somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাহিদ রুবেল
আমি জাহিদুল ইসলাম রুবেল,আমার জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলায়,বই পড়তে খুব ভালবাসি,খুব গান পাগল মানুষ আমি,আমার লিখা কপি করা কিংবা আমার অনুমিত ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে,

ভুলের মাশুল -হাওড়া এক্সপ্রেস

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেল বেলা তড়িঘড়ি করে একটা স্কুটার নিয়ে ভেলোরের কাটপাট্টি রেল স্টেশন চলে এলাম,সাথে ছিলো এখানে এসে পরিচয় হওয়া এক ছোট ভাই নাম প্রিন্স,আমি যাবো চেন্নাই এয়ারপোর্ট আবার রাতে ফিরে আসবো,প্রিন্স যাবে কলকাতা,প্রিন্স বলল এই রুটে এর আগেও জার্নি করেছে,সে সুবাদে ও বলল ভাই আপনি আমার সাথে একই ট্রেনে উঠে পড়েন টিকেট কাটা লাগবেনা,আমি আপনাকে চেন্নাই নামিয়ে দিবো,এর মাঝে ট্রেনও চলে আসলো,হাওড়া এক্সপ্রেস। সময় খুব কম থাকাতে আমিও আগপাছ না ভেবে হুট করে উঠে পড়লাম, উঠে ওর সাথে বসে থাকলাম,আমি ওর কথার উপর নিশ্চিত ছিলাম তাই টেনশন ছাড়া বসে থাকলাম,ট্রেনে সি এম সি তে পরিচয় হওয়া রিফাতকেও পেলাম,এর মাঝে ট্রেন ছেড়ে দিলো,স্পীড ও বাড়ছে।মনে মনে একটা রোমান্স অনুভাব করতে থাকলাম এই প্রথম ইন্ডিয়ান ট্রেনে চড়া,কিন্তু এর চেয়ে বড় ভয়ংকর রোমান্স যে আমার আমার জন্য অপেক্ষা করছে তা টের পেলাম ট্রেনের টি টি ই মহোদয়ের কথায়,তিনি আমার কাছে টিকেট চাইলেন,আমি হিন্দি ও ইংরেজী মিক্সিং করে বললাম আমিতো বেশিদূর যাবোনা, চেন্নাইতে নেমে যাবো তাই টিকেট কাটিনি,প্রিন্সকে দেখিয়ে বললাম ও কলকাতা যাবে ওর সাথে উঠেছি।টিটি মনে হয় আকাশ থেকে জমিনে পড়লেন,ভয়ংকর মূর্তি ধারন করে বললেন টিকেট না নিয়ে আমি ট্রেনের আইন লংগন করছি তার চেয়ে বড় কথা এই ট্রেন চেন্নাই যাবেনা,চেন্নাই থেকে ছেড়ে এসেছে, সরাসরি কলকাতা যাবে।এ কথা শোনার পর আমি দিশেহার হয়ে গেলাম, প্রিন্সকে বকাঝকা করতে লাগলাম,ও নিজেও নার্ভাস, কি করবো বুঝতে পারছিনা, রিফাত ও আমাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসলো,এদিকে টিটি মশায় আমাকে টানাটানি করে একপাশে নিয়ে বললেন কলকাতার টিকেট কাটার জন্য,হায় হায় বলে কি আমি কেনো কলকাতা যাবো,সেতো উনত্রিশ ঘন্টার পথ,।বহুকষ্টে ওনাকে ম্যানেজ করলাম,সাথে কিছু দানাপানি, টিটির ঝামেলা চুকিয়ে এবার টেনশন নামবো কিভাবে।অনেককে জিজ্ঞাস করে জানতে পারলাম গন্টা দুয়েক পর একটা ক্রসিংয়ের সময় ট্রেন অনেক স্লো হবে সাহস করে নামতে পারলে আশে পাশের বাস স্টপ থেকে ব্যাক করতে পারবো,মাঝ দরিয়ায় কুল পাওয়ার মত কিছুটা ভরসা পেলাম,অবশেষে এসে গেলো সেই ক্রসিং,ট্রেন অনেক স্লো,এরপর একেবারে থেমেই গেলো,ঝটপট প্রিন্সের কাছে বিদায় নিয়ে নেমে পড়লাম,ছোট একটা স্টেশন,একপাশে পাহাড়ে ঘেরা অন্যপাশে কাটাবনের জংগল, সামনে গিয়ে একজন তামিল লোক পেলাম, হিন্দি ভাষায় তাকে আমার সমস্যাটা খুলে বললাম,ও আমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিল কাটা বনের ভেতর দিয়ে দেড় কলোমিটার পায়ে হেটে যাওয়ার পর বাসের রাস্তা মিলবে,সন্ধাটা ঘনিয়ে আসছে, তারমাঝে সম্পূর্ণ অপরিচিত যায়গা,কাটাবনের পথে বেয়ে হাটতে শুরু করলাম, রাস্তায় কোন জনমানব নেই,একেবারেই শান্ত নিরিবিলি পথ,কিছুটা গিয়ে আবার স্টেশনে ফিরে এলাম,আবার লোকটাকে জিজ্ঞাস করলাম মেইন রোডে যাওয়ার অন্য কোন পথ আছে কিনা,সে বলল নেই,এ পথ ধরেই যেতে হবে,এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে,কোন উপায় না দেখে আবার কাটাবনে মাঝ দিয়ে হাটতে শুরু করলাম,মাঝে মাঝে কিছু পুরোনো মন্দির দেখতে পেলাম, গা ছমছম করতে লাগলো, নিজেকে অনেক অসহায় মনে হলো,খুব জোরে হাটতে লাগলাম,বিশ থেকে পচিশ মিনিট হাটার পর মেইন রোড চোখে পড়লো,একেবারে রোডে ধারে চলে এলাম, খুব ঘেমে গেছি,রাস্তায় সাহায্যের জন্য কাউকে দেখছিনা,দূর পাল্লার বাস গুলো ও আমার সিগনাল উপেক্ষা করে চলে যাচ্ছে,পাশেই খুব বড় একটা মন্দির নজরে পড়লো,কাছে গিয়ে ভেতরে কাউকে দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু পেলামনা,এখন পুরোপুরি রাত, কি করবো বুঝতে পারছিলামনা,নিজেকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম,ঠিক ঐ মূহুর্তে একটা স্কুটার আসতে দেখলাম, সিগনাল দিতেই দাঁড়িয়ে পড়লো, বললাম বাসস্টাপ যাবো,ড্রাইবার মাথা ঝাকিয়ে রাজী হলো, লাপ দিয়ে স্কুটারে উঠে পড়লাম,পাচ মিনিটের মাথায় বাস স্টপে এসে পড়লাম,ড্রাইবার আমাকে আমার গন্তব্যে যাওয়ার গাড়ির নাম্বার বলে দিলেন,রাস্তার পাশে অপেক্ষা করতে লাগলাম,পাশেই চায়ের দোকান, একটা চা ও কিছু বিস্কিট নিলাম,তামিল নাড়ুর এরকম অপরিচিত একটা যায়গায় দাঁড়িয়ে চা বিস্কিট খাবো হয়তো কখনো ভাবিনি,এর মাঝে গাড়ি চলে এসেছে, গাড়িতে উঠে পড়লাম,হেডলাইটের আলোয় প্রসস্ত রাস্তায় তাকিয়ে দুচোখ চেপে জল আসলো, পেচনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভুলে যেতে চেষ্টা করলাম,কিন্তু পারলাম না,অপরিচ জংগুলে স্টেশন, কাটাবনের মাঝ দিয়ে পুরোনো মন্দির ঘেসা রাস্তা,মেইন রোডে অসহায় হয়ে গাড়ি থামানোর আপ্রান চেষ্টা বারবার মনে পড়তে লাগলো, গাড়ি চলতে শুরু করলো,চারপাশ দেখতে লাগলাম,জীবনে হয়ত কখোনো এখানে ফিরে আসবোনা,বিদায় পুতালাপাত্তু বাসস্টপ,বিদায় পুতালাপাত্তু রেল স্টেশন,
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×