somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বামী ভক্ত বেদুঈন , ছন্নছাড়া ভূমিহীন।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্ররিশ্রম নাকি সৌভাগ্যের প্রসূতী, প্রসূতীমাতা যখন সৌভাগ্যের অভিশাপ, তখন কে শুনবে একজন দুর্বল মায়ের করুণ আর্তনাদ। কলমের খোঁচায় ফুটিয়ে তোলা কি সম্ভব, না বলা কথার ভূমিহীন বিষাদ, ওদের অচ্যুত না ভেবে সমাজ শ্রোতে স্থান হউক মানবতার আশীর্বাদ। মৌলীক অধিকারের সংজ্ঞা আমাদের সকলেরই জানা, কিন্তু মৌলীক অধিকার কাদের জন্য? নিশ্চয় মানুষের জন্য,
বেদুঈনরা (আমাদের দেশের বেঁদেরা) কি মানুষ নয়! আমাদের দেশের বেদুঈন স¤প্রদায়ের মানুষের জীবন কি বিচিত্র যা নিজের চোঁখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এরা ছন্নছাড়া ভূমিহীন তাই নৌকা এদের বাসস্থান। থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে বিয়ে শাদী সবই হয় এদের নৌকা ভ্রমণে। এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে, এ জেলা থেকে ও জেলায়, যেখানেই সুযোগ হয় কিছুদিন রাস্তার ধারে কিংবা ঝোপঝাড়ে এদের বসতী।

জিবীকা নির্বাহ এদের ক্ষুদ্র ব্যবসা, তবে আশ্বর্যের বিষয় এদের পরিবার প্রথা সম্পুর্ন আলাদা, স্ত্রীরা ব্যবসা বানিজ্য করে সংসার চালায়, স্বামী থাকে নৌকা নামক বাসায় , স্ত্রীর রোজগারই হচ্ছে সংসার জীবনের উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। মেয়েরা টুকরী ভর্তি করে কাঁচের বা মেলামাইনের বাসন কোসন বিক্রী করে, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে, মাথায় করে। টুকরীতে জিনিষপত্রের ওজন ৩০/৪০ কেজির কম নয়।
আগেকার দিনে বাত রোগ ভাল করতে সিংগা নামক শরীর থেকে রস বের করার কাজ করলেও বর্তমান যুগে মানুষ এ সবে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলায় এখন আর এ সব ব্যবসা চলে না। তাই ফেরী করা ব্যবসাই উপার্জনের এক মাত্র মাধ্যম। একজন মহিলার পক্ষে ৩০/৪০ কেজি ওজনের বাহন মাথায় করে ঘুরে বেড়ানো কি যে কস্টকর তা কেবল কোন ওজনি জিনিষ মাথায় করে ঘুরে বেড়ানো লোকের পক্ষেই অনুমান করা সম্ভব।

এদের পোষাক পরিচ্ছদে কেমন জানি একটা নিজস্ব ভাব , খোপায় ফুল সাজিয়ে রাখে, চলা ফেরায় আলাদা ভংগী যা এই বিশাল জন গোষ্ঠী থেকে আলাদা করে রাখে। বিচিত্র এই পরিবার প্রথায় স্বামী সন্তানাদীর পরিচর্যায় কিছুটা সময় কাটায় তবে অধিকাংশ সময় জাল বুনে আর পাখি ধরার ফাঁদ তৈরী করে বাসায় কাটায়। পাখী শিকার করা এদের অন্যতম শখ, সৌখীন জীবনযাপন অনেক সময় স্ত্রী নির্যাতন! রান্নাবান্নার কাজ এই মহিলা নামক উপার্জনকারী মায়েরা সকাল বেলা করে কিংবা বাড়ী ফেরার পর রাত্রিবেলা করে। কখন তাদের ঘুম , পরিবার প্রথা উল্টা হলেও সন্তান তো মা ভক্ত, তাকিয়ে থাকে কখন মা আসবে আর ফেরীওয়ালা মায়ের মন উদগ্রীব থাকে কখন বাসায় ফিরবে , দেখবে প্রিয় সন্তানের মুখ। ব্যবসা না হলে স্বামীর ধমক , অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর নেশার টাকা আগেভাগেই জোগাড় রাখতে হয়।
এই স¤প্রদায়ের পুরুষরা নেশাখোর জাতীয় জীবন যাপন করে। সাপ খেলা দেখিয়ে মানুষ ঠকায়। কেউ কেউ বাদর খেলা দেখায়।
পুরুষ বেদূঈনরা গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেড়ায়...........................................
মোরা পঙ্খী ধরি, পঙ্খী মারি,
পঙ্খী বেচে খাই ,
মোদের সূখের সীমা নাই।
মোরা সাপ খেলা দেখাই
(মোরা ঘরে থাকি মাইয়া সাইজা , বউ এর রোজগার খাই।)
প্রচলিত আছে ওদের বিয়ের বাসর রাতে বর আত্মহত্যা করার প্রস্তুতি নেয় আর তখন নব বধু বরের পা জড়ীয়ে অনুনয় বিনয়ের সাথে বলতে থাকে , কি অপরাধে তুমি এমন করছো, বর তখন বলে এক মাত্র শর্তে আমি বাঁচতে পারি যদি তুমি আমাকে রোজগার করে খাওয়াও আমার ভরন পোষণের দায়ীত্ব নাও। নব বধুঁ তখন ওয়াদা করে সারা জীবন বাদী হয়ে থাকার।
গোত্রীয় প্রথা এদের মাঝে এখনো বিদ্যমান, এদের একটি নিজস্ব কমিউনিটি রয়েছে, পারিবারিক সমস্যা, ঝগড়া বিবাদ থেকে শুরু করে সব ধরনের পারিবারিক সমস্যা নিজেদের কমিউনিটিতে সমাধান করা হয়। গোত্র প্রধানকে তারা সর্দার নামে ডাকে , সর্দারের মর্জির উপর অনেকটা নির্ভর করে ব্যবসা বানিজ্য , বিবাহ শাদী ও গন্তব্যে দিক নির্দেশনা।সর্দারের নির্দেশ অমান্য করা তো নির্ঘাট বিপত্তি , নেমে আসে নানা ধরনের নির্যাতন ।
এই সম্প্রদায়ের মেয়েদের মাঝে অনেক সুন্দরী মহিলাদের দেখতে পাওয়া যায় যা কিনা তাকে বিভিন্নভাবে যৌণ হয়রানীর শিকার হয়ে ফিরতে হয় আপন ঘরে। যানবাহনে চলাচল এদের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ অনেক ওজনি জিনিষ মাথায় করে যানবাহনে চড়তে হয়। একেবারে ভংগুর জাতীয় জিনিষপত্র হালকা আঘাতে ভেংয়ে যেতে পারে পরিনামে ব্যবসা শুদ্দ শেষ। এরা দল বেধে চলা ফেরা করে আইন কানুনের ধার ধারে না , প্রচলিত সমাজের লোকেরা এদের ঘৃণার চোঁখে দেখে। কারন এদের ভাষায় কেমন জানি কর্কশ ভাব।
তার পরও এরা মায়ের জাত কেন এই বৈষম্য মূলক জীবন। সেদিন দেখলাম একজন বেদূঈন মা তার স্বামীকে গোসল করাচ্ছে, সাবান দিয়ে পাগুলো ধুয়েমুছে দিচ্ছে। মায়ের জাত এই মহিলা, যাকে প্রকৃতিগত ভাবে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে তাদের এত পরিশ্রম যা কল্পনা করা যায় না। দুনিয়ার সকল শ্রমিকের একটি অবসর সময় থাকে কিন্তু এই বেদুঈন মহিলাদের অবসর নেই ।
এদের জীবন নিয়ে সাধারনত খুব কমই লেখালেখি হয়। এরা আদম শুমারী থেকে বঞ্চিত, ভোটাধিকার নেই, এদের জন্য সরকারের কোন নির্দিষ্ট আইনও নেই। এরা যেমন আইন কানুনের তোয়াক্কা করে না ঠিক তেমনি সরকারের ও তেমন মাথা ব্যাথা নেই।
নারী নামক বেদুঈন মায়ের প্রতি যে বৈষম্য তা দেখার কেউ নেই , মানসিক আর শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার এই মায়ের জাত তাদের বেদনাভরা করুণ কাহিনী শুনার কেউ নেই।
বেঁদের মেয়ের সহিত রাজার ছেলে প্রেম বিরহ সিনেমায় ফুটিয়ে তোলে ছায়াছবিকে আকর্ষণীয় করে অনেকে উপস্থাপন করেছেন কিন্তু বাস্তব চিত্র অবলোকন কয়জনার হয়েছে?
নারী অধিকারের প্রবক্তাদের পদধুলী এই মায়েদের কাছে পৌছায় না , তাদের দূ:খ গাঁথা না বলা কথা হয়ে আছে শুনবার সময় হয়তো হয় না। হবেও না কারন তাদের কাছে স্বার্থ নামক বস্তুটি অনুপস্থিত।
তাই এ টুকু বলা যায়............................ উত্তপ্ত বালুকারাশীর উপর লাগামহীন ঘোড়ায় চড়ে গন্তব্যহীন পর্বত চুড়ায় আকাশ ছোঁয়া যেমন সহজ নয়,
ঠিক তেমনি রজনীগন্ধা , হাইব্রীড গাদা আর ইরানী গোলাপ দিয়ে সাজানো স্টেজে দাড়ীয়ে গাল ভরা বুলি আওড়ানো গেলেও বাস্তবতা বিহীন মানবতার জয়গান ক্ষনিকের শ্রোতা মুগ্ধতায় উল্লাসিত জনতার বাহবা পাওয়া গেলেও জীবন সমস্যার বাস্তব সমাধান করা যায় না।

তবে রজনীগন্ধা, হাইব্রীড গাদা আর ইরানী গোলাপ দিয়ে সাজানো স্টেজের খরছ দিয়ে যে কমপক্ষে দুজন ছিন্নমূল মানুষের চাহিদা মেটানো যায় তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বি:দ্র: (এখান বেদূইন বলতে বাংলাদেশে অবস্থিত বেঁদে সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে।)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:০৫
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×