somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ের পথে

২৩ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খাগড়াছড়ি

আমরা চার বন্ধু মিলে ঠিক করলাম পার্বত্য জেলা গুলি ঘুরে দেখবো। যেই কথা সেই কাজ তারপরদিনই রওনা হলাম। লটারি তে প্রথমে খাগড়াছড়ির নাম উঠে। ওকে নো প্রবলেম প্রথমবার খাগড়াছড়ির যাত্তয়া যাক । ওখানে শুনেছি বিখ্যাত গুহা আছে। সেটা নাকি আবার অতি ভয়ংকার! দেখতেই হবে। বাস এ করে রওনা হলাম। একসময় দীর্ঘ ক্লান্তিকর পথ পাড়ি দিয়ে এসে পড়লাম পাহাড়ের রাজ্যে। যেদিকে তাকাও পাহাড় আর পাহাড়ি। পানছড়ি জায়গাতে আশা মাত্রই আমাদের বাস লোকাল হয়ে গেলো এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক উঠানো, নামানো শুরু করে। এইসময় একটি ঘটনা আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো. সাধারনত মেয়ের বাস থেকে নামার সময় চালক বাস পুরো পুরি থামাচ্ছিল। কিন্তু একটি পাহাড়ি মেয়ে এক জায়গায় নামতে চাইলে বাস চালক গাড়ী শুধু স্লো করে এবং মেয়েটাকে নেমে যতে বলে।মেয়েটার কলে বাচ্চা থাকার কারণে কিছুতেই নামতে পারছিলো না। এক সময় চালকের সহযোগী তাকে জোর করে প্রায় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। মেয়ে টা বাচ্চা সহ হুমড়ি খেয়ে মাটি তে পরে।আশেপাশের পাহাড়ি রা এর প্রতিবাদ জানালে বাসের চালক , সহযোগী, বাঙালি যাত্রীরা হেসে উঠে। আর পাহাড়ি কিছু তরুণ চোখ মুখ শক্ত করে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। এইভাবে অবশেষে অনেক পথ পরি দিয়ে দুপুরে পৌছুলুম খাগড়াছড়ি শহর।

শহর টি কিন্তু একদম সমতল জায়গায় , চারিদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা অনেকটা উপতক্যার মতো। শহরে ঢুকেই একটি হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে দেখলাম সব আসবাবপত্র সেগুন কাঠের। এর পর আমরা বাজারের কাছেই একটি হোটেলে উঠি। সেখান থেকে জানালা দিয়ে বাজার দেখা যায়।সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্রাম নিয়ে ছুটলাম শহর দেখার জন্যে। বাজারের আশেপাশে ঘুরা ঘুরি শুরু করি। বাঙালি এবং পাহাড়ি দুই ধরনের লোকই প্রচুর। এই সময় আমার এক বন্ধু এক দোকান থেকে কোমল পানীয় কিনতে গেলে দেখে দাম ২ টাকা বেশি। পরবর্তিতে আমি ওই দোকানে যাই কিন্তু আমাকে ঠিক দামেই তারা বিক্রি করে। আমি অবাক হয়ে বললাম, “একটু আগে আমার বন্ধুকে দাম বেশি বলেছেন কেনো”? তারা বললো কে আপনার বন্ধু ? আমি আমার বন্ধু কে ডেকে নিয়ে আসি। তার চেহারা একটু পাহাড়িদের মতো। আমাদের পরিচয় দেয়ার পর দোকানদার হেসে বলেছিলো আমার বন্ধুকে সে পাহাড়ি মনে করেছিলো, আর পাহাড়িদের কাছে সব কিছুর দাম একটু বেশি নেয়া হয় এবং আমার বন্ধুকে ২ টাকা ফেরত দেয়। এই ব্যাপারটা পরবর্তিতে আমি অনান্য পার্বত্য জেলা গুলোতেও দেখি। যাই হোক এর পর যখন ঘুরতে ঘুরতে শহরের এক প্রান্তে চলে এলাম, তখন রাত বাজে ১০ টা। তখন একদল বাঙালি ছেলে এসে আমাদের খেপা গলায় বললো আমরা এখানে কি করছি এবং পরিচয় জানতে চাইলো। আমাদের ছাত্র পরিচয় পাবার পর তারা হেসে বললো, “ভাই কিছু মনে করবেন না, মাঝে মাঝে এখানে অন্য জায়গা থেকে মানুষ আসে শান্তি নষ্ট করার জন্যে। আর এতো রাত্রে এইসব এলাকায় ঘুরা ঘুরি ঠিক না। অনেকে সন্দেহ করতে পারে।“ এরপর হতাশ হয়ে হোটেলে ফিরে এলাম. অনেক রাত পর্যন্ত তাস পিটিয়ে ঘুমোতে গেলাম। সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাজার দেখছিলাম। যা দেখলাম এবং বুজলাম পাহাড়ি মেয়েরা ছেলেদের থেকে বেশি কাজ করে, বেশির ভাগ পাহাড়ি দোকানি মেয়ে, ক্রেতারাও মেয়ে। ফুট ফুটে ,সুন্দর পোষাক পরা পাহাড়ি মেয়েদের ভারী বাজারের ব্যাগ বইতে দেখে আমার নিজেরে খারাপ লাগা শুরু করে। মনে মনে পাহাড়ি ছেলেদের গুষ্ঠি উদ্ধার করি।

দলবল মিলে আবার বের হলাম ,উদ্দেশ আলুটিলা গুহা। অবাক ব্যাপার ওখানে কিভাবে যেতে হবে এবং কোথায় সেটা দেখি একেক জন একেক রকম বলছে। তাই শেষমেষ হোটেলে এসে ম্যানেজার কে জিজ্ঞাসা করি। ম্যানেজার বললো গুহা আছে পর্যটনে। রওনা হলাম পর্যটনে। পর্যটনের গেটের কাছে একলোক মশাল বিক্রি করছে। দেখে আমাদের খুশি আর ধরে না। সবাই একটা করে মশাল কিনে ভিতরে ঢুকে মানুষের কাছে জিগাসা করে করে পৌছে গেলাম সেই বিখ্যাত গুহা মুখে। দেখেই ভয় লাগে, আসলেই ভয়ংকর। আরো ভয়ংকর হলো যখন একটা সাপ গুহার ভিতরে ঢুকে গেলো।আমরা সহ সব পর্যটক তখন জল্পনা কল্পনা শুরু করে দিলাম ঢুকবো কি ঢুকবো না। এইসময় অন্যদলের দুটি মেয়ে হাসতে হাসতে গুহায় ঢুকে পরে। ছেলে গুলা বাধ্য হয়ে মূখ কালো করে ওদের পিছু নেয় এবং চিল্লা চিল্লি করে নারী জাতির বুদ্ধি যে কত কম তা ব্যাখা করে। কি এর করা কিচ্ছুখন পর আমরাও ঢুকে পারলাম ওমা এ দেখি ভয়ানক গুহা, ঘুট ঘুটে অন্ধকার, হিমশীতল ঠান্ডা, কুল কুল করে ঠান্ডা পানির স্রোত বয়ে চলছে । ৪ টে মশালের আলোয় সেই অন্ধকার দূর হচ্ছিলো না। আমি নিশ্চিত অন্ধকার কেমন হাতে পরে টা ওই গুহায় না ঢুকলে পাঠক রা বুজতে পারবেন না। আর গুহা ক্রমশ সরু হচ্ছিলো। আমাদের পিছনে থাকা দুইজনের গ্রুপের একলোক ভয়ে ভাষণ দেয়া শুরু করে। সে বলে আর ভিতরে ঢুকা উচিত নয়। আমাদের সবার এখন ফিরে যাওয়া উচিত। সে তার বন্ধুকে জোর করে ধরে রাখে এবং আমাদর শেষের একজনের হাত ধরে তাকে বুঝানো শুরু করে। আমাদের মধ্যে সেই ছিলো আবার সবচেয়ে ভিতু। আমরা ভাবছিলাম সে হয়তো আর যাবেনা. ইতিমধ্যে গুহার অন্ধকার আমাদের আত্মবিশ্বাসে ফাটাল ধরানো শুরু করেছিলো। কিন্তু আমাদের সেই ভিতু বন্ধু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সবার সামনে চলে আসে বলে ,”চল এগোই”। কি এর করা এগোনো শুরু করলাম। আর অন্য দলটির একজন আমাদের সাথে আশা শুরু করলে ভিতু লোকটাও কান্না কাটি করতে করতে আসতে লাগলো। গুহা ক্রমশ নিচু এবং সরু হাতে শুরু করেছে। আর কতদূর যেতে হবে বুজতে পারছিনা। যখন সবার মধ্যেই একটা ভয় আবার কাজ করা শুরু করে তখন হঠাৎ দিনের আলোর একটি রেখা সামনে দেখা দেয়।সবাই উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলাম। বিশ্ব জয় করার মতোই আমার গুহার অপর প্রান্তে এসে পৌছালাম। মনে হাতে লাগলো ইসস গুহা কেনো এতো ছোট। আর একটু লম্বা হলে কি হত। এতো ছোট গুহা থেকে লাভ কি? এইসব আগডুম বাগডুম। আমরা আবার বিজয়ী কিনা!আর ভিতু লোকটা কে বললাম, “ভাই এতো চিল্লাইলেন কেন?” তখন, সে লাজুক হেসে জবাব দেয় , “আমিতো সবার সাথে মজা করেছি।”

ফিরার পথে একদল পাহাড়ি মেয়ের সাথে পরিচয় । তারা খুবই হাসি খুশি মেয়ে। অবশ্য আমরাই যেচে পরে আলাপ করেছিলাম। কারণ ওখানে বেশ কয় একটা ফুট ফুটে পাহাড়ি মেয়ে ছিলো। এদের একজনের সাথে আমার একটু বেশি খাতির হয়েছিলো নাম “রাখি চাকমা”। সে আমাকে তাদের বাসায় যাবার জন্যে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু সময় সল্পতার কারণে এবং বন্ধুদের চাপে দূঃখজনক ভাবে তার মনোরম সঙ্গ ছেড়ে রওনা হলাম রাঙামাটির পথে।
ভালো থেকো “রাখি চাকমা” ......চলতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৩:২৫
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×