ইসলাম এমন এক সর্বজনীন ধর্ম—যেখানে সব মত, পথ ও ধর্মের সহাবস্থানের বিধান রয়েছে। ইসলাম দেড় হাজার বছর ধরে উদারতা, মানবিকতাবোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার বাণী প্রচার করে আসছে। এতে আজ বিশ্বব্যাপী ইসলাম জীবন্ত এক জীবনাদর্শনরূপে বহু জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত সমাজে নিজের ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করে ইহুদি-খ্রিস্টানদের নিয়ে যে চুক্তি করেন, তা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান। ‘মদিনা সনদ’ নামে খ্যাত এ সংবিধানে স্পষ্টই উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অপরাধের জন্য ব্যক্তি দায়ী হবে, সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। মদিনা প্রজাতন্ত্রকে পবিত্র ঘোষণা করা হলো। রক্তপাত ও জুলুম নিষিদ্ধ করা হলো।'
কোনো ধর্মকে কটাক্ষ, অপমান ও ব্যঙ্গ করা ইসলাম অনুমোদন করে না। অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ইসলামে জায়েজ নেই। কোনো ইমানদার ব্যক্তি অমুসলিমদের উপাসনালয়ে হামলা করতে পারে না। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও সদ্ব্যবহার ইসলামের অনুপম শিক্ষা। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা আমাদের প্রতিবেশী। আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠা পবিত্র কোরআনের নির্দেশ। মূর্তি ও প্রতিমা ভাংচুর করা তো দূরের কথা, তাদের গালি ও কটাক্ষ না করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম রয়েছে। মহানবীর (সা.) ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনে অমুসলিমদের উপসনালয়ে আক্রমণ বা তাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুকুম দিয়েছেন—এমন কোনো নজির ইতিহাসে নেই। রাষ্ট্রদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় এনেছেন।
সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলামের শাশ্বত আদর্শ প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আলিম সমাজ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন আবহমানকাল ধরে। রাজনীতি, ধর্ম ও অর্থনীতিসহ নানা কারণে সন্ত্রাস হয়। সন্ত্রাস সমাজের জন্য একটি ভয়াবহ ক্যান্সারের মতো। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদরোধে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা ভুলে যাই, ব্যক্তির অপরাধের জন্য সম্প্রদায় দায়ী নয়। রামুর বৌদ্ধ জনপদের মন্দির, বাড়িঘর, সহায়-সম্পদের সঙ্গে পবিত্র কোরআন অবমাননার সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ধরনের হামলা ও অগ্নিসংযোগ ইসলাম কোনোদিন বৈধ মনে করে না। অনিয়ন্ত্রিত আবেগে যে আগুন জ্বলে, তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। আগুনের তেজ কমে এলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধ্বংসযজ্ঞের উন্মত্ততা।
বিশ্ব শান্তির জন্য ইসলামে শান্তি বিঘ্নিত হোক এমন কোন কাজ মহানবী সঃ কখনও চাননি, আমরা তার অনুসারী হিসাবেও তা চাই না!! সুত্রঃ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন