somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহজাবিন তার নাম (১ম পর্ব)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মানুষের জীবনে ঘটন-অঘটনের শেষ নাই।
সাক্ষাৎ, বন্ধুত্ব, তারপর অনন্ত প্রেম। হয়েই যায় কখনো-সখনো।
আবার শুধু প্রেম দিয়েও শুরু হতে পারে জীবনের গল্প। এক্ষেত্রে বয়সটা কোন ফ্যাক্ট না। সাতও হয়, সত্তুরে হলেও বা ঠেকাচ্ছে কে?
আদনানের ক্ষেত্রে এই দুই ফরমুলার কোনটাই প্রযোজ্য না।
ক্লাস ওয়ানে থাকতেই মাহজাবিনের সাথে প্রথম দেখা হয় তার।
তবে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেছে, পাঁচ-ছয় বছরের একটা ছেলের ক্ষেত্রে এই চিরন্তন সূত্রটা খাটে নাই।
বাস্তবিক, মেয়েটাকে অপছন্দই করেছিলো ছোট্ট আদনান।
চোখা মুখের একটা মেয়ে। হিংসুটি স্বভাবের। সারাক্ষণই ঝগড়া করছে এর-ওর সাথে।
পেন্সিল নিয়ে ঝগড়া।
বই নিয়ে হাতাহাতি।
টিফিন নিয়ে কাড়াকাড়ি।
মেয়েটা ক্লাসে একটা ত্রাসে পরিণত হয়েছে। মেয়েরা কি, ছেলেরাও প্রাণ হাতে নিয়ে থাকে।
আদনান চাপা স্বভাবের ছেলে, ভীতু বললেও খুব একটা অবিচার হবে না। মানুষের সাথে কথা বলা তার খুব বেশী ভালো লাগে না, মোটামুটি গুটিয়েই থাকে।
মাহজাবিনের সাথে তার খাতির হওয়ার কোন কারণ নাই।
স্পষ্ট করে বললে, তার জীবনটা হাবিয়া হয়ে গেছে মেয়েটার কারনে।
ভয়ংকর মেয়েটা বুঝে গেছে আদনান একটু ভীরু স্বভাবের। এটা নিয়ে সে সুযোগ পেলেই হাসাহাসি করে ক্লাসের মধ্যে, খোঁচা-খুঁচি করে।
ছোট বাচ্চাদের আত্মসম্মান বোধ কিন্তু ভয়াবহ মাত্রায় বেশী।
একটা মেয়ে তার সাহস নিয়ে হাসে, এরচেয়ে অপমানজনক আর কি আছে?
বাংলা সিনেমায় সবাই দেখেছে নায়করা কেমন বাঘের মত বিক্রমশালী আর নায়িকারা বিড়াল ছানার মত জুবুথুবু।
আর মাহজাবিন তাকে উল্টোচক্র দেখিয়ে দিচ্ছে।
কি মুশকিল!
অসহায় আদনান।
ঘটনাটা ক্লাসের প্রথম দিনের। মানে আদনানের প্রথম দিন, ক্লাস শুরু হয়েছে আরও দুই মাস আগে। সে ভর্তি হয়েছে দেরীতে।
দুরু দুরু বুকে আদনানের প্রবেশ সিনে। কাঁধে একটা মিকি মাউসের কার্টুন আঁকা ব্যাগ। বাবা ক্লাসের দরজা পর্যন্ত এনে দিয়েছেন। কিন্তু দরজা দিয়ে তাকে ঢুকতে হয়েছে একাই।
একরাশ হৈ-হল্লা যেন ধাক্কা দিলো তাকে। কিছুটা সংকুচিতভাবে সামনে তাকিয়ে দেখে সে।
চেঁচামেচি।
ছুটো-ছুটি।
ভয়াবহ!
এতজন সমবয়সী ছেলে-মেয়েকে একসাথে কখনো দেখেনি মুখচোরা আদনান। সে ঠিক বুঝতে পারলো না তার কি করা উচিৎ।
কথা বলবে?
কী বলবে?
সবচে’ বড় সমস্যা কাকে বলবে?
সবাই ব্যস্ত দুষ্টামিতে।
বাবা তাকে এ কেমন জায়গায় ফেলে গেলো?
ভীষণ কান্না পেয়ে গেলো তার।
তবে কাঁদার সাহস হল না তার।
যদি কেউ কিছু বলে?
আদনান?
চকিতে ঘাড় ঘুরায় আদনান। বাব্বাহ! এখানে যে একজন বড় মানুষ আছে তা খেয়ালই করা হয়নি।
মহিলা দেখতে বড় মিষ্টি, ভয় ভয় লাগলো না দেখে। গোলগাল শরীর, চোখে চশমা। পরনে শাড়ী।
আমি তোমার ক্লাস টিচার। আমাকে আম্বিয়া ম্যাডাম ডাকবে।
ম্যাডামকে ঠিক কি বলা উচিৎ বুঝতে পারলোনা আদনান। ভদ্রতাসূচক কিছু বলা যায় কিনা ভেবে দেখলো সে। ভাগ্যিস ম্যাডাম আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না ওকে। ক্লাসে বাকিদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন তিনিঃ
- বাচ্চারা! এর নাম আদনান। তোমাদের নূতন বন্ধু। সবাই আদনানকে হাই বলো।
পুরো ক্লাস একসাথে এতো জোরে হাই বলে উঠলো যে আদনানের বিশ্বাস ওটা বড় রাস্তা পর্যন্ত শোনা গেছে।
ম্যাডাম তাকে তার বসার জায়গা দেখিয়ে দিলেন।
ছোট ছোট প্লাসটিকের রঙিন সিট, বেশ পছন্দই হলো আদনানের। বাক্য-ব্যয় না করে সিটে বসে পড়লো সে।
ওহ তাহলে তুমি আদনান?
মেয়েটাকে তখনই প্রথম খেয়াল করল আদনান। একরাশ বিরক্তি আর তাচ্ছিল্য নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার পাশের সিটেই বসেছে সে।
উম হ্যাঁ। তুমি?
আমি মাহজাবিন।
মেহজাবিন?
মেহজাবিন না গাধা ছেলে, মাহজাবিন। দুটো এক হল?
একটা মেয়ে প্রথম দেখাতেই তাকে গাধা বলে দিলো। আদনান বুঝলো তার রাগ হওয়া উচিৎ। কিন্তু মেয়েটার ভাবভঙ্গি দেখে সে ঠিক সাহস করে উঠতে পারলো না। রাগটা মনে চেপে চুপ করে বসে থাকলো সে।
ম্যাডাম এগিয়ে এলেন তার দিকে।
-আদনান, বাসায় তুমি কদ্দুর পড়েছো?
পড়েছে সে অনেক কিছুই। কিন্তু ক্লাসে বসে হটাৎ সব গুলিয়ে গেছে ইশুবগুলের ভুসির মত।
অংক কী পারো?
এই এক, দুই, তিন, চার...
আমতা আমতা করে জবাব দিলো আদনান।
খুব ভালো, দেখি খাতায় লিখে ফেলো যতটুকু পারো।
আসলে এক,দুই, তিনের চেয়ে অনেক বেশীই পারে সে, ওটাতো স্রেফ কথার কথা। কিন্তু খাতায় লিখতে বসে হটাৎ আদনান বুঝতে পারলো চারের পর আর কিস্যু মনে নেই তার। গত চার মাসে আম্মু যা শিখিয়েছে তা ভোজবাজীর মত মিলিয়ে গেছে অকস্মাৎ।
মাথা ঘুরাতেই সে দেখলো মাহজাবিন নামের কুটনি মেয়েটা গভীর মনোযোগে তার কাজকর্ম খেয়াল করছে। ঠোটের কোণে একটা ‘তুমি কিস্যু জানো না’ গোছের হাসি।
লেখা বন্ধ হয়ে গেলো আদনানের।
তার ডেস্কে ঝুঁকে এল মেয়েটা।
- ওমা! তুমি চারের বেশী লিখতে পারো না? ছি ছি! আমি একশো পর্যন্ত লিখতে পারি! কি গাধা ছেলে!
ভয়ে পেটের ভাত চাউল হয়ে যাবার উপক্রম হলো আদনানের। মা তাকে গত চার মাস ধরে কিলিয়ে- হাকিয়ে বাংলা, ইংরিজি আর অংকের কত কিছু শিখিয়েছে। ক্লাসে এসে এতসব ভুলে যাওয়াটা অবশ্যই মারাত্মক অপরাধ!
অসহায় চোখে মাহজাবিনের দিকে তাকালো আদনান। ফুঁপিয়ে উঠলো মৃদুভাবে।
আম্মু আমাকে সব পড়িয়েছে, আমার কিস্যু মনে নাই। প্লিজ ম্যাডামকে বলো না। উনি মারবেন আমাকে, তাইনা?
আবার সেই ‘তুমি কিস্যু জানো না’ হাসিটা ফিরে এলো মাহজাবিনের ঠোঁটে।
তুমি একদিনও হয় নাই ম্যাডামকে দেখেছো, আর এখুনি ভয় পেয়ে গেলে? ছি! কি ভীতু ছেলেরে বাবা! ধুর ম্যাডাম মারবে না।
স্বস্তির হাঁফটা আদনানের অত তাড়াতাড়ি ফেলা উচিৎ হয় নাই। কারণ মাহজাবিন বুঝে গেছে সে কতটা ভীতু।
বেচারা বুঝতেও পারে নাই কি কিয়ামত তার সামনে অপেক্ষা করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×