ময়লা মাটি
প্রায়শই বাতাসের বহরে মাটির নমুনা মডেল উড়ে যেতে দেখা যায়; জোড়াতালি প্রচ্ছদে বানানো আকাশের ডানায় মেঘগুলো ভ্রাম্যমান বনিকের মতো সামান্য সন্নাস সংসার তালাশ করে। শব্দগুলো ভ্রমনবৃত্তান্তের পাঠশালায় বারবার ধ্বসে পড়ে; বাঁশবনের ভেতর সমুদ্রের উপর উড়ন্ত সকালে স্কুলট্রেনের ভিড়ে অসংখ্য ধূলিঝড় যখন উড়ে; ঘোর তন্দ্রায় জানতে চায় পূর্বজন্মের জীবনবৃত্তান্ত সমগ্র। টেবিরচার্টে খাদ্য খতিয়ান। প্লেটভর্তি পাথরখ- আর রকমারী ফল। একান্নবর্তী ঝাউবন- নিঃস্ব নিরানব্বই ঘরে শতাব্দীর প্রথম গর্ভবতী সান্ত¡ণার বাণী শুনিয়েছি হুবহু ছায়া অনুলিপির।
এসব ত্রিকোনমিতি মাছপ্রজাতির বুঝার কথা নয়। পাখি সামান্যতম দুরত্বের পথ অতিক্রম করে হাঁটে। মাঠ কেবল মাঠ চায় আমাকে খেলার জন্য। পোড়া মাংস কয়লার তফাৎ খোঁজে মাঝে মাঝে সাধুসঙ্গ নিয়েছি; আত্মঅভিমান জ্বালিয়ে ভয়াবহ ক্ষত আর ক্ষতি নিয়ে সাবান দিয়ে জন্ম অলংকার ঘষে; চোখ ছুটে চোখের ক্যানভাসে। প্রযুক্তি ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে হাত এবং চক্ষু মাটি আর শীতলপাঠি ভুল বানানের ঘরে নিয়মের সম্ভাবনা আঁকে।
ক্যানভাস থেকে তুলির আচড়ে প্রকৃতি সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর মতো চন্দন সুভাসে বারবার সাজে আর সূর্যের খোচা খেয়ে কাঁচা ফসল যেভাবে হাসতে হাসতে গর্ভবতী হয়ে ওঠে; অমরত্বের নব আশায়। কিন্তু, ভূ-বালিকা জানে না, নিয়মের ময়লা মাটি দিয়ে তৈরী কাঁচা বালক আকাশ স্বপ্নে বিভোর। তারপরও মানুষ আকাশের উল্টোপিঠ উড়ে উড়ে দেখতে চায়।
০২
আয়না ও নেলসন ম্যান্ডেলা
আয়না
স্বচ্ছ নদীর গোপনাঙ্গ নেই- আফ্রিকার সুখ সাদামেঘ
কালো মানুষ- বিপ্লবী প্রেমিক
ঝড়ের ব্যবধান- কচ্ছপ-পৃথিবী।
নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি পূর্ণিমার কালো শিশু
সুরসুখে কালোমুখ সাদা দাঁত সন্ধ্যা সঙ্গীত আয়োজন করে
এশিয়ার উঠোনে।
আমাকে আয়না ভাবছো! ভাবো!
আমি আয়না ঢাকা কালো পর্দা-আফ্রিকা।
নেলসন ম্যান্ডেলা
শহর চলে গেছে গ্রাম ছেড়ে অরণ্যে
সাদা কবুতরের যাওয়া হয় না যেখানে
তুমি কি দেখেছ,
আকাশে ধ্রুপদী পরিবর্তন?
কুমারীর গর্ভে কালো সন্তান
হে আফ্রিকার বিপ্লব।
০৩
বায়োগ্রাফি
হাঁসের কাছে সাঁতার শিখে প্রণয়ের পানিতে ডুব দিয়েছি। অন্ধ আশঙ্কার উঠোনে সোডিয়ামবাতির অভয়। দুধ-ভাতের লোভে বিড়ালের বেহায়াপনা দেখে মানুষের দ্বারে দ্বারে জীবন ব্যয় করেছি। সীমানায় উড়তে গিয়ে পাখির মতো পাখা মেলে শূন্যতা ধরেছি। ভালোবাসার দায়িত্বে ডুবে গেলাম অকূলে।
হায় জীবন! বাতাসের বায়োগ্রাফি দেখে জড়িয়েছি উত্তপ্ত শরীরের ডানা। অনিয়ম আতঙ্কে নিয়ম ব্যাকরণ মুখস্থ করে সৌরদেশ মাটির ম্যাজিক থালায়। হজম হওয়া ভাতের পরিবর্তে পাথর পেট অতি আপন। মানুষ হওয়ার জন্য অমানুষ সেজে মানুষের কাছে বসে আছি।
প্রভু ভক্ত কুকুর মিথ্যা আর মৃত্যুর ঘ্রাণ নিয়ে একলা এখন।
০৪
অসমাপ্ত অনুলেখন
ইচ্ছা হয় অসমান পাণ্ডুলিপির জীবনকলঙ্ক ইরেজারে মুছি,
অহংকারী সমুদ্র গায়ে জড়িয়ে দুধের ঘূর্ণায়মান স্রোতে কুসুমসূর্য মিশাই;
জলমানুষ
আগুনমানুষ
মাটির ভাঁজে ভাঁজে বাতাস।
অস্তিত্ব সংকটে জন্মের দাগ
কালের কয়লা ত্রিভূজ
কম্পাসে রেটিনা মাপে চৈতন্যবাড়িতে;
পাথরের ফাঁকে রোদঘাস দূরগামী বাতাসে ওড়ে।
উড়তে উড়তে সুঁই-সুতা মুখে ভাবি;
সুলতানের আঁকা কালো কৃষক
অসংখ্য ওবামা বেলনায় বড় করে তুলি।
শিরিষ ঘষে ঘষে চূড়ায় যাওয়ার চূড়ান্ত পথ খুঁজি।
০৫
এই রকম সময়
নিঃসঙ্গতার সহস্রাব্দ হতে আর কত বাকি?
হাজারবছর শেষে গাছ এবং পাহাড় হাঁটতে শুরু করবে;
নদীরা উঠে আসবে পাড়ার মামাতো বোনের হাতে।
মাছ মানুষের সাথে পারিবারিক সম্পর্কে জড়াবে
নাচবে খেলবে প্রকৃতির সাথে;
গজিয়ে ওঠা পাখায় চড়ে একদিন মানুষ ভ্রমণে যাবে।
পৃথিবীর সব প্রাণী একই ভাষায় কথা বলবে
প্রেম করবে, প্রয়োজনে যুদ্ধ করবে;
প্রবাহিত স্রোতে ভাসবে পূণ্যের শহর।
সিঁড়ি বেয়ে আকাশে আড্ডা দেবো রোজ,
যদি আগামী সকালেও নমঃ শুদ্রের ঘুম না ভাঙে;
ঘুমসুড়ঙ্গে মনসার আয়োজন ব্যর্থ করে
হাতে তোলে নিঃসঙ্গতা।
একদিন, সব কিছু মানুষের অধিকারে থাকার পরও
জীবন হবে বিষাদময় নিঃসঙ্গ।
০৬
উত্তরাধিকার
সমুদ্র, নীরবে জাগো
আমাকে লবণজল করে,
প্রিয়তমার মুখের স্বাদ হয়ে
মানুষের আবাদ বাড়াই।
***
বাতাসের শরীর জড়াজড়ি করে
কাহ্নপা ডেকে তোলে কাব্য সন্তান।
০৭
কমলালেবু
গোল পৃথিবী ফুটো করে দেবো
ছিঁড়ে খাবে ক্ষুধার্ত মানুষ।
০৮
স্মৃতিঘরে অপেক্ষারা
(সামিনা বিপাশা, তোমাকে দেখলে গ্রামের কথা মনে পড়ে)
মুঠোয় এসো মধ্যদুপুর। স্রোতের মতো আঁকাবাঁকা নদী,
ভেঙো না প্রিয়তমার বুক; নদীমুখ প্রিয়তমার স্বপ্নস্মৃতি।
অত্যাচারী হয়ো না প্রবল পূবাল বাতাস
বরং ছড়িয়ে দাও সোহার্দ্য সম্প্রীতি;
সূর্য, স্থির হও। ঘুমকাতর মুখ উবু হয়ে শুয়ে আছে
পলিমাটির কোলে।
রাত, অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে পাবে না অমাবস্যা
দিনকে আসতে দাও পূর্ণিমা চাঁদ।
জোনাক আলোয় খুঁজে নেব বাস্তুহারা বাড়ি;
সময়ও কথা বলুক অন্তরাত্মা হয়ে,
হাইকোর্টের মাজারে বাজারে অভিযোগ
অভিযোগ ছায়াপথের ভোজসভায়;
বেদনার প্রহর নখের আচড় নীরবে বন্ধ হোক আড্ডায়।
আজ, আমার তোমার তোমাদের দিন অনিমেষ
উঠে দাঁড়াও। উঠে দাঁড়াও। প্রিয় বাংলাদেশ।
০৯
যোগফল
অবশিষ্ট কথা বললে প্রথমত বলতে হয়- আমিই সমুদ্র। জলতৃষ্ণায় লবণ স্বাধের সাথে লোনা রক্তের সম্পর্ক। আমাকে উপড়ালে উপর থেকে দেখবে অসংখ্য মানুষের স্রোত ভেঙে বন্দরে ভীড়ছে পাখি, যমজ নৌকা আর জাহাজের মেলা। জাহাজের মাস্তুল পৃথিবীর হাল ধরে অসীমের ঠিকানায় সুড়ঙ্গ খোঁজে নিঃস্ব কাপ্তান। অসহায় বিশ্বচোখ একলা হাঙ্গরের মতো চেয়ে আছে; ত্রিসীমানায় বেড়ে ওঠা দ্বীপের প্রান্তদেশ। মোড়ানো নাভিমূল প্রণয়ের বাতাসে বিষবালি। জড়ো হওয়া মানুষের মুখে মৌলিক পারিজাতের কথা। ক্ষুধামুক্ত জাহাজ কই? নির্ভীক নাবিক কই? তড়তড় বেড়ে ওঠা শ্যাওলা পরিষ্কার আশেক কই?
তন্দ্রার ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে নষ্ট হওয়া এক বর্তমান দেখতে পাই- স্বর্গ থেকে নেমে আসা অস্কার স্বর্ণকেশী। আমার ওপর ভাসছে ¯্রােত আর নষ্ট জলরাশির ফেনা। দূষিত হুর, পচাঁ মাংসের স্তুপ। ঢেউয়ের গোপন গোলায় গত হওয়া এক বসন্ত সকালে নিঃশ্বাস সমান সৌরভ বিলি করেছি জল খেয়ে খেয়ে জলজ প্রাণের পুষ্টিবিজ্ঞান বাড়ে- সমুদ্রবিষয়ক অদক্ষ শরীরে। খাবার লবণ প্রয়োজন হলে রক্তপান করতে করতে তন্দ্রা ভেঙে তপস্যায় বসি;
যেন প্রবাল শৈবাল আর মাছেরা পায় জীবনের করতালি প্রেমের প্রবাহমান।
১০
নারী
সত্যি বড় ভয়াবহ হৃদয়ের চাল
দাবাও হেরে যায়;
হাতি ঘোড়া কিস্তি সবাই মাতাল।
***
নারী সৃষ্টির আদি সিনেমা
পুরুষ তার প্রযোজক।
***
তুমি প্রয়োজনে এসো
অপ্রয়োজনে এসো,
তবু, বাড়ুক প্রজন্ম।
***
সাদা কাগজ হাতে;
অথচ তোমার মনকে প্রিন্ট দিতে পারছি না।
১১
পরীক্ষা
নদী, মানুষের মতো কখনো দাঁড়াতে ইচ্ছে করে না?
একবার দাঁড়িয়ে আকাশের বুক ভিজিয়ে দে।
***
প্রেমিকাকে বিশ্বব্যাংকের কাছে ইজারা দিতে পারি
যদি অহিংসা আমার হয়।
***
সভ্যতা ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে হাঁটছে
এখনই রাষ্ট্রের নামে বীমা করার উত্তম সময়।
***
একা থাকলে বোঝা যায় ভালো-মন্দের খতিয়ান।
১২
নন্দিনী, ও নন্দিনী
আঁধার সরাও, ভাগ্যমুখ দেখি
শিবের চরণে বিচ্ছেদ হানা।
নদীর বাতাসে মহুয়া ভাসে
নন্দিনী, বন্দি মন ফিরায়ে দিয়ো না।
চৌরাস্তা, কোন সীমানায় যে যাবো!
উদ্দেশ্য, তোমার সংকলন চাই
আঁধার সরাও, ছিঁড়েছি ব্যবধান
মাস্তুলে বসে আখরস চিবাই।
আঁধার সরাও, দেখি ব্রহ্মণ্ড বই
সুঁইমুখ নিত্যনাচে নয়নভরে
খরাশূন্য বুক এলোকেশে জল
দ্যাখো, নন্দিনী নাচে দিগম্বরে।
আলোর হুলস্থূল ক্ষত, নত যত পাখি
বিচরণ, মোম হৃদয়ের নিচে ঘা
আঁধার রাতে, তোর দরজা খুলে
নন্দিনী, বলবি না তুই, যা ফিরে যা!
১৩
নষ্ট তরজমা
আমাকে এক পেয়ালা হেমলক দাও-
একলা আকাশের কান্না ভাল¬াগে না।
হে যিশু,
প্রার্থনা আমার আকাশের ভাঁজ খুলে
বেনিয়ামিনকে সাবধান করো;
তোমার সতীর্থ হই।
গাজার মাছুম মানুষগুলো বাঁচুক।
১৪
মেঘ, বৃষ্টি ও আত্মা
বৃষ্টি বিশ্বাসী ছাতা উড়ে গেলে পাপের মহব্বত বাড়ে। আগুনকে মনে হয় প্রেমিকার বগল উম; বাতাস খবর বিলায় ঢাকা টু চট্টগ্রাম; ভেজা শহরের শরীর আমার।
সূর্যের বাহাদুরি দেখলে গোস্বা করে থাপ্পড় মারি শূন্যের গালে। শীত মিতালীর আপডেট নিয়ে একটার পর একটা বিমান বাতাসে ভাসছে। ন্যাংটো হতে ইচ্ছে করছে; যদি শূন্যের সাথে দৈহিক মিলন ঘটে? তারচে’ ঢের ভালো বুকে মুখে ও যৌনাঙ্গে মাটি জড়িয়ে একটার পর একটা আমাকে জন্ম দিব। জন্ম থেকেই মাটি আমার প্রিয়তম বউ। নদীর অর্ধেক যৌবন অনেক আগে মারা গেছে। পাথর পথে মাছের মিছিল। পানকৌড়ির দল ভেজা পল্লীর সংসার ছেড়েছে। ভালো থেকো প্রিয় বিধবা ফুল।
কেউ ডাক দিলে বুকে জমা নোনাজলে মুখ মুছি। ভালোবাসলে জোড় হাতে সমুদ্রের ঢেউজল কাটতে হয়। জল কাটতে কাটতে জলের ভেতরে মাছের প্রতিচ্ছবি। মাছ তখন আমোদে ভাসে আর হাসে। এরপর আকাশ ফুটো করে বের হয় দৈত্য আত্মা। মেঘের ঘুম ভাঙে। গাছ হতে ঝরে শুকনো পাতার স্ক্রিপ্ট। আকাশ থেকে ল্যান্ড করে মাটির বিমান
(কাব্যগ্রন্থ- তাড়া খাওয়া মাছের জীবন)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫০