somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচ্ছিন্ন আবেগ (পর্ব-৬)

০৩ রা মে, ২০০৭ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

 তানিয়া, বিড় বিড় করে কী বলছিস?
 কিছু না, ঘুমোসনি?
 নাহ্ আমিও ভাবছিলাম। আজ তো ফুয়াদ বাড়ি ফিরেছে। ডাক্তারের বাপ ও কিছু করতে পারবে না ওর।
 বেচারা, ওর সিনেমার কী হবে?
 আরো ফেন্সিডিল খাক।
 ছেলেটা স্বপ্নবাজ ছিলো। ফুয়াদের সাথে আমার দেখা হয় সাইফের মাধ্যমে, প্রথমে ফুয়াদ, তারপর সিমন, সুমিত, সম্রাট, পাপ্পু-সকলে একে একে এসে আড্ডা জমাতে থাকে। হঠাৎ হঠাৎ তায়েফ আসে, এখানে এসে কোন কথা বলে না, চুপচাপ থাকে, পুরো জড়। ক'দিন আগে সবাই বাসায় আড্ডা দিচ্ছিলাম, শর্মিলী সবাইকে চা দিচ্ছিলো, তায়েফ বলে বসলো, আমি চা খাইনা। খাস না ভালো, নর্মালি বল! তা না এমন ভাবে বললো যেন শর্মি কোন পাপ করেছে। শর্মিও আজকাল ওকে দেখতে পারে না। নাহ্ ঘুম পাচ্ছে। কাল আবার ক্লাশ...।

আমি আর ফুয়াদ ডাক্তারের কাছ থেকে বের হলাম। ডাক্তার অদ্ভুত সব কথা বললো। ওর নাকি লিভারে হালকা সমস্য হয়েছে। সেই সাথে মাথায় মগজের সেলে কী যেন হয়েছে। আর এরকম চলতে থাকলে আর দেখতে হবে না, বদ্ধ উম্মাদ হয়ে যাবে। তবে ভয়ংকর হলো, ফুয়াদের যে মানসিক অবস্থা তাতে করে হঠাৎ রাস্তায় বেরিয়ে কাউকে মেরে ফেলাও অস্বাভাবিক নয়। আরো কী যেন হয়; কী যেন---হ্যা, ডিপ্রেশন, অমনোযোগিতা, আমি ডাক্তারকে থামিয়ে বল্লাম, 'রাস্তায় ট্রাফিক কন্ট্রোল করার সম্ভাবনা কতটুকু?' রাস্কেল! হঠাৎ ফুয়াদ বলে উঠলো।
 হঠাৎ একটা কবিতা মাথায় ঘুরছে, শুনবি ?
 তুই-ও কবি হয়েছিস? আমার ভাত গেল।
 তাহলে কেক খাবি, শোন:

'মাটির বন্ধু হয়ে চলে যাবো
সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে,
তখন এক ফোটা অশ্রু
রেখো আমার পরে।
একটি গোলাপ ফুল রেখে যেও
আমার কবরে‘!

মৃত্যুর ইঙ্গিত কি তবে ফুয়াদ পেয়ে গেলো! বুদ্ধিমান ছেলে! সেদিনই সিমনকে জানালাম ঘটনা, ওর কোন এক বড় ভাই আছে ডাক্তার। সিমনই এখন দেখছে কেসটা; মানুষ কেন ড্রাগস নেয়? 'এর কি নির্দিষ্ট কোন উত্তর আছে'? ভেতর থেকেই কে যেন কথা বললো। কে তুমি? 'বিবেক'। ও, ওটাতো কবেই চলে গেছে, 'আবার ফিরেছি যে'। বেশ করেছো! থাকো খাও; তবে মাথা খেয়ো না।

পাশের রুমে সম্রাট, মেহেদীরা বসে আছে, আজ সম্রাট খুবই আনন্দে আছে। এ ঘর গলার পর্যন্ত আওয়াজ আসছে। আমাকে না পেয়ে শর্মির কাছ থেকেই আমার লেখা গুলো শুনছে ওরা। শর্মি একটা লাইন বলছে, হেসে গড়িয়ে পড়ছে সবাই। মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ লাগছে, প্রচন্ড খারাপ। উঠে গিয়ে সাইফের চিঠিটা খুললাম।

তানিয়া darling,
কেমন আছিস? তোকে সেদিন শিকাগোতে দেখলাম মনে হলো, তবে অবশ্যই তা তুই নোস। চিঠিটা যখন লিখছি তখন আমি আইওয়া সিটিতে, যদিও নাম সিটি, তবে আসলে নাকি গঞ্জ। অনেকটা নোয়াখালীর মত। মিশিগান থেকে এখানে এসেছি ঘুরতে আমরা ছ'জন। আইওয়া-টা দেখতে চেয়েছি মূলত; সুনীলের বই পড়ে, ওর কোন এক পরকীয়া হয়েছিলো এখানে। জায়গাটা কিন্তু বেশ সুন্দর। এখানে এক রাত থেকে গেলাম আরেক গ্রামে। নাম ষ্টোন সিটি। দু'দিন ছিলাম। মাছ ধরলাম, ক্যাম্প করলাম, অদ্ভুত লাগলো। তোরা কেমন আছিস? চিঠি পড়ে তো নিশ্চয়ই বুঝেছিস আমি ভাল আছি। সব কিছুই ফাস্ট কাশ। কুকুর গুলো ভাল? একটা কবিতা লিখেছি তোর জন্যে পাঠালাম, কাল আবার মিশিগানে চলে যাচিছ। ইচ্ছে আছে এখানকার কতগুলো বাঙ্গালীকে প্যাদাবো ------আর পড়তে ইক্রেছ হলো না, ছেলেটা অদ্ভুত, না ছেলেটা অদ্ভুত না । ফালতু, একদম ফাঊল। হঠাৎ ঘুম এসেছিলো। স্বপ্ন দেখছি, সুন্দর সরল একটা পথ উঠছে তো উঠছে। আমিও হেটে যাচ্ছি। উপরে কেমন কুয়াশা, কেউ নেই কোন শব্দ নেই, উঠছি উঠছি, হঠাৎ পা ফসকে গেল নাকি? না আবার উঠছি আমি। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। খুবই কান্না পাচ্ছে, কিন্তু আমি উঠেই যাচ্ছি, উপরে; অনেক উপরে।


সম্রাট

আমি, সিমন আর সুমিত হেটেল তিতাসে বসে গ্রীল চিকেন খাচিছ। মেহেদী টাকা দিয়েছে। ও আর পাপ্পু গেছে বোতল কিনতে। পাপ্পুর বাড়িতে আজ আসর বসাবো। আমরা আমরাই শুধু। আজ সিমনের জম্মদিন, জটিল হয়েছে চিকেনটা। বললাম:
 তারপর সুমিত নতুন কী প্রব্লেম বাধালি।
 আমি এখন প্রব্লেম মুক্ত। বলতে পারো একদমই একা।
 শর্মিলীটা বিট্রে করলো তাহলে অ্যা?
সুমিত একটু চিকেন গিললো।¯স্প্রাইটে চুমুক দিলো। তারপর বলল:
 বিট্রে না, বিয়ে করলো। আমার মতো ভ্যাগাবন্ডের সাথে কে থাকবে?
 আইচ্ছা, আটকাইলি না।
 কী হবে!
 বাদ দাওতো ভাই, সিমন বললো, মনে নাই, আমাদের সুমিত হচেছ সম্পূর্ন রাজহাস। রেনির কেসের পরও কিরকম নর্মাল।
 দেখ্ সিমন তোর তো সারা জীবনটাই getting things done by others!, আমার পেছনে লাগছিস, নিজে কী করেছিস আই!
 আমি, আমি ব্যারিয়ার মেথড ইউজ করেছি, তোর মত বলদ নাকী।
 তোরা বাদ দে তো, একটা মুরগির হাড় চাবাতে চাবাতে বললাম, জীবনটারে মুরগির হাড্ডি বানাইস না। যা হইছে, ফরগেট। সেদিন একটা কবিতা পড়লাম পেপারে। অনেকটা এরকম:

'মনে পড়ে এক সরাই খানা মিরান্ডা?
মনে পড়ে এক সরাই খানা?
মুঠি-মুঠি খড়কুটো-লুটোপুটি সেই বিছানা?'

এটার মানে কি জানিস? মানে হলো ধরে রাখতে চাইলে পুরানো আবেগের তীর ছুড়তে হবে। তীর ছুড়বি রিলেশন বাধবি- সোজা হিসাব। এখন এইসব বাদ দে। পাপ্পুটা কোথায়?
 আসবে শিগগিরি।
 তায়েফটার খবর কী? ওর কোন খবরই পাই না।
 ও ঝুলছে, মিতুল নাম।
 গুড, ভেরী গুড।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×