন তার তিন মেয়ে বাড়িতে নেই । ২০০৫ এর নভেম্বরের ঘটনা । দুইদিন পাগলের মত খোঁজার পরে তারা জানতে পারেন তাদের তিন কন্যাকে অপহরণের পর জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে । পুলিশ তিন মুসলিম তরুণকে অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় । মেনঘোয়ার দম্পতির মেয়েরা এখনো নিখোজ ।

করাচির এক হিন্দু বাসিন্দা লালজি বলেন, “ হিন্দু মেয়েদের এই ধরণের অপহরণ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে । অপহরণের পর তারা ইসলামে দীক্ষা নিয়েছে এই মর্মে স্ট্যাম্প কাগজে জোরপূর্বক সই নেয়া হয় তাদের কাছ থেকে । ” তিনি আরো বলেন হিন্দুরা এমনকি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও ভয় পায়, নির্যাতনের ভয় ।

পাকিস্তানের অনেক হিন্দু মেয়ের ভাগ্যেই এইসব জোটে । অপহরণের পর জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তর এবং তার পর কোন মুসলিম পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হয় এদের । বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে দেয়া হয় না আর । “ মুসলিম আওরাত কেন কাফিরদের সাথে থাকবে বা যোগাযোগ রাখবে ?” প্রশ্ন মৌলভি আযিযের । এই ধরণের আরেকটি ঘটনায় আদালতে অপহরণকারীর পক্ষে বলতে গিয়ে এই প্রশ্ন রাখেন মৌলভি ।

কোন হিন্দু মেয়ের ধর্মান্তরের খবরে শত শত লোক ধর্মীয় শ্লোগান দিতে রাস্তায় নেমে আসে । কতৃপক্ষের বধির কানে বাবা মায়ের কান্নার শব্দ যায় না । এইসব অভাগীদের এরপর হুমকির উপর রাখা হয় যে ইসলাম ত্যাগ করলে তাদের মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড ভোগ করতে হবে । প্রায়ি আইনজীবিরা মৌলবাদীদের হামলার ভয়ে এই ধরণের মামলা লড়তে চান না ।
***
২০০৫ এর অক্টোবরে তিন খ্রিস্টান মেয়ে কোকোয়া ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ইসলামি মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয় । এরা ছিলো একটি খ্রিস্টান প্রাইভেট স্কুলের ছাত্রী । মুসলিমদের এক দল এদের আক্রমণ এবং শিরোচ্ছেদ করে । পুলিশ তাদের ধড় এবং মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় খুঁজে পায়। একটি মাথা রেখে আসা হয়েছিলো চার্চের আঙিনায়। মুসলিম মৌলবাদীদের লক্ষ্য সুলাওয়াসি প্রদেশ । তাদের ধারণা সেখান থেকে শুরু করেই তারা পুরো ইন্দোনেশিয়াব্যাপী ইসলামি হুকুমত কায়েম করতে পারবে । ২০০১ এবং ২০০২ সালে এ প্রদেশে মুসলিম মৌলবাদীরা একযোগে খ্রিস্টানদের উপর হামলা চালায় । গোটা ইন্দোনেশিয়া থেকে মুসলিমরা জড়ো হয় এই উদ্দেশ্য । দুবছরে তারা হত্যা করে প্রায় ১০০০ খ্রিস্টানকে ।

***
Muriel Degauque ৩৮ বছর বয়েসি বেলজিয়ান নারী । ছোটকাল থেকে তাকে চিনতেন এমন এক প্রতিবেশির বর্ণনায় খুব সাধারণ মেয়ে । শীতে তুষার পড়া শুরু হলে স্লেজ চড়তে যেতো । এই নারী এক মুসলিমকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয় । পরবর্তীতে সে তার স্বামীর সাথে সিরিয়া হয়ে ইরাকে চলে যায় । সেখানে গায়ে বোমা বেঁধে ইরাকি পুলিশের প্যাট্রোল বহরের উপর আত্নঘাতী হামলা চালায় সে । হামলায় ৫ জন পুলিশ তৎক্ষণাৎ নিহত হন । গুরুতর আহত হন আরো একজন পুলিশ অফিসার এবং চারজন সাধারণ পথচারী ।

*****
এই হামলাগুলো সবই অস্বাভাবিক পাগলামি । কিন্তু যারা ঘটিয়েছে এইসব তাদের কেউই পাগল ছিলো না । এরা সবাই “পুরোপুরি স্বাভাবিক” মানুষই ছিলো । এইসব ঘৃনিত কাজে কিসে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলো ? উত্তর হলো ইসলাম । ইসলামি বিশ্বে এইসব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা । মুসলিমরা সর্বত্রই কে কি বিশ্বাস করলো এই নিয়ে খুন খারাবিতে ব্যস্ত ।

কেন ? কেন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানূষ এমন পৈশাচিক কাজ করে ? কেন জাতি হিসাবে মুসলিমরা অন্যদের উপর এতই চ্যাতা আর গোটা দুনিয়ার সাথে এতই শত্রুমনস্কতা পোষণ করে যে খুব সহজেই এরা সহিংসতার পথ বেছে নেয় ? মোহাম্মদকে নিয়ে সামান্য কোন কথা বললেই দুনিয়ার মুসলিমরা সর্বত্র দাঙা হাঙামা আর সাধারণ মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞে নেমে যায় । এইসব কোন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না । কিন্তু এই কাজগুলো যারা করছে তারা সবাই সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ । এই রহস্যের সমাধান কি ?
১৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×