আমার একটা ছাত্রীর কথা বলি (আমি বাসায় যেয়ে পড়াতাম)। মেয়েটি তখন ক্লাস এইটে পড়ত। আমি পড়াতে যেতাম সন্ধার দিকে। তো মাঝে মাঝেই মেয়েটি আমায় বলত স্যার আজ ভাল লাগছে না। আজ বেশি পড়ব না। আমি অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে গল্প করে পড়াতাম। তো পরদিন আবার ঠিক ঠাক পড়া লেখা করত। আমি একটা ব্যাপার দেখলাম। সেটা হল মেয়েটি যেদিন বলত, আমার পড়তে ভাল লাগছে না। সেদিন তার চোখ লাল হয়ে যেত আর চুপ চাপ থাকত। আর ঘুম ঘুম ভাব থাকত। সেদিন আমি যতই বুঝায় মেয়েটি কিছুই বুঝত না। ও অনেকটা ঘোরের ভিতর থাকত।
তো আমি ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। একদিন আমি ওকে বলেই বসলাম আচ্ছা তোমার মাঝে মাঝে কি হয় আমায় বলতো?? ও আমায় বলল না কিছুই হয় না। এমনি আমার ভাল লাগে না। আমি আসলে কিছু মিলাতে পারছিলাম না। আমার কেন জানি মনে মনে হচ্ছিল ও নেশা করে। আবার ভাবছিলাম ছি! বাচ্চা মেয়ে নেশা পাবে কোথায়?? আমি এত সন্দেহ করি মানুষদের!!
একদিন মেয়েটি আমায় বলল স্যার, আপনাকে একটা কথা বলব আপনি কাউকে বলতে পারবেন না। তখন আমার কেন জানি ভয় ভয় লাগছিল। ভাবছিলাম কি বলে না বলে মেয়েটা।
মেয়েটি বলল, আমার যখন মন খারাপ থাকে বা রাগ হয় তখন আমি ঘুমের ঔষুধ খেয়ে চুপ চাপ বসে থাকি। তখন আমার অনেক ভাল লাগে। আম্মু একটু বকা দিলে আমি ঘুমের ঔষুধ খাই, কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করলে, আমি কষ্ট পেলে ঘুমের ঔষুধ খাই। তখন আমার অনেক ভাল লাগে। আমি বললাম এত ঔষুধ পাও কোথায়? ও বলল আমার আব্বুর খেতে হয়, সেখান থেকে আমি মেরে দেই।
আমি বললাম এর পর যখন মন খারাপ থাকবে আমায় বলবে, কিন্তু ঔষুধ খাবে না। কেমন?? আমি তো বুঝতে পারব তুমি ঔষুধ খেলে। এর পর থেকে মেয়েটাকে আর আগের অবস্থায় পেলাম না। কিন্তু তার পরেও আমার কেমন জানি খটকা লাগল।
বেশকিছুদিন পর মেয়েটি আমায় বলব, স্যার আমি এ কয়দিন ঘুমের ঔষুধ খায়নি কিন্তু অন্য ঔষুধ খেয়েছি। আমি কি ঔষুধ?? যা সামনে পেতাম তাই। আমি বললাম একটু দেখাবা। তখন দেখলাম মেয়েটা বিভিন্ন ঔষুধ এর সাথে তৃতীয় প্রজন্মের এন্টিবায়োটিক খেয়েছে। এর মানে এর দেহে এগুলো এখন রেজিস্টান্ট হয়ে গেছে (মানে এই এন্টিবায়োটিক গুলো আর কাজ করবে না)।
আমি আবার তাকে বললাম প্লিজ এ গুলো আর খেও না। যখনি মন খারাপ হবে আমায় বলবা। অথবা আমায় ফোনও দিতে পার। ভেবেছিলাম একবার ওর বাব মাকে জানাবো। কিন্তু পরে ভাবলাম জানালে যদি মেয়েটা কষ্ট পায়, আর যদি অন্য কিছু করে বসে।
একদিন শুক্রবার মেয়েটা আমায় ফোন দিয়েছে। যদিও ওইদিন আমি পড়ায় না। তবুও বাসায় যেতে বলল। আমি চলে গেলাম বাসায়। তখন মেয়েটি বলল আমি আজ আপনার সাথে রিক্সায় ঘুরব। ওর আম্মুও আমায় বলল বাবা তুমি ওরে নিয়ে একটু ঘুরে আস।
রিক্সায় ঘুরলাম ১৫ মিনিটের মত। ওকে বললাম এখন কি ঘুমের ঔষুধ খাও? ও বলল না। আজ মন খারাপ ছিল তাই আপনাকে আসতে বললাম। এখন রিক্সায় ঘুরে মনটা ভাল হয়ে গেছে। আমি মনে মনে ভাবয়াম ক্রাশ খেল না তো আবার!! তাহলে তো সমস্য। এর কিছুদিন পর আমি পড়ানো বাদ দেই। কারন আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। ভেবেছিলাম পরীক্ষার পর আবার পড়াব। কিন্তু ততদিনে ওর আর একটা টিচার চলে আসে। এখন সে ক্লাস টেন এ পড়ে। আর এখন কি ঘুমের ঔষুধ খায় কিনা আমি জানি না। ব্যাপারটা খুব জানতে ইচ্ছা করে।
বিদ্রঃ ঔষুধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন, কথাটা এমনি এমনি লিখা থাকেনা। আর আপনার সন্তানদের দিকে নজর দিন, সে কি করছে না করছে। কাদের সাথে মিশছে খেয়াল রাখুন। অন্তত ভার্সিটি যাওয়ার আগ প্রর্যন্ত। হঠাৎ আপনার সন্তান অস্বাভাবিক আচরন, যেমনঃ চুপ করে থাকা, নিজেকে লুকিয়ে রাখা, ইত্যাদি করলে তার সাথে ব্যাপারটা খুলাখুলি জেনে নিন। ধন্যবাদ।
ফেসবুকে আমিঃ http://fb.com/itsmurgi
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:০০