somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমার ‘স্ত্রী‘ হারাইয়া গেছে"...একটি রম্য লেখার প্রচেষ্টা

১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“আমার ‘স্ত্রী‘ হারাইয়া গেছে, খুঁজে পাইতেছি না, ভাই আপনার ঘরে ‘স্ত্রী‘ আছে? আমাকে দিবেন? দুইটা ‘ডলা‘ দিয়া ফেরত দিবো।“
দুপুরে খেয়েদেয়ে ভাত ঘুম দিচ্ছিলাম। এমন সময় কোন বেয়াক্কেল ডোর বেল টিপে ঘুমের বারটা বাজিয়ে দিলেন। দরজা খুলে দেখি তিনতলায় চলতি মাসে আসা নতুন ভাড়াটে। আমাকে দেখে ভদ্রলোক উপরের কথা গুলো দ্রুত উগরে দিলেন। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালাম। মনে মনে রেগে গেলাম, বলে কি হারামজাদা!

আমার রাগী চোখ দেখে ভদ্রলোক নিরীহ কন্ঠে বলেন, “ভাই বিকেলে আমার একটা পার্টি আছে। স্যুটটা এক্ষুনি ‘স্ত্রী‘ করতে হবে, কিন্তু এই সময় লন্ড্রি খোলা থাকে না, তাই আপনার কাছে আসছি। দিবেন একটু স্ত্রী‘টা?“
ভদ্রলোকের কথা এতোক্ষণে বোধগম্য হলো, তিনি ইস্তিরিকে ‘স্ত্রী‘ উচ্চারণ করাতেই যতো বিভ্রান্তি।
না, আমার ঘরে ‘স্ত্রী‘ কিংবা ‘ইস্তিরি‘ এই মুহূর্তে কোনটাই নেই, তাই ভদ্রলোককে হতাশ করতে হলো। পোলাপানের পরীক্ষা শেষ, তাই স্ত্রী গেছেন বাপের বাড়ি। আর কাপড়-চোপড় কষ্ট করে নিজেরা ইস্তিরি করার বদলে আমরা লন্ড্রীতেই দিতে অভ্যস্ত।

বিয়ে করেছি প্রায় দেড় দশক। বিয়ের পর এক চিলেকোঠায় থাক্তাম। বাসাটা তেমন ভালো ছিল না, কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিল প্রচুর। এখন আমরা ভালো বাসায় থাকি কিন্তু ভালোবাসার তীব্র অভাব। আমরা একই ছাদের নীচে আছি কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে দূরত্ব অনেক। অথচ এক সময় আমাদের মধ্যে কি রোমান্টিক সম্পর্কই না ছিল !

মনে পড়ে বিয়ের পর এক রাতে শহরের রাস্তায় দুজনে হাঁটছি। সে রাতে আকাশে পূর্ণদশী‘র চাঁদ ছিল। চুল ওড়া বাতাস ছিল। আমরা দুজন নিবিষ্ট মনে কথা বলতে বলতে পথ চলছি। এমন সময় হঠাত মাঝ রাস্তায় উদয় হলো এক ছিনতাই কারী। হাতে লম্বা করে ধরা ছুরি। আমি বুক পেতে দিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। আমার স্ত্রী প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আমার পিছনে গিয়ে মুখ লুকালো। ছিনতাইকারীদের উদ্দেশ্যে আমি বিনীত কণ্ঠে বললাম, “তুই যা বলার আমাকে বল, যাকিছু নেয়ার আমার কাছ থেকে নে, কিন্তু খবরদার আমার স্ত্রী‘কে বিরক্ত করবি না।“
আমার মারমুখি ভাব দেখে ছিনতাইকারীরা আর কথা বাড়ায় না। আমার মানিব্যাগ, ঘড়ি, আংটি নিয়ে ভদ্রলোকের মতো চলে যায়।

ঠিক পনের বছর পর সেদিন একই সিচুয়েশন এসে উপস্থিত হলো। সেই রাতেও দুজনে পথ চলছিলাম। আকাশে কোন চাঁদ ছিল না। ছিল লাইট পোস্ট বিহীন অন্ধকার রাস্তা। এবার আর পাশাপাশি নয়, সে আগে আগে আর আমি তার একটু পিছনে। এমন সময় এক ছিনতাইকারী যেন মাটি ফুড়ে উদয় হয়। আমি এবার ছিনতাইকারীর উদ্ধত ছুরির সামনে বুক পেতে না দাঁড়িয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে স্ত্রীর পিছনে গিয়ে তার চওড়া দেহের আড়ালে দ্রুত গা ঢাকা দেই। ভাবখানা এই, মারলে ওরে আগে মার।

স্ত্রী ছিনতাইকারীর উদ্দেশ্যে তার স্বভাবসুলভ বাজখাঁই গলায় হুঙ্কার দিয়ে ওঠে,
“খবরদার ! অর এঁক কদমভি আগে মাত বাড়না, তুজে পাতা নেহি আমি কোন হু? আমার স্ত্রী ইদানীং রেগে গেলে ‘বান্দী‘ (বাংলা+ হিন্দী) ভাষায় কথা বলা শুরু করে, এইটা বোধহয় বেশী বেশী হিন্দি সিরিয়াল দেখার সাইড ইফেক্ট।
রণরঙ্গিনী স্ত্রী‘র মুখে এমন রণ হুঙ্কার শুনে মুহূর্তেই যেন ছিনতাইকারীর জানপাখি খাঁচা ছাড়ার উপক্রম। হঠাত চমকে উঠায় তার হাতধরা ছুরিটা রাস্তার ওপর সশব্দে ছিঁটকে পড়ে। সেই ছুরি কুড়িয়ে নিয়ে আমার স্ত্রী আরো দ্বিগুন জোরে চেঁচিয়ে উঠলো, “গাটার কা কিড়ে ! তোর পাতা নেহী হ্যায়, ম্যারা মামা খিলগাঁও থানার ওসি?“

ছিনতাইকারী এবার ভয় পেয়ে উল্টো দিকে ভোঁ দৌড়। তারপর শুরু হয় স্ত্রীর কথার তুবড়ি। আমার উদ্দেশ্যে তিনি শুরু করেন তার স্বভাব সুলভ রণ সঙ্গীত...“ভীরু, ইতর, কাপুরুষ, না-মর্দ, ডরপোক, ভিগি বিল্লি।“
আমি নিরীহ কন্ঠে জিজ্ঞেস করি, “ভিগি বিল্লি‘টা আবার কি?“
“এইটা বুঝো নাই ! না বুঝারই কথা।“ স্ত্রী‘র কণ্ঠে প্রকট তাচ্ছিল্য। “সারাদিনতো থাকো ক্রিকেট নিয়া। হিন্দী বুঝবা কিভাবে? ‘ভিগি বিল্লি‘ মানে হইলো ভিজা বিলাই।“
“ও। আচ্ছা তোমার কোন মামা যে খিলগাঁও থানার ওসি, এটাতো আগে কখনো শুনি নাই!“ স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঝাপটা দিয়ে বলে, “আজব, তুমি শুনবা কিভাবে? আমার মামা সত্যি সত্যি খিলগাঁও থানার ওসি হলে তোমার হাত-পা এতোদিন আস্তো থাক্তো“ !?
কথা শেষ করে তিনি গর্বিত ভঙ্গিতে আবার হাঁটতে শুরু করেন।

আমি আর কথা বাড়াই না, ধীরে ধীরে তার পিছনে হাঁটতে থাকি আর তার উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করি এবং তার কোন জ্ঞাতি মামা যে সত্যি সত্যি খিলগাঁও থানার ওসি না, সেই জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করি।



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×