somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার মনে কি কোনদিন এই প্রশ্নটি উঠেছে আমরা কেন স্রষ্টার কথা ভাবি?

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৫০ সালের দিকে উইল্ডার পেনফিল্ড নামের এক নিউরোসার্জন মস্তিস্কে অস্ত্রপ্রচার করার সময় ব্রেনের মধ্যে ইলেকট্রোড ঢুকিয়ে মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশকে বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত করে রোগীদের কাছে এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইতেন। যখন কোন রোগীর ক্ষেত্রে ‘টেম্পোরাল লোব’-এ ইলেক্ট্রোড ঢুকিয়ে উদ্দীপ্ত করতেন, তাদের অনেকে নানা ধরণের ‘গায়েবী আওয়াজ’ শুনতে পেতেন, যা অনেকেটা ‘দিব্য দর্শনের’ অনুরূপ । ১৯৭৫ সালে যখন বস্টোন ভেটেরান্স এডমিনিস্ট্রেশন হাসপাতালের স্নায়ু-বিশেষজ্ঞ নরমান গেসচ উইন্ড-এর গবেষণায় প্রথম বারের মত এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগের সাথে টেম্পোরাল লোবে বৈদ্যুতিক মিসফায়ারিং-এর একটা সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেল । আরেকটি গবেষনায় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ভিলায়ানুর এস রামাচান্দ্রণ তার গবেষণায় দেখালেন, টেম্পোরাল লোব এপিলেপ্সি রোগীদের ক্ষেত্রেই ঈশ্বর-দর্শন, ওহি-প্রাপ্তির মত ধর্মীয় অভিজ্ঞতার আস্বাদনের সম্ভাবনা বেশি ।এই বিষয়টিই পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বীধাদন্দ সৃষ্টি করে। একদল বলে-মানুষের মস্তিস্ক তরঙ্গ স্রষ্টাকে সৃষ্টি করছে, ঈশ্বর দর্শন, দিব্যদর্শন, কিংবা ওহিপ্রাপ্তির মত ধর্মীয় অভিজ্ঞতাগুলো আসলে স্রেফ মস্তিস্কসঞ্জাত। সেই ১৮৯২ সালের আমেরিকার পাঠ্যপুস্তকগুলোতেও এপিলেপ্সির সাথে ‘ধর্মীয় আবেগের’ সাযুজ্য খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই হিসেবে এগুলো সব মানসিক বিষয় মানসিক সমস্যার কারনে ঈশ্বর দর্শন, দিব্যদর্শন, কিংবা ওহিপ্রাপ্তির ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন বোঝা গেলো প্রাথর্ণা মানুষের মস্তিস্কির রেড ষ্ফিট বৃদ্ধি পায়। মানব দেহ থেকে কিছু হরমোন ক্ষয়িত হয়ে মানব দেহকে শীতল অনুভূতী সরবরাহ করে। অতএব এটা প্রকৃতি প্রদত্ত্ব। গবেষনার চুড়ান্ত পর্যায়ে ব্যপক গবেষনায় কোন কোন বিজ্ঞানী বলেন যে, স্রষ্টা মস্তিষ্ক তরঙ্গ সৃষ্টি করছেন? যেহেতু মানুষের মস্তিস্ক তরঙ্গ স্রষ্টার সন্ধান করে অতএব স্রষ্টার বোধগম্যতা মানব মস্তিস্কপ্রসুত। অতএব মানুষের সৃষ্টি থেকে এভাবে মস্তিকের টেম্পোরাল লোবে স্রষ্টার সন্ধান করার বিষয়টি লিপিবদ্ধ করা ছিলো।




নিবীর নীরিক্ষণ থেকে একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে উঠে যে, মানুষ যখন আরাধণায় নিমগ্ন হয় এবং তা যদি হয় গভীর ঐকান্তিকতায় পরিপূর্ণ তখন মানুষের টেম্পোরাল লোব উদ্দীপ্ত হয়। আমরা দেখেছি টেম্পোরাল লোবের নানা কাজ, তন্মধ্যে আরাধনায় স্রষ্টার প্রতি নিগূঢ় ভক্তির উদ্রেক করাও একটা কাজ। আবার এই আরাধনার নিয়মিত অণুশীলন দ্বারা এই ভক্তির গভীরতাকেও উন্নীত করা যায়। কখনো কখনো (বিরল ঘটনা) দেখা যায় এই অনুশীলনের সময় মানুষের মনোবৈকল্য দেখা দেয় যা হতে পারে টেম্পোরাল লোবের উদ্দীপ্ততা মস্তিস্কের ধারন ও সহনশীলতার বাইরে চলে যায়। তখন এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে আর এ জন্যে এ কথা বলা চলেনা যে মৃগী রোগের কারণে ধার্মীকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার কখনো কখনো এরকমও দেখা যায় যে, মানসিক ভাবে ভারসাম্যতা কমে গেলে কেউ কেউ (ক্ষেত্র বিশেষে) ধর্ম কর্মের দিকে খুব বেশী ঝুকে পড়ে; তাতেও এ কথা বলা যায়না যে মানসিক ভারসাম্যহীনরা ধার্মীক হয়ে উঠে। এরকম তখনই হতে পারে যখন টেম্পোরাল লোবে ধর্মানুভূতি সৃষ্টির অংশটুকুর উদ্দীপনা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়ে কেউ মানসিক ভারসাম্য হয়ে পড়ে।

সম্ভবত স্রষ্টাই মানুষের মস্তিস্কে ‘স্রষ্টা-বিন্দু’ সৃষ্টি করেছেন কারণ এটাই তাঁর সৃষ্ট মানবকুলের সাথে সংযোগের মাধ্যাম। আমরা যদি তাঁকে বেশী করে জানতে চাই তবে এই মাধ্যামের উন্নতি সাধন প্রয়োজন।এই উন্নত কেন্দ্রটিই বর্তমানে অনুভূতি বা চিন্তা ভাবনার কেন্দ্রে বিবর্তিত হয়েছে। একে বলা হয় চিন্তাভাবনার মস্তিস্ক। মস্তিস্কের এই অংশটাই আমাদেরকে উন্নত প্রাণী হিসেবে নিম্ন প্রাণী থেকে পৃথক করেছে; আর এই সুবাদেই আমাদের মন গভীর ভাবে ভাবতে পারে ও বিশ্বাসের ভিতকে শক্তিশলী করতে পারে। সম্ভবত আল্লাহ মানুষের মস্তিস্কে স্রষ্টার চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন, এজন্যে যে তাঁর সৃষ্ট বিবেক সম্পন্ন প্রাণী এই মানুষ যেন তাঁকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে; এটি তাঁর মহান ইচ্ছা। সম্ভবত এ উন্নত কেন্দ্রটি দিনে দিনে বিবর্তীত হয়ে আমাদের মস্তিস্কের নতুন পরিচিতি দানের মাধ্যামে আমাদেরকে শ্রেষ্ট পাণীতে পরিণত করেছে। আর এই চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়েই মানুষ অর্জন করেছে মনুষত্ব, জয় করেছে প্রকৃতিকে, উন্নীত হয়েছে শ্রেষ্ট প্রাণীতে, শেষঅবদি নিম্ন প্রাণীর সাথে সৃষ্টি করেছে এক বিশাল ব্যবধান। শুধু তাই নয়, চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার ধারনাতে বিশ্বাস হয়েছে দৃঢ়। ‘ তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি নাযিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে।’ (সুরা-আন-মুমিন,আয়াত-১৫)



যদিও বলা হয়ে থাকে যে টেম্পোরাল লোবই হল স্রষ্টাবিন্দুর বাসস্থান এবং আধ্যাতিকতা অর্জনের পিঠস্থান তবু এটি এন্টিনা স্বরূপ কাজ করে। আমরা যখন গভীর প্রার্থনার মাধ্যামে আধ্যাতিকতার উন্নয়ন করি তখন তা ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাম (electro-encephalogram) পরীক্ষায় পরিস্কর ভাবে মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবের কম্পাঙ্ক তরঙ্গ পরিবর্তনের মাধামে পরিস্ফূটিত হয়ে উঠে। বর্তমানে FMRI (Functional Magnetic Resonance Imaging) and PET (Positron Emission Tomography) পরীক্ষার দ্বারা দেখা গেছে যে,প্রার্থনা বা ধ্যানের সময় মস্তিস্কের কয়েকটি অংশ শুধু কাজ করে, বাকী অংশগুলো তখন অকেজো থাকে, আর তা হল মস্তিস্কের সম্মুখভাগ (prefrontal cortex)যা মানুষের মনযোগ আনয়ন করে।পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, যখন রোগীর মস্তিস্কে সুক্ষ তরিৎদ্ভারের দিয়ে বিদ্যুত পরিচালনার মাধ্যামে টেম্পোরাল লোবকে আঘাত করা হয় তখন সেখানে অতিপ্রাকৃতিক বা ঐশরিক অনুভূতি জেগে উঠে। আবার এমনি অনুভূতি মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা বা রক্তে চিনির পরিমান কমে গেলেও (hypoglycemia-low blood sugar) জন্মায়। তখন মানুষ যেন আপন মনেই স্রষ্টাকে খুঁজে পায়। সূধী পাঠক কখনোকি লক্ষ্য করেছেন যে, চরম বিপদে সকলেই মুহর্মুহ স্রষ্টাকে স্মরণ করতে থাকে। একবারও কি ভেবে দেখেছেন, কেন তা করে! লক্ষ্য করে দেখবেন,প্রার্থনার সময় মানুষ অনুভবের মাধ্যামে খুব সহজে নিজেকে যেন স্বর্গীয় রাজ্যে হারিয়ে ফেলে। দেখবেন অপরাধী মানুষ কখনো কখনো অভিভূত হয়ে স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পন করে অনেকটা আশ্বস্থ বোধ করেন। তখন মনে হয় স্রষ্টা যেন খুব কাছ থেকে আমাদেরকে লক্ষ্য করছেন। ‘আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে। আর যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সুদীর্ঘ দোয়া করতে থাকে।’ (সুরা-হামিম সাজদাহ, আয়াত-৫১)




মানুষ যখন প্রার্থনায় বা ঈশ্বর-চিন্তায় মগ্ন থাকে তখন মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক যৌগের ক্ষয়িত হয়ে একটি অভুতপূর্ব উপলদ্ধি বোধ সৃষ্টি করে ? রাসায়নিক যৌগের ক্ষয়িত হয়ে মস্তিষ্কে সৃষ্টি করে এমন কোনো পরিবেশ, যা চিরবিরাজমান সেই উচ্চতর সত্ত্বার উপলব্ধির জন্য একান্ত অনুকূল? মানুষ যখন মসজীদ, গীর্জায় প্রার্থনায় বসে তখন তার মনে একটা অপরাধবোধ উৎপন্ন হয়। সত্যিই খুব আশ্চর্যজনক বিষয় হলো মানুষ প্রাথনা করবার পর তার মস্তিস্কের ওয়েভ পরিবর্তন ঘটে মানুষের ব্রেনের ভিতরেও এর পরিবর্তান হয় । ব্রেইন স্ক্যান করে দেখা গেছে মানুষের ব্রেনের উপর প্রাথনার প্রভাব পড়ে। প্রাথনা করবার পর মানুষের ব্রেন ওয়েভ কেমন যেনো সৌন্দর্যময় হয়ে ওঠে। নীচের চিত্রটির দিকে লক্ষ্য করুন প্রাথনার আগের ব্রেনের স্ক্যানে লাল চিহিৃত জায়গা টি নেই কিন্ত পরের প্রার্থনার পর স্ক্যানকৃত চিত্রে লাল চিহিৃত জায়গা টি দেখা যাচ্ছে।



প্রর্থনা বা ধ্যান মানুষের অন্তরে গভীর অনুভব ও ভালবাসার জন্ম দেয়। আল্লা ভক্ত মানুষদের দেহ থেকে নুর বের হয় র্দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা জানতাম। এই শ্রেণীর মানুষদের আমরা নুরানী চেহারার মানুষ বলতাম। যখন মস্তিস্কের excitatory and inhibitory neurotransmitters উদ্দীপ্ত হয় তখন কিচু হরমোন মানব দেহে মস্তিক্ত থেকে প্রবেশ করে ফলে দেহ শীতল এক ঐশ্যরিক অনুভূতী লাভ করে। আর এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলছেন, আর যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, শুয়ে বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তা থেকে মুক্ত করে দেই, সে কষ্ট যখন চলে যায় তখন মনে হয় কখনো কোন কষ্টেরই সম্মুখীন হয়ে যেন আমাকে ডাকেইনি। এমনিভাবে মনঃপুত হয়েছে নির্ভয় লোকদের যা তারা করেছে।(সুরা-ইউনুস, আয়াত- ১২) । নিয়মিত প্রার্থণারত থাকা ব্যাক্তিদের গডস্পট যত গভীর হয় দেহের হীম শীতলতা তত বেশি বৃদ্ধি পায়। ফলে ঐ মুহুত্ব থেকে মানব দেহের ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সিও মানসিক সুস্থতার লক্ষন হিসেবে প্রমানিত হয়। ঔজ্জলতার পরিমান বৃদ্ধি পায়। মানুষের মস্তিস্ক থেকে যেমন ইলেকট্রম্যাগনেটিক ওয়েভ বের হেয়ে ঠিক তেমনি মানব দেহ থেকে এমনটাই ইলেট্রম্যাগনেটিক ওয়েভ মানুষ দেহ থেকেও বের হয়ে থাকে। যারা বেশি বেশি প্রাথনর্নান করে তাদের ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি যথেষ্ট বর্ণিল এবং ঔজ্জল। এই ঔজ্জল্যতা সুস্থতার লক্ষন বলেই প্রতিয়মান হয়। মানব দেহে থেকৈ যে আলোকরশ্নি বের হয় তা প্রথম জানতে পারেন বিখ্যাত জার্মান রসায়ন বিজ্ঞানি Baron von Riechenbach প্রথমে উনবিংশ শতাব্দির শেষের দিকে। তিনি ধারনা করেন মানুষ,গাছপালা ও পশু-পাখির শরির থেকে বিশেষ এক প্রকার জ্যোতি বের হয়। বর্তমান শতাব্দির প্রথম দিকে লন্ডনের সেন্ট টমাস হাস্পাতালের ডাক্তার ওয়াল্টার কিলনার লক্ষ্য করেন Dicyanim Dye রঞ্জিত কাঁচের ভিতর দিয়ে তাকালে মানুষের দেহের চার পাশে ছয় থেকে আট সেন্টিমিটার পরিমিত স্থান জুড়ে একটি উজ্জ্বল আলোর আভাকে মেঘের মত ভাসতে দেখা যায়।তিরিশের দশকে সোভিয়েত বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গুরভিচ আবিষ্কার করেন যে,জিবন্ত সবকিছু থেকেই এক ধরনের বিশেষ এক শক্তি আলোর আকারে বের হয় যা খালি চোখে দেখা যায়না।এভাবে মানুষের পেশীর টিসু, চোখের কার্ণিয়া,রক্ত এবং স্নায়ু থেকে যে শক্তি বের হয়ে আসে ডাঃ গুরভিচ তার নাম দেন Mitogenetic Radiation. অবশেষে সে বিশেষ আলোটি ধরা দেয় জনৈক সেমিউন দাভিদোভিচ কিরলিন নামক তুখোর এক ইলেকট্রেসিয়ান কতৃক আবিষ্কৃত অদ্ভুত এক ক্যামেরায়,যার নামকরন করা হয় কিরলিন ফটোগ্রাফি।এ ফটোগ্রাফির মাধ্যমে প্রাণি দেহ থেকে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মির ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে।এই আলো সূর্য বা ইলেকট্রিক বাল্বের আলোর ন্যায় সাধারন আলো নয় বরং সেটা অনেক দীপ্ত,চঞ্চল ও বর্ণিল।আরো দেখা গিয়েছে সে আলোক রশ্মির ঔজ্জল্যের উপর নির্ভর করে দেহের সামগ্রিক জিবনি শক্তি বা সুস্থতার পরিমাপ করা যায়। কিরলিন ফটোগ্রফি আরও দেখিয়েছে যে,মানুষের শরিরে বিভিন্ন গুরত্বপুর্ন বিন্দু রয়েছে সেখান থেকে তুলনামুলক ভাবে অনেক বেশি আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়, মনে হয় সে সব বিন্দু থেকে যেন আগ্নেয়গিরির অগ্নুতপাত হচ্ছে।কিরলিন তার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে মানব দেহে তেমন ৭০০ টি বিন্দু চিহ্নিত করেন।কিন্তু মজার বিষয় হল আজ থেকে প্রায় ১৫০০-২০০০ বছর পুর্বে চিনের প্রাচিন আকুপাংচার পদ্ধতির চিকিৎসকগন মানব দেহে যে এমন ৭০০টি প্রাণবিন্দু আছে তার মানচিত্র এঁকেছিলেন।কিরলিনের ক্যামেরায় ধারনকৃত ৭০০টি বিন্দুর সাথে সে মানচিত্রের হুবহু মিল আছে।


অতি ধার্মিকতাকে কোন কোন গবেষক টেম্পোরাল লোবের অসুস্থতা বা সন্যাসরোগ (TLE)হিসেবে বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৯৪ সাল অবদি আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক এসোসিয়েশন শক্ত ধর্মানুভূতিকে মানষিক বৈকল্য বলে উল্লেখ করত; কিন্তু এখন তারা বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম মানুষের মনে সুস্থতা আনয়ন করে। ধর্মীয় কোন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যামে আমরা যখন গভীর আরাধনায় মগ্ন হই তখন তা আমাদের মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবের ক্রিয়াকর্মে প্রতিফলিত হয়। অতিন্দীয়রা তাদের অনুভুতি ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলে থাকেন যে, যখন কোন ঐশরিক সংবাদ আসে তখন তারা অলৌকিক শব্দ শুনে এমনকি দৃশ্যাবলী দেখে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েন,কখনো কখনো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, শরীরে কম্পন ও হয়ে থাকে। নীরিক্ষায় দেখা গেছে যে,সাধারন মানুষের তুলনায় ধার্মীক ব্যাক্তিদের দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া সহজ। তুলনামূলক নিম্নরক্তচাপে ভোগেন। কখনো কখনো অধিক আয়ুষ্কাল প্রাপ্তিও দেখা গেছে।



আপনার মনে কি কোনদিন এই প্রশ্নটি উঠেছে? আমরা কেন স্রষ্টার কথা ভাবি? মানুষের মনে কেন ধর্মানুভূতি জাগে? হয়তো বলবেন, স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনার মতই স্রষ্টার কথা মনে আসে। জবাবটা কেমন যেন মানানসই হলনা! একটা কথা ভেবে দেখুন, মানুষ কখন ভাবে? যখন তার ভাবনার প্রয়োজন হয়-ক্ষুদা লাগলে খাবার কথা ভাবে; ব্যথা পেলে যন্ত্রনায় কাতরায়;আবেগ ভালবাসায় উদ্ভেলিত হয়; অর্থাৎ কোন একটা প্রয়োজনীয় সূত্র ধরেই মানুষের চিন্তাভাবনার সূত্রপাত ও তার দীর্ঘায়ণ ঘটে। কিন্তু স্রষ্টার কথা ভাববার জন্যে মানুষের এমন কোন প্রয়োজন নেই। মায়ের কোলে শিশুটি যখন কাঁদে তখন সে কিন্তু স্রষ্টার চিন্তায় নয়,পেটের ক্ষুদা বা কোন যন্ত্রনায়। কিন্তু মজার বিষয় হল এই শিশুটিই যখন বয়ঃক্রমে জ্ঞান বুদ্ধির অধিকারী হয় তখন আপনাতেই সে স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে শুরু করে। হয়তোবা বলবেন, সে তার বাবা মাকে ভাবতে দেখে প্রভাবিত হয়। পিছন দিকে ফিরে তাকান, সেই আদিম যুগের মানুষ কেন সূর্যকে দেখে তার প্রণাম নিবেদন করেছিল? হয়তো সে ভেবেছিল শক্তিধর এই নক্ষত্রটিই তার দেবতা। ইতিহাসের পাতায় হয়তো দেখে থাকবেন আদিম যুগের মানুষ যখন ভবতে শিখেনি, উলঙ্গ দেহে বনে-বাদারে ঘুরে বেড়াত তখনও কিন্তু তার অর্চণা নিবেদন করতো কোন না কোন কল্পিত দেবতার উদ্দেশ্যে। তাহলে যে বিষয়টি এসে দাঁড়াল তা হল, যে ভাবেই হোক মানুষের মনে স্রষ্টার চিন্তা হওয়া মানবদেহেরই কোন অঙ্গের ক্রিয়া। মানুষের মস্তিস্কে থাকা গড স্পটই মানুষের স্রষ্টার চিন্তা সৃষ্টি করেছে। মানবদেহ মানুষকে স্রষ্টার কথা ভাবতে বাধ্য করেছে। মানুষ যখন মসজীদ,গীর্জায় প্রার্থনায় বসে তখন তার মনে একটা অপরাধবোধ উৎপন্ন হয়। সুখের বিষয় এই যে স্রষ্টায় বিশ্বাসী না হলেও তাঁকে (স্রষ্টাকে) নিয়ে ভাববার মত বিশেষ স্থান মানুষের মস্তিস্কে রয়েছে। মানুষকে আধ্যাতিকতায় মগ্ন করার জন্যে মস্তিস্কে রয়েছে এন্টিনা। অনেকের মতে ধর্মানুভূতি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে; কারণ অধ্যাতিকতা মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবকে উজ্জিবীত করে। আর এ জন্যেই স্রষ্টা আমাদেরকে ছেড়ে যেতে পারেননা। আধ্যাতিকতার এই ‘উজ্জীবনে’ মুসলমানরা অবিশ্বাসীদের মত বিশ্বাস করেনা যে,‘স্রষ্টা’ মানব মস্তিস্কের সৃষ্টি।একটা বিষয় লক্ষ্য করুন,সেই আদিম মানুষ যখন তার নিত্য প্রয়োজন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারতোনা তখন কিন্তু ঠিকই সে স্রষ্টাকে নিয়ে ভবতো। দু’হাত তুলে অজানা স্রষ্টার উদ্দ্যেশ্যে তার মনের প্রণতি নিবেদন করতো।

যাই হোক সমগ্রিক আলোচনা থেকে একটা বিষয় পরিস্কার যে,মানুষের মস্তিস্কে ধর্মানুভুতি সৃষ্টির ব্যবস্থা রয়েছে; যার উদ্দীপ্ততা মানুষকে কঠোর ধর্মানুরাগী করে তোলে। মস্তিস্কের এই বিশেষ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে যদি তার স্রষ্টার কোন যোগসূত্র স্থাপিত হয় তাতে অবাক হওয়ার । আবার মৃগী বা সণ্যাস রোগে আক্রান্ত রোগীর ধর্মানুরাগকেও সাধারন বলা চলেনা। বিষয়টি সম্পূর্ণই নির্ভর করে মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবের সহনশীলতার উপর। বিজ্ঞান বলছে এই টেম্পোরাল লোবই মানুষের মনোজগত হিসেবে কাজ করে; আর উপরের সার্বিক আলোচনা থেকে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে,মানুষের এই মনোজগতে স্রষ্টাকে নিয়ে ভাববার একটা পরিবেশ রয়েছে,যা স্রষ্টাকে সংযুক্ত করে তার সৃষ্টির সাথে। মহান স্রষ্টা সম্ভবত সৃষ্টির প্রাক্কালে মানুষের মস্তিকেই এঁকে দিয়েছেন এই বিশেষ কেন্দ্র।

‘তিনি স্বীয় নির্দেশে বান্দাদের মধ্যে যার কাছে ইচ্ছা, নির্দেশসহ ফেরেশতাদেরকে এই মর্মে নাযিল করেন যে, হুশিয়ার করে দাও, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব আমাকে ভয় কর।(সুরা-আন-নহর, আয়াত-২)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২১
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×