০১।
ভাষা শুধু বাহন বা মাধ্যম এইটা ঠিক না।এক পর্যায়ে ভাষার মাধ্যমেই জগতের সাথে আমাদের সম্পর্ক নির্মিত হয় বটে ,তবে সেটি আর সর্বদা মধ্যস্তকারী থাকেনা।Word আর world এর মধ্যে পার্থক্যও যেন শুধু ‘l’ এর।ভাষা ছাড়া জগতকে বুঝি কেমনে?জগতকে বোঝাবুঝির প্রশ্নেও তো দেখি ভাষার ভুমিকাই প্রধান।ভাষা যেন আমাদের অজৈবিক অস্তিত্বের গঠন উপাদান।ভাষাহীন কোন মুহূর্ত আমাদের আছে কি? প্রতিকীভাবে তাই হয়তো বলা হয়, শব্দই ব্রহ্ম।ভাষা গড়ে ও ভাঙ্গে; ভাষা চলে ও চালায়;সামাজিকভাবেও, মনস্তাত্তিকভাবেও।
0২.
ভাষা সমাজের সৃষ্টি,সমাজ ও ব্যক্তি মানুষ ভাষার অধীন,একাকী নিঃসঙ্গ মানুষও ভাষা বা চিহ্ন ব্যবস্থার ভেতরেই জাবর কাটে।
০৩।
ভাষা ছাড়া স্মৃতি নাই।ভাষা ছাড়া ‘চিন্তা’ নাই(দুশ্চিন্তাও নাই!)
০৪।
ভাষার ভেতরে লেগে থাকে বস্তু জগতের দাগ।ভাষা পরিবর্তন করে বস্তুকে,বস্তুও জন্ম দ্যায় নতুন ভাষার।
০৫।
ভাষা অনুপস্থিতকে উপস্থিত করে, ‘ধবনি’কে করে দৃশ্যময়,দৃশ্যকে করে মুখরা।ভাষা নিরাকারকে করে সাকার।ভাষা শুধু প্রকাশ করেনা ,গোপনও করে।প্রকাশ করতে যেয়ে ভাষা যতটুকু গোপন করে তা ভাষার রাজনীতি।
০৬।
ভাষা রাজনৈতিক,ভাষা বাসনার রূপকার।কবিতা যখন প্রতিষ্ঠিত ভাষা ব্যবস্থাকে তছনছ করে,প্রশ্ন করে,অর্থের সঙ্কচন-প্রসারন ঘটায় তখন তা ‘রাজনৈতিক’ হয়।কবিতা ভাষার এক বিশেষ ব্যবস্থাপনা।
০৭।
ভাষায় লুকোনো থাকে একটি জাতির মন ও ইতিহাস।শব্দের গঠন ও ব্যবহারে থাকে জাতির বৈশিষ্ট ও কৌম চেতনা।
০৮।
ভাষা বিঘ্ন।knower ও knowable এর মাঝখানে দাড়ায়া থাকে।মিলন ঘটায় না।যদিচ তা সেতুবন্ধের মরীচিকা আনে।
০৯।
ভাষা খাঁচা। নানা অর্থের অচিন পাখি থাকে এইখানে।অর্থ নিয়া অনর্থ ঘটায়ও ভাষা।
১০।
ভাষা ভাষা তৈরী করে।ভাষা যতটুকু প্রকাশ করতে অক্ষম হয়,তলানিতে পরে থাকা সেই অনুভবরাশি থেকে জন্ম নেয় নতুন কথারা।
১১।
আর রাহমান আল্লামাল কুরআন খালাকাল ইন্সান আল্লামাহুল বায়ান...তিনি পরম করুনাময় যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন,সৃষ্টি করেছেন মানুষ আর শিক্ষা দিয়েছেন তাকে ভাষা/বায়ান।‘ঈশ্বর,প্রত্যাদেশ,মানুষের অস্তিত্ব আর ভাষার’ সাথে রয়েছে এমন এক ‘সম্পর্ক’ যা দাবী রাখে গভীর অনুসন্ধানের।
১২।
ভাষাই আদি জ্ঞান।খোদা আদম কে শেখান ‘আসমা’ বা নাম ওরফে ভাষা বা ভাষার মধ্য দিয়ে বস্তুতে বস্তুতে পার্থক্যের জ্ঞান বা বস্তুর জ্ঞান। এই বস্তুজ্ঞান বা নামজ্ঞান মানুষকে করে নিয়ত সৃজনশীল ও উন্মোচনমুখর।
১৩।
লাকাবিদগণ কহেন,অবচেতনের গড়ন ভাষার মতন।ভাষার জগতে প্রবেশ আর অবচেতনের উৎপত্তি একই ক্ষণে।ভাষা আমাদের দ্বিতীয় জননী। ভাষাহীন প্রানীর অবচেতন নাই।যা ভাষায় প্রবেশ করতে পারেনা তা আশ্রয় নেয় অবচেতনে আর ফুরসুৎ খোঁজে ভাষায় ফিরে আসার।হাইদেগারীগন বলেন,আমার আগেই যা আছে চিন্তার মধ্যে তা ভাষা হয়ে ধরা দেয়।কবি আর দার্শনিকগণ তা-ই এত মূল্যবান।
১৪।
জ্ঞানকর্তা আর জ্ঞানবস্তুর দূরত্ব কমালে তৈরী হয় ভাষাহীন মুহূর্ত,’লীনঅবস্থা’।সাবজেক্ট অবজেক্টএর ভেদ মোচন হলে তৈরী হয় নৈশব্দের বিপ্লবী পরিস্থিতি।বস্তু-ভাব-মানুষ ভাষার মধ্যস্ততা ব্যতীতই যখন সম্পর্কিত হয় বা হতে পারবে তা-কি ভাষাতিরেক শব্দনিরভরতাবিহীন এক আশ্চর্য বিহ্বল মুহূর্ত নয়?