somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন, একটি নষ্ট প্রজন্মের জন্ম দেই।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক সময়ের একটি আলোচিত টপিক হলো প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। পরীক্ষাটি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি ছিলনা- আপত্তি শুরু হলো তখনই যখন জানলাম- এই পরীক্ষা পাশ না করল বেশ খেপা আছে!
অনেকেই ছোট বাচ্চাদের এই বয়সে এই ধরণের পরীক্ষার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবার অনেকে "ফিল্টারিং" মতবাদ নিয়ে এসেছেন- বলেছেন এটা আরো শুরু থেকে - যেমন ক্লাস থ্রি থেকে শিশুদের ফিল্টার করার কথা।
আমি জানিনা ঐ সকল ফিল্টার বিশেষগ্গের ছোটোবেলা কতটা আনন্দের ছিল- আমার শৈশব জাহান্নামের চৌরাস্তার কাছাকাছি কোথাও কেটেছিল- তা হলফ করে বলতে পারি।
বাবা- মার বড় ছেলে হওয়ায় আমাকে নিয়ে সবার চিন্তার কম ছিলনা- কোন স্কুলে পড়ব- কয়জন টিচারের কাছে পড়ব এসহ নিয়ে বহু দৌড়ের উপর আমার ছোটোবেলা কেটেছে। সৌ অথবা দুর কোনো একটা ভাগ্যবশত আমি ঢাকার কোনো একটা সেরা স্কুলেই গিয়েছিলাম। পড়ালেখার প্রতি আমার জন্ম থেকেই অনীহা। তার ফলাফল দেখতে পেলাম- ক্লাসে কখনও প্রথম ১০ জনের মধ্যেও যেতে পারিনি। একবার ঠেলেঠুলে ক্লাসে ২০ হয়েছিলাম।
টিচার আর বাবা মায়ের মুখে ঐ প্রথম ১০ জনের কথা সবসময়ে শুনতে হত- কেনো আমার মত অকর্মার ঢেকির জন্মটাই বৃথা সেটা লিখতে গেলে এক মহাকাব্য রচনা হয়ে যাবে। তাই সেই কথা না বলি। আগেই বলেছি- আমি কোনো একটা সেরা স্কুলে গিয়েছি। আর সেরা স্কুল মানেই বিশাল ভর্তি পরীক্ষা। ঐ পরীক্ষা দিয়ে ঢুকতে পারা মানে আরো অসংখ্য পরীক্ষার শুরু। ফিল্টারিং-এর কথা যেহেতু বলাই হয়েছে- ভর্তি পরীক্ষা ছিল আমার জীবনের প্রথম ফিল্টার।
ঐ ফিল্টার দিয়ে বের হয়ে ক্লাসের প্রথম ১০ জনের ফিল্টারে আমি বরাবর ফেইল ছিলাম।
ক্লাস ফাইভ আর এইটের বৃত্তি পরীক্ষার ফিল্টারেও বাদ গেলাম।
মেট্রিক দিলাম- দেখি আমি যা পেয়েছে স্কুলের সবাই তাই পেয়েছে। মাঝখান থেকে আমার পাশে বসা (আমার মত কখনও প্রথম ১০ জনের গ্রুপে ঢুকতে না পারা) এক দোস্ত পুরা দেশে টপ মার্ক পেয়ে গেছে। বুঝলামনা বেচারা সারা জীবন কোন ফিল্টারে ধরা খেয়েছিল!
কলেজে গেলাম- ফিল্টারে বাদ পড়ব জেনে কিছু না পড়েই পরীক্ষা দিলাম- দেশের কোনো একটা সেরা কলেজে ঢুকে গেলাম। ফিল্টার টা কিভাবে কাজ করলো ঠিক বুঝলাম না।
তার পর একের পর এক ফিল্টারে বাশ খেয়ে কলেজ শেষ করলাম। বুয়েট-এর মত জায়গাতে ফিল্টার হয়ে আমি পরীক্ষাই দিতে পারলাম না - আবার আরেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো রকমের প্রস্তুতি ছাড়া হুট করে হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে তৃতীয় হলাম। এই ফিল্টারিংটাও কিভাবে কাজ করলো ঠিক বুঝলাম না :-/
কোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষার সময়ে কানে এলো "ওমুক দলে যোগ দিন!" (দল/লীগ/শিবির/পার্টি সব প্রযোজ্য- বেশ কয়েকটা স্লোগান শুনেছিলাম সেদিন)- এই ফিল্টার উপেক্ষা করার সাধ্য আমার ছিলোনা- তাই ফিল্টার সমাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলাম (এর পর আর কোনো ফিল্টারে অবতীর্ন হইনি)।
ইদানীংকালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক দেখলেই কেবল আমার ছোটো বেলার স্কুলের সেই প্রথম ১০ জনের ফিল্টারের কথা মনে পড়ছে। ঐ ফিল্টারে পার পাওয়া কেউ কেউ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে- কেউ কেউ অনেক ভালো জায়গায় আছে- আবার কারো কথা স্কুল পার হওয়ার পরে কখনও শুনিনি। তারা কোন ফিল্টারে আটকা পড়লো কে জানে!?
ছোটো বেলা থেকে এতো এতো ফিল্টারে আমরা ফিল্টারড হলাম- বড় স্কুল থেকে এসেছি- বড় কলেজ থেকে এসেছি- আমার সহ কর্মী গ্রামের একটা সাধারণ স্কুল থেকে অথবা সাধারণ কলেজ থেকে এসেছে- এই প্রথম যেন অবাক হয়ে খেয়াল করি আমাদের ২ জনের মধ্যে তো কোনো তফাৎ নেই! ছোটো বেলা থেকে মিথ্যা জালের মধ্যে আমরা বড় হয়েছি। তাহলে আমার শৈশব যারা হত্যা করলো তাদের শাস্তি কি?
আমার ছোটো বোনটি ক্লাস ফোরে পড়ে। ওর সাথে গল্প করতে মজাই লাগে। কত সহজ সরল! ওর চিন্তা ভাবনা জুড়ে থাকে রূপকথার গল্প অথবা টম এন্ড জেরী। ও বিশ্বাস করে ফ্যান্টাসী কিংডম আর নন্দন পার্ক কোনো এক রাজা রানীর রাজত্ব। ও বিশ্বাস করে ভূতের আড্ডা রেস্টুরেন্টে আসলেই ভূত আছে। বার্বির দুনিয়ার বাইরে সে এখনও খুব একটা বেশি কিছু চিনেনা। আর কয়েকদিন পরেই সে ফাইভে উঠবে। শুরু হবে আরেক যুদ্ধ- প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা! যে যুদ্ধ আমিও দেখিনি। সকাল ভোর ৬টায় স্কুলে আমিও যাইনি। আমি ভয় পাই। ভয় লাগে আমার ছোটো বোন আর ওর বন্ধুদের কথা ভেবে। আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি ওদের?
এখানে অনেক গুণী এবং চিন্তাশীল মানুষজন আসেন। আমার প্রশ্ন তাদের কাছে- সত্যি কি এসব ফিল্টারিং করে সেরাদের বের করা যায়? প্রতি বছর তো আগে এস এস সিতে স্ট্যান্ড করার নিয়ম ছিল- তাদের কয়টা ছেলে মেয়ে দেশের জন্য এখন পর্যন্ত কি অবদান রেখেছে? কে সফল আর কে বিফল হবে তা বলার জন্য খুব বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে গেলোনা? পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য কি ভালো নাম্বার পাওয়া আর এসব ফিল্টারে আটকিয়ে থাকা? সৃজনশীলতার বিকাশ কখন ঘটবে তাহলে? আমরা কি ছকে বাঁধা একটা রোবোট প্রজন্ম তৈরী করছি না?
আমরা আমাদের শিশুদের এর চেয়ে বেশি আর কি দিতে পারি? আমি হয়তো অনেকের মত হাজারো ফিল্টারে পাশ করা কেউ না। আমি হয়তো অনেক ফিল্টারে ব্যর্থ। কিন্তু তা নিয়ে কোনোদিন আমার কোনো দু:খ ছিলনা, এখনও নেই। আমি প্রিয় একটি গান থেকে(পিঙ্ক ফ্লয়ডের another brick in the wall) :
We don't need no education
We don't need no thought control
No dark sarcasm in the classroom
Teachers leave the kids alone
Hey teacher leave us kids alone
All in all you're just another brick in the wall
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:০১
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×