মিটাপরাং, হামতনপুর, হরিপুর, কাবিলপুর, মইসিরি, সাদেকপুর, এই জায়গাগুলোতে আমাদের আত্মীয় বাড়ি ছিল, ২/১ দিন করে সেখানে থেকে, নৌকাযোগে সিলেটের গোলাপগঞ্জ এসে পৌঁছলাম। গোলাপগঞ্জ আমাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বাড়ি। সেখানেও একই অবস্থা, রাজাকাররা জ্বালাও পুড়াও শুরু করেছে। আমরা মহা চিন্তায় পরে গেলাম। একদিন সেখানে থাকার পর পরেরদিন দুপুরে আমরা সকলে মিলেই পরবর্তী ধাপের কথা ভাবছি। অন্য কোথাও যাবো নাকি ভারতেই চলে যাবো। ভারতে গেলে কার মাধ্যমে যাবো, এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে নারী-পুরুষ সবাই মিলে। পুরুষদের কেউ কেউ খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছেন কোথায় টাউটার (বায়া) পাওয়া যাবে। এবং দুজনকে পাঠানোও হল টাউটারের খোঁজে। আমরা তাদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছি। চিন্তায় আমাদের সবাই প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পরেছেন। বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে, ঠিক এমন সময় কিছু মুরব্বী টাইপের লোক ও কিছু যুবক সকলে মিলে আনুমানিক ২০/২২ জন হবে, কি যেন একটা স্লোগান দিয়ে আমরা যে বাড়িতে আছি সে বাড়িতে প্রবেশ করলো। ওদের হাতে লাঠি-সোটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে সবাই ঘরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেই। ওরা লাঠি দিয়ে দরজায় আঘাতের পর আঘাত করছিলো আর বলছিল দরজা খুলে দিতে নাহয় কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেবে। তারা এও বললো দরজা খুলে দিলে নারীদের কোনও ক্ষতি করা হবেনা। আমাদের সাথে থাকা পুরুষেরা ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দিলেন। তারপর ওরা লুটপাট শুরু করে। ঘরে থাকা আসবাবপত্র, এবং আমাদের কিছু টাকাও ওরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
আমার স্বামী ভাসুরেরা চিন্তায় পরে যান। কারণ যেখানেই আমরা আশ্রয় নেই সেখানেই আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়। শুধু আমরা নয়, আরও অনেক মানুষকেই এভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করছে। তাই ভয়ে যে যাকে ভাল মনে করছে তার সঙ্গই নিচ্ছে। আমরা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তার পাশের বাড়ি একটি মুসলিম বাড়ি। সে বাড়ির কর্তা এসে আমাদেরকে এখান থেকে যেভাবেই হোক, ভারতে চলে যেতে বললেন। তিনি জানালেন যে, এই যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হবার নয়। তাই আমরা যেন সময় নষ্ট না’করে চলে যাই ভারতে। এবং তিনি এ-ও জানালেন যে, সিদ্দেক নামের এক লোক নাকি ভারতে শরণার্থী পাচার করছে। আমরা তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, আমরা ভারতে চলে যাবো। আমাদের সঙ্গে থাকা পুরুষরা বেড় হলেন সিদ্দেকের খুঁজে।
চলবে …………………
"পিসিমার ডায়েরি- পর্ব ১”