ব্যাটা তুই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকুরি করিস,
আর বলিস তোর কাছে টাকা নাই। পাঁচ লাখ
টাকা দে, নইলে তোকে মেরে লাশ বেড়িবাঁধে
ফেলে রাখব। তোকে বাঁচানোর কেউ থাকবে
না। ইয়াবা সম্রাট বানিয়ে দিব। এরপর তোর
ওপর গুলি চালিয়ে লাশ ফেলে রাখা হবে।'
এভাবে ভয় দেখিয়ে পেটানো হচ্ছিল
বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের
সহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বিকে। শনিবার
রাতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি
এলাকা থেকে কল্যাণপুরের বাসায় ফেরার পথে
আসাদ গেটে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে
ঢুকে টাকা তোলেন। রাতে ফিরে বাসা ভাড়া
দেওয়ার কথা ছিল। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে
বুথ থেকে বের হয়ে টাকা মানিব্যাগে ঢুকাতেই
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি থেকে
একজন এসে বললেন, 'ওই চল, স্যার তোর সঙ্গে
কথা বলবে।' সেখানে গেলে তারা রাব্বিকে
টেনে-হিচড়ে গাড়িতে তোলে। রাব্বি বলেন,
গাড়িতে তোলার পর মানিব্যাগ জোর করে বের
করে নেওয়া হয়। মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়
পুলিশের সদস্যরা। এরপর বলে, 'তোর ব্যাংকে কত
টাকা আছে। চল তোর অ্যাকাউন্ট চেক করা
হবে। টাকা না দিলে তোকে ইয়াবার সম্রাট
হিসেবে চালান করা হবে।' এসময় রাব্বি
পুলিশকে নিজের পরিচয় দেন। এরপরও তাকে
এটিএম বুথে নিয়ে জোর করে অ্যাকাউন্ট চেক
করায় তারা। যখন দেখে খুবই সামান্য পরিমাণে
টাকা, তখন তারা রাব্বিকে ফের টেনে বের করে
গাড়িতে তোলে। রাব্বি আরো বলেন, এসআই
মাসুদকে অন্য এক পুলিশ সদস্য বলে, স্যার, এই
ব্যাটা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন।
কিন্তু তার অ্যাকাউন্টে তেমন কোনো টাকা
নেই। তখন ওই 'স্যার' বলেন, 'ওই ব্যাটা তুই
বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করিস, আর বলিস
তোর কাছে টাকা নেই। এমনিতেই টাকা নিয়ে
আসবি। ৫ লাখ টাকা দিলে তোকে ছেড়ে
দেওয়া হবে। না দিলে কাল সকালে তোর লাশ
বেড়িবাঁধে পাওয়া যাবে।' এসব কথার পর
রাব্বিকে গাড়িতে নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার
বিভিন্ন সড়কে ঘোরাঘুরি করে গাড়িটি।
রাব্বি বলেন, 'রাত আড়াইটা পর্যন্ত ওই পুলিশ
সদস্যরা আমাকে বন্দুকের বাট ও লাঁঠি দিয়ে
বেধড়ক মারধর করেন। কাপড় খুলেও তারা আমাকে
পেটায়, আর টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। এক
পর্যায়ে মার সইতে না পেরে ওই পুলিশ
কর্মকর্তাকে বলি, ঠিক আছে, আমাকে ফোন
করতে দেন। টাকার ব্যবস্থা করি। এই বলে
মোবাইল ফোন নিয়ে রেডিও ধ্বনির
সাংবাদিক জাহিদ হাসানকে ফোন করি। সে
আসতে চাইলে পুলিশ তাকে আসাদ গেট আড়ং
এলাকায় আসতে বলার জন্য বলে।' রাব্বি জানান,
ফোন কেটে দেওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা বলে,
'দেখ, তোকে নিয়ে যেতে যদি দুই-একজন আসে
তবে কথা বলবো। আর যদি বেশি লোক আসে,
তবে গাড়ি টান দিয়ে সোজা বেড়িবাঁধের
দিকে যাওয়া হবে।'