somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থেরেসা করবিন-র ইসলাম গ্রহণের চমকপ্রদ কাহিনী

১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন লেখিকা। বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সে। তিনি ইসলামউইচ ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা এবং অন-ইসলাম ডটকম ও অ্যাকিলা স্টাইল ডটকমের একজন সহযোগী। সিএনএন তার একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেটি প্রকাশ করা হলো-

‘আমি একজন মুসলিম কিন্তু পূর্বে আমি ছিলাম একজন ক্যাথলিক। ৯/১১ এর দুই মাস পর, ২০০১ সালের নভেম্বরে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি।

আমি ২১ বছর বয়সী ছিলাম এবং লুইসিয়ানার বাটন রূজে বাস করতাম। মুসলিম হওয়ার জন্য এটি খুবই খারাপ সময় ছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মকে নিয়ে চার বছর গবেষণার পর বিশ্বের অন্যান্য ধর্ম ও তাদের অনুসারীদের খোঁচা দিতে এবং তাদের জাগিয়ে তোলতে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেই।

আমি একজন ক্রেওল ক্যাথলিক এবং একজন আইরিশ নাস্তিক পিতামাতার সন্তান। আমি ক্যাথলিক হিসেবে বড় হয়েছি। তারপর একসময় সংশয়বাদী হই এবং বর্তমানে আমি একজন মুসলিম।

১৫ বছর বয়সে হোস্টেলে বসবাস করার সময় থেকেই ইসলামের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ জন্মে। আমার ক্যাথলিক ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আমার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। আমার শিক্ষক এবং যাজকদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তাদের কাছ থেকে উত্তর আসে, —তোমার এই সুন্দর ছোট্ট মাথায় এ সম্পর্কে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, যা আমাকে কখনই সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

আমেরিকার নারী পুরুষেরা সচরাচার যেমনটি করে থাকে আমি তার বিপরীতটি করেছি। আমি এ সম্পর্কে চিন্তিত ছিলাম। বহু বছর ধরে আমার মনে ধর্মের প্রকৃতি, মানুষ এবং মহাবিশ্ব নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জন্মাতে থাকে।

এ সবকিছু নিয়ে গবেষণার পর আমি সত্যকে খুঁজে পাই। ধর্মীয় অলঙ্করণ, ইতিহাস ও বিভিন্ন মতবাদ ইত্যাদির চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইসলাম নামের এই অসাধারণ জিনিসটি খুঁজে পাই।

আমি এটা শিখেছি যে, ইসলাম একটি সংস্কৃতি কিংবা ধর্মীয় প্রার্থনার প্রথা নয়। এটি শুধুমাত্র বিশ্বের একটি অংশেরও প্রতিনিধিত্ব করে না। আমি বুঝতে পেরেছি যে ইসলামই হচ্ছে একটি বিশ্বধর্ম যা মানুষকে সহনশীলতা, ন্যায়বিচার ও সম্মান করতে শেখায় এবং ধৈর্য্যধারণ, বিনয়ী এবং ভারসাম্যকে উৎসাহিত করে।

আমি আমার বিশ্বাস নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছি। আমি এটি দেখে বিস্মিত হয়েছি আমার পাশে অনেক লোক আমার সাথে অনুরণিত হচ্ছে। আমি এটি খুঁজে পেয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম যা ইসলাম তার অনুসারীদের শেখায়।

ইসলাম মূসা থেকে যীশু, যীশু থেকে মোহাম্মদ (সাHappy সমস্ত নবীদের সম্মান করতে শিক্ষা দেয়, যাদের সবাই মানবজাতিকে এক আল্লাহর উপাসনা করতে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তারা একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের সাথে আচরণ করতেন।

ইসলামের আবেদন আমাকে আকৃষ্ট করেছে নবী মোহাম্মদ (সাHappy এর উৎসাহব্যঞ্জক একটি উদ্ধৃতি, ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক, হোক সে পুরুষ কিংবা মহিলা।’

আমি বিস্ময়ে আভিভূত হই যে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের উৎপত্তি হয়েছে মুসলিম চিন্তাবিদ কর্তৃক। আল-খাওয়ারিজমির বীজগণিত আবিষ্কার, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বহু আগেই ইবনে ফারনাসের ফ্লাইট বলবিজ্ঞানের উন্নতি সাধন এবং আবু আল-কাসিম আল-জাহরি যাকে বলা হয় আধুনিক সার্জারি জনক।

এটি ছিল ২০০১ সাল, যখন আমাকে কিছুদিনের জন্য আমার পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হয়েছিল। আমি ভয়ে ছিলাম লোকেরা কি মনে করবে যেটি ছিল আমার জন্য চূড়ান্তরূপে দুর্বিষহ। ৯/১১ এর অপহরণকারীদের কর্ম আমাকে চরম আতঙ্কিত করে তোলে।

কিন্তু তার পরমুহূর্ত থেকে আমি আমার অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছি মুসলমান এবং তাদের ধর্মকে রক্ষার জন্য। কিছু মুসলমানের কিছু খারাপ পদক্ষেপের কারণে ১.৬ বিলিয়ন মানুষের একটি গ্রুপ তৈরী হয়েছে যারা সবাই অত্যন্ত আগ্রহী ইসলামকে সমূলে উৎখাত করতে। সেইসকল লোকদের হতে ইসলামকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছি।

অন্যদের মতামতের কারণে আমাকে জিম্মি করা হয়েছিল। ইসলামকে রক্ষার জন্য আমি আমার সমস্ত ভয়কে জয় করেছি এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার ভাই এবং বোনদের সেই বিশ্বাসে নিয়ে যেতে যেটি আমি বিশ্বাস করি।

আমার পরিবার বুঝতে পারেনি কিন্তু আমার ধর্ম নিয়ে গবেষণা করাটা তাদের কাছে মোটেও আশ্চর্যজনক ছিল না। তাদের অধিকাংশই আমার নিরাপত্তার নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। সৌভাগ্য যে আমার বন্ধুদের অধিকাংশই ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহী ছিল এবং এমনকি এ সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চাইত।

স্কার্ফ প্রসঙ্গে...

বর্তমান দিনগুলোতে হিজাব পরিধান করে আমি অত্যন্ত গর্বিত। আপনি এটিকে স্কার্ফ বলতে পারেন। আমার স্কার্ফ আমার হাতে বাধা থাকে না এবং এটি জুলুম, নির্যাতনের কোনো হাতিয়ারও নয়। এটি আমার চিন্তাধারায় প্রবেশ করতে কোনো বাধা প্রদান করে না।

ইসলামকে নিয়ে গবেষণা করায় আমার সব সাংস্কৃতিক ভ্রান্ত ধারণা তাত্ক্ষনিকভাবে দূরীভূত হয়নি। আমাকে প্রাচ্যের নারীর কল্পচিত্র আকঁতে হয়েছে। আমার ধারনা ছিল প্রাচ্যের পুরুষেরা নারীকে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করে থাকে এবং পুরুষ কর্তৃক তাদের বাধ্য করা হয় তাদের শরীরকে ঢেকে রাখার জন্য।

কিন্তু যখন আমি একজন মুসলিম নারীকে জিজ্ঞেস করি, ‘কেন আপনি হিজাব পরেন?’, ‘আল্লাহকে খুশি করার জন্য। হিজাব পরিধান একজন নারী হিসেবে আমাদেরকে সম্মানিত করা হয়েছে এবং পুরুষের হয়রানির শিকার থেকে এটি আমাদের নিরাপদ রাখে। পুরুষের খারাপ দৃষ্টি থেকে আমার নিজেকে রক্ষা করার জন্য এটি খুবই কার্যকরী।’ তার উত্তর ছিল সুস্পষ্ট এবং অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেয়ার মত।

আশ্চর্যজনকভাবে ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা আমার দীর্ঘদিনের নারীবাদী আদর্শের সাথে মিলে গেছে।

তিনি শালীন পোশাককে বিশ্বের প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, একজন নারীর শরীর শুধুমাত্র উপভোগের জন্য অথবা সমালোচনামূলক প্রবন্ধ লিখার জন্য নয়।

শালীন পোশাক কেমন করে বিশ্বের প্রতীক? প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ, আপনার বিশ্বাসে নারীদেরকে কি এখনও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত আচরণ করা হয় না?’

ধৈর্য্যশীল এই মুসলিম ভদ্র মহিলা ব্যাখ্যা করেন যে, একটি সময় ছিল যখন পশ্চিমা বিশ্বে নারীদেরকে বিবেচনা করা হত পুরুষের ভোগদখলের সম্পত্তি হিসাবে। কিন্তু ইসলাম শিক্ষা দেয়, আল্লাহর চোখে নারী-পুরুষ সবাই সমান।

ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে নারীর সম্মতিকে মর্যাদা দেয় এবং নারীদেরকে উত্তরাধিকারী হবার, নিজস্ব সম্পত্তি অর্জন, ব্যবসা পরিচালনা করা এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।

তিনি বলেন, আজ থেকে ১,২৫০ বছর পূর্বে ইসলাম নারীদের যে অধিকার প্রদান করেছে সেটি পশ্চিমারা কখন কল্পনাও করতে পারেনি।।

৯/১১ পরবর্তী বসবাস...

মুসলিম হওয়ার পর আমি আমার ব্যক্তিত্বকে, আমার আমেরিকান পরিচয় বা সংস্কৃতিকে কখনই ত্যাগ করিনি। কিন্তু একটি সময়ে তাদের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে এবং আমার মর্যাদা রক্ষার জন্য এগুলোকে ত্যাগ করতে হয়।

আমার দিকে থুথু ও ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং আমাকে অভিশপ্ত করা হয়েছে যেন আমি গাড়ি চাপায় মারা যাই।

জর্জিয়ার সাভান্নাহ মসজিদে নামাজের জন্য উপস্থিত হলে সন্ত্রাসীদের ভয় আমাকে তাড়া করত। সাভান্নাহ মসজিদে নামাজে যাওয়ার সময় আমাকে প্রথমে গুলি করা হয়, তারপর সন্ত্রাসীরা মসজিদটিকে পুড়িয়ে দেয়।

২০১২ সালের আগস্টে আমি নিউ অর্লিন্সের বাড়িতে ফিরে আসি যেখানে আদর্শ ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। পরিশেষে আমি একটি সময়ের জন্য নিরাপদ অনুভব করলাম।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করা ও ইসলামকে বিকৃত করা এবং অন্যায়ভাবে ইসলামকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা আমাকে ভীষণভাবে ব্যথিত করে।

সুত্রঃ আরটিএনএ

এরকম আরো পড়ুন ইসলামিক রেডিও র ব্লগ সাইটে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×