এই বার কোরবানী ঈদের আগের দিন হঠাৎ আমার প্রবাসী ছোট মামা বললেন, তিনি ছাগল কোরবানী দিতে চান। আমি যেন ব্যবস্থা করি। তখন বাজে রাত প্রায় আটটা। হাতে অন্য কিছু কাজ ছিলো, কিন্তু হঠাৎ এই ছাগল কেনা নিয়ে বেশ জটিল ঝামেলায় পড়া গেলো। বাসার কেয়ার টেকারকে বললাম, ছাগল খুঁজতে।
যাইহোক, আমি নিজেও ছাগল খুঁজতে বের হলাম। একটু উন্নত মানের ছাগল চাচ্ছিলাম। কিন্তু দেখলাম বাজারের অবস্থা ভালো না। ছাগলের চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগসন্ধানী কিছু অচল ছাগলও হাটে উঠেছে। মহা মুসিবত। এর মধ্যে মামা বললেন, তুই ছাগল কেনার সময় আমাকে পারলে আমাকে ছবি দেখাইছ!
ধানমন্ডি ৮ নাম্বার মাঠ পার হয়ে স্টাফ কোয়াটারের মুখে এসে দেখি একজন মোটাসোটা লোক এক পাল ছাগল নিয়ে বসে আছেন। মুখে বেশ সুখী হাসি। কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, জিজ্ঞেস করলাম, কি হে! কালকে ঈদ! এখনও এত ছাগল বিক্রি বাকি! তাও মুখে হাসি?
মোটা লোকটি বলল, স্যার! এইগুলো এক দরের ছাগল। মানে এই সব নিয়া দামাদামি আপনেও করবেন না, আমিও করব না। যে দাম বলব, সেই দামেই আপনি খুশি হইয়া কিনা নিবেন।
লোকটার আত্ম বিশ্বাস ভালো লাগল। একটা ছাগল পছন্দ হলো, মামাকে ছবি তুলে পাঠালাম।
ছবি দেখে মামা বললেন, কি রে! এটা তো ছাগী! ধুর! খাসি দেখ!
মামার ছাগী চেনার দক্ষতায় মুগ্ধ হলাম। আমি বেশ কয়েকটা খাসি দেখালাম। কিন্তু মামার কোনটাই পছন্দ হয় না। শেষমেষ চলে আসার সময় লোকটি বলল, দাঁড়ান! আমি একটা দেখাই।
মামাকে দেখালাম। মামা দেখে ভিডিও কলে শিষ দিয়ে বললেন - জটিল!! ছাগলটা পছন্দ হইছে, নিয়া নে।
দাম জিজ্ঞেস করলাম। লোকটা কথা রাখছে। যে দাম বলছে, সেই দামের পর আর দামাদামি করার কিছু নাই।
লোকটা বলল, মামা চিনে রাখেন এই গুলো একদরের ছাগল। আগের দিন হইলে আরো দামাদামি করা লাগত।
যাইহোক, ঈদের দিন বাসার দারোয়ানকে কিছুটা ভৎসনা করলাম। পই পই করে বলে দিয়েছিলাম, একটা কালো কাপড় আনতে, যা দিয়ে একটা আড়াল তৈরী করে সেখানে পশু কোরবানী করব। কিন্তু সে ভুলে যাওয়ায় পরে তেরপল দিয়ে কাজ সারতে হয়েছিলো। এক ।পশুর সামনে আরেক পশু জবাই করা অমানবিক।
হুজুর আসলেন কোরবানী দিতে, জিজ্ঞেস করলেন - কার নামে কোরবানী হবে?
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, মা কালীর নামে কোরবানী হবে।
হুজুর জিভ কেটে বললেন, নাউজুবিল্লাহ!
আমি রেগে মেগে বললাম, নাউজুবিল্লাহ এক্কেবারে ভইরা দিবো! কোরবানী কার নামে হয় জানেন না আপনে? আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কি কোরবানী হয় নাকি? আপনি জিজ্ঞেস করবেন, ভাইজান, কার পক্ষ থেকে কোরবানী হবে। তখন আমি আপনাকে কোরবানী দাতার নাম বলব।
যাইহোক, হুজুরকে নাম ধাম সব বললাম, মনে মনে দোয়া করলাম, আল্লাহ তুমি আমাদের কোরবানী কবুল কইরো! তুমি তো জানো আমরা কারা কারা কোরবানী দিসি। যাদের পক্ষ থেকে কোরবানী করেছি, তুমি তাদের কোরবানী কবুল কইরো!
হুজুর জবাই শুরু করতে যাচ্ছিলো, আমি বললাম, হুজুর! বিসমিল্লাহ বলে জবাই কইরেন কেমন?
জবাই করার পর হুজুরকে নগদ টাকা প্রদান করে চামড়াও দান করব মর্মে মৌখিক মুচেলেকা দিয়া বলিলাম, সন্ধ্যায় বাসায় দাওয়াত, না আসিলে কপালে খারাপি আছে, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমুতুল্লাহি ওবারাকাতু!
হুজুর মুচকি হাসিয়া বিদায় নিলেন। যাইতে যাইতে বলিলেন, তুই আর শুধরাইলি না। সেই ছোট বেলা থেকেই এমন আসোস!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৩ রাত ১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




