এক
রমজানের হাওয়া যখন লাগতে শুরু করেছে, সাত বছরের সাফা ঠিক করে রেখেছে, এবার সে সবগুলো রোজা রাখবে।
গত রমজানে সে রোজা রাখতো না। দাদা বলতো তোমার প্রতিদিন তিনটি করে রোজা হচ্ছে, আমাদের হচ্ছে একটা। সে তখন কিছুই বুঝত না, এখন অনেক কিছু বুঝে। দিনে একটা রোজা হয় তিনটা নয়। সাত বছরের মেয়েটি এখন নিজেকে যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ভাবতে শুরু করেছে।
দেখতে দেখতে রোজা চলে এল। আম্মুকে খুব করে সাফা বলল, আম্মু আমি রোজ রাখবো, সেহরিতে ডাকবে কিন্তু। রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে আব্বুকেও বলল, আব্বু আমাকে ডাকবে কিন্তু, না হলে তোমার সাথে কথা বলব না।
রাতে সে অন্যদিনের চেয়ে একটু আগে ঘুমুতে গেলো। আগে আগে না ঘুমালে যদি উঠতে না পারে। কিন্তু সাফার ঘুম আসছে না, খালি এপিঠ ওপিঠ করছে। একটা সময় নিজের অজান্তে তার চোখ বুজে গেল।
দুই
সাফা, সাফা। দুবার ডাকতেই ধরমর করে উঠে বসলো সাফা। সাফার অনেক দিনের শখ রোজা রাখা। আগে যতবারই রোজা রাখার কথা বলেছে। সবাই বলত, তুমি তো ছোট। যখন তুমি বড় হবে তখন রেখো।
সাফা দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো। ঘুম ঘুম চোখে তেমন খেতে পারল না। মোটেও খেতে ইচ্ছে করছিল না, তবু জোর করে খেলো। না খেলে যদি রোজা রাখতে না দেয় তাই।
আম্মুর সাথে ফজর নামাজ পড়ে ঘুমুতে গেল। দিনটি কোনোরকম কেটে গেলেও আছরের পরের সময়টা যেন আর কাটতে চায় না। সেকেন্ডের কাটা একবার ঘুরে আসতে খুব সময় নিচ্ছে। তার আম্মু সকালে খেলতে নিষেধ করে ছিল। তারপরেও সে খেলেছে, ভেবেছিল কিছু হবে না। সূর্যটা যখন ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে তখন আব্বুর চোখরাঙানি খেয়ে খেলা থামিয়েছে।
ইফতারির সময় কাছে আসছে ততই সাফার তৃষ্ণা ক্রমে ক্রমে বাড়ছে। একটু পানি খেতে খুব ইচ্ছে করছে তার। কয়েকবার টিউবওয়েল চেপে কুলি করেছে সাফা। তাতে তার তৃষ্ণা মিটলো না। ইফাতারির এখনও প্রায় ঘন্টাখানেক সময় বাকি। সাফার আম্মু রান্নায় ব্যস্ত। সাফা দুবার রান্না ঘরে গেলো। সাফার আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, কষ্ট হচ্ছে মা।
সাফা মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দিলো। মাথা নেড়ে না বললেও তার যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে। এটা তার প্রথম রোজা তার উপর দিন অনেক বড়। যেখানে বড়রাই রোজা রাখতে হিমশিম খায়, সেখানে সাফা তো ছোট্ট মেয়ে।
সাফা একবার ভাবলো, আব্বুকে বলি, রোজ রাখতে পারছি না। কিন্তু এটা বলতে তার খুব খারাপ লাগবে। কারণ আব্বু সবসময় বলে, আমার আম্মু অনেক শক্ত, আমার আম্মু এটা পাড়ে ওটা পাড়ে, একটা না একটা প্রশংসা তার মুখে লেগেই থাকে।
ইফতারির আর বেশি সময় নেই। কিছুক্ষণ পর আজান দিবে। সেই সাথে অবুঝ মেয়েটির স্বপ্নের পূর্ণতা পাবে। জীবনের প্রথম রোজাটি সম্পূর্ণ হবে তার।
সাফা মায়ের কাছে গেলো, জিজ্ঞেস করলো, আম্মু একটু পানি খেলে কি রোজা ভাঙবে?
মা উত্তর দিলেন, হ্যা।
সাফা বলল, তাহলে গ্লাস ভরেই পানি খাই।
সাফার আম্মুর ইফতারি ও রান্নায় ব্যস্ত। ইফতারির সময় প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। সাফা গ্লাস ভর্তি করে মুখে দিলো। ঘটঘট করে পানি পান করে ফেললো। তার একটু পরেই মুয়াজ্জিন আজান দিলো। ছোট্ট সাফার প্রচন্ড রাগ হলো মুয়াজ্জিনের ওপর কেন সে একটু আগে আজান দিলো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৩৩