somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফকনারের মিসিসিপি বিলিভ ইট

০২ রা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নন্দনতাত্ত্বিকতার প্রয়াস যার লেখনীতে অতুলনীয় তিনি কে? উইলিয়াম ফকনার। আমেরিকান সাহিত্যজগতে যাদের সামান্যতম বিচরণ আছে, তাদের কাছে ফকনার পরিচিত জন। আধুনিক আমেরিকান সাহিত্যের অগ্রগণ্য এই লেখক স্নায়ু যুদ্ধের প্রথমদিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তার পথ ধরে হেঁটে এগিয়েছেন টনি মরিসন। যাকে ফকনারের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে কেউ কেউ এমনটিও বলেন যে, মরিসন কি ফকনারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে গেছেন? মরিসন আরেক আমেরিকান ঔপন্যাসিক, যিনি ফকনারের ব্যক্তিবাদের ধারণা এবং অভিজাত নন্দনতাত্ত্বিক আচারপ্রিয়তার প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার লেখার কেন্দ্রবিন্দু ব্যক্তির মুক্তি ও সুন্দর আগামীর।

রিক লুজারের কথা শুনে মনে পড়ে গেল এসব কথা, ফকনারের কথা। সিলোর প্রেসিডেন্ট রিক বলছেন ফকনারকে নিয়ে তাদের গর্বের কথা। মিসিসিপির কথা। মিসিসিপিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে একটি প্রচার কাজ হাতে নিয়েছে সিলো নামের প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রচারের নাম-মিসিসিপি, বিলিভ ইট ক্যাম্পেইন।

দক্ষিণের এই রাজ্যকে সারাবিশ্বের কাছে তুলে ধরতে নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। প্রচারেই প্রসার, তাই মিসিসিপির প্রচারের মাধ্যমে পর্যটক আকর্ষণ এই প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন অর্থনীতিতে শুভ যোগ করবে।

এই রাজ্যকে তুলে ধরতে পণ্যের মত প্রচারের কাজ দেখে অবাকই হলাম। ধনী দেশের অঙ্গরাজ্য হয়েও তারা থেমে থাকেনি। এজন্য ফকনার থেকে শুরু করে বিখ্যাতদের নামও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বাড়তি কিছু নয়, যা আছে সে কথাই বলা হচ্ছে। আর সামান্য ঘুরে দেখার পর এটাই মনে হয়েছে যে মিসিসিপি পর্যটকদের ভাল লাগবেই। আমার ভাল লেগেছে। ফকনার ও প্রকৃতির টানে কি না জানি না। তবে যারা প্রকৃতি প্রেমিক, নিরিবিলি মাছ শিকার করতে পছন্দ করে, কিংবা নির্জনে কোন হোটেল কক্ষে বসে ভাবনার জগতে প্রবেশ করতে যাদের ভাল লাগে তাদের জন্য উত্তম জায়গা মিসিসিপি।

নৌকায় দলবেঁধে নদীতে ঘোরা কিংবা জুয়া খেলতে খেলতে রাত পার করে দিতেও অনেকে আসেন এখানে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রোগ্রামে গিয়ে যে কয়টি রাজ্য ঘুরেছি তারমধ্যে মিসিসিপি অন্যতম। জ্যাকসন এভার ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামতেই দেখি চোখ ধাঁধানো সবুজ। রাস্তাঘাট সুশৃঙ্খল।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানে রয়েছে কৃষি, শিল্প-কারখানা। আমেরিকা ক্যাটফিস উৎপাদনের তালিকায় মিসিসিপির অবস্থান এক নম্বরে। এর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে মিসিসিপি ডেল্টা নামে একটি এলাকা আছে। যেখানে ক্যাটফিস, তুলা, সয়াবিনের চাষ হয়। ৪৭ হাজার ৭১৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে রয়েছে পাহাড়, উপত্যকা, বন, প্রেইরী, ক্রিকস, নদী, লেকসহ কৃষিজমি।

ভ্রমণ পিয়াসু হিসাবে যাই দেখছি ভাল লাগছে। এখানে ঐতিহাসিক ঘটনার নিদর্শনও আছে। মিসিসিপি নদীর তীরে অবস্থিত ভিকসবার্গ। এই নগরীতে ১৮৬২ সালে গৃহযুদ্ধ হয়েছিল। দেখলাম তখনকার ব্যবহৃত কিছু কামান রাখা আছে। ছোট্ট একটি মিউজিয়ামও আছে। এখানে ১৮ মিনিটের একটি ছবি দেখানো হয় অভ্যাগতদের।

ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস প্রোগ্রামে আমেরিকা আসার পর বলা হয়েছে দক্ষিণের চিত্র একটু ভিন্ন। এখানকার মানুষের উচ্চারণও ভিন্ন। যদিও আমার কাছে ভালই লেগেছে। তবে এখানে এসে আলমগীর ভাইকে পেয়ে যাব একটা ভাবিনি। আমাদের টীমের অন্যরাতো বলেই ফেলল ইউ আর লাকী। মানে এই রাজ্যেও তোমাদের লোক আছে!

জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটি সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন। ইউনিভার্সিটির এক প্রোগ্রামে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপরতো মিসিসিপি ঘুরে দেখানোর দায়িত্ব নিতে চাইলেন। বললাম, ২২ এপ্রিল (০৭) ফ্রি ডে। ঐদিন একসঙ্গে ঘুরবো। আলমগীর ভাই এগারটার দিকে হোটেলে এলেন। বেরুলাম লং ড্রাইভে।

বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখতে এগুচ্ছি। এখানে ততটা ঠান্ডা নেই এখন। ওয়াশিংটন কিংবা নিউইয়র্কে স্প্রিং-এ যতো ঠান্ডা, এখানে ঠিক তার উল্টোটাই মনে হল। গাড়ি চালাতে চালাতে আশপাশের বর্ণনা দিচ্ছেন তিনি। মিসিসিপি যে একটি শান্ত, নিরিবিলি এবং সুন্দর শহর তার চাক্ষুস প্রমাণ দেখাতে চান তিনি। এরই মধ্যে কথা হচ্ছে নানান বিষয়ে। যাপিত জীবনের নানা দিক নিয়ে। এখানে যেভাবে জীবন-যাপন চলছে, বাংলাদেশে সেটা সম্ভব নয়। এখানেও অপরাধ কাজ সংঘটিত হয়। কিন্তু সেটার ধরনও ভিন্ন। বাংলাদেশে রাত বিরাতে মানুষ চলাফেরা করতে ভয় পায়। এখানে এই স্বাধীনতা আছে। মাস শেষে উপার্জিত টাকা দিয়ে দিব্যি সংসার খরচ মেটানো যায়। কিন্তু ঢাকায় কি তা সম্ভব?

আলমগীর ভাই এখানে দুটো গাড়ি চালাচ্ছেন। ছেলেদের ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। গাড়ির চাকা ঘুরছে বনের ভেতর দিয়ে। বনের ভেতরে একটি চার্চে আমরা গেলাম। দেখলাম চার্চ থেকে একজোড়া তরুণ-তরুণী বেরিয়ে আসছে। খুবই নিরিবিলি। পর্যটকরা এখানে আসে। অবসরে স্থানীয়রাও আসে। নিভৃতে কিছু সময় কাটানোর জন্য।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×