আজকে একটা স্লাইড শো দেখাবো , ভার্চুয়াল জগতে বাস্তবিক জীবনের স্লাইড ..
প্রত্যেকটা স্লাইডই নিজের চোখে দেখা । স্লাইডএর নামকরণ ও ভাবার্থ বের করা এসবের দায়িত্ব পাঠকের...
স্লাইড ১ :
তখন খুব সম্ভব ক্লাস ৩ বা ৪ এ পড়ি , দুপুরের ঘুম দিয়ে উঠলাম গরমের সময় ছিল.... একটু বাদে একটা আওয়াজ কানে এলো প্রথমে মনে হলো কেউ হয়ত লাঠি দিয়ে লেপ পেটাচ্ছে , কিন্তু নাহ ঠিক লেপ পেটানো না একটু অন্যরকম আওয়াজ তাছাড়া এই সময় কেউ তো লেপ রোদে দেয় না । একটু খেয়াল করতে চেচামেচির আওয়াজ ও কানে এলো সাথে হালকা আর্তনাদ । মা ঠাকুমা তখন খেতে বসেছেন তাদের গিয়ে বলতে তারা তরিঘড়ি উঠেগেলেন সাথে কাকিমনি ও গেলেন । আমি তখনও বাড়িতেই, একটু পরে আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল এর একটু পরেই মা আর কাকিমনি আমাদের পাড়ারই এক দিদাকে নিয়ে এলেন পেছনে ঠাকুমা এনে বারান্দায় বসালেন । দিদা তখন কাপছেন , তারপর যা দেখলাম ও শুনলাম মাথা কান গরম হয়ে গেল । দিদার বয়েস ৭৫ হবে আমাদের খুব আদর করতেন কত যে আচার খেয়েছি উনার কাছ থেকে তার ইয়ত্তা নেই । দিদার উনার ছেলের কাছে থাকতেন ছেলে ছেলের বউ আর নাতি এই উনার সংসার নাতির বয়স ২৬ ২৭ হবে , দিদার সাথে পরিবারের বাকিদের ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত মাঝে মাঝে উনার উপর হাতও তোলত । কিন্তু সেদিন মারের রকমটা নিজের চোখে দেখলাম, ঐদিন নাতি কৃপা করেছিলেন হাতে পিঠে চোখের নিচে কালশিটে দাগ একটা চোখ আধখোলা অবস্থায় , সারা শরীর কাপছে গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ আসছেনা । আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারিনি সহ্য করতে পারিনি দৃশ্যটা । পরে শুনেছিলাম খুব সাধারণ কারণেই নাকি এই অবস্থা হয়েছিল তারপর নাকি উনি মেয়ের বাড়ি চলে যান এবং সেখানেই কিছুদিন পর মারা যান ।
স্লাইড ২ :
কলেজে উঠার পর থেকে এক বাড়িতেই আছি ... প্রথম দিকের কথা সারাদিন কত মানুষই আসে আসলে কলিং বেল টেপে , কিন্তু কয়েকজন আসে যাদের কলিং বেল লাগে না নিজস্ব রিংটোন আছে ওই আওয়াজএই বোঝা যায় কে এসেছে ... পাশের বাড়িতে একদিকে একজন মহিলা এলেন ভিক্ষে করতে গেট খুলেই বললেন " মাগো চাইর্লা ভিক্ষা দিবা নি ? " যথারীতি গৃহকর্তা ও গৃহকর্তী বের হলেন এবং ভিক্ষে দিলেন বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন , আমি ভাবলাম এবার আমার এখানে আসবে আমি খুজে একটা পাঁচ টাকার নোটবের করলাম কিন্তু আমার এখানে এলেন ওই বাড়ি থেকেই চলে গেলেন । উনি মাসে ২ বার ১ বার আসেন সেই আওয়াজ ঘর থেকেই বুঝে যাই কে এসেছে , তিন বছর ধরে এমনটাই চলছে মাস কয়েক আগে মা বললেন উনার কাহিনী ; উনার বাড়িটা কোথায় বলেছিলেন ঠিক মনে নেই মহিলার দুই ছেলে আছে কিন্তু কোনো ছেলেই বৃদ্ধ মাকে খাবার দেয়না উল্টো গালি দেয় তাই মহিলা ভিক্ষায় নেমেছেন । কথাগুলো শুনে উনাকে দেখার কৌতূহল বেড়ে গেলো । কিন্তু আশ্চর্য এরপর থেকে মহিলা আর আসেন না এক মাস গেল দুই মাস গেল তিন মাস গেল আসে না , মনে মনে ভাবলাম যাক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে হয়ত । কয়েকদিন আগে দুপর বেলা বৃষ্টি পরছে ব্যাঙ্ক এ যাব বলে বের হয়েছি এমন সময় দেখলাম পাশের বাড়িতে একজন অশীতিপর বৃদ্ধা ঢুকছেন উচ্চতা ৪ ফিট হবে বয়সের কারণে সেটা ৩ এ গিয়ে ঠেকেছে হাতে একটা লাঠি কাধে একটা ময়লা ব্যাগ বৃষ্টিতে ভিজে একসা । আমি বাড়ি ফেলে বেশ এগিয়ে এসে পরেছি পেছন থেকে শুনলাম " মাগো চাইর্লা ভিক্ষা দিবা নি ? "
মনে মনে বললাম , মরে নাই ।
স্লাইড ৩ :
কলেজ যাবার পথে অনেক কিছুই চোখে পরে কিছ মনে থাকে কিছু থাকে না । মেইন রাস্তায় উঠার আগে বেশ কিছুটা পথ হাটতে হয় হাটার পথে একটা জিনিস রোজই চোখে পরে , একটা দোতালা বাড়ির গেটে একজন বৃদ্ধা দাড়িয়ে থাকেন বয়েস আশি পেরিয়ে গেছে গেটটা আধখোলা রেখে শুধু মাথাটা বের করে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন অত্যন্ত জীর্ণ শীর্ণ অবস্থা মাথায় চুল সামান্য চোখ ছানি পড়া ঘোলাটে । রোজই একজিনিস দেখি সারাক্ষণ বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন ঘোলা চোখে কাকে যেন খুঁজছেন যেই আসে ঘোলা চোখে একটু দেখেন তারপর নিরাশ হয়ে আবার সামনের দিকে দেখেন । একদিন আমি কলেজ যাচ্ছি সেই একি ভাবে তাকিয়ে আছেন একটু মজা নেওয়ার উদ্দেশ্যেই বললাম “ কিও দিদা কারে খোঁজ ? দাদুরে নি ? ” তিনি একটুও বিরক্ত না হয়ে ঠাণ্ডা গলায় বললেন “ আমার পোলা আইব ” । আর কিছু বলার পাইনি সেদিন আজও, এখনও দেখি বৃদ্ধা সেই একি ভাবে দাড়িয়ে আছেন ছেলের জন্যে অপেক্ষা করছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৪:২২