somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১/

এই যে, এই যে। শুনছেন? আপনাকে বলছি।
> জি আমাকে বলছেন?
> হুমম,আপনাকেই। কিছু মনে না করলে আপনার নামটা জানতে পারি?
> কেন? কি দরকার?
> নাহ, আপনাকে অনেকটা চেনা চেনা লাগছে তাই আরকি।
> হুম, বুঝেছি। আমি "ইসমিহ"
> ওহ, আচ্ছা। সরি।

২/

কি হোল কিছুই বুঝতে পারলাম না।ছেলেটা আমাকে ডাকতে ডাকতে এতটা পথ ছুটে এলো,তাও আবার শুধু নাম জানার জন্য।

কিন্তু ছেলেটা কে,আমারও তো অনেকটা চেনা পরিচিত মনে হচ্ছিল। চোখে চশমা,চুল গুলো অগোছালো।সব কিছুই যেন অনেকটা পরিচিত ছিল।তবুও চিনতে পারছি না কে সে!
ইসঃ কেন যে নামটা মিথ্যে বললাম।পরিচিত হলেও তো চিনে ফেলতো, তার নামও তো জানা হয়নি।

অনু এইসব কথা ভাবছে আর চাঁদ দেখছে।তার ধারনা যাদের ভালোবাসার কেও নেই,তারা চাঁদকে ভালোবেসে সে অভাবটা পূরণ করে।

৩/

অনুর সাথে প্রায় ৬ বছর পর আজ দেখা হোল।এর মাঝে কোন যোগাযোগও হয়নি।কিন্তু অনুকে প্রথম চিনতে অসুবিধে হলেও পরে ঠিকই চিনে ফেলেছি,যখন ও ওর নামটা গোপন রাখার জন্য নিজেকে " ইসমি" বলে পরিচয় দিয়েছিল।কিন্তু প্রত্যেক বারের মত সে এবারও ইসমি নামটা উচ্চারণ করতে গিয়ে ইসমিহ বলে ফেলেছিলো।

কিন্তু সে নিজের নামটা গোপন করে ছিলো কেন।নাকি আমাকে চিনতে পেরে নিজেকে গোপন করার চেষ্টা করছিল।
না আমাকে চিনতে পারলে তো এমন করার কোন প্রয়োজন ছিলোনা হয়তো।

৪/

ব্রেক টাইমে অনু ওর টিফিন বক্সটা খুলতেই ওর মুখে তিন গোল্লা ফুটে উঠে,বড় বড় দুইটা চোখ আর হা করা মুখ।

এমন সময় নাবিলের আগমন
"কিরে মুখ খুলে হা করে কি দেখছিস,সেন্ডুইজ নেই?"
সয়তান! তুই তাহলে এই কাজ করেছিস।
এই বলেই অনু নাবিলের উপর ঝাঁপিয়ে পরে।আর একসাথে ৪ -৫ টা কিল ঘুসি বসিয়ে দেয় নাবিলের পিঠে।
নাবিল দৌড়ে গিয়ে ওর নিজের টিফিনটা নিতে যায়,কিন্তু দেখলো এটাও খালি।
এবার নাবিলের মুখেও তিন গোল্লার সৃষ্টি হয়।
কিরে আমারটাও খালি!
ওফ নুডুলস টা খুব ভালো লেগেছেরে।অনু এ কথা বলেই দৌড়ে পালাতে চায়।আর নাবিলও অনুর পিছু পিছু ছুটতে শুরু করে।

নাবিল আর অনুর পাগলামি দেখে ইসমি এসে তাদের থামালো।কিরে তোরা কি সারা জীবন এভাবেই টম এন্ড জেরির মত লেগে থাকবি নাকি।

এই শুনে দুই জনই শান্ত হয়।

৫/

আজ স্কুলে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো,নাবিলের কথা শুনে।সে নাকি আর এ স্কুলে পড়বেনা,ঢাকা চলে যাবে।স্যারেরাও তাকে ছাড়তে চাইছে না। এখন থেকে আর তিন দিন পর সে চলে যাবে।

অনু এই কথা শুনে একদম চুপসে যায়, আর নাবিলকে জিজ্ঞাস করলো "যাওয়াটা কি বেশি জরুরী?"
নাবিল কিছুই বললো না।
অনুও আর একটা কথাও জানতে চাইলো না।

আজ সারাটা ক্লাসই নীরব কেটেছে সবার, সবাই যেন প্রতি দিনের সব কর্মকান্ড ভুলে বসেছে।

নাবিল আর অনুও আজ চুপচাপ হয়ে আছে।আজ তারা কেও টিফিন নিয়ে ঝগড়া করেনা।

অনু ক্লাস রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে রয়েছে।তার সরু কাজল দেওয়া চোখটাতে মুক্তর দানার মত জল জমে আছে,কিন্তু কেও তা লক্ষ করলো না।
আজ অনু স্কুলে আসেনি।কিন্তু অনু এমন মেয়েনা,সে কখনো স্কুল মিস দেয়না।কিন্তু আজ কি হোল ও কি অসুস্থ।
ক্লাস রুমে বসে বসে ভাবছে অনুর বেপারে।নাবিল ভেবেছিল আজ অনুর বাসার ফোন নাম্বার নিয়ে যাবে।যেন তাদের মধ্য যোগাযোগ টা বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়।

কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না। নাবিল চলে গেল।আর এতদিন অনু ইচ্ছে করেই স্কুলে আসেনি।

অনুর সাথে দেখা হবার ৪ দিন পর.......

৬/ আজ নাবিল একটা কাজে বেরিয়েছে। খুব বৃষ্টি হচ্ছে, আর নাবিল রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছে আর বৃষ্টিতে ভিজছে।
অন্য সময় নাবিল বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বাসে যাওযার পথটাও হেটে যায়।কিন্তু আজ তার কাছে এটা খুব অস্বস্তি লাগছে।

হঠাৎ তার কানে এসে একটা পরিচিত শব্দ করা নাড়লো।
হ্যাঁ এটা তারই নাম,কেও নাবিল বলে ডাকছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো, তার নামের উৎসটা।কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আবিষ্কার করলো,রিক্সার হুড এর নিচে একটা মেয়ে তাকে ডাকছে।কিন্তু সে চেহারাটা ঠিক মত বুঝতে পারছেনা বৃষ্টির কারণে তার চশমার গ্লাসটা ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে।

নাবিল দাড়িয়ে আছে, যেতে সাহস পাচ্ছেনা।
কিন্তু মেয়েটি রিক্সা থেকে নেমে পরেছে।ছাতা হাতে তার পাশে এসে দাঁড়ালো। নাবিলকেও ছাতার ছায়ায় নিয়ে নিলো।

অনু এবার একটা হাতে নাবিলের পিঠে সজোরে একটা ঘুসি মেরে বলে, "সয়তান ঐ দিন চিনতে পেরেও চলে আসলি কেন"
"এমনি,কিন্তু তুইও কি আমাকে চিনতে পারিসনি"
"সত্যি আমার তোকে চিনতে অনেকটা অসুবিধে হচ্ছিল"
"হুমম"
"হুমম,মানে বৃষ্টি হচ্ছে এখানেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি "
তোর সমস্যা হলে যেতে পারিস।আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই বারি যেতে পারবো।

তোর কি মনে হয়? আমি একবার যে ভুলটা করেছি সেটা আবার করবো।তোকে তো আর আমি ছাড়ছি না।
আমিও ভিজবো আজ তোর সাথে।তোর মনে নেই এক সময় বলেছিলি "কোন এক বৃষ্টির দিনে দুজনে হাতে হাত রেখে ভিজে ভিজে অনেকটা পথ হাঁটবো"
"হুমম বলেছিলাম"
"তাহলে চল,দাড়িয়ে আছিস কেন"

অনু ছাতাটা ছেড়ে দেয়ে,বাতাসের কারণে ছাতাটা অনেক দুরে চলে যায়।
অনু আর নাবিল পাশা পাশি হাঁটছে। হঠাৎ অনু নাবিলের হাতটা ধরে ফেলে।নাবিল একবার অনুর দিকে তাকায়।তার পর আবার মাথা ঘুরিয়ে নেয়।

অনু ভাবছে তার আগামী দিনের পথ চলার মাঝেও এই হাতটা যদি ধরে থাকা যায় তাহলে মন্দ হতো না।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×