ফান পোস্টঃ
”জীবনে সুখী হইতে চাইলে নিজের স্ত্রীকে পরস্ত্রী'র মতই ভালোবাসিবে !”
এই ’তাত্ত্বিক উপদেশ’ অনুসরণ করিয়া সুখী হওয়ার বাসনা নিয়া স্ত্রীকে অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলিলেম...।
’প্রিয়ে, তোমাকে আমি চারতলার ফ্ল্যাটের মণিকা ভাবীর মতোই ভালোবাসি। যখনই আমি তোমার দিকে দৃষ্টিপাত করি, আমার হৃদয়ে যেন বৃষ্টিপাত হয়। সঙ্গে সঙ্গে মানসপটে মণিকা ভাবীর সুন্দর আখিঁ যুগল পদ্মফুলের মতোই ভাসিয়া উঠে। সেইখানে আমি শুধু তোমারই ছবি দেখি..’
অত্যন্ত আবেগঘন কণ্ঠে এই রোমান্টিক সংলাপটি ডেলিভারি দেওয়ার পর স্ত্রী তাৎক্ষণিক যে প্রতিক্রিয়া দেখাইলো, সে এক ’হৃদয় বিদারক’ ঘটনা। এইখানে না বলি। শুধু বলি, বাসার তিনখান ফুলদানী, গুটি কয়েক তৈজসপত্র ইতিমধ্যেই ধ্বংস হইয়াছে। রান্নাঘরে লাগাতার ধর্মঘট চলিতেছে। পরিস্থিতি বর্তমানে থমথমে, জানিনা কখন স্বাভাবিক হয় ! এমন ‘সংকটময়’ অবস্থায় হোটেলে গিয়ে মরা মুরগীর ঠ্যাঙ চিবানো ছাড়া কোন গতান্তর দেখছি না।
এই জন্য মাঝে মাঝে নিজের বাসায় নিজেকেই মেহমান মনে হয়। মেহমানের তবু একটা ‘মর্যাদা‘ আছে, কিন্তু আমিতো স্বামী, যেন আসামী। অবশ্য আমার স্ত্রীর রান্নার হাত খুব ভালো। কেবল মাঝে মাঝে তরকারীতে লবন দিতে, চায়ে চিনি দিতে 'ভুলে' যান।
একদিন খেতে গিয়ে দেখি তরকারীতে লবন একদমই নাই। তখন ডাইনিং টেবিলে বসেই আমার ভাবের উদয় হলো, মাথায় চলে এলো দু‘লাইন পংক্তি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলি, খেতে খেতে একাটি কবিতা এসেছে মাথায়, বলি?
খেতে খেতে কবিতা, তুমি আসলেই একটা চিজ। স্ত্রীর এই কথাকে ‘সম্মতি‘ ধরে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লাইন দুটো আউড়ে দেই...।
বড্ড ইচ্ছে করে তোমার হাতে আচম্বিতে খুন হয়ে যাই
তোমার লবন ছাড়া তরকারীতে একটুখানি নুন হয়ে যাই//
“কি ! তরকারিতে একটু লবন কম হয়েছে, সেটা নিয়ে কটাক্ষ! তুমি পারলে এভাবে আমাকে অপমান করতে !“ সঙ্গে সঙ্গে গরম তেলে বেগুন ভাজা হয়ে ঝলসে ওঠে সে। আমি সাফাই গাইতে চেষ্টা করি।
“না না তরকারিতে ভুলে লবন দাও নি সেটা নিয়ে একটু ঠাট্টা করলাম“।
“করবেইতো! আমিতো তোমার কাছে হাসি ঠাট্টার পাত্রই ?“ এভাবে শুরু করে সে ঝগড়া। ঝগড়ার সময় সে হয়ে যায় ‘ননস্টপ রেডিও‘। একবার বাজতে শুরু করলে…।
ঝগড়ার এক পর্যায়ে প্রচণ্ড রাগে আমার দিকে ‘ফুল‘ ছুঁড়ে মারে সে। আমি দ্রুত সরে যাই, কারণ ফুলের সঙ্গে ফুলদানীটাও ছিল। আমার অতি শখের ক্রিস্টালের ফুলদানীটি মেঝেতে পড়ে চূরমার হয়ে গেলো। এবার আমারও মেজাজ চড়ে যায়। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলি , ‘দেখো, আমাকে রাগিয়ে দিয়ো না। রেগে গেলে কিন্তু আমি মানুষ থাকবো না, আমার ভিতরের পশুটা বেরিয়ে আসবে।’
আমার কথা বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে সে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে মুখ ভেংচি দিয়ে বলে, ‘আসুক, বেরিয়ে আসুক আমি নেংটি ইঁদুরে ভয় পাই না!’
ওর মারমুখি ভাব দেখে গৃহত্যাগ করাই নিরাপদ মনে করে দ্রুত বেরিয়ে আসি। বুঝতে পারি অন্তত আগামি তিনদিন আমার ঘরের ভাত নসীবে নেই।
এই হলো আমার ‘স্ত্রী‘ যাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের আগেই টের পেয়েছিলাম, তার মেজাজ একটু গরম। কিন্তু তখন তার ভালোবাসায় রীতিমতো ‘অন্ধ‘ ছিলাম, আর এই আশায় বিয়ে করেছিলাম যে বিয়ের পর সে বদলে যাবে, আমিই তাকে বদলে ফেলবো। কিন্তু এখন বদলে আমি ঠিকই ফেলেছি, তবে তাকে নয়, নিজেকে। ঠিক তার মনের মতো করে। তবু তার মন পাচ্ছি কোথায় !
মনে পড়ে বিয়ের কয়েকদিন পর একরাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে একটু দেরী করে বাসায় ফিরেছিলাম। সে দরজা খুলেই শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “এতো রাত অবধি কোথায় কার সঙ্গে থাকা হয়েছে শুনি?“
তার প্রশ্ন করার ধরণ দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় আমার। বলি, “আমি বাংলাদেশের একজন স্বাধীন, সার্বভৌম নাগরিক, যেখানে খুশী সেখানে যাবো, কাউকে কৈফিয়ত দিবো নাকি!“
সে আর একটি কথাও বলে না, নীরবে দরজা বন্ধ করে গিয়ে শুয়ে পড়ে। তারপর তিনদিন তিনি আমার সঙ্গে কোন কথা বলে না, চুলোয় কোন হাঁড়িও চড়ে না। হোটেলে খেতে খেতে অতিষ্ঠ হয়ে তৃতীয় দিন এসে স্বেচ্ছায় তার বশ্যতা স্বীকার করে নেই। অতপর বাধ্য হয়ে তার সঙ্গে একটি ‘অধীনতা মূলক মৈত্রী চূক্তিতে‘ আবদ্ধ হই। শর্ত এই যে আমি আমার...থুক্কু তার ইচ্ছেমতো চলবো, বিনিময়ে সে আমার তিনবেলা ‘খাদ্য নিরাপত্তা‘ নিশ্চিত করবে। অবশ্যই প্রতিদিন বাজার করা সাপেক্ষে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২০