somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সায়েন্স ফিকশন-- জামা বৃত্তান্ত

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্যাটা ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে আমরা শিওর হতে পারিনি। হঠাত করেই একদিন দেখা গেল বাড়ি থেকে বেশ কিছু জামা কাপড় উধাও। চোরে নিয়েছে নাকি বাতাসে উড়ায়ে নিয়েছে সেটা বলা মুশকিল!

আব্বা নাখোশ। তার অনেক দিনের প্রিয় পাঞ্জাবী উধাও। ছোট ভাই নাখোশ, তার ফুটবলের জা‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্সি উধাও। আমি নাখোশ হবার সুযোগ পাই নাই কারন জামাকাপড় নিয়ে আমার খুব একটা মাথাব্যাথা নাই।
টি শা‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্ট থেকে হালের সুপার শা‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্ট, সবই আমার কাছে সমান লাগে। প্যান্ট একটা কোমড়ে থাকলেই হয়, সেটা হোকনা থ্রি কোয়া‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্টার নয়ত ফুল।

এই ঘটনা ধরা পড়ার পরে চেক করতে গিয়ে দেখা গেল আমারও বেশি কিছু জামাকাপড় নাই। এতদিন কোন খোজ খবর নেই নাই বলে বোঝা যায় নাই।

বাড়িতে চাকার বাকর কেউ নাই যে জামাকাপড় চুরি করবে। দুটা রোবট কিনেছে আব্বা ধোলাইখাল থেকে সেই কবে, সেকেন্ড হ্যান্ড, কিংবা থা‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্ড হ্যান্ড কে বলতে পারে! সেগুলোর মেমরী এতটাই বেড়াছেড়া অবস্থা যে দুই সেকেন্ড আগে কি করেছে তা জিজ্ঞেস করলে বলতে পারে না। আমার ধারনা অপারেটিং সিস্টেম আরেকবার চেঞ্জ করলে হয়ত গবেটগুলোর আচার আচরণ চেঞ্জ হতে পারে।

রোবটগুলোর উপরে সন্দেহ হয়েছিল প্রথমে, চুরি করবে না, হয়ত অন্য কোথাও রেখেছে তারপর ভুলে গেছে। কিন্তু পরে সে চিন্তা বাদ দেয়া হয়েছে। ওদের যাতায়ত পরিধি এই বাড়ি ছাড়া কোথাও নেই। রাখলে এর মাঝেই কোথাও রাখত। আর মেকানিক দিয়ে ফুল চেকআপ করালে হয়ত কিছু তথ্য বার হত, কিন্তু ওদুটোকে ওয়া‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্কশপে দিয়ে আসলে সাতদিনের আগে বাড়ি ফিরবে না, আর আম্মার অনুপস্থিতিতে সাতদিন রোবট ছাড়া বাড়ি মানে ডাস্টবিন হয়ে যাওয়া।

ছোট ভাই আর আব্বা গজগজ করে ঠান্ডা হয় দিনে দিনেই। ছোট ভাই একবার বলার চেষ্টা করল, ডিজিটাল সুপার জামা থাকলে খুজে পেতে কোন সমস্যাই হোত না,মিস কল মারলেই বোঝা যেত! কিন্তু আব্বা তো বুঝছে আসল ঘটনা হইল নতুন স্টাইলের জামা কিনার ধান্দা। তার আবার সবকিছুই নতুন আর স্টাইলিস্ট না হলে পেটের ভাত হজম হতে চায় না। আমার ভাই কেমনে হইল এটা মাঝে মাঝে বুঝে পাই না। রোবট দুটারে নিয়েও তার মনে কষ্ট! সবার ঘরে চকচকা লেটেস্ট মডেল এর রোবট, আর আমাদের ঘরে ধোলাইখাল!

আব্বা আর আমি নি‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্বিকার।

কিন্তু ঘটনা সিরিয়াস হইল যখন দুইদিন পরে একই সাথে তিনজনেরই কয়েকটা করে জামাকাপড় উধাও হয়ে গেল।

এবারে টনক নড়ল আমার আর আব্বার। ছোটটা গলা চড়ায়ে বলে বেড়াতে শুরু করল, বলেছিলাম না, ডিজিটাল জামা কিনতে! তখন তো শোন নাই!! শুনলে চোর ধরা কোন ব্যাপারই হইত না!

আব্বা সরাসরি গিয়ে ধরল ছোটকে। তুই কিছু একটা করছিস! জামা কই লুকাইছিস বল! ছোট সরাসরি অস্বীকার! বলে আমি ছোট মানুষ হইতে পারি, আমার মান ইজ্জত পাহাড়ের সমান। জামাকাপড় লুকানোর মত ছোট কাজ কাম আমি করি না!

আমার উপরেও বাপের নজর পড়ল, কিন্তু সে আমার স্বভাব চরিত্র বিচার করে সিদ্ধান্তে আসল, আমাকে দিয়ে আর যাই হোক, জামাকাপড় নিয়ে আদিখ্যেতা করা সম্ভব হবে না।

আমি বেচে গেলাম। তবে চিন্তা করলাম এই ঘটনার একটা সমাধান করতেই হবে। আজ জামাকাপড় গায়েব হয়ে যাচ্ছে, কাল যে জামাকাপড় সুদ্ধ আমিই গায়েব হয়ে যাব না তার নিশ্চয়তা কি!
আব্বাকে গিয়ে ধরলাম, বুদ্ধি দিলাম একটা। সে অতি কষ্টে চোখ মুখ বাকা রাজি হল। ঘটনা তারও মনে অস্বস্তি তৈরি করেছে বোঝা গেল।

*******
চোর ধরা পড়েছে। তবে তিনটা মানুষ আর দুটা রোবট এর সংসারে যে এত্তগুলা সন্দেহজনক ক্যারেকটার থাকতে পারে কে জানত!

আব্বার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজার থেকে সস্তা কিন্তু চকচকে কিছু ড্রেস কিনে এনেছিলাম। গত কিছু জামা চুরির প্যাটা‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্ন গবেষনা করে দেখা গেছে চকচকে জিনিসের প্রতি চোরের আসক্তি বেশি। জামাগুলার মধ্যে ট্র্যাকার বসানো হইছে। বাড়ির আশে পাশে যেখানেই থাকুক না কেন আমার ফোন দিয়ে ট্র্যাক করা যাবে।

দুই দিন তিন রাত অপেক্ষা করার পরেও কিছু যখন হল না তখন একটু হতাশই হয়ে গেছিলাম। চোরে কি বুঝতে পেরেছে যে তাকে ধরার জন্য ফাদ পাতা হয়েছে? পুরো বাড়ির এখান সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে চকচকে জামাগুলা!

চার নম্বর রাতে হঠাত করে মোবাইলে সিগন্যাল আসল, অনেক গুলো জামাকাপড় এর মাঝে কয়েকটা বাড়ির সীমানায় চলে গিয়েছে এবং সীমানা অতিক্রম করার ধান্দায় আছে।

দ্রুত উঠে গিয়ে বাপকে জাগালাম। ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে তার দুটা মিনিট মুল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেল। ছোটটারে কিছু বলার আগেই দেখি এক হাতে ক্রিকেট ব্যাট আর আর এক হাতে দুটা ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে দাড়ায়ে। বুঝলাম, চোররে হাতের কাছে পাইলে হবে একটা কিছু। আমাদের দুজনের হাতে দুটা স্টাম্প ধরায়ে দিয়ে সে বীরদ‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্পে ব্যাট হাতে আগ বাড়ায়ে হাটা দিল।

আমরা দুজন পিছনে। উত্তর দিকে স‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্বশেষ সিগন্যাল পাওয়া গেছে। আরও একটু সামনে যেতে সিগন্যাল আবার পাওয়া গেল, গুট গুট করে এগিয়ে যাচ্ছে উত্তর পু‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্ব দিকে!

বাপে অবাক হয়ে বলে, ওদিকে তো ফকরুল মোল্লার গোলাঘর! চোর ওদিকে কি করে! একই চিন্তা আমার মাথাতেও।

কি করে সেটা অবশ্য সামনে গিয়েই বোঝা গেল। গোলার সামনে যে ছোট ঘরটা আছে সেটার ভেতরে আলো। গুড়ি মেরে উকি দিতে দেখা গেল আমাদের দুই রোবট এর মধ্যে ঘর গোছানি রোবট দিব্যি দোকান খুলে বসেছে! ঘরের এখানে সেখানে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু জামাকাপড় সাজিয়ে, ঝুলিয়ে রেখে সে দিব্যি দোকানদারি করার মত করে ঘুর ঘুর করছে!

অবস্থা দেখ! আমাদেরকে দেখার সাথে সাথে মনে হয় মাথার সা‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্কিটে টাল লেগে গেল, দুদ্দাড় করে দৌড় দিতে গিয়ে টাল খেয়ে পড়ে থাকল এক পাশে!

******



ওটা ছিল ফ্যাশন হাউজের রোবট। ধোলাইখালে নিয়ে মগজ ধোলাই করার আগে সে আজিজে কাপড় বিক্রি করত। মালিক কোন কারনে বিক্রি করে পরে মেকানিক ওটাতে নতুন গৃহস্থালী সফটয়্যার লোড করে সে আবার বিক্রি করে আব্বার কাছে।

কিন্তু অপারেটিং সফটয়্যার তো এতদিন ঠিকই ছিল, তাহলে ঝামেলা পাকাল কে?

ছোট পরে এক সময় আমার কাছে স্বীকার করেছে চুপ করে, আব্বা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন রোবট আনবে এই আশা করে সে পুরানটার অপারেটিং সিস্টেম ফ্ল্যাশ দিতে গিয়েছিল। আর সম্ভবত তাতেই লেগেছিল যত গন্ডগোল। ঠিকমত করতে না পারায় নতুন আর পুরাতন অপারেটিং সিস্টেম জট পাকায়ে গিয়ে অবস্থা হয়েছে এই। তার পুরাতন মেমরী মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে...

স‌‌‌‌‌‌‌‌‌র্বশেষ খবর, আব্বা নিজেই আমাদের বাড়ির সামনে যে ছোট ঘরটা ছিল, সেটাকে মেরামত করে ধরায়ে দেয়া হয়েছে রোবটটার হাতে। প্রথম দিকে সে চোর ধরার জন্য যে সস্তায় জামাকাপড় কিনে আনা হয়েছিল, সেগুলো বিক্রি করে ফেলল তিন দিনে। তার সেলসম্যানশিপ দেখে আব্বা নিজেই পাইকারী দোকান থেকে জামা কাপড় কিনে "দোকানে" রাখা শুরু করেছে।

সামনে ঈদ। সবারই নতুন জামা কেনার ইচ্ছা!! আর তাই বিক্রিও হচ্ছে দেধারসে...

মন্দ কি?
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×