somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগে একদিন

০৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।আমার বৃষ্টি খুবই ভাল লাগে,আবার এক জায়গায় দাড়িয়েও ভিজতে পারি না,তাই আমার মাউন্টেন বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি আর বৃষ্টিটাকে অনুভব করছি।সাইকেলিং করতে করতে আমি অনেকটা পথ এলাম।আর কিছুটা দূর গেলেই শাহবাগ মোর। সেখানে প্রায়ই বরফের গোলা পাওয়া যায়।বরফ ভেঙে তা একটা গ্লাসে ভরে চাপ দিতেই তার আকার ধারন করে,তার পর বিভিন্ন ফ্লেবার দিয়ে সাজিয়ে দেয়।
এই ভাবতে ভাবতে চোখের সামনে এসে গেল সেই গাড়িটি।রাস্তাটা পার হয়ে গেলাম সেখানে, যেতেই দেখি মামা একটা হাসি দিয়ে বলল," কি মামু কোনডা দিতাম সুকলেট না লেমুন"
ওনার কাছ থেকে প্রায়ই আমা গোলা খেতে আসি তাই তার জানা আছে আমার পছন্দের ব্যাপারে।
"দেও মামা চকলেট ফ্লেবারের টাই দাও"
উনি ব্যাস্ত হয়ে গেল বরফের গোলা বানাতে।আমি বাইকে হেলান দিয়ে বসে বসে দেখছি।এমন সময় কিছু একটা নীল রঙা আমার পাশ কাটিয়ে গেল।আমার নীল রং খুবই পছন্দ তাই এই রং টা আমার দৃষ্টিঘচর হলনা।আমি একটু দেখার আকাঙ্খা নিয়ে তাকালাম,দেখলাম একটা মেয়ে ফুলের দোকানে দাড়িয়ে আছে আর দোকানদারের সাথে ফুল নিয়েই কথা বলছে, আমি মেয়েদের দিকে মোটেও তাকাই না কিন্তু নীল রঙাকিছু একটা দেখলে নাকিয়ে পারিও না।মেয়েটা রিক্সা থেকে নেমে দোকানে দৌড় দিয়ে ছিল ভিজে যাওয়ার ভয়ে।
আমি কিছুটা বুঝে উঠবার আগেই ঘার গুরিয়ে নিলাম।মামা গোলা তৈরি করে ফেলেছে,আর আমি তা হাতে নিয়ে মনের আনন্দে খেতে লাগলাম।


২/
মামুনির জন্মদিন, কোচিং থেকে ফেরার পথে মামুনির জন্য ফুল নিতে নামলাম শাহবাগের ফুলের দোকানে।খুব দূর থেকেই লক্ষ করলাম একটা ছেলে বৃষ্টিতে কাক ভেজা ভিজেছে,তবুও বরফের গোলার গাড়ির সামনে দাড়ান,আর যেহেতু সে দাড়িয়ে আছে অবস্যই খাওয়ার জন্য। ছেলেটির চুল আমার নজর কারল চুল গুলো ঘন কাল,সামনের চুল গোল কপালের সামনে পরে আছে চেহারায় একটা দুষ্ট দুষ্ট ছাপ আছে।চোখে কাল মোটা ফ্রেমের চশমা,সব মিলিয়ে ভালই লাগছে ছেলেটিকে।বয়সও তেমন একটা হবে না, কিন্তু আমার থেকে কিছুটা হলেও বড়।ছেলেটিকে দেখতে দেখতে দোকানের সামনে চলে আসলাম।রিক্সা থেকে লাফিয়ে নামলাম বৃষ্টিতে না ভেজার ভয়ে। তার পর ছেলেটির পিছন দিয়ে অনেকটার তার দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করে ফুলের দোকানে গেলাম।দোকানদারের সাথে ফুলের দামা দামি করার সময় চোখ বাকিয়ে ছেলেটাকে দেখলাম,দেখি ছেলেটি তাকিয়ে আছে,আমি আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলাম।তার পর ফুল গুলো নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম।দেখি ছেলেটি এমন ভাবে বরফের গোলা খাচ্ছে,মনে হচ্ছে তার খাওয়া একদিকে আর পুর দুনিয়া একদিকে।দেখে আমারও খানিকটা ইচ্ছে হল একটা নিতে,কিন্তু বৃষ্টিতে যদি বরফের গোলা খাওয়া হয় তাহলে তো মারা পরতে হবে।তবুও গেলাম, গিয়ে একটা মাল্টি ফ্লেবার দায়ে বানাতে বললাম।তারপর ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখি তার কোন খবরই নেই তার পাশে একজন মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আসলে ছেলেরা যে নিজেকে কি মনে করে,এক কথায় কোন পাত্তাই পেলামনা।আমি গোলাটা হাতে নিয়েই টাকা দিতে গিয়ে দেখি ভাংতি নেই।৫০০ টাকার নোট, এখন কি করি,আইস্ক্রীমের দাম ৩০ টাকা, মামাও ৫০০ টাকার ভাংতি দিতে চাচ্ছে না।
এমন সময় ছেলেটি মুখ খুলও "লাগবে না,আমি দিয়ে দিব"
তখন মনে মনে বললাস। " সালা এমন ভাব নিছ যে মেয়েদের চোখেই লাগে না,আর এখন আইস্ক্রীমের দামটাও দিয়ে দিবে" আচ্ছা ধন্যবাদ আপনাকে,কিন্তু টাকাটা পরে নিতে হবে কিন্তু।
" হুম কেন নিবনা আমিত আর হাতেমতাই হয়ে যাইনি" পরে এসে একটা গোলা খাওয়ালেই চলবে"
" গোলা এটা আবার কি,?"
" কেন আপনি কি খাচ্ছেন,জানেন না?"
" এটা গোলা"
" না,,,,এটা বারুদ"
" ও ও বুঝলাম"
আচ্ছা আসি,বায়।

৩/
মেয়েটা চলে গেল, খুবই মিষ্টি করে কথা বলে,আর হই হই করে একট প্রানবন্ধকর হাসি,যা মন মুগ্ধকর।মেয়ে যে রিক্সায় আসেছিল সে রিক্সায় ফিরে যাবার জন্য যাচ্ছিল।এমন সময় পিছন ফিরে তাকাল,মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে আবার ফিরে আসল।"আপনাকে আবার কোথায় পাব,আপনার নাম কি, আপনি কোথায় পড়েন? "
আমি ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইলাম, এত কথা বলে কেন মেয়েটা।
অাপনে এতগুলো প্রশ্ন করলেন কোনটার উত্তর দিব ভেবে পাচ্ছি না।
" সিরিয়ালবাই দিয়ে জান।
আচ্ছা..
" জানি না,কৌশিক,নটরডেম কলেজ"
মেয়েটি আবার হৈ হৈ করে হেসে উঠল।
আচ্ছা আপনি থাকেন কোথায়
"এই একটু সামনে গেলে একটা বাম দিকে গোলি আছে তার পর সোজা গেলে একটা গোলি বামে,,,,,,,"
"থাক থাক আর বলা লাগবে না আপনার ফোন নাম্বারটা দিন"
কেন,? আহ্হা দিন তো।
তার পর আমার হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে তার ফোনে কল দিল।
" নিন নাম্বারটা ছেব করে রাখুন,আমার নাম তন্দ্রা,এবার এস, এস,সি দিলাম।আপনি তো কিছুই জানতে চাননি।বায় আবার আসলে আস্ক্রিম খেতে ডাকব,গোলা না কিন্তু।এই বলে ঠোট চেপে হেসে দিল।
তার পর মেয়েটা,মানে তন্দ্রা চলে গেল।
আজবতো এত কথা বলে কেন মেয়েটা,আমার মাথা ধরিয়ে দিয়েছে।না জানি ফোন দিয়ে আর কিনা কি করে বসে।

৪/
ছেলেটা কেমন যেন,চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে।আর কথা বলার ধরনেও একটা শৈল্পিক ছোয়া রয়েছে।
"না তন্দ্রা না,ওকে নিয়ে এত ভাবছিস কেন,দেখিস মনে না আবার গেথে ফেলিস ওকে"
আমি নিজে নিজেই ভাবতে লাগলাম এই সব।কিছুক্ষন পর ছেলেটাকে আবার দেখাগেল।ঐ যে ও কত সুন্দর করে সাইকেলিং করছে।বৃষ্টিতে মনটা কেমন যেন রমান্টিক হয়ে উঠল আমার।কিন্তু কি করব ছেলেটা যে খুবই ভাল,আমার তো তাকে ভাল লেগে গেছে।কিন্তু এটা কি হুট করে বলা ঠিক হবে।না থাক বলার দরকার নেই।থাক বলে দেই এই সব কাজে দেরি করতে নেই।

৫/
আল্লায় জানে আজ কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম।কোন এক পাগলের পাল্লায় পরেছিলাম আজ।মেয়েটার চোখে আমি আমার প্রতি একটা কৌতুহল লক্ষ করেছি।কিন্তু আজ আবার আমার কি হল,কোন সময় কাউকে নিয়েতো এভাবে ভাবিনি তন্দ্রাকেই বা ভাবছি কেন।আমার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি ওর......

পরদিন দেখাগেল তাদের দুইজনকে একটা আইস্ক্রিম পার্লারে।হয়ত তারা তাদের মনের কথা গুল একজন আরেক জন কে বলে দিয়েছে।ভাল থাকুক তন্দ্রা আর কৌশিক।তারা তাদের স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবে রূপান্তরিত করুক।সুভকামনা রইল তাদের জন্য।।
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×