somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুকের বাঁ পাশে বেদনার ঝড়

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তার পাশে বেখাপ্পা বাড়ির সামনে ছিমছাম ছোট্ট বসার ঘর। বেখাপ্পা হলেও বাড়িটা সামনের দিক থেকে খারাপ লাগে না। আদি-বাড়ির মতো মনে হয় কিছুটা। বারান্দায় সাজানো বুনো ফুল গাছ। পরিচর্যার অভাবে হেলেদুলে পড়েছে। দেখতে বেশ লাগে। আদি বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে এটাই জুৎসই। সামনের ছোট্ট ঘরটিতে বসে আছে নিহা। হাতে পুরোনো কবিতার বই। পাতাগুলো খুলে পড়ে যাবে, পড়ে যাবে মনে হয়।

নিহা কবিতা লিখতে ভালবাসে। কবিতা করে কথা বলাও তার বেশ পছন্দের। নিহা যখন মায়ের কাজে সাহায্য করে মন থাকে বইয়ের দিকে। কখনও সে গুনগুন করে দু’লাইন কবিতা বলে ফেলে। গানের সুরে কবিতা সে গেয়ে ওঠে নিজের অজান্তে। নিহা বাঁ পাশের জানালাটা খুলে দিল। বৃষ্টিভেজা আদ্র বাতাস হু হু করে প্রবেশ করছে।

কোমল বাতাস যেন নিহাকে জড়িয়ে ধরে। একজন প্রেমিকের মতো জড়িয়ে ধরে। দীর্ঘদিনের সাক্ষাতে প্রেমিকাকে যেমন জড়িয়ে ধরে একজন পুরুষ ঠিক সেভাবে নিহাকে জড়িয়ে ধরে বাতাস। নিহা গুনগুন করে কবিতার দু’টি লাইন আওড়ায় ‘ বৃষ্টিরা গুন গুন গেয়ে যায় গান, তার শীতলতায় ছুঁয়ে যায় মন-প্রাণ।’

নিহার কি এখন মন প্রাণ ছুঁয়ে যাচ্ছে? হয়ত যাচ্ছে। নিহা বুনো ফুল গাছের দিকে তাকায়। দুটো ফুল ফুটেছে একটি শাখায়। ফুল দুটো দুলছে। ওরা যেন গলা জড়াজড়ি করে বেড়ে উঠছে। শীত শীত লাগছে নিহার। ওড়না দিয়ে জড়িয়ে নিল নিজেকে।
নতুন বধুর মতো মাথায় ঘোমটা টানা। নতুন বধু কথাটা যেন কেমন একটা আবেশ, স্বপ্ন, একটু একটু লজ্জা আর ভালবাসায় মোড়োনো। বধু শব্দটি যেন নিহাকে নতুন এক জগতের দিকে নিয়ে যায়।

নিহা ভাবছে, কল্পনা করছে, যদি সে লাল কাতান শাড়ি পরে, কেমন লাগবে তাকে? সবাইকে বধু সাজলে ভাল দেখায় না। একদিন তো সে বউ সাজবে, সেদিন সে লজ্জা পাবে? নাকি বেহায়ার মতো ঘোমটা ছাড়া বসে থাকবে?

নিহার একটু লজ্জা কম এটা সে প্রায় খেয়াল করে। ও পাড়ার নাপু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে তার মোটেও লজ্জা লাগে না। নিহার তখন মনে হয়, তার মধ্যে লজ্জা শরমের বালাই নেই। তবে তার এই বেহায়াপনা শুধু নাপু ভাইয়ের সঙ্গে।

অন্য কারও সঙ্গে নিহা কথাই বলতে পারে না। লজ্জায় চোখমুখ লাল হয়ে যায়। সেদিন পড়া না পারায় হেডমাস্টারের সামান্য কথায় তার ঠোঁটমুখ লাল হল। হেডমাস্টার বেচারা তাতে বেশ মজাই পেল। বার বার বলতে লাগলো, মুখটা বেশ লাল করে ফেলেছ মুখটা। পুরুষদের এমন ভাড়ামো নিহার খুব খারাপ লাগে।

ক্লাস ছুটি হলে বাড়ি আসার পথে নিহা ভালছে, আচ্ছা ছেলেরা লজ্জা পেলেও কী তাদের মুখ লাল হয়? না ছেলেদের লজ্জা-শরম নেই। ছেলেদেরও যদি মেয়েদের লজ্জা থাকতো তাহলে ভালই হত। আমাদের আপা বেশ মজা নিতে পারত হেডমাস্টারের মতো। কোনো একটা সুন্দর মায়াবি চেহারার ছেলেকে লজ্জা দিয়ে দৃশ্যটা বেশ উপভোগ করতে পারত। সেই সাথে ক্লাসের সব মেয়েরাও মজা পেত। আড়ালে বলাবলি করে বেড়াতো ছেলেটির লজ্জামাখা চেহারার নিরুপায় অবস্থার কথা।

বৃষ্টি বাড়ছে, কমছে। শীত বেড়েই চলেছে। নিহা বড় ঘরটাই গিয়ে শুয়ে পড়ে। খুব আলসেমি লাগছে তার। মন চাচ্ছে লম্বা একটা ঘুম দিতে। কিন্তু সমস্যা হল, ঘুমে চোখটা লেগে আসলেই, নিহার মা ডাক দিয়ে কোনো একটা কাজের কথা বলবে।

মা আগে এমন ছিল না, এখন রোজ রোজ একই কাণ্ড করে। আজ নিহা বিছানা ছেড়ে উঠবে না, ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকবে। তার মা যদি বলেন, ‘ও নিহা তোর বাপ আইছে, একুট এগো তো মা’ তাহলেও নিহা আজ উঠবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৬
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×