somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাদিদ
তুমি আমার রাতবন্দিনী। ধূসর স্বপ্নের অমসৃণ সুউচ্চ দেয়াল তুলে তোমাকে আমি বন্দী করেছি আমার প্রিয় কালোর রাজত্বে। ঘুটঘুটে কালোর এই রাজত্বে কোন আলো নেই। তোমার চোখ থেকে বের হওয়া তীব্র আলো, আমার হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করে এক অপার্থিব জ্যোৎস্না।

আমার বাবা।

০১ লা নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম অম্বরনগর। জেলা সদরের সাথে এই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা সুবিধা ছিলো না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইসহাক মিয়া নামে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা তাঁর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা খাওয়া এবং সাময়িক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেন। যারা বিভিন্ন কারনে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষন গ্রহন করতে পারেন নি, তারা এই বাড়িতে এসে ইসহাক মিয়া এবং তার সহযোগীদের হাত থেকে ট্রেনিং নিতেন। তাঁকে সাহায্য করত তাঁর বড় ভাইয়ের একমাত্র ছেলে জসীম উদ্দিন। ইসহাক মিয়া নিঃসন্তান থাকার জন্য বড় ভাইয়ের একমাত্র ছেলেকেই তিনি পিতৃ স্নেহে বড় করেছেন।

জসীম উদ্দিন তখন সবে মাত্র ইন্টার পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিন্তাভাবনা করছে। তিনিও তখন বাড়িতে বসে চাচা ও তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষন গ্রহন করলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সেক্টরটি ছিলো মেজর খালেদ মোশারফের অধীনে। সেন্ট্রাল কমান্ডের আদেশ অনুসারে ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্তের কাছাকাছি একটি সম্মুখ যুদ্ধে যাবার সময় বর্তমান সেনবাগ উপজেলার জমিদারহাট অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকসেনা এবং স্থানীয় রাজাকাদের সম্মুখে পড়ে যায় এবং কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ইসহাক হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের আরো একটি দল তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। এই সময় চাচার নিষেধ অমান্য করে তার ভাতিজা সেই যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং ২ জন স্থানীয় রাজাকারকে হাতে নাতে ধরে ফেলতে সমর্থ হয়। এর পরে জসীম উদ্দিন স্থানীয়ভাবে আরো কিছু ছোটখাটো অপারেশনে অংশগ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষে দিকে স্থানীয় এক রাজাকারের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় প্রতিপক্ষের বেয়নেটের খোঁচায় কিছুটা আহত হন। পরিপুর্নভাবে সুস্থ হবার আগেই দেশ স্বাধীন হয়ে যায়।

এই জসীম উদ্দিন আহমেদ হচ্ছেন আমার বাবা। ইসহাক মিয়া হচ্ছেন তাঁর চাচা। আমার বাবা সারাজীবন তাঁর চাচাকে ভালোবেসেছেন, শ্রদ্ধা করেছেন। আমি কখনও আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধ পরিচয় বিক্রি করি নি। অর্থাৎ যেচে পড়ে বলিনি যে আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের গর্ব আমাদের নিজেদের ভেতরেই ছিলো। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করেছি আমাদের অন্তরে। জোট সরকারের আমলে আমাদের অঞ্চলের একজন চিহ্নিত রাজাকার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষনা দিয়ে যখন নির্বাচন করে বিজয়ী হয়, তখন আমার বাবা প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি ঘৃণায় দীর্ঘদিন গ্রামের বাড়িতে যান নি। ২০১১ সালে ঐ রাজাকার বইল্লা ( ভালো নাম বলি, কিন্তু তিনি বইল্লা নামে পরিচিত) যখন মারা যান তখন তিনি আবারও গ্রামের বাড়িতে যান। নিজের চাচার কবর জেয়ারত করেন। চারিদিকে যখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছড়াছড়ি শুরু হলো, তখন থেকে তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া থেকে বিরত থাকতেন। এমন কি তিনি যখন মারা যান, তখন আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান, আব্বার সহযোদ্ধারা অনেকেই আমাকে অনুরোধ করেছিলো তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার জন্য। সবাই বলেছেন এটা নাকি তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু আমার বাবা বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর যেন তাঁকে দ্রুত দাফন করি। এই সব কিছুই তাঁর প্রয়োজন নেই। এটা তাঁর ক্ষোভ ছিলো না অভিমান ছিলো আমি জানি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে দাঁড়িয়ে স্যালুট দিয়েছি। একজন সন্তান হিসাবে নিজের বাবাকে বিক্রি করতে আমিও চাই না। আশা করি তিনি যেখানেই আছেন, ভালো আছেন।

অনেক ব্লগার যারা আমার বাসায় এসেছেন, তাঁরা অনেকেই আমার বাবাকে চিনতেন কথা বলতেন। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে অনেকেই আমাকে ফোন দিয়েছেন, ইমেইল করেছেন। আমার বাবা প্রচন্ড গোছালো একজন মানুষ ছিলেন। সেই তুলনায় আমি প্রচন্ড অগোছালো। মৃত্যুর ৫ মিনিট আগেও তিনি নিজের বিছানার চাদর টান টান করে পরিষ্কার করেছেন। বাথরুম থেকে অযু করে, মাথা আচড়িয়ে বসেছেন। মনে হচ্ছে যেন তিনি যাত্রার জন্য প্রস্তুত।

সন্তান হিসাবে পিতার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। আমি এখনো তার ঘরে গেলে তাঁর গন্ধ পাই। আমার বিশ্বাস হয় না তিনি মারা গেছেন। কিন্তু এটাই বাস্তব। আমাকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমার পিতাকে অসম্ভব ভালো রাখেন, মায়ায় রাখেন, আদরে রাখেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:০০
৩৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×