somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ সায়েন্স ফিকশন গল্প: প্রশ্ন।

২৪ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তাকে তৈরি করা হয়েছিল অনেক দিন আগে- অনেক অনেক দিন টিকে থাকার মত করে, যতদিন দরকার। সে উত্তরদাতা, সঠিক প্রশ্ন করলে তার থেকে উত্তর পাওয়া যায়। যারা তাকে তৈরি করেছিল, সেই তাদের মতে সময় ঠিক একরকম নয়। কিন্তু উত্তরদাতার মতে সে অনেক লম্বা সময ধরে টিকে আছে, অনেক লম্বা সময়। থাকবে আরও অনেক সময় পর্যন্ত; যখন না তকে প্রশ্ন করার জন্য আর কেউ থাকবে না, তথনও থাকবে সে।

দেখতে শুনতে উত্তরদাতা একক জনের কাছে একেক রকম। কেউ তাকে বড় বলে, কেউ তাকে ছোট বলে। কারও কাছে সে খুবই জটিল, কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করে সে খুবই সরল সাদামাটা একটা অস্তিত্ব।

উত্তরদাতা জানত সে যা সে তাই। আর কিছু না হোক, সে তো উত্তরদাতা, সর্বজ্ঞেয়। তাকে জানতে হয়।

যে বুদ্ধিমান অস্তিত্ব তাকে তৈরি করেছিল, তাদের বিষয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। তারা নিজেদের সম্পর্কে সবই জানত, সেই জ্ঞান তাদের মনে কোন সুখ দিতে পারেনি।
তবে তারা জ্ঞানকে সম্মান করতো। তাই তারা সৃষ্টি করল উত্তরদাতাকে, সে যেন তাদের থেকে কম জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্য মহাবৈশ্বিক অস্তিত্বগুলোকে পথ দেখাতে পারে, এরপরে তারা মহাবিশ্ব থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। কোথায় গেল তা কেবল উত্তরদাতাই জানে, আর কেউ না। উত্তরদাতা সব জানে, তবে তা কাউকে বলবে না, যতক্ষন না পর্যন্ত সঠিক প্রশ্নটি করা হচ্ছে।

এক অজানা সুর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকা গ্রহে বসে এইসব ভাবে উত্তরদাতা। সময় এগিয়ে চলে, কারও হিসেবে কম সময়, কারও হিসেবে বেশি সময়, তবে উত্তরদাতার কাছে সবই সমান।

তার কাছেই আছে সবকিছ্রু উত্তর। সে জানে কোনটা কেন হয়, কার কি স্বভাব, কোন কারনে কি ঘটে।

সে সবকিছরই জবাব দিতে সক্ষম। তবে শর্ত একটাই, প্রশ্নটি হতে হবে উপযুক্ত। সে চায় উত্তর দিতে, এটাই তার কাজ, উত্তর দেয়া। এই জন্যই তার সৃষ্টি। এছাড়া কিভাবে সে উত্তরদাতা হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করবে?

সুতরাং, দিনের পর দিন, অনন্ত সময ধরে সে অপেক্ষা করে থাকে, কেউ আসবে, একটা প্রশ্ন নিয়ে।

***** ***** *****

বুড়ো মানুষটির উপরে হালকা হয়ে শুন্যে ঝুলে থেকে জানতে চায় মোরান “শরীরটা এখন কেমন লাগছে আপনার স্যার?”

“একটু ভাল আগে তুলনায়”। একটু হাসার চেষ্টা করে উত্তর দেয় লিন্ডারম্যান। ওজন শুন্যতা একটা স্বস্তিকর ব্যপার, বিশেষ করে তার মত বুড়ো মানুষ এর জন্য। যদিও মোরান বিশাল পরিমান জ্বালানি খরচ করে সাম্ভাব্যতম কম ত্বরণে তাকে পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে তুলে এনেছে, এরপরেও তার বুড়ো হয়ে যাওয়া হৃৎপিন্ড ব্যপারটাকে ভালভাবে সামলাতে পারেনি। পুরো সময়টায় সে একটা অসহ্য যন্ত্রনা আর ভয়ের মধ্যে দিয়ে পার করেছে। তার হৃৎপিন্ড কখনও কাজ থামিয়ে দেবার ভয় দেখিয়েছে, আবার কখনও একটা জোরে ছুটতে চেয়েছে যে মনে হয়েছে বুকের খাচা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। সব শেষ হবার পরে তাই অসম্ভব ক্লান্ড বোধ করছে সে।

তবে ওজনশুন্যতা তাকে আবার স্বস্তি দিল, শান্ত করলো। এক কষ্টের পরেও সে খুশি, শেষ পর্যন্ত হয়ত তার উদ্দেশ্য সফল হবে।

মোরান এর এরকম কোন সমস্যা হয়নি। তার শক্তপোক্ত শরীর এরকম প্রচন্ড চাপ নেবার উপযুক্ত। বয়স এবং কঠোর প্রশিক্ষন তাকে এই ক্ষমতা দিয়েছে। তবে বুড়োর বেচে থাকার ব্যপারে সে বেশ সন্দিহান।

“আমি বাচবো।” বিড়বিড় করে মোরান এর অনুচ্চারিত প্রশ্নের জবাব দেবার চেষ্টা করে লিন্ডারম্যান। “অন্তত শেষ পর্যন্ত দেখবার জন্য হলেও আমাকে বেচে থাকতে হবে।” মোরান কয়েকটা সুইচ-নব নাড়াচাড়া করে, কয়েকটা নির্দেশ দেয় মাহাকাশযানের কম্পিউটারকে। পানির মধ্যে ঈল মাছের হারিয়ে যাবর মত করেই তারা পৃথিবীর দৃষ্টিসীমা থেকে হারিয়ে গেল হাইপার-স্পেসে।

“সেটা দেখা যাবে।” মোরান জবাব দিল বুড়োর মতই বিড়বিড়িয়ে। মহাকাশযানের নেভিগেশনাল কম্পিউটারের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সে এবার এগোয় বুড়োর দিকে। ধীরে ধীরে তাকে চেয়ার এর স্ট্র্যাপ থেকে মুক্ত করে দাড়াতে সাহায্য করে। “আমরা খুজে পাবোই। এতদিনের চেষ্টা, আমরা উত্তরদাতাকে খুজে পাবোই!”

লিন্ডারম্যান তার তরুন সহকারীর কথায় মাথা নেড়ে সায় জানায়। বছরকে বছর ধরে তারা নিজেদের এই বলে স্বান্তনা দিয়ে আসছে, আশা দিয়ে আসছে। এই প্রজেক্টটা আসলে ছিল লিন্ডারম্যানের। এর অনেক পরে মোরান, ক্যালটেক থেকে পাশ করে বের হয়ে তার সাথে যোগ দেয়। তারা দুজনে মিলে চষে বেড়িয়েছে শয়ে শয়ে সৌরজগৎ আর গবেষনা করেছে সেখানে ছড়িয়ে থাকা নানারকম রুপকথা, উপকাথা, গুজব আর নানা রকম কল্পকাহিনী। খুজে বের করার চেষ্টা করেছে সেই প্রচীন মানব সদৃশ্য বিজ্ঞ জাতের কথা, যারা নাকি সবকিছুর উত্তর জানত, ছিল সব জ্ঞানের আধার এবং কোন রকম নাম নিশানা না রেখেই হারিয়ে গেছে এই মহাবিশ্ব থেকে। কোন রকম নিশানা না রেখেই তারা হারিয়ে গেছে; একমাত্র উত্তরদাতা ছাড়া। তাকে রেখে গেছে বাকি সবাইকে সত্যিকার জ্ঞানের পথ দেখাবার জন্য।

“চিন্তা করে দেখুন একবার! সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে তার কাছে! ” একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে এরকম একটি সম্ভাবনা সত্যি হবার সুযোগ দেখে উল্লসিত। কত যে প্রশ্ন করার আছে তার, ক্রমশ্যই বাড়তে থাকা মহাবিশ্ব, মাহবিশ্বের চারটা মুল বাধন শক্তি, ব্লাকহোল এর রহস্য থেকে শুরু করে আরও কত কি।

“হম!” গম্ভীর মুখে সায় দেয় লিন্ডারম্যান। সে একজন জীববিজ্ঞানী এবং একই সাথে বুড়ো হযে মরতে বসা একজন মানুষ। তার প্রশ্ন আছে কেবল মাত্র দুটো।
জীবন কি?

মৃত্যু কি?

**** **** ****

একটা লম্বা সময় পার্পল এর খোজে ছোটাছুটি করার পর লীক ও তার সঙ্গীরা একটু থামে কথা বলার জন্য। ভাল একটা পরিমান পার্পল জোগাড় হয়েছে, একটু বিরতি নেয়াই যায়। পার্পল বরাবরই তিন তারা বিশিষ্ট সৌরজগতের দিকে বেশ হালকা ভাবে ছড়ানো। কেন, কে জানে, সুতরাং একটু পরে ক্লান্ত হয়ে সবাই একসাথে হওয়াটা মোটামুটি নিশ্চিৎ।

“মাঝে মাঝে আমার মনে হয় কি জান” মন্তব্য ছুড়ে দেয় সঙ্গীর দিকে লীক ” আমি ঐ উত্তরদাতার সন্ধানে বার হব।” কথাচ্ছলে বললেও তাকে বেশ দৃড়প্রতিজ্ঞ দেখায়।
“কেন?” হালকা স্বরে জানতে চায় ইলম। “কেন এত কিছু জানার দরকার তোমার? পার্পল ধরে বেড়াবার কাজ কি যথেষ্ট না? মাথার উপরে নতুন ঝামেলা নেবার কি দরকার?”

“না, আমার জন্য যথেষ্ট নয়।।” এখনও সিরিয়াস লীক তার বক্তব্যে। তাদের কাজ হল পার্পল খুজে বেড়ানো। বিভিন্ন চেহারায় স্পেস-টাইম এর ভাঁজে ভাঁজে নুকিয়ে থাকে পার্পল। তারা এগুলোকে খুজে ফেরে, সংগ্রহ করে। একটা বিশাল পার্পল এর সংগ্রহ তৈরি করছে তারা। কেন, কেউ জানে না। জানার চেষ্টাও করেনি কেউ কখনও।

“তাহলে তুমি নিশ্চয়ই তাকে জিজ্ঞেস করবে, পার্পল কি জিনিস?” জানতে চাইল ইলম একটা তারাকে অলসভাবে পাশ কাটাতে কাটাতে। মহাশুন্যে ভেসে বেড়ানো এনার্জিগুচ্ছ দিয়ে তেরি লীক আর ইলমরা। মাহাকাশেই ভেসে বেড়ায় তারা, মহাকাশেই তাদের সব।

“হ্য, আমি তার কাছে জানতে চাইবো। অনেক অনেক সময় আমরা না জানার চেষ্টা করে কাটিয়ে দিয়েছি। এখন আমার জানবার দরকার পার্পল কি জিনিস, কি তার প্রকৃতি, কি তার কাজ। এই মহাবিশ্বের অস্তিত্বে কি তার অবদান। কেন আমরা এভাবে দিনের পর দিন পার্পল সন্ধান করে চলেছি? কেন আমরা দিনের পর দিন এভাবে পার্পল একজায়গায় স্তুপ করছি। আমার জানা দরকার।

ইলম এবং তার কথা শুনতে থাকা বাকি সবাই তার কথায় কোন প্রতিবাদ করলো না। যদিও তারা চুপ করেই থাকলো, তারপরেও তারা জানে এই জ্ঞানটা তাদের দরকার। রীক ঠিকই বলেছে; সময়ের সূচনা থেকে তারা পার্পল এর সন্ধানে মহাবিশের এখান থেকে সেখানে চষে বেড়াচ্ছে। কেন তারা এই কাজ করছে, জানে না তারা। এখন বোধহয় সময় হয়েছে জানার। তাই দরকার উত্তরদাতাকে, সে সব জনে। মহাবিশ্বের এখান থেকে সেখানে ঘুরে বেরাবার সময় তার দেখেছে অনেক কিছু, জেনেছে অনেক কিছূ। তাই তারা জানে, সেই হারিয়ে যাওয়া মহাজ্ঞানী জাতির কথা,যারা ছিল অনেকটা তাদেরই মত, তাদের রেখে যাওয়া এক অস্তিত্বর কথা, যে তাদের সব জ্ঞান ধারন করে। যার কাছ সব প্রশ্নের উত্তর আছে।

“তুমি কি তাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করবে?” জানতে চায় ইলম।

“জানি না ঠিক। হযত জিজ্ঞেস কর, কেন তারাদের আশে পাশে বাকি মহাশূন্যের তুলনায় পার্পল এর অস্তি¡ত্ব পাওয়া যায় অনেক বেশি ।” লীকরা সময়ের সুচনা থেকে অস্তিত্বমান। তারা কখনও সংখ্যায় কমে যায়নি। তাই মৃত্যু তাদের কাছে অর্থহীন। তাদের মধ্যে কখনও নতুন অস্তিত্বের উদ্ভব হয়নি। তাই তাদের কাছে জন্মও সমান অর্থহীন। শুরু থেকে তারা শুধু পার্পলই সন্ধান করে গেছে, পার্পলই সংগ্রহ করে গেছে। তারা এটাই করে, এটাই জানে। তাই তাদের জিজ্ঞাসা পার্পলকে ঘিরে। কেন পার্পল এর এই সংগ্রহ তাই নিয়ে।

“আমি যাচ্ছি!” ঘোষনা দেবার সুরে জানায় লীক।

“তোমার যাত্র শুভ হোক ভাই! তার অন্য সঙ্গীরা তাকে বিদায় জানায়।

হারিয়ে যায় লীক অজানার উদ্দেশ্যে, এক তারা থেকে আরেক তারায়।

**** **** **** ****
নিজের গ্রহে চুপচাপ বসে অপেক্ষা করে উত্তরদাতা। মাঝে মাঝে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে আর উত্তর দেয়। এই অধিকার তার আছে।

অপেক্ষা করে সে; সময় তার কছে অর্থহীন। কোন অপেক্ষাই তার কাছে লম্বা নয় কিংবা ছোট নয়। সে অপেক্ষা করে কবে আসবে কেউ, তাকে প্রশ্ন করার জন্য। অপেক্ষা করে আর মাঝে মাঝে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে, উত্তর দেয়।
**** **** ***** *****
তারা আঠারো জন। এক সাথে হয় অনেকদিন পরপর। যথনই তারা আঠারোজন একসাথে হয়, নতুন একজনের উদ্ভব হয়। সবচেয়ে বয়স্কজন অস্তিত্ব হারায়। এ সবই আঠারোর নিয়মে ঘটে।

এবারে সবাই একসাথে হবার পরে নতুন যে তার অস্তিত্ব খুজে পেয়েছে, অবাক হয়ে চারদিকে তাকায়। “আমি কে? কোথায় এলাম?” যতটুকু তারা জানে, তা জানাবার জন্য একজন তাকে এক কোনে নিয়ে যায়। বাকি ষোলজন একসাথে আলোচনায় বসে।
“আমাদের অবশ্যই উত্তরদাতার সন্ধান করতে হবে! ” উত্তেজিত হয়ে উঠে একজন। “কেন আমরা আঠারো জন? কেন আঠোরো জন একসাথে হলেই নতুন একজনের আগমন হয়? কেন একজন চলে যায়? কেন আমরা আঠারোর নিয়মে আটকা পড়ে আছি? এর বাইরে কি কোন কিছু নেই? আমরা তার কাছে যাব। কেন সব স্থান ভিন্ন হয় একে অপরের থেকে, যেখানে তাদের মধ্যে কোন দুরত্বই নেই? যেখানে তারা আসলে একই স্থান?

এটাই তাদের সমস্যা। তারা একজন এখানে, আরেকজন ওখানে। তারপরেও তারা কোনরকম চলাফেরা ছাড়াই আবার একই জায়গায়। কেন এরকম হয়?

“নক্ষত্রগুলো ঠান্ডা হয়ে আসছে, দিনকে দিন আরও ঠান্ডা হচ্ছে।!” একজন চিৎকার করে উঠে। কেন? কোন জবাব নেই।

তারা জানে, এক প্রাচীন জাতির কথা, এক মহাজ্ঞানী জাতি, যারা অনেকটা তাদের মতই, এক সময় ছিল, এখন চলে গেছে স্থানহীন কোন এক স্থানে। তবে যাবার আগে তারা উত্তরদাতাকে সব বলে গেছে। তার কাছেই আছে সকল উত্তর।

উত্তরদাতাকে খুজে বার করতে হবে! তার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে সব রহস্য! সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

“কিভাবে যাব আমরা সেখানে?” নতুন জন আগ্রহের সাথে জানতে চায়। ইতোমধ্যেই সে সবার সব জ্ঞান ধারন করেছে নিজের মধ্যে। এখন সে আর সবার মতই সব জানে। তবে অভিজ্ঞতায় সে নিঃসন্দেহে সবার ছোট।

“আমরা সেখানেই আছি, সবখানেই আছি। শুধু ইচ্ছা করতে হবে কোন একটি নির্দিষ্ট বিন্তুতে ঘনীভুত হবার।” জানায় তারা।
“তবে তাই হোক!”

তারা সেখান থেকে হারিয়ে যায়। আবার উদয় হবে অন্য কোনখানে।

***** ***** *****
“ঐ গল্প কাহিনীগুলো তাহলে সত্যি ছিল দেখা যাচ্ছে!” বিশ্বয়ে চোখ বড় হয়ে যায় মোরানের। তারা হাইপারস্পেস থেকে বেড়িয়ে এসেছ সম্পুর্ন অচেনা একটা সৌরজগতে, তারা যে অবস্থান চিহ্নিত করেছিল সেখানেই। তবে এই সৌরজগতটা আর দশটা সৌরজগত থেকে আলাদা। মোরান একটা ক্লাসিফিকেশন ব্যবহার করেছে সবগুলো সৌরজগতকে একটা গোছানো ব্যবস্থায় আনার জন্য। তবে সবকিছু বলে দিচ্ছে এই নক্ষত্র এবং তার সাথে চলতে থাকা সমস্ত কিছূর একটা আলাদা ধরন আছে যেটা সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। তবে যাই হোক, সে নিশ্চিৎ এটাই তাদের কাঙ্খিত জায়গা। এর অদ্ভুত বৈচিত্রময় বৈশিষ্টই বলে দিচ্ছে তা।

সেই নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে একটা একক গ্রহ। আর কোনখানে দেখার দরকার নেই তাদের, তারা জানে এটাই তাদের গন্তব্যস্থল।

তারা নামতে যাচ্ছ। মোরান লিন্ডারম্যানকে তার সীটের সাথে স্ট্র্যাপ দিয়ে বেধে দিতে দিতে বলল। ”শক্ত হয়ে বসে থাকুন। আমি চেষ্টা করব যতটা সম্ভব ধীরে ধীরে শিপটা গ্রহটাতে নামাতে।

***** ***** ***** *****

লীক উত্তরদাতার কাছে পৌছে যায় তারায় তারায় ঘুরতে ঘুরতে।

সে উত্তরদাতাকে তার হাতে তুলে নেয়। তাহলে তুমিই হলে উত্তরদাতা? আমার সব প্রশ্নের জবাব দেবে?”

”হ্যা” ছোট্ট করে উত্তর আসে।

তারা আর গ্রহের মাঝের মধ্যাকর্ষে নিজেকে আরামদায়কভাবে সেট করে প্রশ্ন করে লীক।

“তাহলে বল, আমি কি?”

“বিশালত্বের একটি অংশ! একটি নির্দেশনা!” বলে উত্তরদাতা।

“ঠিকভাবে বল না!” বিড়বিড় করে অসন্তোষ প্রকাশ করে লীক। “এর থেকে ভালভাবে, পরিস্কারভাবে বলতে পারবে তুমি। বল, আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কি? কেন আমরা পার্পল এর খোজে মহাবিশ্ব চষে বেড়াই? কেন আমরা সেগুলো এক জায়গায় জমা করছি? আমাদের অস্তিত্বের সত্যিকারের উদ্দেশ্য কি?”

“আপনার প্রশ্নের কোন যুক্তিসংগত মানে নেই!” জানায় উত্তরদাতা। সে অবশ্যই জানে পার্পল কি জিনিস, সে জানে কেন তারা এগুলো সংগ্রহ করে, কেনই বা সেগুলো জমা করছে। কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তর দিলে সেটা আরও অনেক বেশি প্রশ্নের জন্ম দেবে। এই একটি প্রশ্নের উত্তর বোঝাবার জন্য প্রশ্নকর্তাকে জানাতে হবে বোঝাতে হবে অনেক কিছু। সেটা সম্ভব নয়। সে শুধু প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়, আর কিছু না।

লীক সত্যিকার প্রশ্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কোন উত্তর পাবে না।

লীক আবার প্রশ্ন করে, আবার। কিন্তু কোন বোধগম্য উত্তর পায় না। উত্তরদাতা অসহায়। সে কিভাবে একজন অন্ধকে বোঝাবে সবুজ রং দেখতে কেমন? উত্তরদাতা বোঝাতে চেষ্টাও করে না, তার করার কথাও না।

লীক তার বিশেষ চোখে সবকিছু দেখে। কিছু জিনিস সে বুঝতে পারে, তবে সবটা মেনে নিতে পারে না। শেষ পর্যন্ত সে মেনে নিতে বাধ্য হয়।

একটা অসহায় হাসি হেসে সে হারিয়ে যায় তার সাধারন বিশালতায়, হাজারো তারাদের মাঝে।
***** ***** ******

সে সব জানত। কিন্তু তাকে সঠিক প্রশ্ন করা না হলে সে অসহায়। এটাই তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য। এর বাইরে যাবার ক্ষমতা তাকে দেয়নি তার সৃষ্টিকর্তারা। উত্তর দিতে না পারায় আক্ষেপ করে সে মনে মনে। দুরে হাজারো তারা, বড়ও না, ছোটও না। ঠিক যেটার যে আকার হবার কথা, তাই।

সঠিক প্রশ্ন, চিন্তা করে সে। তার সৃষ্টিকর্তাদের এটা চিন্তা করা উচিৎ ছিল। তাদের উচিৎ ছিল সঠিক প্রশ্নঘটিত নিয়মটা একটু শিথিল করা। তাহলে সে হয়ত কয়েকজনের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতো। কে জানে, হয়ত প্রশ্ন এবং উত্তরের পেছনে কারনগুলোও একটু ব্যখ্যা করার সুযোগও পাওয়া যেত। এভাবে হয়ত কোনদিনই সে উত্তর দেবার সুযোগ পাবে না।

নিজেকে নিজের ভেতরে গুটিয়ে নিয়ে সে আবার বিড়বিড়িয়ে প্রশ্ন এবং উত্তর করতে থাকে।
**** **** *****

আঠারো জন এসে হাজির হয়। তারা ভেসেও আসেনি, উড়েও আসেনি; কেবলমাত্র হঠাৎ করে হাজির হয়েছে উত্তরদাতার সামনে। ঠান্ডা নক্ষত্রের আলোয় তারা কাঁপতে থাকে। উত্তরদাতার বিশাল আকারের দিকে তাকিয়ে তারা প্রশ্ন করে ”দুরত্ব কি? যদি দুরত্ব বলে কিছু থাকে তবে কিভাবে একটা জিনিস দু জায়গায় থাকে? স্থান কি? দুরত্ব আর স্থানের সাথে সম্পর্ক কি তাদের?”

উত্তরদাতা জানে দুরত্ব কি, এর সঠিক মানে কি। স্থান এর রহস্যও তার জানা। কিন্তু সে উত্তর দিতে পারে না। দুরত্ব আছে, কিন্তু এই প্রানিরা যেভাবে দেখে সেভাবে নয়, অন্যভাবে। স্থানও আছে, সেটাও এই প্রানিরা যেবাবে আশা করে তার থেকে ভিন্ন।
“সঠিকভাবে প্রশ্ন করুন।” মনে আশা জাগে উত্তরদাতার। এরা হয়ত সঠিক প্রশ্ন করবে।

“কেন আমরা এখানে আকারে ছোট, ওখানে বড়? কেন তারাগুলো ঠান্ডা?” একজন জানতে চায়।

উত্তরদাতা জানে এর উত্তর। কেন তারাগুলো তাদের বিচারে ঠান্ডা, কেন তারা এরকম। কিন্তু এই উত্তর তারা কিংবা উষ্ণ-ঠান্ডার ব্যখ্যায় দেয়া সম্ভব না। যে ভাবে এর ব্যাখ্যা সম্ভব, সেটা তারা বুঝবে না।

সে চুপ করে থাকে।

“কেন আমরা আঠারোর নিয়মে আবদ্ধ? কেন আঠারোজন একসাথে হলেই আরেকজনের সৃষ্টি হয়?”

উত্তরদাতা এর জবাব জানে। কিন্তু যার উত্তর চাওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্নটিরই আরেকটি অনেক বড় প্রশ্নের উত্তরের অংশ। তারা তাকে সঠিক প্রশ্নটি করতে পারেনি। তাই সে কোন জবাব দিতে পারবে না।

আঠারোজন একসাথে হয়েছে। তাই জন্ম নিল আরেকটি প্রানির; এরপরে একই সাথে শুন্যে মিলিয়ে গেল উনিশটি প্রানি।

**** **** **** ****

উত্তরদাতা সঠিক প্রশ্নটি মনে মনে আওড়ায়, নিজেকেই জবাব দেয়।

*** **** **** ****
“আমরা শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছি!” নিজের কাধ আর লিন্ডারম্যানের কাধে খুশিতে চাপড় মারে মোরান, তবে সাবধানে। জানে, তার হাতের ধাক্কা খেয়ে বুড়ো উল্টে যেতে পারে।

লিন্ডারম্যানের অবস্থা ভাল না, তবে বাচবে সে আরও বেশ কিছু সময়। অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে গ্রহটাতে নামালেও তার ধকল সামলাতে কষ্ট হচ্ছে তার। চেহারা হলুদ হয়ে গেছে তার, চোখ উল্টে যাবার জোগাড়।

“চল, যাওয়া যাক।” তাড়া হুড়ো করছে লিন্ডারম্যান, কারন সে কোন সময নষ্ট করতে চায় না। নষ্ট করার মত সময় তার হাতে নেই। স্পেসস্যুট পড়ে দুজনে বার হয়। “একটু আস্তে হাট!” মোরানকে আবার হালকা ধমক মারে সে। উত্তেজনয় প্রায় দৌড়াতে শুরু করেছিল, গতি কমায় মোরান।

হালকা আলোয় ঘেরা গ্রহটির পথ ধরে দুজনে হেটে যেতে থাকে। গ্রহটি আর সব গ্রহ থেকে আলাদা, যে গ্রহটির সুর্যও আর দশটা সুর্য থেকে আলাদা

একটু সামনে এগিয়ে যায় মোরান, তারপর ডাক দেয়, পেয়েছি, এখানে আসুন! গল্পকথাগুলো যেভাবে বলেছিল, সেরকমই, পাথরের চওড়া সিড়ি বেয়ে উঠার পরে একটা সমতল প্রান্তর, তারই মাঝে- উত্তরদাতা! কোন সন্দেহ নেই তাদের।

তাদের কাছে উত্তরদাতা একটি বিশাল সাদা স্ক্রীনের মত হয়ে এসছে। খুবই সরল একটা সাদামাটা সেটআপ।

হালকা কাঁপতে থাকা হাতদুটো একসাথে করে কাঁপুনি থামাতে চেষ্টা করে লিন্ডারম্যান । এত বছরের পরিশ্রম, এত বছরের ত্যাগ আর উপহাস, সবই আজ সত্যি হতে চলেছে। তারা আজ উত্তরদাতার সামনে, বিশ্বজগতের চরম সত্যটি জানবার সুযোগ তাদের সামনে।

“অসম্ভব রকম চমকে যাব আমরা,” মোরানকে মনে করিয়ে দেয় বুড়ো। “নিজেকে সামলে রেখ।”

“আমি ঠিক আছি।” সোজা হযে দাড়িয়ে উত্তর দেয় মোরান।

বেশ, তবে শুরু করা যাক; তার স্বভাবসিদ্ধ পাতলা স্বরে জিজ্ঞেস করে লিন্ডারম্যান, “উত্তরদাতা বল, জীবন কি?”

একটা কন্ঠ তাদের মাথার ভেতরে কথা বলে উঠে। “ এই প্রশ্নের কোন যুক্তিসংগত মানে নেই। জীবন বলতে প্রশ্নকর্তা বিশালত্বের কেবলমাত্র একটি ছোট্ট অংশকে বোঝাতে চেয়েছেন, প্রশ্নটি অপুর্নাঙ্গ। এর উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।”

“তাহলে জীবন কিসের একটি ছোট অংশ? ” আবার জানতে চায় লিন্ডারম্যান।

“এই প্রশ্নটিরও কোন উত্তর দেয়া সম্ভব না। প্রশ্নকর্তা এখনও তার সীমিত জ্ঞান এবং ধারনা থেকে প্রশ্ন করেছেন, এর উত্তর তার বোঝাবার মত করে দেয়া সম্ভব না।”

“তাহলে তোমার নিজের মত করে ব্যখ্যা দাও” বলে মোরান।

“উত্তরদাতা কেবল মাত্র সঠিক এবং পুর্নাঙ্গ প্রশ্নেরই উত্তর দেয়। কোন কিছূ ব্যখ্যা করার দায়িত্ব তার নয়।” উত্তরদাতার কন্ঠ থেকে যেন ক্ষেদ ঝরে পরে। সে আবারও তার সৃষ্টিকর্তার বেধে দেয়া নিয়ম এর প্রতি অভিযোগ করে।

বেশ খানিক্ষন সব চুপচাপ।

এই মহাবিশ্ব কি ক্রমাগতভাবে আকারে বাড়ছে? নাকি এটা ন্থির? বেশ আত্ববিশ্বাসের সাথেই প্রশ্নটা করে মোরান। এটা তো বিজ্ঞান, বিজ্ঞান নিশ্চয়ই অপুর্নাঙ্গ নয়!

কিন্তু উত্তর আসে ”প্রশ্নকর্তা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ বলতে যা বুঝিয়েছেন, সত্যিকার মহাবিশ্বের সাথে সেটা সম্পর্কযুক্ত নয়। প্রশ্নকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মহাবিশ্ব আসলে একটি ভ্রম বা ভ্রান্ত ধারনা ছাড়া আর কিছু নয়।”

“তোমার পক্ষে কি কিছুই বলা সম্ভব নয়? অধৈর্য দেখায় মোরানকে।

“সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পুর্নাঙ্গ প্রশ্ন করা হলেই সেটার উত্তর দেবার ক্ষমতা আছে আমার।” জানায় উত্তরদাতা।

***** ***** ***** *****
মানুষ দুটো এক অপরের দিকে হতাশ হযে তাকিয়ে থাকে।

আমার ধারনা ব্যপারটা আমি বুঝেছি। আমাদের সকল প্রাথমিক ধ্যান ধারনা ভুল, একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ।” নিচু স্বরে বলে লিন্ডারম্যান।

“এটা হতেই পারে না, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা-” মোরান আর কথা বলতে পারে না।
“আংশিক সত্য মাত্র।” একরাশ হতাশা আর আক্ষেপ ঝড়ে পরে লিন্ডারম্যানের স্বরে। “অন্তত আমরা এটুকু জানতে পেরেছি যে, আমাদের সব ধারনা ভুল, আমাদের চারপাশ এবং প্রকৃতি নিযে যে ধারনা আমাদের ছিল এবং এখনও আছে, সেটা একটা ভ্রান্ত সীমিত ধারনা মাত্রও।

“কিন্তু বিজ্ঞানে আমাদের এত অগ্রগতি, হাইপারস্পেস ট্রাভেল এ আমরা দক্ষ এগুলো কিছুই না?” উত্তেজিত হয়ে পড়ে মোরান।

“এগুলো বিজ্ঞান, এবং উন্নত। কিন্তু সবই একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে। এই মাপকাঠির বাইরে বিচার করলে আমাদের বিজ্ঞান যে কোন অবস্থানে আছে তা নির্দিষ্ট করে বোঝবার কিংবা বোঝাবার উপায় নেই।” বিষন্ন নিচু স্বরে বলে লিন্ডারম্যান।

“কিন্তু জীবন- সে তো এটার মানে বলতে পারে, নাকি? আমরা তো সেটা বুঝবো!”
“উত্তরদাতার দৃষ্টিতে পুরো ব্যপারটা দেখ।” তাকে শান্ত করতে চায় বুড়ো। মনে কর তোমাকে জিজ্ঞেস করা হল -কেন আমি বৃশ্চিক রাশি এবং শনির বলয়ে আকাশে থাকার সময়ে জন্ম নিলাম?” রাশিমালার বিচারে এর উত্তর তুমি কি দেবে? তার জন্ম এর সাথে তো এইগুলির কোন সম্পর্ক নেই। তাকে তোমার বোঝাতে হবে জৈব প্রকৃতি, মানব জন্ম পদ্ধতি, মহাকাশের অবস্তান এভং তারাদের গতি এবং আরও অনেক কিছু। তারপরেও সে বুঝবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারন তার সেই বিষয়ে গুলোতে সম্যক জ্ঞান নাও থাকে পারে। একজন অন্ধকে তুমি কিভাবে আলোর রং বোঝাবে, যে সারাজীবনই অন্ধ ছিল? কোন উচ্চতর কিছু বুঝতে হলে তার আগে সে বিষয়ে কিছূ প্রাথমিক জ্ঞান থাকাটা বাধ্যতামুলক।”

”তাহলে দেখা যাচ্ছে, ” চিন্তা করতে দেখা যয় মোরানকে “আমরা আমাদের ধারনা থেকে যে প্রশ্নগুলো করছি, সেগুলোনর উত্তর সে দিচ্ছে না, কারন আরা মুল বিষয়টা সম্পর্কেই জ্ঞাত নই! আমরা একটা ক্ষুদ্র বলয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি যেখানে মুল বিষযটা হয়ত আরও অনেক অনেক বড়!

“ঘটনা তাই মনে হচ্ছে।” সায় দেয় লিন্ডারম্যান।

“আমাদের অবস্থা কি একটাই করুন, যে একটা ঠিক ঠিক প্রশ্নও করতে পারবো না! কিছু তো জানি, নাকি!” এবার উত্তরদাতার দিকে ঘোরে সে, একের পর এক প্রশ্ন করে যায়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই উত্তর সেই একটাই, এটা সঠিক প্রশ্ন নয়।

হাল ছেড়ে দেয় মোরান। দু ঘন্টা পার হয়ে গেছে তারা এখানে আসার।

“আমার মাথা নষ্ট হযে যাচ্ছে।” রাগে দুঃখে শেষে বলে মোরান। এই জিনিসটার ভেতরে পুরো মহাবিশ্বের সকল রহস্যের উত্তর আছে, অথচ সেটা কিনা বলবে না! সঠিক প্রশ্ন চাই তার! কিভাবে জানব আমরা কোনটা সঠিক প্রশ্ন?” বসে পড়ে একটা পাথরের উপের সে।
লিন্ডারম্যান একটা পাথরে হেলান দিয়ে বসে ছিল। এতক্ষন সে মোরানের ব্যর্থ চেষ্টা দেখছিল, আর পুরো বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করছিল। এবারে মুখ খোলে সে, আমরা আসলে এই জিসিটার কাছে একটা প্রস্থর যুগের বর্বর ছাড়া আর কিছু নই। মনে কর, কোনভাবে চলে গেলে প্রস্থর যুগে, এক গুহামানব তোমাকে জিজ্ঞেস করলো, কেন সে তীর মেরে সুর্যটাকে মিকার করতে পারছে না। তুমি যদি তাকে বোঝাতে যাও, তুমি বোঝাবে পদার্থবিদ্যার সুত্র ধরে। কি ঘটবে তখন?

“আমি চেষ্টাই করবো না।”

“তাই হবে, কারন তুমি জান, যতই চেষ্টা কর না কেন, একজন প্রস্থর যুগের গুহামানবকে কিছুতেই তুমি বোঝাতে পারবে না, সুর্য কি জিনিস, সেটা কতটা দুরে কিংবা কি তার বৈশিষ্ট। তুমি তাকে বোঝাতে পারবে না, কারন তার বোঝার ক্ষমতা, বিষয়টা ধরার ক্ষমতার অনেক বাইরে আসল বিষয়টা। তুমি চাইলে তাকে একটা মনভোলানো উত্তর দিতে পার। না চাইলে তাকে বলবে, এর উত্তর তুমি দেবে না অথবা চুপ করে থাকবে।” কথা বন্ধ করে চুপ করে যায় লিন্ডারমান, চোখ বন্ধ তার।

“বুঝতে পারছি। কিভাবে তাকে বোঝাব আমি কিভাবে পৃথিবী ঘুরছে, আর তার কারনে সুর্যটাও ঘুরছে বলে মনে হয়! কিভাবে তাকে আমি সাদা কথায়, সব বিজ্ঞান বাদ দিয়ে বোঝাব আপেক্ষিকতার সুত্র কিংবা মহাকাশ! এটা সম্ভব নয়।”

লিন্ডারম্যান জবাব দেয় না। চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে।

“আমরাই আসলে এখানে প্রস্থর যুগের মানুষ। পার্থক্যটা হল, প্রস্থর যুগের সাথে আমাদের জ্ঞান এবং বুঝবার ক্ষমতার যতটুকু দুরত্ব, এখানে আমাদের সাথে ওদের দুরত্ব তার থেকে অনেক অনেক বেশি।”

“আমাদের যাবার সময় হয়েছে স্যার, উঠুন।” মোরান হাতে ধরে তোলার চেষ্টা করে বুড়োকে। কিন্তু কোন সাড়া দেয় না লিন্ডারম্যান। তারা মাথা ঝুকে গেছে. চেহারায় প্রানের সাড়া নেই।

স্যার! স্যার!

উত্তরদাতা জানে এটাই শেষ নয়। কিন্তু সে বলতে পারবে না কাউকে, যদি না সঠিক প্রশ্নটি করা হয়।

***** ***** ***** *****
একাকী নিজের গ্রহে অপেক্ষা করে থাকে উত্তরদাতা। তার গ্রহটা বড়ও না আবার ছোটও না, একদম ঠিক সাইজের। উত্তরদাতা অপেক্ষা করে, সময় তার কাছে কিছু না। অনেক রহস্যের উত্তর তার জানা। কিন্তু সে কাউকে সেগুলো বুঝতে সাহায্য করতে পারবে না। এমনকি তাকেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।

সে শুধু সঠিক এবং যুক্তিসংগত প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারে। তার বাইরে নয়।
মহাবিশ্ব? জীবন? মৃত্যু? পার্পল? আঠারোর নিয়ম?

কোনটা আংশিক সত্যি, কোনটা অর্ধেক সত্যি। কোনটা আবার এক মহা সত্যের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।

উত্তরদাতা নিজের মনে সেই মহা সত্যটাকে নিয়ে কথা বলে চলে, সেই মহা প্রশ্নটাকে নিয়ে ভেবে চলে, যেটা কেউই বুঝবে না।

কিভাবে তারা উত্তরটা বুঝবে, যদি তারা প্রশ্নটাকেই না বুঝে থাকে?

এই প্রশ্নটা হয়ত আর কোনদিনই কেউ করবে না, সম্ভবত করতে পারবে না। তার সৃষ্টিকর্তারা এই প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছিল। আর কেউ পারবে কি?

সঠিক প্রশ্নটা করতে হলে যে তার উত্তরটাই অনেকখানি জানতে হয়।

****শেষ***
মূল গল্প: রবার্ট শেকলির আস্ক এ ফুলিশ কাশ্চেন।



আমি একটা ব্লগ টাইপ সাইট ডেভলপ করছি। পাবলিক ব্লগ না, ব্যক্তিগত ব্লগ। সেখানে নিয়মিত মুভি রিভিউ, ই রিভিউ, পিসি গেম রিভিউ সহ টুকটাক লেখারিখি পাবলিশ করি আমি। একবার দেখবেন নাকি?

আমার সাইটটার একটা ফেবু পেজও আছে। সাইটটি ভাল লাগলে, এবং প্রতিদিন নিয়মিত পোস্ট আপডেট পেতে আগ্রহ বোধ করলে একটা লাইক দিন প্লিজ

১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×