somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোয়াইট হাউসে বাংলাদেশের নীনা

০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








সপরিবারে নীনা আহমেদ । ছবি: সংগ্রহযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরামর্শকদের একজন তিনি। ওবামা প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের মেয়ে নীনা আহমেদকে নিয়ে আগ্রহ আর কৌতূহল চারদিকে। নিউইয়র্কের প্রবাসীরা তো বটেই, নীনার সাফল্যে উদ্বেলিত হননি তামাম বিশ্বের কোন বাঙালি? বারাক ওবামার এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর নিয়োগপ্রাপ্তির খবরটা জানা হয়ে গিয়েছিল মাস খানেক আগেই। ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর থেকেই কীর্তিমান এই বাংলাদেশি নারীকে ঘিরে আগ্রহ আর কৌতূহল ছিল সবার। এর আগে তাঁর সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। ঢাকা থেকেও বারবার ফোন করা হয়েছে। তাঁর শত ব্যস্ততা আর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে নানা নিয়মের মারপ্যাঁচে সেটা হয়ে ওঠেনি এত দিন। এশীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের নিয়ে টানা অনুষ্ঠান চলছে ওয়াশিংটনে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নীনা আহমেদ ব্যস্ত হয়ে পড়েন এসব অনুষ্ঠানে। পাশাপাশি ছিল নিজের কর্মপরিধি বুঝে নেওয়ার ব্যস্ততাও। সুযোগটা ঘটে গেল এই মাত্র হপ্তা খানেক আগে। সামনাসামনি নীনা আহমেদের দেখা পাওয়া গেল নিউইয়র্কের বাংলা বইমেলায়।

নিউইয়র্কে বাঙালিদের আয়োজিত অনুষ্ঠানেনিউইয়র্কের বাঙালি আড্ডায়
দেশ ছেড়ে গেছেন দীর্ঘদিন। দেশের সঙ্গে যোগাযোগটা কি সেই রকম আছে? তাঁর মুখের বাংলা ভাষাটাই বা কেমন? এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল মনে। কিন্তু শুরুতেই অবাক করলেন তিনি।
চমৎকার বাংলায় কথা বলেন। খুব গুছিয়ে বক্তৃতাও করলেন বাংলায়। বললেন, ‘নিজের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়, যোগসূত্র রেখেই এগিয়ে যেতে চাই।’
এ মাসের শুরুতে ব্যস্ততার ফাঁকেই তিনি যোগ দেন নিউইয়র্কের বাংলা বইমেলায়। অনুষ্ঠানের ফাঁকে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নীনা আহমেদ জানান, তাঁর কর্মপরিধি পুরোটাই অভ্যন্তরীণ। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয়দের নিয়ে তাঁর কাজ-কর্ম। নীনা আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশিরা যত বেশি যুক্ত হবেন, তত বেশি সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মোচিত হবে। নীনা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নানা উদারনৈতিক কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও অভিবাসন সংস্কার আইন প্রণয়ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশিদের বাংলা ভাষা শেখা এবং চর্চার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেন নীনা। তিনি বিশ্বাস করেন, যাঁরা একাধিক ভাষায় পারদর্শী, কর্মক্ষেত্রে তাঁদের সাফল্যের হারও বেশি। তাঁর আশাবাদ নিজেদের সাহিত্য, সংস্কৃতিকে লালন করেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাবেন।

হোয়াইট হাউসে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নীনা (বাঁ থেকে ষষ্ঠ)ঢাকার মেয়ে
ঢাকায় জন্ম নীনা আহমেদের। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন। বাবার আদি বাড়ি ময়মনসিংহে, মায়ের বাড়ি ফরিদপুরে। মার্কিন মুল্লুকে মেয়ের এই অসামান্য সাফল্য অবশ্য মা-বাবা কেউই দেখে যেতে পারেননি। স্বামী আহসান নসরুল্লাহ ও দুই মেয়েকে নিয়ে ফিলাডেলফিয়ার অভিজাত মাউন্ট এরি এলাকায় থাকেন নীনা। রসায়নে পিএইচডি করা নীনা আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। ডিএনএ বিশ্লেষক হিসেবে তিনি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কাজ করে থাকেন। প্রায় দুই দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। ফিলাডেলফিয়া নগরে দ্রুত বর্ধমান এশীয় অভিবাসীদের সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নগরের মেয়র ২০০৯ সালে তাঁকে এশিয়ান আমেরিকান কমিশনের চেয়ারপারসন হিসেবে নিয়োগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ফিলাডেলফিয়া এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ। এই ফিলাডেলফিয়াতেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছিল। ফিলাডেলফিয়ার হ্যারিটেজ স্ট্রিট নামের সড়কপথে শোভা পায় বিশ্বের নানা দেশের জাতীয় পতাকা। অভিবাসন বৈচিত্র্যের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নানা দেশ থেকে আসা জাতিগোষ্ঠীকে সম্মান দেখানোর জন্যই নগর কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ। হ্যারিটেজ স্ট্রিটে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটিও শোভা পায়। বাংলাদেশের লাল-সবুজ ফিলাডেলফিয়ার আকাশে ওড়ানোর উদ্যোক্তা মূলত নীনা আহমেদই।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ছিলেন নীনা আহমেদ।
প্রেসিডেন্টের পরামর্শক হিসেবে নীনা আহমেদের নিয়োগ পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীরা উৎফুল্ল। নিউইয়র্কের সর্বত্র এখন তাঁকে নিয়ে আলোচনা। নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নীনা আহমেদের সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। নীনা আহমেদ আমাদের জন্য একটি দারুণ দৃষ্টান্ত।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রবাসীদের দারুণ আগ্রহ নীনাকে ঘিরেপ্রবাসী প্রযুক্তিবিদ ইশতেহাক চৌধুরী বলেন, নীনা আহমেদের পথ অনুসরণ করে আমেরিকায় বাংলাদেশিদের নতুন প্রজন্ম আরও এগিয়ে যাবে।
নীনা আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন প্রবাসী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান। শুধু বাংলাদেশি নন, গোটা দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরাও নীনা আহমেদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মিয়ানমারের অভিবাসী টাং গুয়ান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমাদের মতো দেশ থেকে আসা লোকজন যখন আমেরিকায় নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা দেখান, তখন বুকটা গর্বে ভরে ওঠে।’
দেশের মাটি ছুঁয়ে
সুযোগ পেলেই বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ ছাড়েন না নীনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন তাঁর অন্যতম গর্বের বিষয়। সুযোগ পেলেই তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেন আমাদের আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতা অর্জনের গল্প। নিউইয়র্কে বাংলা উৎসবে দেওয়া বক্তব্যেও তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের এগিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। জানালেন, এ বছরের শেষের দিকে ঢাকা সফরের পরিকল্পনা আছে তাঁর। কিন্তু এবারের স্বদেশযাত্রাটি কি অন্যবারের চেয়ে আলাদা হবে না?
নীনা হাসলেন। বিনয়ী মানুষের হাসি।
বললেন, ‘কোনো কিছুই আগাম বলা যাচ্ছে না।’
হ্যাঁ, সময়টা হয়তো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে বাংলাদেশের এই গর্বের ধন যে আবারও দেশের মাটি ছুঁয়ে যেতে ভুলবেন না সেটা সুনিশ্চিত।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×