তানিয়া, বিড় বিড় করে কী বলছিস?
কিছু না, ঘুমোসনি?
নাহ্ আমিও ভাবছিলাম। আজ তো ফুয়াদ বাড়ি ফিরেছে। ডাক্তারের বাপ ও কিছু করতে পারবে না ওর।
বেচারা, ওর সিনেমার কী হবে?
আরো ফেন্সিডিল খাক।
ছেলেটা স্বপ্নবাজ ছিলো। ফুয়াদের সাথে আমার দেখা হয় সাইফের মাধ্যমে, প্রথমে ফুয়াদ, তারপর সিমন, সুমিত, সম্রাট, পাপ্পু-সকলে একে একে এসে আড্ডা জমাতে থাকে। হঠাৎ হঠাৎ তায়েফ আসে, এখানে এসে কোন কথা বলে না, চুপচাপ থাকে, পুরো জড়। ক'দিন আগে সবাই বাসায় আড্ডা দিচ্ছিলাম, শর্মিলী সবাইকে চা দিচ্ছিলো, তায়েফ বলে বসলো, আমি চা খাইনা। খাস না ভালো, নর্মালি বল! তা না এমন ভাবে বললো যেন শর্মি কোন পাপ করেছে। শর্মিও আজকাল ওকে দেখতে পারে না। নাহ্ ঘুম পাচ্ছে। কাল আবার ক্লাশ...।
আমি আর ফুয়াদ ডাক্তারের কাছ থেকে বের হলাম। ডাক্তার অদ্ভুত সব কথা বললো। ওর নাকি লিভারে হালকা সমস্য হয়েছে। সেই সাথে মাথায় মগজের সেলে কী যেন হয়েছে। আর এরকম চলতে থাকলে আর দেখতে হবে না, বদ্ধ উম্মাদ হয়ে যাবে। তবে ভয়ংকর হলো, ফুয়াদের যে মানসিক অবস্থা তাতে করে হঠাৎ রাস্তায় বেরিয়ে কাউকে মেরে ফেলাও অস্বাভাবিক নয়। আরো কী যেন হয়; কী যেন---হ্যা, ডিপ্রেশন, অমনোযোগিতা, আমি ডাক্তারকে থামিয়ে বল্লাম, 'রাস্তায় ট্রাফিক কন্ট্রোল করার সম্ভাবনা কতটুকু?' রাস্কেল! হঠাৎ ফুয়াদ বলে উঠলো।
হঠাৎ একটা কবিতা মাথায় ঘুরছে, শুনবি ?
তুই-ও কবি হয়েছিস? আমার ভাত গেল।
তাহলে কেক খাবি, শোন:
'মাটির বন্ধু হয়ে চলে যাবো
সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে,
তখন এক ফোটা অশ্রু
রেখো আমার পরে।
একটি গোলাপ ফুল রেখে যেও
আমার কবরে‘!
মৃত্যুর ইঙ্গিত কি তবে ফুয়াদ পেয়ে গেলো! বুদ্ধিমান ছেলে! সেদিনই সিমনকে জানালাম ঘটনা, ওর কোন এক বড় ভাই আছে ডাক্তার। সিমনই এখন দেখছে কেসটা; মানুষ কেন ড্রাগস নেয়? 'এর কি নির্দিষ্ট কোন উত্তর আছে'? ভেতর থেকেই কে যেন কথা বললো। কে তুমি? 'বিবেক'। ও, ওটাতো কবেই চলে গেছে, 'আবার ফিরেছি যে'। বেশ করেছো! থাকো খাও; তবে মাথা খেয়ো না।
পাশের রুমে সম্রাট, মেহেদীরা বসে আছে, আজ সম্রাট খুবই আনন্দে আছে। এ ঘর গলার পর্যন্ত আওয়াজ আসছে। আমাকে না পেয়ে শর্মির কাছ থেকেই আমার লেখা গুলো শুনছে ওরা। শর্মি একটা লাইন বলছে, হেসে গড়িয়ে পড়ছে সবাই। মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ লাগছে, প্রচন্ড খারাপ। উঠে গিয়ে সাইফের চিঠিটা খুললাম।
তানিয়া darling,
কেমন আছিস? তোকে সেদিন শিকাগোতে দেখলাম মনে হলো, তবে অবশ্যই তা তুই নোস। চিঠিটা যখন লিখছি তখন আমি আইওয়া সিটিতে, যদিও নাম সিটি, তবে আসলে নাকি গঞ্জ। অনেকটা নোয়াখালীর মত। মিশিগান থেকে এখানে এসেছি ঘুরতে আমরা ছ'জন। আইওয়া-টা দেখতে চেয়েছি মূলত; সুনীলের বই পড়ে, ওর কোন এক পরকীয়া হয়েছিলো এখানে। জায়গাটা কিন্তু বেশ সুন্দর। এখানে এক রাত থেকে গেলাম আরেক গ্রামে। নাম ষ্টোন সিটি। দু'দিন ছিলাম। মাছ ধরলাম, ক্যাম্প করলাম, অদ্ভুত লাগলো। তোরা কেমন আছিস? চিঠি পড়ে তো নিশ্চয়ই বুঝেছিস আমি ভাল আছি। সব কিছুই ফাস্ট কাশ। কুকুর গুলো ভাল? একটা কবিতা লিখেছি তোর জন্যে পাঠালাম, কাল আবার মিশিগানে চলে যাচিছ। ইচ্ছে আছে এখানকার কতগুলো বাঙ্গালীকে প্যাদাবো ------আর পড়তে ইক্রেছ হলো না, ছেলেটা অদ্ভুত, না ছেলেটা অদ্ভুত না । ফালতু, একদম ফাঊল। হঠাৎ ঘুম এসেছিলো। স্বপ্ন দেখছি, সুন্দর সরল একটা পথ উঠছে তো উঠছে। আমিও হেটে যাচ্ছি। উপরে কেমন কুয়াশা, কেউ নেই কোন শব্দ নেই, উঠছি উঠছি, হঠাৎ পা ফসকে গেল নাকি? না আবার উঠছি আমি। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। খুবই কান্না পাচ্ছে, কিন্তু আমি উঠেই যাচ্ছি, উপরে; অনেক উপরে।
সম্রাট
আমি, সিমন আর সুমিত হেটেল তিতাসে বসে গ্রীল চিকেন খাচিছ। মেহেদী টাকা দিয়েছে। ও আর পাপ্পু গেছে বোতল কিনতে। পাপ্পুর বাড়িতে আজ আসর বসাবো। আমরা আমরাই শুধু। আজ সিমনের জম্মদিন, জটিল হয়েছে চিকেনটা। বললাম:
তারপর সুমিত নতুন কী প্রব্লেম বাধালি।
আমি এখন প্রব্লেম মুক্ত। বলতে পারো একদমই একা।
শর্মিলীটা বিট্রে করলো তাহলে অ্যা?
সুমিত একটু চিকেন গিললো।¯স্প্রাইটে চুমুক দিলো। তারপর বলল:
বিট্রে না, বিয়ে করলো। আমার মতো ভ্যাগাবন্ডের সাথে কে থাকবে?
আইচ্ছা, আটকাইলি না।
কী হবে!
বাদ দাওতো ভাই, সিমন বললো, মনে নাই, আমাদের সুমিত হচেছ সম্পূর্ন রাজহাস। রেনির কেসের পরও কিরকম নর্মাল।
দেখ্ সিমন তোর তো সারা জীবনটাই getting things done by others!, আমার পেছনে লাগছিস, নিজে কী করেছিস আই!
আমি, আমি ব্যারিয়ার মেথড ইউজ করেছি, তোর মত বলদ নাকী।
তোরা বাদ দে তো, একটা মুরগির হাড় চাবাতে চাবাতে বললাম, জীবনটারে মুরগির হাড্ডি বানাইস না। যা হইছে, ফরগেট। সেদিন একটা কবিতা পড়লাম পেপারে। অনেকটা এরকম:
'মনে পড়ে এক সরাই খানা মিরান্ডা?
মনে পড়ে এক সরাই খানা?
মুঠি-মুঠি খড়কুটো-লুটোপুটি সেই বিছানা?'
এটার মানে কি জানিস? মানে হলো ধরে রাখতে চাইলে পুরানো আবেগের তীর ছুড়তে হবে। তীর ছুড়বি রিলেশন বাধবি- সোজা হিসাব। এখন এইসব বাদ দে। পাপ্পুটা কোথায়?
আসবে শিগগিরি।
তায়েফটার খবর কী? ওর কোন খবরই পাই না।
ও ঝুলছে, মিতুল নাম।
গুড, ভেরী গুড।