somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোলটেবিল বৈঠক---- হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজস্ব প্রতিবেদক | ( প্রথম আলো ) -- তারিখ: ২৩-১২-২০১২






১৭ বছর আগে কানন বালাকে ছেড়ে চলে গেছেন তাঁর স্বামী। তাঁর দুই সন্তানকেও স্বামী অস্বীকার করেন। পরে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। কানন বালা বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিলেও সেখানে তাঁর দায়ভার কেউ নেননি। তাই তিনি আজ একজন ভাসমান নারী।
কানন বালা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার বিয়ের কোনো দলিল নেই। সন্তানেরা পিতার নাম জানে, কিন্তু পরিচয় দিতে পারে না। নিবন্ধন নেই বলেই স্বামী আমাকে ও আমার সন্তানদের অস্বীকার করার শক্তি পেয়েছে। আমার জীবনটাকে ভিত্তি করেই সরকারের কাছে আইনে নিবন্ধনকে বাধ্যতামূলক করার দাবি তুলছি।’
গতকাল শনিবার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হোক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে গাজীপুরের তৃণমূল প্রতিনিধি কানন বালা এভাবেই কথা বলেন। প্রথম আলো ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল বিষয়ের পাশাপাশি বর্তমানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া এবং তাঁদের ওপর অন্যান্য নির্যাতনের বিষয়ও আলোচনায় প্রাধান্য পায়। সার্বিক সমস্যার সমাধানের জন্য হিন্দুধর্মীয় নেতাদের নিয়ে একটি কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করেন আলোচকেরা।
আইন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী মো. ফজলে রাব্বি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আইনটি কার্যকর করার পর সংশোধনী এনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিতে সরকারকে চাপ দেওয়ার পরামর্শ দেন। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনটিতে সংশোধনী আনার জন্য লিখিত সুপারিশ দিলে তা বাস্তবায়নেরও আশ্বাস দেন ফজলে রাব্বি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বিয়ের প্রমাণ না থাকায় হিন্দু নারীরা দেশে প্রচলিত আইনের সুফল ভোগ করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বিবাহ আইন নারীর অধিকার নিশ্চিত করবে।
বৈঠকে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় করা হিন্দু বিবাহ আইন নিয়ে একটি সামাজিক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, হিন্দু বিয়ে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে বিস্তারিত আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। হিন্দু বিয়ে হলো ধর্ম পালনের একটি অংশ। এ বিয়ের মাধ্যমে আত্মার সঙ্গে আত্মার, মাংসের সঙ্গে মাংসের এবং অস্থিতে অস্থিতে মিলন ঘটায়। স্বামীর পরিবার স্ত্রীকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে মেনে নেয়। বিয়ে নিবন্ধন হলে বিয়ের মূল ভিত্তি নষ্ট হবে। নিবন্ধনের ফলে সম্পর্কটা শুধু একজন ব্যক্তির সঙ্গে হবে, স্বামীর অবর্তমানে স্বামীর পরিবার সেই নারীর প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে না। আচার-অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে সবাই নিবন্ধনের দিকে ঝুঁকবে। রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমি বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের বিষয়টিতে সরাসরি বিরোধিতা করছি না, তবে এই সুপারিশগুলোও ভেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান শাহনাজ হুদা বলেন, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনটিতে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করা বিয়েকে অবৈধ বলা হয়নি। শাস্ত্রীয় অধিকারকে সুসংহত করতেই আইনটি করা হয়েছে।
বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা বলেন, হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে দ্বিমত নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন আলাদা করে না বলে দেশের সব নাগরিকের জন্যই জন্ম, মৃত্যু এবং বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে আইন করার সুপারিশ করেন তিনি।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, বিয়ের প্রমাণের অভাবে হিন্দু নারীর জন্য মামলা করতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। এ ছাড়া বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেই বিবেচনার বাইরে রাখা যাবে না।
গোলটেবিল বৈঠকের এ পর্যায়ে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। আইনটির প্রজ্ঞাপন অনেক আগেই জারি করা উচিত ছিল বলে মন্ত্রীকে জানান। ফোনে কথা শেষ করে ফজলে রাব্বি বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে জানান, আইনমন্ত্রী দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির আশ্বাস দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায়ও বলেন, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার আইনটি এখনো কার্যকর করেনি। অন্যদিকে সরকার আইনে ঐচ্ছিক বিধান রাখতে পারলে তা বাধ্যতামূলকও করতে পারবে। তাঁর মতে, নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে সাত পাকে ঘোরা বা অন্যান্য আচার পালনে কোনো সমস্যা হবে না। নিরর্থক ভয় পাচ্ছে অনেকে।
নারী আন্দোলন কর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মালেকা বেগম বলেন, কোনো আইনে ঐচ্ছিক বিধান থাকতে পারে না। আইন মানার বাধ্যবাধকতা অবশ্যই থাকতে হবে এবং আইনটি দ্রুত সংশোধন করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ বলেন, আইনে বিয়ে নিবন্ধনকে বাধ্যতামূলক এবং কোনো পক্ষ যদি তা না করে তবে শাস্তির বিধান রাখতেই হবে। নইলে আইনটি কার্যকর হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী বলেন, মন খোলা রেখে পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে। আর পরিবর্তন মেনে নিতে নিজেদের আগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, অনেকেই বিয়ে নিবন্ধনের বিরোধিতা করছে, আবার তারাই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ছুটছে বিয়ের সনদ পাওয়ার জন্য। এ ছাড়া বিয়ে, নারীকে সম্পত্তি দেওয়ার মতো বিষয়গুলোতে ধর্ম টেনে আনা হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে ধর্ম যেসব কাজ করতে বলেছে, সেগুলো অনেকে মনে রাখে না।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, হিন্দু আইনে সংস্কার করা যাবে না, সে জায়গা থেকে সরকার সরে এসেছে। বিয়ে নিবন্ধক নিয়োগসহ আইনটিকে পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, আইনে বিয়ে নিবন্ধন ঐচ্ছিক রাখা হলে এক পক্ষ নিবন্ধনের পক্ষে এবং অন্য পক্ষ বিপক্ষে হলে তখন কী হবে, তা আইনটিতে বলা নেই। এ ছাড়া জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ড মেনে নিলে বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়টি মেনে না নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×