আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি আমার আম্মু বারবারই বলছে কথাটা ৷
আমাকে তার ঠিক কোন এঙ্গেল থেকে পাগল মনে হচ্ছে আমি জানিনা অবস্থা এমনই বেগতিক যে আম্মু আমাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে চাচ্ছেন ৷ তিনি কখন আবিষ্কার করলেন আমি পাগল সেটা বলি,
ঘটনা এক
সেদিন রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো ডিম লাইট জ্বালানো জোস্না রাত ৷ জানালার সাথেই বিছানা দক্ষিণ দিকে জানালা ৷ জানালার দিক পা দিয়ে শুই আমি আর আম্মু ৷ বাবা চাকরী করেন অন্য জেলায় সপ্তাহে একবার আসেন ৷ তো ঘুম ভাঙ্গার পর আর ঘুম আসছিলোনা বলে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ঠিক তখনই একটা ছায়ামূর্তি জানালার সামনে দাড়ালো আমি প্রচন্ড রকমের ভয় পেলাম ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম তখন বুঝলাম ছায়ামূর্তি আমার ওপর আলো ফেলছে একটু পর আলো সরে গেলো আমি ভয়ে ভয়ে এক চোখ খুলে দেখি সে আসলে ছায়ামূর্তি ফুর্তি কিছুই না লম্বা লাঠি নিয়ে আম্মুর ব্যাগ নেবার চেষ্টা করছে ৷ মেজাজটা খুবই খারাপ হলো চোর পুরো ভুতের ভয় পাইয়ে দিলো? দাড়া ব্যাটা করাচ্ছি চুরি ৷ আমি লাফ দিয়ে জানলা বরাবর তার মুখের সামনে গিয়ে মুহাহাহাহাহাহাহা আজ তুই শ্যাস বলে চিৎকার দিলাম চোর ওরে মা গো বলে দিলো এক দৌড় আমি আর হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলামনা ইতিমধ্যে মা তো জেগে গেছেই পাশের বাসার সবাই ও জেগে গেছে সবাই যখন আমাকে জিগেস করতে ব্যাস্ত প্রিয়তা কি হয়েছে? আমি তখন হাসির জোড়ে কিছুই বলতে পারছিনা শুধু বলছি আমি ঘুমিয়ে হাহাহাহাহাহাহাহা আমি উঠে হাহাহাহাহাহাহা এপর্যন্তই ৷ হাসতে হাসতে দম আটকে যাবার জেগাড় ৷
পরে সবাই চোরের কথা বিশ্বাষ করলেও আম্মু বললো আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি কারনে অকারণে হাহাহিহি করি ৷ হাসা যে পাগলের লক্ষণ তা আমি জানতাম না ৷ অবশ্য আম্মু আরো ব্যাখ্যা দিয়েছেন যেমন সেদিন আম্মু বললো এতো চা খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু বানাতে ইচ্ছে করেনা কথাটা শুনে গোসলে ঢুকলাম ট্যাপ ছেড়ে পানিতে হাত দিতেই মনে হলো হাতটা পুড়ে যাবে এতো গরম ৷ তখনই দৌড়ে ছাদে গেলাম আবার দৌড়ে নেমে এসে আম্মু কে বললাম আম্মু একটা ছাকনি আর কাপ নিয়ে এদিকে এসো আম্মু ভাবলেন আমি তার জন্য চা বানিয়েছি মহা খুশী হয়ে এলেন আমি বেসিনের ট্যাপ ছেড়ে ছাকনি আর কাপ ধরলাম এককাপ রং চা পড়লো ৷ আম্মু হতবম্ভ হয়ে জিগেস করলেন কি করেছিস তুই প্রিয়?
আমি বললাম পানি এতো গরম তাই চা পাতা আর চিনি ট্যাংকি তে ঢেলে এসেছি এখন থেকে রেডীমেট চা পাবে ৷
আম্মু আমার দিকে অাগুনচোখে তাকিয়ে বললেন কে দিলো এই বুদ্ধি?
আমি বললাম নাট বল্টু তে দেখেছিলাম হাহাহাহাহা ৷ ফল স্বরুপ ডিশের লাইন আম্মু কটাস করে কেটে দিলেন ৷ আর বললেন তুই আস্তা পাগল একটা পুরাই ৷
আম্মুকে বলতে ইচ্ছা করছিলো যে আম্মু আস্তা আর পুরাই তো একই জিনিস খামোখা দুবার বলার কারণ কি? কিন্তু পেটের কথা পেটেই চেপে রাখলাম এখন কোন ভাবেই বলা যাবে না ৷
ঘটনা দুই
আমার চাচাতো বোন রুমী এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো তো আমি তখন ওর সাথে ঘুমোতাম আর আম্মু একা ঘুমোতো ৷ রুমী ফেবু চালাচ্ছিলো আমাকে ডেকে বললো আপু দেখ কি লিখেছে আমি বললাম কি লিখেছে? ও পড়লো, "হঠাৎ মাঝরাতে যদি আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে বুঝবেন কেউ অনেক্ষন আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলো" কথাটা পড়েই ও ভয় পেয়েছে এমন করতে লাগলো ৷
আমি পড়ে গেলাম চিন্তায় আমার তো প্রায়ই ঘুম ভাঙ্গে তাহলে কি আমার দিকেও কেউ তাকিয়ে থাকে? কে তাকাবে? আম্মু? নাহ ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে ৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ,
রুমী ঘুমিয়েছে আমি রসগোল্লার মতো চোখ বড় বড় করে প্রায় বিশ মিনিট ওর দিকে তাকিয়ে আছি চোখটাই মনে হয় ছিড়ে যাবে তাও তো রুমী তাকাচ্ছে না ৷ আমি আরেকটু সামনে গিয়ে ওর মুখের সামনে ঝুকে পড়লাম নাহ ঘুমই তো ভাঙ্গেনা মেয়ের তখন আর না পেরে একটা খোচা দিলাম ও চোখ খুলেই আমার রসগোল্লা চোখ দেখে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে দিলো আমি হাসতে হাসতেই খুন আম্মু দৌড়ে এসেই বলছে কি করেছিস প্রিয়? মানে সে জানে আমিই করেছি যা করার এবারো ৷ সেই অবস্থায় রুমী তো ভয়ে কথাই বলতে পারছেনা আর আমি মা জানো হাহাহাহাহাহাহাহাহা আমি চোখ হাহাহাহাহাহাহাহা আমি খোচা হাহাহাহাহাহা আর বলতে পারলামনা হাসি থামাতেই পারছিলামনা ৷ পরেরদিনই রুমী মায়ের কাছে এসে হাত জোড়ে করে বলতে লাগতো চাচী প্রিয়তা আপু পাগল হয়ে গেসে আমি আর থাকবোনা প্লীজ আমাকে পাঠায় দেন ৷ মা আর কি করবেন পাঠিয়ে দিলেন রুমীকে ৷ ওকে বলতেই পারলামনা ওই লেখাটা আসলে ভুল তাকিয়ে থাকলেই কারো ঘুম ভাঙ্গেনা সাথে একটা খোচাও দিতে হয় ৷
ঘটনা তিন
বাসায় আম্মুর পরিচিত এক আন্টি এলেন বেড়াতে ৷ তার কথায় কি যে ন্যাকামো তা যদি দেখাতে পারতাম সবাইকে তাহলে বুঝতো সে নাকি একটা গাড়ী কিনেছে সেই গাড়ী নিয়েই চলছে তার কথার ট্রেন ৷ ১০ টা কথার মধ্যে ৯ টাতেই গাড়ীকে টেনে আনে অনেকটা ওই কুমিরের খাজকাটা গল্পের মত ৷ যাইহোক আম্মু ওনাকে বললেন চা খাবেন? উনি বললেন আসোলে অ্যামি ঢায়েট খরছি থো থাই ঘ্রীন ঠি ছাড়া খাই না ৷ আম্মু বললেন রং চা খাবেন তো? উনি বললেন , থা খাওয়া ঝ্যায় থবে আধা ভেশী ঝেনো ঝাল ঠাইপ হয় ৷ আম্মু আমাকে বললেন চা বানিয়ে দিতে মনে মনে ভাবলাম দুপুর টাইম হলে স্পেশাল টাংকি চা খাওয়াতাম টাংকির পানি গরম থাকতো ৷ তো গেলাম চা বানাতে আদা দিলাম চেখে দেখলাম কিন্তু ঝাল তো হয় না মহিলা যে রকম ঝাল না হলে আবার কি বলে কে জানে উপায় না পেয়ে হাফ চামচ মরিচের গুড়া দিলাম ৷ চা নিয়ে দিলাম উনি চা খেয়ে ওরে বাবারে বলে উঠতে গিয়ে চা পড়ে গেলো তার সারা শরীরে সেই যে দিলেন ছুট আর কোনদিন আসবেন বলে মনে হলো না ৷ আম্মু বললেন কি করেছিস তুই আবার? আম্মুকে মরিচের গুড়ার কথা বলতেই তিনি মারতে তেড়ে এলেন ৷ আমি বুঝলামনা আমার কি দোষ ঝাল চা খেতে চাইলেন বলেই তো দিয়েছিলাম ৷
ঘটনা চার
আম্মু সেদিন বলছিলো হ্যাঁ রে প্রিয় সবাই দেখি কি সুন্দর করে চুলের কাট দেয় ৷ ওই যে ইউ, ভি আমার চুলে ভালো লাগবে? আমি বললাম আরেহ কি বলো? লাগবেনা মানে? একবারে উরা ধুরা ভালো লাগবে ৷ আম্মু বলে হইসে চুপ থাক এমনই বললাম আমি কি এই বুইড়া বয়সে পার্লারে যাবো? আর কাজ নাই ৷ আমি তখন সুপার ওমেনের মতো আম্মুর সামনে লাফ দিয়ে গিয়ে বললাম তুমি যে কি সব বলো না ৷ এইসব ইউ ভি এলফাবেট কাট আমার এক আঙ্গুলের ব্যাপার ৷ আসো আমি কেটে দেই ৷ আম্মু মনে মনে একটু খুশীই হলো বলা ভালো আম্মুর চুলগুলা সেই সুন্দর আর অনেক লম্বা ৷ আম্মু কয়েকবার বললো পারবিতো? আমি বললাম তুমি দেখলে খুশীতে অজ্ঞান হয়ে যাবে ৷
তো শুরু করলাম কাট প্রায় বিশ মিনিট লাগিয়ে অনেক যত্ন করে চুল কেটে দিলাম তারপর ফোনে একটা ছবি তুলে আম্মুকে দেখালাম আম্মু সত্যি সত্যি খুশীতে অজ্ঞান হয়ে গেলো ৷ চোখে মুখে পানি দিলাম জ্ঞান ফিরেই আম্মু ডিপজলের মতো চোখ বানায় আইজ তোরে পাইসি বলে আমার দিকে তেড়ে এলো আমি সেই তো দৌড় কিছুই বুঝলামনা কি জন্য এমন করছে ৷ এতো যত্ন করে আম্মুর চুলে ডাব্লিউ কাট দিয়ে দিলাম পুরা ঢেউ ঢেউ তা প্রশংসা করা বাদ দিয়ে মারতে আসে ক্যান? :-( ভাবসিলাম খুশীতে অজ্ঞান হয়েছে এখন দেখি টাশকি খেয়ে অজ্ঞান হয়েছিলো আসলে ৷
আমার কি দোষ? আমাকে তো বলেনি কোন লেটারের মতো করে কাট টা দিবে তাই আমি মনের মাধুরী মিশিয়ে ডাব্লিউ কাট দিয়ে দিলাম
সব মিলিয়ে আম্মু আমাকে আজ ডক্টরের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন ৷ আমার মাথায় নাকি গোলমাল আছে ৷ আমিও সুযোগ বুঝে রিক্সা থেকে লাফ মেরে দিলাম দৌড় ৷ একজায়গায় এসে হাপাতে হাপাতে থামলাম ৷ পেছন থেকে কে যেনো বিশাল জোড়ে কানটা টেনে ধরলো তাকিয়ে দেখি আম্মু !! আমি তো তব্দা খেয়ে ভাবছিলাম আম্মু কি উড়ে আসলো নাকি? তখন মনে পড়লো
হায় হায় আমি রিক্সা থেকে নেমে পেছনদিকে দৌড় না মেরে সামনের দিকে দৌড় দিয়ে ডক্টরের চেম্বারের কাছে এসেই থেমেছি ৷ আর আম্মু তো রিক্সা করে পেছন পেছন চলে এলো ৷
এরই নাম কপাল ৷ এবার ডক্টরই আমাকে পাগল বানায় দিবে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২