somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতকালের ওয়াজ বিভীষিকা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এখানে ওয়াজ শুরু হয় সন্ধার পর। তার একটু আগে গান-কুরান তেলোয়াত ইত্যাদি হয়। সেরকম ভাবেই একজন গান গাইলো ওয়াজের স্টেজে,
"ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনে না
দিনে রাইতে ড্যাং ড্যাং করে
নামাজ পড়ে না"
এরপর যে গান টা বাজানো হল তা ঠিক মনে নেই তবে তার সুর হিন্দি গান থেকে চুরি করা।
তারপর সন্ধ্যার পর ওয়াজ শুরু হল। হুজুর এর সব কথা শুনি নি, কিছু অংশ বিশেষ তুলে ধরছি।

".......চোরে এরপর দৌড় দিয়া ইমাম সাবের ঘরে পলাইলো। ঘরে তখন ইমাম সাবের বউ শুইয়া আছে। চোরের আওয়াজ পাইয়া সে ডাকলো, কে? চোর তখন ভয় পাইয়া ঘরে শুকাইয়া দেওয়া ছায়া (পেটিকোট) এর ভিত্রে লুকাইলো। ছায়ার ভিত্রে ঢুকসে বোলতা। চোরে কামড় খায় কিন্তু চিল্লাইতে পারে না। সারা রাত দাড়াইয়া থাইকা চোরে তওবা করে, ইয়া আল্লাহ!!! (চিৎকার দিয়েছিল হুজুর) আর চুরি করুম না....আর ঠকামু না....."

"......গু মাইখা গেল, গু মাইখা দিলে কি সেটা আর ভালো থাকলো? সেটা নাপাক হইয়া গেল। ঠিক না বেঠিক?...."

এখানে হুজুর আরব দেশের এক ঘটনা বর্ণনা করছেন, "......তোমারে এত আদর করলাম, সকালে গোশত খাওয়াইলাম, দুপুরে বড় বড় কই মাছ খাওয়াইলাম (আরবের কই!)...."

"...তারপর মুসা (আ) ওয়াজকুরুনি পাগলা রে জিগায়...(অথচ ওয়াজকুরুনির জন্মের ৪০০০ বছর আগে মুসা নবী মারা গেছেন)"

প্রশ্ন হল ওয়াজ গুলো থেকে আসলেই কিছু শেখার আছে?
থাক সেটা তোমার বিবেচনা, এবার একটু নস্টালজিক হই। অনেক বছর আগে, ২০০৪-২০০৫ এর কথা। প্রতিবছর শীত কালে বাসার একটু কাছেই ৩ দিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল হতো। হুজুর কি বলতো তা জানতাম না, সম্ভবত ধর্ম নিয়ে কিছু একটা। তখন তথাকথিত ভদ্র পরিবারের ছেলে হিশেবে আমার জন্য বাইরে বের হওয়া বারণ। তাই ঘরে বসেই আবছা আবছা ওয়াজ শুনতাম। খুব একটা ধারণা ছিল না জিনিশ টা কি। তবে এলাকায় একটা উৎসবের ভাব আসতো। শৈশবের স্মৃতিতে তাই ওয়াজ গেথে আছে। তারপর,
দিনে দিনে ওয়াজ বেড়ে গেল। 'প্রতি এলাকায় বছরে একবার ওয়াজ হওয়া জরুরি' এই ধারণা পালটে গিয়ে নতুন এক ধারণা আসলো, 'প্রত্যেক মসজিদের বাৎসরিক সাফল্য হিশেবে একবার ওয়াজ হতে হবে'। এই নিয়ম আসার পর মসজিদ গুলোর কয়েকটা উদ্দেশ্য পূরণ হল,
প্রথমত, বাৎসরিক কার্যক্রম প্রদর্শন করা আর সমাজে সেই মসজিদের আলাদা এক নজর পাওয়া।
দ্বিতীয়ত, ওয়াজ উপলক্ষ্যে দান-সদকার উপলক্ষ্য তৈরী হওয়া
তৃতীয়ত, তথাকথিত ইসলাম প্রচার (বিধর্মীদের ওয়াজে আকৃষ্ট করার মত কোন ব্যবস্থা আমি দেখি নি)
এখন প্রায় সব মসজিদ ই এই নীতিতে চলে। তাই বাসার আশেপাশে ১২-১৫ টা মসজিদ (শুধু আমার বাসা থেকেই ১৩ টা কন্ঠে আজান শোনা যায়) যদি ৩ দিন করেও সময় নেয় ওয়াজ করতে তাহলেও লেগে যায় এক থেকে দেড় মাস। তাই নভেম্বর থেকে ওয়াজ শুরু হয়েছে, এখনও চলছে। সম্ভবত জানুয়ারি গড়াবে।
একটু যদি বিবেক দিয়ে চিন্তা করি প্রত্যেক টা মসজিদ মাত্র ৩ দিন সময় নেয়, মোটেও তা বেশি না। কিন্তু এই দেড় মাস তারা কিন্তু নতুন শ্রোতা পাচ্ছে না, ঘুরে ফিরে এক এলাকার লোক দের কাছেই দেড় মাস ওয়াজ করছেন। প্রথম দিকে জনগণ ভালোই ওয়াজ শুনতো, এখন আগ্রহ হারাচ্ছে। দেড় মাস ওয়াজ হয়ে ওয়াজের দাম কমিয়ে দিয়েছে। আগের ৩ দিনের ওয়াজে যে লোকসমাগম হতো, যে আনন্দ হতো, তা আর হয় না।
মজার ব্যাপার হল, এই দেড় মাসের প্রতিদিন ৩ জন করে হুজুর আসে। সেই হিসেবে হুজুর সংখ্যা (৩x৪৫) = ১৩৫ জন। প্রত্যেকেই নাকি আন্তর্জাতিক খ্যতি সম্পন্ন মুফাসসের এ কুরান। এটা খুব ই ভালো সংবাদ যে আন্তর্জাতিক মুফাসসের গণ সব ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ত্যাগ করে ঢাকার অখ্যাত এলাকা দনিয়ায় জমায়েত হয়েছেন। আমরা বড়ই সৌভাগ্যবান তাদের পেয়ে। এই সৌভাগ্য পেয়ে আমার অসুস্থ নানী জান বাচিয়ে তার বাড়িতে পালিয়ে গেলেন। আশপাশে বিয়ে হলেই তিনি পালান, দেড় মাসের ওয়াজ সহ্য করার কথাও না, রাতে তিনি ঘুমাতে পারেন না। এদিকে আমার আম্মুর শুরু হয়েছে মাইগ্রেনের ব্যথা। আর আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক খেয়াল করলেন রাতে আমার বাসায় পড়ানো আর অংক বোঝানো অসম্ভব। তাকে দুপুরেই আসতে হবে। বড় বোন কাল বেড়াতে এসেছে। সে ঠিক সময় মনে করে ভাগ্নি কে বিকালের আগেই ঘুম পাড়ায়। একবার ওয়াজ শুরু হলে তো বেচারি আর ঘুমাবে না। আশা করি জানুয়ারি তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

শেষ প্রশ্ন, এরা সবাই জীবনে একবার হলেও সৌদি যায়, তারা কি খেয়াল করে না, আরবের মুফতী রা নাকি গলায় গান না গেয়ে সাবলীল ভাবে যুক্তিগত ভাষণ দেন!

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×