somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনবাদের ফাক ফোকরে ভ্রান্তি ধারনা এবং আল কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিবর্তনবাদের একটি আধুনিক শাখা নিও-ডারউইনিস্টরা পপুলেশন জেনেটিক্স নামক ডিসিপ্লিন দিয়ে মিউটেশনের মাধ্যমে প্রজাতির জিনে নতুন ইনফরমেশন যুক্ত হওয়ার বিভিন্ন হিসেব নিকেষ কষে থাকেন। লেহাই ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর মাইকেল বিহে এবং ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের ফিজিসিস্ট ডেভিড স্নোক পপুলেশন জেনেটিক্সের উপর ভিত্তি করে একটি প্রোটিনকে আরেকটি ন্যাচারালি সিলেকটেবল প্রোটিনে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় মিউটেশন এবং তা আসতে প্রয়োজনীয় সময় হিসেব করেন। তারা দেখেন যে একটি প্রোটিন-প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইট থেকে আরেকটি প্রোটিন-প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইট আসতে হলে একই সাথে কয়েকটি স্পেসিফিক মিউটেশন লাগবে (কমপ্লেক্স এডাপটেশন) এবং তারা হিসেব করে দেখান যে এর জন্য কমপক্ষে দুই বা ততোধিক মিউটেশন একই সাথে স্পেসিফিক সাইটে হতে হবে। বিহে এবং স্নোক বাস্তবিক উদাহরণের উপর ভিত্তি করে দেখান যে, পৃথিবীর বয়স সীমায় দুটি মিউটেশন একসাথে হতে পারে যদি স্পিসিসের পপুলেশন সাইজ অনেক বড় হয়। কিন্তু দুইয়ের অধিক মিউটেশন একসাথে প্রয়োজন হলে তা পৃথিবীর বয়স সীমাকে ছাড়িয়ে যায়। তাহলে এক কোষি প্রানি থেকে বির্বতনের মাধ্যমে কিভাবে মানুষ পর্যন্ত আসা সম্ভব্?
ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরনের সময়কালের আগের যেসব প্রাণী ছিল পৃথিবীতে, সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল আণুবীক্ষণিক, এককোষী এবং অপেক্ষাকৃত সরল। প্রি ক্যামব্রিয়ান যুগের সমগ্র সম্রদু জুড়ে এই সকল এক কোষি প্রাণির দোড়াত্ব। এই এককোষি প্রাণি বংশবিস্তার করতে থাকে নিজেদের দ্বিখন্ডিত করার মাধ্যমে। বিশাল জলরাশি শুধু প্রাণের ছড়াছড়ি। এক কোষি প্রাণি থেকে হঠাৎ করেই বহুকোষি প্রানী সমুদ্রে ভাসতে শুরু করে। আকস্মিক এই প্রাণের বিস্ফোরনকেই বলে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরন। প্রানির বিস্ফোরন। অসংখ্য বহুকোষি প্রানী ঐসময়টিতে পানিতে দেখা দেয়। এখানে এককোষি প্রাণি এবং এককোষি প্রাণি থেকে বহুকোষি প্রাণি সৃষ্টির মেকানিজমটি আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু।

ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোশন পৃথিবীতে প্রাণের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রায় ৫৫ কোটি ৪১ লাখ বছর আগে, ক্যামব্রিয়ান যুগে পৃথিবীর জীবজগতে বেশ বড়সড় একটা পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। হঠাৎ করেই এই সময়টায় হুট করে একের পর এক বহুকোষী প্রাণীর দেখা মিলতে শুরু করে। এত দ্রুতগতিতে এটি ঘটেছিলো ।ক্যামব্রিয়ান যুগের বা ইতিহাসের একদম নির্দিষ্ট একটা বিন্দুতে হঠাৎ করে এক কোষি প্রাণি পাল্টে যেতে আরম্ভ করেছিলো বহুকোষি প্রানীতে ? এত স্বল্পসময়ে কিভাবে সেটি সম্ভব ছিলো? প্রাণের এই আকস্মিক রহস্যময় পরিবর্তন দেখে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ফিলিপ জনসন বললেন,“প্রাণির পর্বসমূহ ধারাবাহিকভাবে বিকশিত না হয়ে একবারে, একইসাথে আভির্ভূত হয়েছে যার অনেকগুলোই পরে বিলুপ্তির শিকার হয়েছে। আর এ ধরণের ভিন্ন ভিন্ন জীবনরূপ আকস্মিক ও নিঁখুতভাবে দেখা দেওয়া থেকে এটাই বোঝা যায় যে এগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”

প্রিয় পাঠক, আজ আমি প্রাণ যে সৃষ্টি বিষয় সে সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু প্রমান তুলে ধরবো। আল কোরআনের এই আয়াতটি লক্ষ্য করুন। আল কোরআন বলে “ সূরা আম্বিয়ার তিরিশ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,"প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।" পানিতেই যে প্রানের বিশাল আয়োজন করা হয়েছে তা আল কোরআন ঘোষনা দেয়। এবার লক্ষ্য করুন আল কোরআনের ৩৯:৬ নং আয়াত। “তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই নফস থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন “ প্রিয় পাঠক এই আয়াতটি গভীর ভাবে লক্ষ্য করুন-আয়াতটির প্রথম অংশে বলা হচ্ছে তিনি সৃষ্টি করেছেন একটি নফস থেকে তারপর তা থেকে তিনি তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। (নফস শব্দের আভিধানিক অর্থ দেহ সহ জীবন)। একটি জীবন থেকে অথাৎ এককোষি জীব যেমন এ্যামিবা যারা নিজেদেরকে দ্বিখন্ডিত করে বংশবিস্তার করে। আল কোরআন স্পষ্ট ভাষায় বলছে একটি নফস বা প্রাণ যা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি হয়। অথাৎ আল কোরআন এই আয়াতে মানুষকে প্রতিলিপিকরণ টেকনোলজির প্রসঙ্গে বংশবিস্তার করা বা প্রতিলিপিকরন কিভাবে হয়েছে সেই বিষয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। আল কোরআনের এই আয়াতের প্রশ্নে জিঙ্গাসা করা যেতে পারে প্রতিলিপিকরণ ক্ষমতা এলো কোথা থেকে? এই প্রতিলিপি তৈরীকরণ ক্ষমতা ভারী অনুর মধ্যে কিভাবে আসে তার উত্তর আজকের বিজ্ঞানের কাছেও নেই। প্রকৃতিবাদী বিজ্ঞানীরা একে প্রকৃতির নির্দেশণা বা নিয়ম বলে চালিয়ে দিয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন, যদি কোন জৈব অনুর মধ্যে প্রতিলিপিকরণ ক্ষমতা থাকতো তবে প্রকৃতিতে সংশ্লেষণের মাধ্যামে একটি অণু তৈরী হওয়াই যথেষ্ট, নতুন অনু সৃষ্টির জন্যে কাঁচামালের প্রয়োজন হতনা, প্রথমটির প্রতিলিপি করণও ভাঙন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি বায়ো অনুতে ভরে যেত ,কিন্তু এমনটা বাস্তবে দেখা যায়না; এমনকি প্রাণকোষস্থিত বায়ো অনু ছাড়া প্রকৃতিতে অন্যান্ন অসংখ্য বায়ো অণুর কোনটাই স্বতস্ফূর্তভাবে তাদের প্রতিলিপি তৈরী করতে পারেনা। বিজ্ঞান বলছে, বর্তমান কালের কোষে নির্দেশণা দানকারী দুই প্রকার ভারী অণু তথা নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন রয়েছে, যাদের মধ্যে নিউক্লিক এসিড নিজের প্রতিলিপির নির্দেশণা দানের ক্ষমতা রাখে। নিউক্লিক এসিডে পরিপূরক নিউক্লিওটাইডের (সূত্রক) মধ্যে খাড় জোর থাকার ফলস্রুতিতে তার নিজের সংশ্লেশনের নমুনা প্রদান করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে আর এন এ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়ায় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। একই ভাবে এটি একদিকে যেমন প্রতিলিপিকরণের নমুনা প্রদান করে অন্যদিকে প্রতিলিপিকরনকে ত্বরাণ্বিত করে। এই আর এন এ কে মনে করা হয় বংশানুক্রমিকতার প্রাথমিক উপাদান। আরও মনে করা হয়ে থাকে জৈব রাসায়নিক বিবর্তন আর এন এ অনুর উপর ভিত্তি করেই শুরু হয়েছিল। আর এন এর কার্যোকারিতার ধারণা আধুনীক বিজ্ঞানের পর্যোবেক্ষণ ও পলীক্ষা লব্দ ফলাফল, কিন্তু বিজ্ঞান গলদগর্ম হয়েও এই আর এন এ তৈরীর কৌশল বলতে পারছেনা যেটুকু বলছে তা পর্যোবেক্ষণ লব্দ ধারণার সাথে অনুমানের মিশ্রণ।আমরা এই আলোচনায় বৈজ্ঞানিক অনুমানটুকু যদি মেনেও নেই তাহলে নতুন যে ধারণার সৃষ্টি হয় তা হল, প্রকৃতিতে বিবর্ততনের মাধ্যামে যেই মাত্র ভারী অনু আর এন এর রূপ ধারণ করল আর অমনি তার অনুরূপ বাচ্চা প্রসব করতে শুরু করল, তাতে দিনে দিনে প্রকৃতি আর এন এ তে ভরে গেল। প্রকৃত পক্ষে আর এন এ কিন্তু কোন প্রাণ কোষ নয়, এটি প্রাণকোষস্থিত একটি অনু। তা হলে আরও ধরে নিতে হবে যে, আর এন’র মধ্যেও বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিস্ক রয়েছে যেটি চিন্তাভাবনা করে কোষ গঠনের বাকী অনুগুলোকে সংশ্লেষিত করে এক আদর্শ প্রাণকোষ গঠন করতে পারে। বিজ্ঞান কিন্তু এ কথা স্বীকার করেনা; এমন কি প্রকৃতিতে কোন চিন্তাশীল স্বত্তা আছে বলেও বিজ্ঞান স্বীকার করেনা। তাহলে যৌক্তিকভাবেই স্বীকার করতে হচ্ছে প্রকৃতিতে আপনা আপনি প্রতিতিলিপি করণ ক্ষমতা সম্পন্ন কোন বায়ো অনু সৃষ্টি হতে পারেনা। তার জন্যে প্রয়োজন নীল নকশা ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×