somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারসিক ধর্ম এবং মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ।

১৭ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[শিল্পীর চোখে প্রফেট জরুথুষ্ট্র এর ছবি]


১. পারসিক ধর্মঃ

পারসিক ধর্মের প্রবর্তকের নাম মহাপুরুষ জোরথুষ্ট্র । তার আর্বিভাবকাল নিয়ে মতবিরোধ আছে । অনুমিত হয় যে, খৃষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দ হতে ৫০০ অব্দের মধ্যে কোন এক সময়ে পারস্য অন্চলে তার আর্বিভাব ঘটে । অনেকে মনে করেন যে, তার সময়কাল খৃষ্টপূর্ব ৬৬০ অব্দ থেকে ৫৮০ অব্দ পর্যন্ত ছিলো । কেউ কেউ বলেন, তিনি ইরান বা মেডিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।


জরাথুষ্ট্রীয় ধর্মে ঈশ্বরকে ডাকা হয় "আহুরা মাযদা " নামে । 'আহুরা ' অর্থ প্রভু এবং 'মাযদা' অর্থ প্রজ্ঞাময় । অতএব, "আহুরা মাযদা" অর্থ প্রজ্ঞাময় মহাপ্রভু । অথবা প্রজ্ঞাময় ঈশ্বর । এই ধর্ম বিশ্বাস মতে "আহুরা মাযদা" কঠোরভাবে এক ঈশ্বর বা এক প্রভুর সমার্থক ।


তিনি শ্রমের মর্যাদা দান করতেন । তার অনুসারীদের পার্থিব সকল কাজকর্ম করতে বলতেন । শস্য, ফুল, ফল উৎপাদনে তিনি উৎসাহ দিতেন । কাজকর্মকে তিনি দু-ভাগে বিভক্ত করেন । (১) সৎকর্ম (২) অসৎ কর্ম । মহান সৃষ্টিকর্তাকে তিনি নিরাকার বলেন । জোরথুষ্ট্র মহান সৃষ্টিকর্তাকে "আলোক শক্তি" রূপে অভিহিত করেন । উল্লেখ্য যে, আলোকে উৎস অগ্নি । এ কারণে লক্ষ্য করা যায় যে, পরবর্তীকালে তার অনুসারীগণ ক্রমে "অগ্নি উপাসক" হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ।

তিনি সৃষ্টিকর্তাকে "আহুরা মাজদা" নামে অভিহিত করেন আর শয়তান কে বলেন "আহরিমান" । তিনি বলেন যে, মানুষের মাঝে ভালো-মন্দ দুই-ইর প্রভাব আছে । এ কারণে তিনি তার অনুসারীদের সুস্হ মনে সৎ চিন্তা করে কাজ কর্ম করতে পরামর্শ দিতেন । তিনি বলেন যে, মৃত্যুর পর মানবাত্নাকে "চিনভাত সেতু" অতিক্রম করতে হবে । পৃথিবীতে জীবিতকালে মানুষ সৎ কর্ম করলে ঐ সেতু প্রশস্তর হবে এবং সহজেই অতিক্রম করে মানবাত্না শান্তির ধামে পৌছতে পারবে । অপরপক্ষে জীবিতকালে মানুষ অসৎ কাজকর্ম করলে এ সেতু সংকীর্ণ হয়ে পড়বে । ফলে মৃত্যুর পরে পাপাত্না সেতু অতিক্রমকালে তার পতন ঘটবে এবং অশান্তি এবং কষ্টের মধ্যে নিপতিত হবে । Regarding angels, Zoroaster said "Angels are countless." (Dasatir,p.6.) । ফেরেশ্তাদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ওরা অগণিত ।

প্রফেট জোরথুষ্ট্র তার মতবাদে কোন ধর্মবিধান, আচার আনুষ্ঠানাদি, রীতিনীতি দান করেন নি । তিনি হিন্দু ধর্মের প্রচলিত উপাসনা, তপস্যা, অনশন, যাগজজ্ঞ, পশবলি ইত্যাদি পরিহার করতে বলেন ।

পার্সীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্হ দাসাতির এবং আভেস্তা । তিনি মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন । তিনি তার অনুসারীদের সৎকর্ম, সৎচিন্তা ও সত্যবাদিতা অবলম্বণ করতে বলেন ।



পার্সীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্হ দাসাতির এবং আভেস্তা । প্রধান প্রধান শ্লোকগুলোকে "গাঁথা" বলে । এ শ্লোকগুলো ইহুদী ধর্মের ধর্মগ্রন্হ "পবিত্র দিশাম" এর প্রায় অনুরূপ । এ কারণে অনেকে মনে করেন যে, প্রফেট জোরথুষ্ট্র ইহুদী মতবাদ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন । যদিও এটা সঠিক নয় ইসলামকেও একই দোষে দুষ্ট করা হয় । প্রকৃত সত্য সব সময়-ই অনুরূপ তা যেখানে-ই পাওয়া যায় না কেন ।

পারস্য সম্রাটগণ এ মতবাদ গ্রহণ করেন, ফলে পারস্য অন্চলে এর বহু প্রসার ঘটে । ইসলাম ধর্মের আর্বিভাবের ফলে আরব, ইরাক, ইরান অন্চল থেকে পার্সি ধর্ম তিরোহিত হয় । বর্তমানে শুধু ভারতের বোম্বাই অন্চলে কিছু পার্সি ধর্মাবলম্বীদের দেখা যায় ।

২. পারসিক ধর্মে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণীঃ

পার্সী ধর্মগ্রন্হ দুটিতেও ইসলামে মহানবী (সাঃ) এর আগমণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে । যেমনঃ

'আমি ঘোষণা করিতেছি, হে স্পিতাস জরথুষ্ট্র ! পবিত্র আহমদ নিশ্চই আসিবেন, যাহার নিকট হইতে তোমরা সৎচিন্তা, সৎবাক্য, সৎকর্ম এবং বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করিবে ।"
[জিন্দ আভেস্তা; ১ম ম্যাক্সমূলার কর্তৃক অনূদিত, পৃঃ-২৬০]

উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণীতে 'আহমদ' নাম উল্লেখিত হয়েছে । এ 'আহমদ' যে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত । কেননা, মোহাম্মদ (সাঃ) এর অপর নাম-ই আহমদ, যা তার মাতা গর্ভের সময় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রেখেছিলেন ।

পারসিকদের অপর ধর্মগ্রন্হ 'দাসাতির' এর ভবিষ্যদ্বাণী এরূপঃ



'যখন পার্সীরা নিজেদের ধর্ম ভূলে গিয়ে নৈতিক অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হবে, তখন আরব দেশে এক মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিবেন । যাহার শিষ্যেরা পারস্যদেশ এবং দুর্ধর্ষ পারসিক জাতিকে পরাজিত করিবে । নিজেদের মন্দিরে অগ্নিপূজা না করিয়া তাহারা ইব্রাহীমের কাবা ঘরের দিকে মুখ করিয়া প্রার্থনা করিবে । সে সময় কাবা প্রতিমামূক্ত করা হইবে । সেই মহাপুরুষের শিষ্যরা বিশ্ববাসীর পক্ষে আর্শীবাদস্বরূপ হইবে । তাহারা পারস্য, মাদায়েন, তুষ, বলখ প্রভৃতি পারস্যবাসীদের যাবতীয় পবিত্র স্হান অধিকার করিবে । তাহাদের পয়গম্বর একজন বাগ্মী পুরুষ হইবেন এবং তিনি অনেক অলৈাকিক কথা (ভবিষ্যদ্বাণী) বলিবেন ।' [বিশ্বধর্মগ্রন্হসমূহে মোহাম্মদ; আবদুল হক বিদ্যাতীর্থ; পৃঃ-৪৭]


It is mentioned in Bundahish chapter 30 verses 6 to 27 that Soeshyant will be the last Prophet implying that Muhammad (pbuh) will be the last Prophet.

৩.
মহানবী (সাঃ) তার জীবিতকালে যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করে গিয়েছিলেন , তার আলোকে বলা যায় মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পরেও মুসলিমদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে । ফলে পারস্য ও রোমের প্রায় সব স্হানগুলোই মুসলমানদের করতলগত হয় খোলাফায়ে রাশীদীনের আমলে অর্থাৎ মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পর । খলিফা হযরত আবু-বকর (রাঃ) থেকে হযরত আলী (রাঃ) পর্যন্ত সময়ে এ স্হানগুলো বিজিত হয়েছিল । মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার কথায় সকল এ বিজয়ের-ই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন-
"কিসরা মারা গেলে আর কিসরা হবে না , তেমনি কায়সার ধ্বংস হলে আর কায়সার হবেনা । ঐ সত্তার শপথ! যার (কুদরতী) হাতে আমার জীবন, তোমরা কিসরা ও কায়সার উভয়ের কোষাগার দখল করিবে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করিয়া দিবে ।" [সহীহ মুসলিম]

নবী করীম হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে পারস্যের কিসরা তথা দ্বিতীয় খসরু পারভেজকে পত্র দিয়েছিলেন । পারভেজ মহানবীর পবিত্র পত্রকে টুকরা টুকরা করে ছিড়ে ফেলে দূতকে অপমান করে এক টুকরি মাটি মাথায় দিয়ে বিদায় করেছিলেন । দূত সে মাটিসহ মহানবী (সাঃ) এর দরবারে ফিরে এলে সমস্ত বিবরণ শুনে তিনি নিম্নোক্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেনঃ

১. " উদ্ধত পারস্য সম্রাট কর্তৃক আমার পত্র ছিন্ন করার পরিণতিতে আল্লাহ পাক তার সম্রাজ্য ও শক্তির উৎস চিরকালের জন্য ছিন্নবিন্ন করে দিবেন । [সহীহ বুখারী]

২. ওরা তো নিজের হাতেই নিজেদের দেশের মাটি তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছে । সে দিন আর বেশি দুরে নয়, যে দিন সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্য তোমাদের পদতলে চলে আসবে । (তাবারী)

বস্তুত হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) উপযুক্তভাবে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছেন, যা পরবর্তী সময়গুলোতে যথাযথভাবে সফল হয়েছে এবং হচ্ছে । ফলে পার্সীদের ধর্মগ্রন্হ 'দাসতীর' এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সফল করে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আর্বিভূত হয়েছিলেন ।


আরো জানতে দেখূন-
১. পারসিয়ান ধর্ম এর বর্ণনা সুন্দভাবে দেয়া আছে এখানে

২. পার্সীদের ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী

৩..একটি জোরথুষ্ট্র পরিবারের কথা

সুত্রঃ

১. বেদ - পুরাণে আল্লাহ ও হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) - ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, ইসলামী সাহিত্য প্রকাশনালয়, ৪৫, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০.

২. মহানবী (সাঃ) এর হাদিস সমূহ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৫৫
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×