somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরেস্তারা (দেবতারা) আকাশ থেকে এসে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা আল্লারই পরিকল্পনা। ফেরেস্তা দেবতা (কথিত ভীনগ্রহ বাসী) সব একই । (পর্ব১)

১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষ কি সহজেই নিজ থেকেই তার জ্ঞানের চুড়ান্ত বিকাশ ঘটিয়েছে? শরীরে পোষাক পড়তে হবে অন্য সকল পশু হতে তাকে আলাদা হতে হবে সংক্রান্ত মানুষের পোষাক আবিস্কার, মানুষের কথা বলা শেখা, পশু পালন, নৌকা আবিস্কার, কৃষি কাজ উপলদ্ধি, স্থাপত্য শিল্পের আবিস্কার, লিখন পদ্ধতির আবিস্কার, চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নয়ন ? মানব জাতির জীবনে এত উন্নয়ন কি আপনা আপনি ঘটেছে নাকি এর মধ্যে কোন রহস্যময়তা বিদ্যমান ছিলো? আমি কিন্তু ভাবি অন্য কথা! সভ্যতার উন্মোচনের দিকে তাকালে দেখা যায় সভ্যতার উত্থানের পিছনে রয়েছে ধর্ম। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধর্ম বা ধর্মপ্রবর্তক সভ্যতা বিকাশের কারিগর হিসেবে কাজ করেছে। কোথাও কোথাও কখনও দেখা গেছে সেই ধর্মপ্রবর্তককে দেবতা জ্ঞানে পূজা করা হয়েছে। আর সেই ধর্মপ্রবর্তেকের কাছে দেবতা বা ফেরেস্তা নামক কোন প্রাণির আগমন ঘটেছে যা ধর্ম মানবজাগরনে গুরুত্বপূন বিষয় হিসেবে দেখা গেছে যুগে যুগে। ধর্মপ্রবর্তকের অধীনে লাখ লাখ মানুষের একাত্মতা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। আর এই একাত্মতা ঘটার পিছনে ছিলো ধর্মপ্রবর্তকের বৈপ্লবিক চিন্তাচেতনা ! আমরা জানি ইদানিং ডলফিনকে ট্রেনিং দিয়ে মানুষ সমুদ্রের গভীরে কর্মকান্ড করিয়ে নিচ্ছে। বানর কে শিক্ষা দিয়ে মানুষ বিভিন্ন খেলা শিখিয়ে টাকা রোজগার করছে। কুকুরকেও শিক্ষা দিয়ে মানুষ তার প্রয়োজন মিটাতে ব্যবহার করছে। তাহলে মানব জীবনে কি স্রষ্টার এমন কোন হস্তক্ষেপ ছিলো না যাদ্বারা মানবজাতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষা পেয়ে উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছে? আমিতো মানুষের এই উন্নয়নের পিছনে স্রষ্টার হস্তক্ষেপ স্পষ্ট লক্ষ্য করছি ? আমি ধারাবাহিকভাবে মানব সভ্যতার প্রাগঐতিহাসিক উন্নয়নগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। মানবসভ্যতার যে প্রাথমিক উন্নয়ন গুলো না হলে মানুষেরজীবনে এত উন্নয়ন হওয়া সম্ভব হতো না। (তবে এই পর্বে মানুষের জ্ঞানবৃক্ষ খ্যাত পোষাক আবিস্কারের গল্প নিয়ে তেমন কিছু বলবো না কারন জ্ঞানবৃক্ষ খ্যাত সময়কাল নিয়ে আমি আরেকটি পর্বে আলোচনা করবো। এ পর্বে মানুষের কথা বলার ইতিহাসটা আলোচনা করবো এবং আরো একটি পর্বে মানুষের লিখনপদ্ধতি আবিস্কার সংক্রান্ত বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করাবো পশুপালন অন্যান্য পর্বে কৃষি কাজ শেখা, চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার তথা মিশরের সভ্যতার ধর্মীয় উন্মাদনা যা রহস্যমায় পিরামিডের আবিস্কারসহ সকল বিষয় তুলে ধরবো। )

মানুষের সভ্যাতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় হোমো সেপিয়েন্সের শুরুতে জ্ঞানবৃক্ষ জনিত ঘটনা বা মানবজাতির জীবনে পোষাক আবিস্কার ছিলো একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। এই ঘটনাটি মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে। মানবজাতির জীবনে পোষাক আবিস্কার তার চিন্তা চেতনাকে মেরুকরন করে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে গেলেও পশুত্ব থেকে সদ্য বিচ্ছিন্ন হওয়া মানুষের জীবনের তেমন কোন পরিবর্তন হয় নাই যতদিন পর্যন্ত মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করতে না পেরেছে। মানুষ সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মানুষের কথা বলা শেখাটাই ছিলো চমকপ্রদ উন্নয়নমূলক একটি মাইলফলক ঘটনা। কথা বলা শেখার পরেই মানুষ জাতির ঐতিহাসিক উন্নয়ন শুরু হয়। ধাপে ধাপে মানুষের পশুত্ব থেকে মনুষত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু মানুষ কথা বলা শিখলো কি করে? কে তাকে বোঝালো কন্ঠ থেকে বেরোনো সুর জিহ্বা ঘুরিয়ে পেচিয়ে পরিবর্তন করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। বিভিন্ন শব্দ চয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুুর নামকরন করে এক একটি বিষয় নির্ধারন করা যায়? কে তাকে শেখালো এই নামকরন করা? একটি গরুকে গরু বলতে হবে, একটি ছাগলকে ছাগল বলতে হবে, একটি মুরগীকে মুরগী বলতে হবে। আকাশকে আকাশ বলতে হবে। এই নামকরন করা মানবসভ্যতার চুড়ান্ত উন্নয়নের দ্মার উন্মোচরন করে। এই নামকরন করাইবা মানুষ শিখলো কি করে? কে তাকে শিখালো নামকরন করা?

পৃথিবীতে মানুষই হলো একমাত্র প্রাণী যাদের ভাষা আছে, এই ভাষার কারণে আমরা অন্যসব প্রাণী থেকে আলাদা হয়েছি," নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাগি টলারম্যান সত্যি একটি মহান সত্যি কথা বলেছেন ! আমাদের মানুষের উন্নয়নের চুড়ান্ত শিখরে আরোহন করার একটি মাত্র কারন যে মানুষেরা খুব সহজেই তার মনের ভাব প্রকাশ করাতে পারে। ভাষা আবিস্কারের প্রয়োজনীয়তা সর্ম্পকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইতিহাসবিদ ড. লরা রাইট বলেন ‘এই আড্ডা মারার মতো করে কথা বলার গুরুত্বও কম ছিল না। টুকটাক কথা বলা, পরচর্চা বা গসিপ এগুলো প্রতিদিনেরই অংশ- আর একসকল কারনে মানুষের জীবনে ভাষা আবিস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ’ কিন্তু মানুষের এই কথা বলার পিছনে তার শারীরিক সক্ষমতা কি ছিলো? নাকি মানুষের বিবর্তেনের মধ্য দিয়ে মানবজাতি কথা বলার মতো যোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছিলো। আদি মানুষের মস্তিষ্কের গাঠনিক অবস্থানের সাথে ভাষার উৎপত্তির সম্পর্ক স্থাপন করা খুবই কঠিন। আদিম পৃথিবীতে মানুষের আগেই এসেছিল এপরা। এই এপদের গলায় বড় আকারের বায়ুথলী ছিল। এটা দিয়ে তারা 'গোঁ গোঁ' ধরনের শব্দ করে প্রতিপক্ষ বা অন্যান্য প্রাণীকে ভয় দেখাত। বেলজিয়ামের ফ্রি ইউনিভার্সিটি অফ ব্রাসেলসে বিজ্ঞানী বার্ট দ্য বোর সিমুলেশন করে দেখিয়েছেন। মানুষের ভাষার পেছনে স্বরবর্ণ, যাকে বলে, আবশ্যক। এপদের মধ্যে এ ধরনের বায়ুথলী ছিল ঠিকই, সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের বায়ুথলী স্বরবর্ণের উচ্চারণে বাধা দেয়। কিন্তু হোমো হাইডেলবার্জেনিস প্রজাতীর দেহে এরকম কিছু দেখা যায় না। এই হোমো হাইডেলবার্জেনিস থেকেই পরে নিয়ান্ডারথাল ও স্যাপিয়েন্সরা এসেছে বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া কিছু কিচু বিজ্ঞানীদের মতে মানুষ যখন সোজা হয়ে দাড়াতে শিখতে শুরু করে তখন থেকেই মানুষের বাগযন্ত্র সোজাসুজি অথাৎ L আকৃতির হতে শুরু করে। মানুষের সোজা হয়ে হাটার কারনে তার কন্ঠনালী পারফেক্ট হতে থাকে। আধুনিক মুখের ভাষাগুলির বিভিন্ন ধ্বনি উচ্চারণের জন্য মানুষের বিশেষ উল্টো Lআকৃতির বাগনালী প্রয়োজন, এবং স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংক্সের গলার বেশ ভেতরে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নিয়ানর্ডাথালদের পূর্বের শ্রেনির মাঝে জৈবিক কাঠামো, শ্বসনতন্ত্র, কণ্ঠের অবস্থা ইত্যাদি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছিলো। আধুনিক মানুষ তথা হোমো সেপিয়েন্স এর পূর্বের নিয়ান্ডারথালদের দৈহিক বাকযন্তু বা অণ্যান্য বিষয়বস্তু কথা বলার জন্য উপযোগী ছিল৷ বক্ষ ও উদরের মাঝখানের ঝিল্লিতে নার্ভের সংখ্যা বেশি হলে এবং স্পাইনাল কর্ড মোটা হলে তা কথা বলার পক্ষে সহায়ক ছিলো। এমনকি কথা বলার মূল চালিকা শক্তি FXP2 নামের একটি জিন নিয়ানডার্থাল শ্রেনির মাঝে বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে নিয়ান্ডার্থাল মানুষদের মধ্যে ল্যারিংক্সের অবস্থান গলার বেশ উপরের দিকে ছিল এবং এই কারনেই তাদের পক্ষে বর্তমান মনুষ্য ভাষার ধ্বনিগুলি উচ্চারণ করা সম্ভব ছিল না। আধুনিক মানুষের কথা যদি ভাবি, মস্তিষ্ক থেকে মেরুদণ্ড হয়ে অনেক অনেকগুলো স্নায়ু ডায়াফ্রাম এবং পাঁজরের মধ্যকার পেশীতে এসে যুক্ত হয়েছে। ঠিকভাবে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ও যথার্থ শব্দ করার জন্য এগুলো জরুরি ভূমিকা রাখে। এই একই জিনিস নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও দেখা যায়। নিয়ানডার্থালরা বিভিন্ন রকম শব্দ করা বা কিছুটা ইশারা ইঙ্গীতের মাধ্যেমে কিচুটা মনের ভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করলেও নিয়ানডার্থালরা আসলে ভাষা আবিস্কার করে উঠতে পারে নাই অথাৎ কোন বস্তুর নামকরন করার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বস্তুর পরিচয় সৃষ্টির বিষয়টি তাদের মাথায় আসেনি । কথা বলাল মতো গো গু শব্দ করা ছাড়া চিৎকার করে কোন কিছু বোঝানো ছাড়া তেমন কোন শব্দ বা বস্তুর নামকরনের মাধ্যমে ভাষার সৃষ্টির কোন গ্রহনযোগ্য কোন প্রমান নিয়ানর্ডাথালদের আমলে পাওয়া যায় নি। এককথায় বলা যায় মানুষের কথা বলার মতো দৈহিক প্রস্তুতি নিতে প্রায় কয়েক লক্ষ বৎসর লেগেছিলো। আধুনিক কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক এর গবেষনা জানা যায় ভাষার উৎপত্তির প্রাচীন যে ঐতিহাসিক প্রমান পাওয়া যায় তা হলে তা হলো হোমো সেপিয়েন্সদের বসতি গড়ার মধ্য দিয়ে। তারাই ভাষা আবিস্কার করেছিলো বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। প্রত্নতাত্ত্বীকদের গবেষনা অনুসারে সেই সময়কাল প্রায় ৪০/৫০ হাজার বৎসরের প্রাচীন।



মস্তিষ্কের যে অংশ কথা নিয়ন্ত্রণ করে FOXP2 জিন যার জন্য আমরা মুখ মধ্যে প্রয়োজনীয় নড়াচড়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। FXP2 নামের এই জিনটি স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর শরীরেই আছে। কিন্তু মানবদেহে যেটি আছে সেটি এর রূপান্তরিত জিন," মানুষের কথা বলার জন্য এই রুপান্তরিত জীনটি কৃতিত্ব বহন করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানব দেহে এই জীনটি রুপান্তরিত হলো কি করে? কথা বলা ও ভাষার বিকাশে এই জিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ যেসব মানুষের শরীরে এই জিনটি রূপান্তরিত অবস্থায় থাকে না, তাদের কথা বলতে অসুবিধা হয়।" আর যাদের মধ্যে রুপান্তরিত অবস্থায় থাকে তারাই কথা বলতে পারে। যেমন গরিলা ওরাং ওটাং এর এই জিনটি রুপান্তরিত অবস্থায় নেই। কোন না কোন ভাবে কোন মিউটিশন মানব দেহে এই জীনটিকে রুপান্তরিত অবস্থায় পরিবর্তন করেছিলো। আর যাই হোক দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ায় মানব দেহটাও কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কিন্তু এই পরিবর্তন অন্য কোন প্রাণির দেহে ঘটলো না ঘটলো আল্লাহর নির্ধারিত প্রানি মানুষকে যাকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েচে তার মাঝে? নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও এই জিন ছিল, কিন্তু এতটা উন্নত ছিল না। আর এই কারনে জার্মান মনোবিজ্ঞানী উইলহেম উন্ড ভাষার উৎপত্তি নিয়ে যতো তত্ত্ব ও প্রস্তাবনা আলোচিত হয়েছে তা দেখে তিনি প্রশ্ন করেছেন মানব জগতে ভাষার আবির্ভাব ও ব্যবহারের সক্ষমতা কি কোন ‘ঐশ্বরিক দান’ নাকি?

একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলে আমরা লক্ষ্য করবো মানুষের ভাষা শিক্ষাটা একটি অলৌকিক বিষয়। ইতিহাস আমাদের বুঝতে শেখায় জ্ঞানবৃক্ষ জনিত ঘটনা বা হোমো সেপিয়েন্সদের মধ্য পোষাক পড়ার বাসনা থেকেই সুই সুতার আবিস্কার করে তার কিচুদিনের মধ্যেই অদ্ভুদভাবে হোমো সেপিয়েন্সরা কথা বলতে শুরু করে। বাইবেল অনুযায়ী বলা হয় ভাষা একটি ‘Divine Gift’ বা স্বর্গীয় উপহার। সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টির শুরুতেই মানুষের মধ্যে শুধু ভাষাই নয় বরং কথা বলার ক্ষমতাও দিয়ে দিয়েছেন। এবারে আমরা আল কোরআনের গুরুত্বপূন কিছু আয়াত নিয়ে আলোচনা করি। আল কোরআন মানবজাতির কথা বলা শিক্ষা নিয়ে কি বলেন? আল কোরআন বলেন- দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। -সূরা রহমান : ১-৪ " যার অর্থ দাড়ায় স্রস্টাই মানুষকে ভাব প্রকাশ করতে বা কথা বলতে শিখিয়েছেন। নীচের উল্লেখিত আয়াতগুলোতে আল্লা আদমকে নাম শেখানোর বিষয়বন্তু তুলে ধরেছেন। আয়াতটি লক্ষ্য করুন যে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর নাম সৃষ্ট বিষয় স্বয়ং আল্লা হতে। আল্লাই মানুষকে এসব নাম সৃষ্ট করতে শিখিয়েছেন-“আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, ‘হে আদম, এগুলোর নাম তাদেরকে জানাও’। অতঃপর সে এগুলোর নাম তাদেরকে জানাল।” (আল কোরআন সুরা বাকারা 31-33) প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন এই তিনটি আয়াতে আদমকে নাম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আল কোরআনে আদমের এই নাম শিক্ষা দেওয়া বিষয়টি ভাষা সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রয়াস ছিলো। আসলে ভাষা তখনই পূর্নতা পায় যখন নামকরনগুলো পূর্নাঙ্গরুপে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যখন একটি শিশুকে বিদেশী ভাষা শেখায় সর্বপ্রথম বিভিন্ন শব্দ শেখায় শব্দ মুখস্ত হলে ব্যকরন শেখায় এবং বাক্য গঠন শেখায়। আদিমকালে মানুষের সমাজে নানা প্রয়োজনে ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। তখন তারা বিভিন্ন জিনিসের নাম দিতে থাকে যাতে সবাই একটি জিনিসকে একটি নির্দিষ্ট নামেই চেনে। শিকার করতে গিয়ে তাদের সহচরদের বুঝতে সহায়তা করতে শিকার করা প্রাণিটিকে একটি নাম ধরে ডাকা শুরু করে। এই নাম সৃষ্টিই পরবর্তীতে ভাষা সৃষ্টি করে। আসলে ভাষার তখনই পূর্নাঙ্গতা পায় যখন পর্যাপ্ত শব্দের ভান্ডার বিদ্যমান থাকে। যেমন একটি বাক্য আমি বলি “আমি বইটি পড়ছি”। এখানে তিনটি শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করা হলো। এই তিনটি শব্দকে তিনটি নামকরন করা হয়েছে। যেমন আমি শব্দটি আমাকে বোঝাতে নামকরন করা হয়েছে। বই একটি বিষয় তাকে বই নামে নামকরন করা হয়েছে। পরবর্তীতে পড়া একটি কাজ তাকে পড়া নামে নামকরন করা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন নামকরন করার মধ্যেই হোমো সেপিয়েন্সরা ভাষা সৃষ্টির চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হতে থাকে।



প্রিয় পাঠক, কোন জিনিসটার নামকরণ কি হবে তা কিভাবে নির্ধারিত হয়? যেমন ধরুন, বৃক্ষের নাম কেন বৃক্ষ হলো? মাছের নাম কেন মাছ হলো? প্রজাপতির নাম কেন প্রজাপতিই হলো? প্রিয় পাঠক, আলাকোরআনে উল্লেখিত আদমের এই নাম তত্ব নিয়ে মহামান্য দার্শনিক প্লেটো তার ‘ক্র‍্যাটাইলাস’ গ্রন্থে বিষয়টির প্রমান্যতা আনয়ন করে। প্লেটোর ‘ক্র‍্যাটাইলাস’ বইয়ে জানা যায় দার্শনিক সোফিস্ট ক্র‍্যাটাইলাস দাবী করেছিলেন জগতের সবকিছুর নামকরণের পেছনে রয়েছে একজন ‘নামকর্তা’র ভূমিকা। সেই নামকর্তা হতে পারে স্বয়ং ঈশ্বর কিংবা আদিমকালের কোন পৌরাণিক বীর৷ ক্র‍্যাটাইলাস মনে করেন নামকর্তা নামকরণ করে প্রতিটা জিনিসের অন্তর্নিহিত প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। এই সোফিস্ট কর‌্যাটাইলাস একজন মানুষকে উল্লেখ করেছিলেন যিনি মানবজাতিকে নামকরন করা শিখিয়েছেণ। এবং সেই মানুষটি স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে নামকরন করার পদ্ধতি শিখেছিলেন। কিন্তু বিশিষ্ট দার্শনিক সক্রেটিস নাকি এই বিষয়টি মানেন নাই। (সক্রেটিস কোন দেব দেবী বিশ্বাস করতেন না। যদিও সক্রেটিসকে তৎকালীন রাজা হেমলক বিষ পানে মৃত্যু আদেশ কার্যকর করেন। ) সক্রেটিসের এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন “সেই নামকর্তা সবকিছুর নামকরন করলেন তবে সেই নামকর্তা সবকিছুর নামকরণ করলো যদি তার পূর্বে কোন ভাষার অস্তিত্বই না থাকে যার মাধ্যমে নামকর্তা কোন জিনিসের অন্তর্নিহিত প্রকৃতিকে ভাষার মাধ্যমে চিহ্নিত করতে পারেন?” তৎকালীন সময়ে সক্রেটিস ছিলেন জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে হিরো? তাই সক্রেটিসের এই প্রশ্নে সবাই ইতস্তত বোধ করেন। ভাবলেন আসলেও তো তাই ভাষায় যদি না থাকে তবে নামকরন কি হবে? সক্রেটিসের এই কাউন্টোরের মুখে খারিজ হয়ে যায় ক্র‍্যাটাইলাসের তত্ত্ব। নামকর্তার বিষয়টি আর এগুলো না এখানেই থেকে যায়।

প্রিয় পাঠক, সেই সময়ে কর‌্যাটাইলাসের তত্ত্ব খারিজ হয়ে গেলেও এই যুগে কিন্তু কিছু প্রশ্ন এসে যাই? নামকরন সৃষ্টির জন্য ভাষার প্রয়োজনীয়তা আদৌ কি খুব জরুরী? যেমন আমরা আমাদের সন্তানদের যখন ইংরেজী ভাষা শিখতে বলি। তখন তাকে হাজার হাজার শব্দ (ওয়ার্ড) মুখস্ত করতে বলি যখন তার মুখস্ত বিষয়টি সর্ম্পূন হয় তারপর তাকে ব্যকরন শিখায় কিংবা বাক্য গঠন শিখায়। প্রিয় পাঠক তাহলে আপনিই বলুনতো শব্দ গঠনের জন্য বা বিষয়বস্তু নামকরনের জন্য আদৌ কি ভাষার প্রয়োজণীয়তা থাকে? ইশারা ইঙ্গিতে কি সেটি সম্ভব নয়? সেই এপদের আমল থেকে নিয়ানর্ডার্থাল আমল পযর্ন্ত ইশারা ইঙ্গিতের ব্যপক ব্যকরন গঠন করেছিলো আদি মানুষেরা। তৎকালীন সময়ে সক্রেটিস প্রকৃত বিষয়টি আড়াল করে আসলে সুস্থ আলোচনা করতে না দিয়ে আলোচনা থামিয়ে দিয়েছিলো। সক্রেটিসের সময়কাল থেকেই ভাষার উৎপত্তি সংক্রান্ত আলোচনাগুলি ছিল ভাষাতাত্বিক এবং দার্শনিকদের প্রিয় বিষয় এ ব্যাপারে পরবর্তী ভাষা বিজ্ঞানী ফার্দিনান্দ দ্য সস্যুরের মতে প্রকৃতি জগতে বিভিন্ন জিনিসের নামকরণ হয়েছিল Signified (চিহ্ন) এর দ্বারা। প্রতিকী ভাবেই আসলে নামকরন করা হতো। যেমন আমি উদাহরন দিয়ে বলতে পারি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে অতএব কুকুরের নাম “ঘেউ”। বিড়াল মিউ মিউ বলে অতএব বিড়ালের নাম “মিউ”। আবার সমগ্র প্রাণি অর্থে প্রানীরা নড়াচড়া করে এবং জীবন আছে অতএব প্রাণিদের নাম “নড়াচড়াকারী জীবন” একটি প্রতিক সৃষ্টি করা হতো। ভাষা সৃষ্টির শুরুতে প্রকৃতি প্রদত্ত কোন বিষয়বস্তু দিয়েই প্রথমে নামকরন শুরু করা হয়। নামকরনের ভান্ডার প্রসার হওয়ার পর মানুষ ব্যকরন বানানো শুরু করে। শুরুতে ব্যকরণ বলে তেমন কিছু ছিলো না কেবল ভাব প্রকাশ হতে যতটুকু দরকার। সেই আদি যুগে কেউ ঘেউ বললেই অন্যেরা বুঝে নিতো কুকুর আবার কেউ মিউ বললেই বুঝে নিতো বিড়াল। সুতরাং তৎকালীন আমলের দেবতা অবিশ্বাসী মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত নাস্তিক সক্রেটিসের মন্তব্যে সেই যুগের মানুষেরা থেমে গেলেও এই যুগে সক্রেটিসের সেই মন্তব্য গ্রহনযোগ্যতা পাই না। নামকরনকর্তার প্রশ্নে সচেতন জাগরণের দরকার। ধর্মগ্রন্থগুলো তো এমনি এমনি বলে নাই স্রষ্টা মানবজাতিকে কথা বলতে শিখিয়েছেন। আর কোরআন বলে বাইবেল বলে স্রষ্টা আদমের জন্য ‘Divine Gift’ হিসেবে ভাষাকে দিয়েছিলো। শুধু তাই নয় প্লেটো ‘ক্র‍্যাটাইলাস’ বইতে যেবিষয়টি স্থান দিয়েছেলেন খেলার ছলে নয়। তাছাড়া ‘ক্র‍্যাটাইলাস’ এই তত্ত্ব অনুযায়ী ভাষার উদ্ভব একজন ব্যাক্তির কথা উল্লখ করেছিলেন আল কোরআন তাকে আদম বলছেন। আর আদম নামকরনের পদ্ধতিটি শিখেছিল স্রষ্টার কাছ থেকে। প্রিয় পাঠক আমাদের ভাষা উদ্ভব নিয়ে নতুন করে ভাবার দরকার এই গুরুত্বপূর্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি মানুষ আপনা আপনি শিখতে পারে কেমন করে যা অন্যান্য কোন প্রানি পারে নাই। অতএব আলকোরআনের কথাই ঠিক। আল্লাই মানবজাতিকে জ্ঞান সরবরাহ করেছে। এই মানবজাতির জীবনে বারেবার দেবতারা বা ফেরেস্তারা আকাশ থেকে এসেছেন মানবজাতিকে শিক্ষা দিতে। মিশরের তৎকালীন মমি করার পদ্ধতি যা ইউছুফ (আঃ) মানবজাতিকে শিখিয়েছিলেন। শুধু তাই নই চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইউছুফ আ: এর অবদান কি কম? তিনি মানবজাতির জীবনে চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যপক উন্নয়ন সাধন করেছেলেন। এমনকি তৎকালীন সময়ে শরীর অপারেশন করে চিকিৎসার পদ্ধতি মানবজাতি শিখেছিলো। আল্লা মানবজাতিকে লিখিতে শিখিয়েছেন। আল কোরআন বলছে আমিই মানুষকে লিখিতে শিখিয়েছি। আপনি মিশরের হাইরোগ্রাফিক লিখনপদ্ধতির ইতিহাস ঘেটে দেখুন। প্রথম লিখন পদ্ধতি আবিস্কারের ইতিহাস। তৎকালীন মিশরীরা বলতো দেবতারা আকাশ থেকে এসে তাদের লিখন পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে। ইহুদী ধর্মে যাকে বলে “এনখ” আর আমরা মুসলিমরা আলকোরআনের আলোকে তাকে বলি ইদ্রিস (আঃ)। তিনিই মানবজাতিকে লিখতে শিখিয়েছেন। এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। মানবজাতির ইতিহাসে স্থাপত্যকলা, নগরায়ন, কৃষি কাজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্রষ্টেই মানবজাতিকে শিখিয়েছে। আসলে জ্ঞানবৃক্ষ প্রয়োগ করে মানব মস্তিস্কে চিন্তা করার ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে স্রষ্টাই। এর একপর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে মানবজাতিকে বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দিয়ে মানবজাতিকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন যা ছিলো স্রষ্টার পূব পরিকল্পিত। আসলে সমস্তটাই ছিলো স্রষ্টার একটি পরিকল্পনা। শুধু মাত্র তিনি লুকায়িত আছেন কারন হলো নরক সৃষ্টি।
(আগামী পর্বে আমি তুলে ধরবো মানবজাতিকে লিখন পদ্ধতি শেখার বিষয়বস্তু এবং তার পর্যাপ্ত প্রমান সমূহ)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১৪
১৮টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×