মানুষ কি সহজেই নিজ থেকেই তার জ্ঞানের চুড়ান্ত বিকাশ ঘটিয়েছে? শরীরে পোষাক পড়তে হবে অন্য সকল পশু হতে তাকে আলাদা হতে হবে সংক্রান্ত মানুষের পোষাক আবিস্কার, মানুষের কথা বলা শেখা, পশু পালন, নৌকা আবিস্কার, কৃষি কাজ উপলদ্ধি, স্থাপত্য শিল্পের আবিস্কার, লিখন পদ্ধতির আবিস্কার, চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নয়ন ? মানব জাতির জীবনে এত উন্নয়ন কি আপনা আপনি ঘটেছে নাকি এর মধ্যে কোন রহস্যময়তা বিদ্যমান ছিলো? আমি কিন্তু ভাবি অন্য কথা! সভ্যতার উন্মোচনের দিকে তাকালে দেখা যায় সভ্যতার উত্থানের পিছনে রয়েছে ধর্ম। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধর্ম বা ধর্মপ্রবর্তক সভ্যতা বিকাশের কারিগর হিসেবে কাজ করেছে। কোথাও কোথাও কখনও দেখা গেছে সেই ধর্মপ্রবর্তককে দেবতা জ্ঞানে পূজা করা হয়েছে। আর সেই ধর্মপ্রবর্তেকের কাছে দেবতা বা ফেরেস্তা নামক কোন প্রাণির আগমন ঘটেছে যা ধর্ম মানবজাগরনে গুরুত্বপূন বিষয় হিসেবে দেখা গেছে যুগে যুগে। ধর্মপ্রবর্তকের অধীনে লাখ লাখ মানুষের একাত্মতা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। আর এই একাত্মতা ঘটার পিছনে ছিলো ধর্মপ্রবর্তকের বৈপ্লবিক চিন্তাচেতনা ! আমরা জানি ইদানিং ডলফিনকে ট্রেনিং দিয়ে মানুষ সমুদ্রের গভীরে কর্মকান্ড করিয়ে নিচ্ছে। বানর কে শিক্ষা দিয়ে মানুষ বিভিন্ন খেলা শিখিয়ে টাকা রোজগার করছে। কুকুরকেও শিক্ষা দিয়ে মানুষ তার প্রয়োজন মিটাতে ব্যবহার করছে। তাহলে মানব জীবনে কি স্রষ্টার এমন কোন হস্তক্ষেপ ছিলো না যাদ্বারা মানবজাতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষা পেয়ে উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছে? আমিতো মানুষের এই উন্নয়নের পিছনে স্রষ্টার হস্তক্ষেপ স্পষ্ট লক্ষ্য করছি ?
আমি ধারাবাহিকভাবে মানব সভ্যতার প্রাগঐতিহাসিক উন্নয়নগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। মানবসভ্যতার যে প্রাথমিক উন্নয়ন গুলো না হলে মানুষেরজীবনে এত উন্নয়ন হওয়া সম্ভব হতো না। যে উন্নয়নগুলো স্বয়ং স্রষ্টা ফেরেস্তা পাঠিয়ে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছে। কখন গন মানুষের সামনে কখন একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছে। পুর্বে আমি প্রথম পর্বে আমি উল্লেখ করেছি স্রষ্টা মানবজাতিকে কথা বলিতে শিখিয়েছে। যা প্লেটোর ক্রাইটালাস পুস্ততের লিখিত বক্তব্য দ্বারা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। বাইবেল অনুযায়ী বলা “ভাষা একটি বা স্বর্গীয় উপহার।” অথাৎ সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টির শুরুতেই মানুষের মধ্যে শুধু ভাষাই নয় বরং কথা বলার ক্ষমতাও দিয়ে দিয়েছেন। যা গত পর্বে মানুষের কথা বলার সক্ষমতা নিয়েও আলোচনা করেছি। যেমন আধুনিক মানুষ তথা হোমো সেপিয়েন্স এর কথা বলার জন্য উপযোগী ছিল৷ বক্ষ ও উদরের মাঝখানের ঝিল্লিতে নার্ভের সংখ্যা বেশি এবং স্পাইনাল কর্ড মোটা হবার কারনে তা কথা বলার পক্ষে সহায়ক ছিলো। এমনকি কথা বলার মূল চালিকা শক্তি FXP2 নামের একটি জিন যা অলৌকিক পর্যাযে রুপান্তরিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছি। যেমন একটি বিষয় নিয়ান্ডার্থাল মানুষদের মধ্যে ল্যারিংক্সের অবস্থান গলার বেশ উপরের দিকে ছিল এবং এই কারনেই তাদের পক্ষে বর্তমান মনুষ্য ভাষার ধ্বনিগুলি উচ্চারণ করা সম্ভব ছিল না। এককথায় বললে বলা যায় কথা বলার মতো দৈহিক গঠন দীঘদিন ধরে মানুষের মাঝে পূর্নতা পেয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার মানুষের কথা বলার জন্য শব্দ সৃষ্টির যে প্রচেষ্টা তাও স্রষ্টার পক্ষ থেকে শেখানো যা আল কোরআনে নামকরন বিষয়ক আয়াতে উল্লেখিত। যা গত পর্বে আলোচনা করেছি। আমাদের প্রথম নবী ও রাসুল আদম আঃ নামকরন করা শিখেছিলো।তিনিই প্রথম ভাষা আবিস্কারের পথ সৃষ্টি করেন। যা পরবর্তীতে ভাষাগত ব্যাকরণ ও পূনাঙ্গ ভাষার উদ্ভব করে। ভাষার উৎপত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আল কোরআন বলেন- “দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।” -সূরা রহমান : ১-৪ " যার অর্থ দাড়ায় স্রস্টাই মানুষকে ভাব প্রকাশ করতে বা কথা বলতে শিখিয়েছেন। আর বাইবেলে বলা হয়েছে “ভাষা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে একটি স্বর্গীয় উপহার।”
এবারে আমরা এই ২য় পর্বে আদম আঃ এর পরবর্তী নবী ইদ্রীস আঃ এর উপর আল্লার তরফ থেকে লিখন পদ্ধতি শেখানো সম্পর্কে আলোচনা করবো। অথাৎ আজকের আলোচনায় প্রমান করার চেষ্টা করবো মানবজাতির লিখন পদ্ধতি আবিস্কারে স্বয়ং স্রষ্টার পক্ষ থেকে ফেরেস্তারা পৃথিবীতে এসে মানবজাতিকে লিখনপদ্ধতি শিখিয়েছে।এ মর্মে আল কোরানে উল্লেখ ‘‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমানে সৃষ্টি করেছেন। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আলাক থেকে। পড়,আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’’ সুরা আলাক ১-৫। আল কোরআন প্রকাশ্যে ঘোষনা করে যে মানুষকে আল্লা লিখতে শিখিযেছে। যা মানুষ জানে না। আল কোরআনের এত বড় মাপের চ্যালেঞ্জ। নিশ্চয় যুক্তিসঙ্গত। নইলে এতবড় অহং বোধ নিয়ে মানবজাতিকে দেওয়া ঘোষনা অমূলক হয়ে পড়তো। আল কোরআনের ঘোষনার পরিপেক্ষিতে ইতিহাস আমাদের এখন যথেষ্ট প্রমান তুলে ধরেছে।
প্রিয় পাঠক, হাইরোগ্রাফিক্স শব্দের অর্থ নিশ্চয় বোঝেন। যার বাংলা অর্থ পবিত্র বর্ণমালা। মিশরীয়রা জানে দেবতারা আকাশ থেকে এসে মানুষকে লিখতে শিখিয়ে দিয়ে গেছে। প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় হায়ারোগ্লিফকে ‘মেদু নেতজার' নামে ডাকা হতো, যার অর্থ 'দেবতাদের শব্দ'। কারণ বিশ্বাস করা হতো যে লেখা সরাসরি দেবতাদের কাছ থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। মিশরীয় পুরাণ অনুযায়ী, দেবতা 'থট' মিশরের বাসিন্দাদের মাঝে জ্ঞানের জ্যোতি ছড়িয়ে দেয়া এবং স্মৃতিশক্তিকে শান দিয়ে ধারালো করে তোলার জন্য তাদেরকে লিখন পদ্ধতি শিখিয়েছিল। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন দেবরাজ 'রা'। তার মতে, মানব জাতিকে লিখন পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়ার ফলে তাদের স্মৃতিশক্তি ক্রমশ লোপ পাবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে লোকমুখে কাহিনী ছড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাসটাও সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাবে মহাকালের গর্ভে। রা'র মতের বিরুদ্ধে গিয়েই থট মিশরীয়দের সবক দিয়েছিল লেখালিখির। বিভিন্ন চিত্র ব্যবহারের করে হাইরোগ্রাফিক্সকে হেরোডোটাস সহ প্রাচীন গ্রিসের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ মনে করতেন, এগুলো ছিল ঈশ্বরের পবিত্র লিপি। হায়ারোগ্লিফ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ হায়ারো (পবিত্র) ও গ্লাইফো (লিপি) থেকে। মিসরে এসে গ্রিকরা এই লিপির সঙ্গে পরিচিত হয়। হায়ারোগ্লিফিক লিপির প্রচলন ঠিক কবে থেকে তা নিয়ে ভাষাবিদদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। অনেক ভাষাবিদের মতে, ফারাও রাজা মেনেসের রাজত্বকালে এই লিপির সূচনা হয়। তাঁদের ভাষ্য, হায়ারোগ্লিফের শুরু সুমেরীয়দের আবিষ্কৃত লিখন পদ্ধতির পরপরই, আনুমানিক ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। হায়ারোগ্লিফে লেখার পদ্ধতি ছিল যথেষ্ট জটিল। ফলে এটা আসলে সাধারণ মানুষের ভাষা হয়ে ওঠেনি। এ লিখন পদ্ধতিতে ভিন্ন ধরনের প্রায় ২০০০ প্রতীক ছিল। ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল এ লিপিতে। ছিল না কোনো স্বরবর্ণ কিংবা বিরতিচিহ্ন। এই লিপি লেখা হতো ওপর থেকে নিচে, বাঁ থেকে ডানে বা ডান থেকে বাঁয়ে। আবার কোনো কোনো সময় ডান থেকে শুরু হয়ে পরের লাইনে আবার বাঁ থেকে। আসলে অঙ্কিত মানুষ বা পশু-পাখির মুখ যেদিকে ফেরানো থাকত,সেদিকটা সে লাইনের শুরু বলে ধরে নেওয়া হতো।মিশরীয় চিত্রলিপি উদ্ভাবনের সমসাময়িক মেসোপটেমীয় কীলকলিপির উদ্ভব। মিশরিয় লিপি থেকে কীলকলিপি সামান্যটুকু ভিন্ন, কিন্তু ধারণাগত সাদৃশ্য প্রাচীণ সাক্ষ্য থেকে অনুমান করা যায় যে লিখনপদ্ধতি মেসোপটেমিয়া থেকে মিশরে এসেছিল।
ইহুদী ইস্ররাঈলী ধর্মের একজন নবী ছিলেন এনখ । ঈশ্বরের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল সরাসরি, ‘স্বর্গের প্রহরি ’ এবং পতিত দেবদূত দের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন । ঐতিহাসিকভাবে জানা যায় ঐ সময়কালের পুথিতে ঈশ্বরকে দেবতা থট নামে ডাকা হতো। আপনি যদি ইহুদী পুথি এনখের পুথি পড়েন তবে বুঝতেন ইহুদীদের প্রাচীন নবী যিনি আদমের পরে পৃথিবীতে এসেছিলেন। নাম তার এনখ। সেখানে লিখা আছে আকাশ থেকে ঈশ্বর প্রতিনিধি পাঠিয়ে এনখকে লিখন পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর এটি নাকি ঈশ্বরের তরফ থেকে মানুষের জন্য অসামান্য দান। এই এনখ কে খ্রিষ্টিয় ধর্মেও এনখ নামেই অভিহিত করা হয়েছে। বাইবেলের ওল্ডটেষ্টামেন্টে এনখ নামেই তাকে ডাকা হয়। কিন্তু এই এনখ মুসলিম ধর্মে এসে ঈদ্রীস নাম পেলো। আল কোরআনে ঈদ্রীস আঃ তথা এনখকে নিয়ে ২টি আয়াত রয়েছে। বলা আছে-তিনিই প্রথম মানব যিনি কলমের দ্বারা লিখা ও কাপড় সেলাই আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর পূর্বে সাধারণতঃ মানুষ পোশাকের পরিবর্তে পশুর চামড়া বা গাছের পাতা বা ছাল ব্যবহার করতো। ওজন ও পরিমাপ পদ্ধতি সর্বপ্রথম তিনিই আবিষ্কার করেন এবং অস্ত্র-শস্ত্রের আবিষ্কারও তাঁর আমল থেকেই শুরু হয়। তিনিই অস্ত্র তৈরি করে তা দিয়ে কাবীল সন্ত্রাসী গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। সর্ব বিবেচনায় এখন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিত হলো আল্লাহর তরফ থেকে আসা ঐশী বাণী যা হযরত ইদ্রিস (আ-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম বিকাশ ঘটে। ইদ্রিস (আঃ) সাঃ যিনি মুসলমানদের নিকট হযরত ইদ্রিস (আঃ) সাঃ নামে পরিচিত, ইসলামী ইতিহাস অণুসারে মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত দ্বিতীয় নবী। মুসলমানদের বিশ্বাস অণুসারে তিনি ইসলামের প্রথম নবী আদম এর পর স্রষ্টার নিকট হতে নবীত্ব লাভ করেন। তিনি ইরাকের বাবেলে জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবন সম্পর্কে যতোটুকু জানা যায়, তা হলো ছোটবয়সে তিনি শীষ এর ছাত্র ছিলেন। বড় হওয়ার পর আল্লাহ তাকে নুবুওয়্যত দান করেন। তখন তিনি আদম এর ওপরে অবতীর্ণ শরীয়ত ত্যাগ করতে মন্দলোকদের নিষেধ করেন। অল্পকিছু লোক তার আহ্বানে সাড়া সৎপথে ফিরে আসলো। আর অধিকাংশ মানুষই তার বিরোধিতা করলো।তা্ই তারা জীবনের নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন। এই কারনেই তিনি তার অণুসারীদের নিয়ে দেশ ছেড়ে যেতে মনস্থ করলেন। কিন্তু তার অণুসারীরা মাতৃভূমি ছাড়তে গড়িমসি করে বললো, বাবেলের মতো দেশ ছেড়ে গেলে এমন দেশ আর কোথায় পাব? উত্তরে তিনি বললেন যদি আমরা আল্লহর জন্য হিজরত করি তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে এরচে উত্তম প্রতিদান দেবেন। এরপর তিনি নিজের অণুসারীদেরসহ দেশ ছেড়ে রওয়ানা হলেন এবং একসময় মিশরের নীলনদের তীরে এসে পৌঁছলেন। এ জায়গা দেখে তারা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং এখানেই বসবাস করতে লাগলেন।
প্রাচিন ইহুদী কাহিনী বলে, এনখ তার সব বিষয়ের জ্ঞান তিনি আহরন করেছিলেন আদমের নীল কান্ত পুথি থেকে । লোকেরা তাকে ঘিরে বসত, আর তিনি নীল কান্ত মনির জ্ঞান প্রচার করে তাদের শিক্ষিত করে তুলতেন । একদিন তাকে ঘিরে সকলে বসে আছে এমন সময় কান ফাটানো শব্দ করে অগ্নি গর্ভ রথ আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসে। এনখ তাদের বলে ‘আমারই কারনে অগ্নিগর্ভ রথ নেমে এসেছে । সময় উপস্থিত হয়েছে দিন ক্ষন প্রস্তুত, এই বার আমাকে যাইতে হবে । এবং অদ্য হতে আর কোন দিন তোমরা আমাকে দেখতে পাবে না । এনখ অগ্নি গর্ভ রথে করে স্বর্গে চলে গেলেন । ইহুদী রা জানে এনখ স্বশরীরে স্বর্গে চলে গেছেন । আদি পুস্তকে বলা আছে—“মথূশেলহের জন্ম দিলে পর হনোখ তিনশত বছর ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিলেন এবং আরও পুত্র কন্যার জন্ম দিলেন। সর্বসুদ্ধ ৩৬৫ বৎসর রহিলেন । হনোক ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন। পরে তিনি আর রহিলেন না কেননা ঈশ্বর তাহাকে গ্রহন করিলেন ।” (বাইবেল,আদি পুস্তুক ৫ঃ২১-২৪)।আমাদের ইসলামী দৃষ্টিভগঙ্গীতে ইদ্রীস আঃ ই ঈহুদীদের এনখ। ইদ্রীস (আঃ) স্বশরীরে বেহেস্তে গেছেন । এনখ বা ঈদ্রীস (আঃ) মিশরে সভ্যতায় প্রথম পিরামিড ও বাবরী নির্মান করেন । এই সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল-‘আমাকে খোদার তরফ থেকে এমন একটি আসমানী আপদের প্লাবনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে’। এবং এ দৃশ্য অবলোকন করে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিল্প বানিজ্যের ক্ষয় ক্ষতি সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং পিরামিড ও বাবরী নির্মান করে, তাতে সব রকমের শিল্প বানিজ্যও নব আবিস্কৃত যন্ত্রপাতির ছবি অংকন করেন এবং সব রকমের জ্ঞান বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করে রাখেন। যাতে সর্ব গ্রাসি বন্যার কারনে এগুলো একেবারে নিঃশেষ হয়ে না যায় । এই পিরামিডের প্রাযুক্তিক নকশাও তিনি দেবতাদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। যদিও পিরামিডের পূনাঙ্গ প্রকাশ ঘটে নবী ইউচুফ (আঃ) এর সময়। কিন্তু ইদ্রিস আঃ পিরামিড শিল্পের মুল উদ্যোক্তা। পিরামিড নিয়ে ইউছুফ আঃ পর্বে আমি লিখবো।
প্রচীন ইহুদী পুথিতে এনখ এবং নোয়া কে নিয়ে একটি গল্প আছে । গল্প টি হলো এ রকম – নোয়া (নূহ আঃ)'র বাবা লামেক ছিলেন সঙ্গীত বিশারদ । তিনি গাইয়ে বাজিয়ে দের দলে থাকতেন । অনেক দিন পর তিনি যখন বাড়িতে আসেন, দেখেন তার ফুটফটে দেব সন্তানের মত একটি সন্তান হয়েছে । সন্তানটি এত সুন্দর ছিল যে লামেখ তার সন্তানকে দেখে বিশ্বাস করতে পারলেন না যে এটি তার নিজের সন্তান ।তিনি তার স্ত্রীকে অবিশ্বাস করতে লাগলেন । তার স্ত্রী তাকে অনুনয় বিননয় করতে লাগলেন বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে এটি তার নিজের সন্তান । অবশেষে লামেখ গেলেন জ্ঞানী এনখের কাছে সমস্ত টাই খুলে বললেন এনখ সন্তান টিকে দেখে চিনতে পারলেন । এনখ লামেখ কে বললেন তুমি চিন্তা করোনা তোমার এই সন্তান দেব বংশদ্ভূত হয়ে জন্ম নিয়েছে আগামিতে পৃথিবীর বুকে যে মহা প্লাবণ আসছে, সেই প্লাবণের হাত থেকে তোমার এই সন্তানের বংশধরই কেবল মাত্র রক্ষা পাবে । তুমি কোন চিন্তা করো না, শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যাও এর নাম রাখ নোয়া। জানা যায় এই এনখ বা ইদ্রিস আঃ নুহ (আঃ) এর সম্পর্কে দাদা হতেন। এনখ এর পরবর্তী সময়কাল নূহ আঃ এর সময়কাল যা আমি আগামী পর্বে আপনাদের সামনে পেশ করবো।
প্রিয় পাঠক আমি এই পর্বে আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে ইদ্রীস আঃ এর উপর মানবজাতির যে সকল জ্ঞান আবির্ভুত হয়েছিলো সেই বিষয়ে যথেষ্ট বর্ননা আমি দিয়েছি আগামী পর্বে আমি তুলে ধরবো নূহ আঃ এবং জাহাজ সৃষ্টির ঘটনা। একটি বিষয় কল্পনা করেন নূহ আঃ এর জাহাজ বানানোর ঘটনাটি সম্পূর্নভাবে স্রষ্টা প্রেরিত একটি ঘটনা যা স্রষ্টার তত্ত্বাবধানে ফেরেস্তাতাদের নিদের্শে জাহাজ বানানোর কলা কৌশল মানবজাতি নূহ আঃ এর মাধ্যমে শিক্ষা নিয়েছিলো। পরবতী পর্বে ইউছুফ আঃ যার উপর পিরামিড সহ মমি বানানোর কলাকৌশল এবং চিকিৎসা স্বাস্থে্র ব্যাপক জ্ঞান মানবজাতি পেয়েছিলো। হাম্বারাবির মাধ্যমে ব্যাবিলন সভ্যাতার আইন শাস্ত্র্য মানবজাতি পেয়েছিলো ফেরেস্তাদের মাধ্যমে। ধম্যগ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায় হারুত মারুত নামক দুজন ফেরেস্তার ঘটনাকে যা আজো মুখস্ম্রিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১৫