somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পর্ক

১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবারো কি একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি হবে?...আল্লাহ না করুক। কাকে বুঝাবে,কে কবে শুনেছে এই মানুষটার কথা,
কিইবা বুঝানোর আছে....এত্ত জলজ্যান্ত উদাহরন সবার সামনে থাকতেও কি করে আসে ঐসব চিন্তা?!!!....


নানার আহলাদের টুনটুনি,অতি আদরের ময়না ... কত কি না ছিল এই '...', চোখের আড়ালে অন্যকোন বাড়ী যেন যেতে না হয় তাই খালাতোভাইটাকে প্রচন্ড অনিচ্ছাস্বত্তেও মানতে হলো জীবনসঙ্গী রুপে, নানার শখ মেটাতে মা বিয়েরদিন কি মারটাই না মারল ... এখনও মনে হয় কান্নার হেচঁকিতে কবুলটাও কি বলা হয়েছিল? ...সবাই কি মেনে নিয়েছিল এ বিয়ে? নাকি শুধুই একটা জেদ পূরন......

প্রথম সন্তান ... জীবনের সবচেয়ে পরম পাওয়া মাত্র ছ'মাসেই জীবনের এজীবনের ভবিষ্যতের দিকটা বুঝিয়ে দিতে চাইল। তবু পুরোপুরি বুঝিওনি ... যেমন ওর কাশির সাথে চাকা চাকা হয়ে দুদিন ধরে বের হওয়া রক্তের দলাকে বাজে ধরনের ঠান্ডা ধাতের অসুখ ভাবলাম,.... কিংবা কোলের উপর নিস্পন্দহীন হয়ে যাওয়া ছেলেটা চলে যাবার কতদিন পরেও ভাবলাম অসুখবিসুখতো হয়ই ...সামনে ইনশাল্লাহ ওমন হবে না। ধৈর্য্য ধরলাম। অল্প ব্যবধানে এবার কোল জুড়ে এলো মেয়েটা .... প্রচুর মাত্রার জন্ডিস নিয়ে ...যতই সবাই বলল ঠিক হয়ে যাবে, এমন হয়ই জন্মের সময় ... সব উপেক্ষা করে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে পরীক্ষা করালে পাওয়া গেল.....লিভার প্রবলেম, চিকিৎসা চলল....আরো আরো পরীক্ষা ....উত্তর পাচ্ছে না কেন হলো ওমন? লিভার স্পেশালিষ্টের কাছে যেতেই মা-বাবার টেষ্ট দিলো কিছু যখনই জানল খালাতো ভাইবোন।

ঐ টেষ্ট জীবনের সব আনন্দ আসার পথগুলো যেন জগদ্দল-পাথর চাপা দিয়ে গেল। .......... কি শান্ত হয়ে ডাঃ জানালো "মা ধৈর্য্য ধর, তোমার মেয়েটার লিভার-সিরোসিস হয়েছে। কারন হলো ... একচুয়ালি সবক্ষেত্রে এমন হয়না, তবে সম্ভবনা থাকে ক্লোজ-রিলেটিভ এর মাঝে বিয়ে হলে। যা বুঝলাম তোমার প্রথমবেবীটাও এই অসুখ ছিল। এখন ট্রিটমেন্ট চলুক এই বেবীটার"। কারনটা বলায় ডাক্তারকে মহাবেকুব মনে হলো। ধ্যাত, আরও কতজন আছে এমন দম্পতি কই তাদেরতো কিছুই হয়নাই। বলার তাই বলল একখান কথা। যাক, বাবুটা ভাল হলেই আর কিচ্ছু চাইনা।

বছর না কাটতেই স্বাস্হ্যবান বাচ্চাটা দু'দিনের জ্বরে ব্রেইন-ডেড হয়ে পি.জি তে লাইফ সাপোর্টে থাকল একটা দিন .... বারবার এত চিৎকার করলাম একটু দাও কোলে ..... কেউ শুনে নাই।

এরপর আড়াইটা বছর কাটল ... আবারও ছেলে হলো একই সব লক্ষন নিয়ে .... কি যে কষ্ট পেতে লাগল, আতংকে আতংকে কাটে দিনরাত, হঠাৎ হঠাৎই রক্ত বের হয় নাক দিয়ে। পি.জি তে ডাক্তারদের বোর্ড বসানো হলো ক্রিটিক্যাল রুগী .... কি সুন্দর করে তারা বলল "এবাচ্চার কোন ভবিষ্যত নাই ... এমন করেই বেচেঁ বড় জোর ৫ বছর টিকবে। তুমি আর কখনও বাচ্চার নিও না। কারন তা হবে জেনেশুনে একটা মানুষ খুন।"
কত কতযে পীরফকিরের তাবিজ-কবজ সব সবই করলাম ....... আমার ছেলেটা অসম্ভব চন্ঞলতা নিয়ে বেড়ে উঠতে লাগল। একটুও বোঝা যায়না ওর অসুস্হতা। মায়ের উপর ও অনেক ক্ষেপা, কাহাতক আর রুগীর খাবার, সাদা সাদা খাওয়া মুখে রুচে। চকলেট, আইসক্রীম, আচার ....ঝালখাবার, সব মজার খাবার গুলো মুরগীর মতো খুটে খেতে হয়। এত যে বলি বাবা দেখ মাও তো ঐসব খাইনা ... তাও ওর গাল ফুলানো কমে নাহ।

আতংকে আতংকে ছয়টা বছর যেতেই ডাক্তারের কথাকে ফু মেরে আবার মা হবার রিস্ক নিলাম। কাজিন ডাক্তারভাইটা শুনেই কি চিৎকার ..... তোরা মানুষ না, তোদের ডিভোর্স হওয়া দরকার .... তুই কি মেশিন হইছিস ... এ্যাডপ্ট করা যায়না বাচ্চা.....কত কি। আমি ভাবি ... আল্লাহ ঠিক করবেনই সব। ডাক্তারের কাছে যখন গিয়েও কিযে বকা খেলাম ... একটা সুস্হ বাচ্চার আশায় আমি গায়ে এসব কিছুই লাগাই নাহ ....

দু'বছর পর দু'টা অসুস্হ ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিল্লিতে গেলাম উন্নত চিকিৎসার আশায় .... প্রায় তিনবছর থাকলাম ... সবাই কেবলই ঔষধ দেয় ... আর কিচ্ছুনা। ছেলেটাকে ওখানকার স্কুলে দিলাম। আর ভাল লাগেনা আত্তীয়স্বজনকে জানাতে কিছু ... কারও সাথে যোগাযোগ রাখিনি। মেয়েটা অসুস্হ হয়ে গেল বাড়াবাড়ি রকমের...কিছুতেই কিছু হয়না, ফিরলাম দেশে।
১৬ বছরের দাম্পত্যজীবন আমার কোন সংসার নাই, ঘর নাই ..... এই গুছাই তো এই শেষ। ... প্রতিপদে নতুন করে শুরু করি। ঢাকায় বাসা নিলাম, অসুস্হ বাচ্চাদু'টাকে নিয়ে হাসি খেলায় আমিও বাচ্চা সেজে থাকি ...... আল্লাহ আমার ধৈর্য্যের আবার পরীক্ষায় নিতে চাইল, প্রতিনিয়ত দিয়ে চলছি তাও। আমার মেয়েটা ফুলে যেতে থাকল অস্বাস্হ্যকর রকম। আরো আরো পরীক্ষা .... কেন হলো ওমন? ছয় বছর ঔষধের পর ঔষধ ওর কিডনী শেষ করে দিয়েছে। জলজ্যান্ত .... কিযে হয়ে উঠল ও ... ওদের দু'জনেরই খুব গা চুলকাত ... কিচ্ছু দেখা যেত না কেবলি বলত "মা চুলকে দাও" এখন ফুলে টানটান হওয়া চামড়া চুলকালে আচড়ে রক্ত বেরোয় .... কিযে করি .... সেন্ট্রাল হসপিটালে খুবই ছটফট করে আমার লাজুক মেয়েটা নিথর হয়ে গেল।

কিযে দারুন দুরুদ আর মোনাজাত পড়ত ও। আমার মোবাইলে আছে সেইভ করা। ছেলেটা স্কুলে গেলে একা ঘরে আমি দেখি ওরে। আমার স্বজনরা একা থাকতে দেয়না, আবার না পাগল হয়ে যাই .....


হোক খালারবাড়ি...হোকনা দু'জনের কারনেই এমনটা উঠতে বসতে শ্বশুরবাড়ি থেকে শুনা কটুক্তিগুলো মনেই নিতাম না যদি আমার "ও" শক্তভাবে আমার পাশে থাকত। নাহ বাচ্চাদের প্রতি ওর টান অগাধ। তবুও . . .মনে হয় কই যেন একটা দুরত্ব তৈরী হয়ে গেছে। বংশধর না থাকার কষ্ট কি?(ও ওদের বংশের একমাত্র ছেলে) আমার .... আমার কি আছে ছেলেটা আর ও ছাড়া ... শিক্ষাটাও নাই ....



আমাকে দেখেও শিখেনা ওরা .... আবার কথা উঠছে এমনই এক সম্পর্ক গড়ার। শুধুই কি জানাশুনা ভাল ছেলে কিবা সদগুনসম্পন্ন মেয়ে বলেই নিজেদের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে? আকাল তো পড়েনি ছেলেমেয়ের ..... তবে কেন? আমি কিছুই বলিনা .... নচেৎ এরাই বলবে " তুই অভিশাপ দিলি? ভাল কাজে বাগড়া দিস..."

কেউ কি পারেনা নিরুৎসাহিত করতে এধরনের সম্পর্ক না করতে .......
২৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×