somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতটা আসলে কী?

০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনামে যে প্রশ্নটি উল্লেখ করেছি তার উত্তর দেওয়ার সার্বিক চেষ্টা করব ৷ হয়তো আমার চিন্তাধারার সাথে আপনার নাও মিলতে পারে ৷ এক্ষেত্রে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না ৷

আমাদের দেশের কিছু মুক্তমনা,কিছু বললে ভুল হবে,৭০ ভাগ মুক্তমনা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে আস্তিকতাকে হেয় করে থাকেন ৷ বাঁকী ত্রিশভাগ মনে করেন,কারও বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া মুক্তচিন্তা নয় ৷ বাকস্বাধীনতারও সীমা রেখা আছে ৷

প্রথম, ৭০ ভাগ-এর মধ্যে যারা প্রত্যক্ষভাবে ধর্মকে আঘাত হানে,এদের নিয়ে আমার ভয় হয় ৷ যদি এরা আস্তিক হতো,নিঃসন্দেহে এদের কর্মকান্ডে আইএসও লজ্জা পেত ৷ আর যারা পরোক্ষভাবে হেয় করেন,তারা আমার দৃষ্টিতে অন্যায় করছেন না,আবার ন্যায়ও করছেন না ৷ আমি এখানে ঐ ত্রিশভাগ নিয়ে আলোচনা করব না যারা মনে করেন বাকস্বাধীনতার সীমারেখা আছে ৷ আমি তাদেরও আলোচনা করব না যারা প্রত্যক্ষভাবে ধর্মকে হেয় করে ৷ কারণ এরা আমার আলোচনার বিষয়বস্তু নয় ৷ আমার আলোচনার বিষয় তারা যারা ধর্মকে পরোক্ষভাবে হেয় করেন ৷ আরেকটা কথা,আমি শতকরা যে হিসাব করেছি সেটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে করেছি ৷ কারও কাছে কম বা বেশী মনে হতে পারে এবং কারও কাছে সম্পূর্ণ ভুল মনে হতে পারে ৷

পরোক্ষভাবে যারা ধর্মকে হেয় করেন তারা মনে করেন যে,তাদের দ্বারা কারও অনুভূতিতে আঘাত হচ্ছেনা ৷ এটা পুরাতন সমাজ ব্যবস্থাকে হটিয়ে নতুন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের উদ্দেশ্যে মানুষকে সচেতন করা মাত্র ৷ পূর্বে যারা নতুন সমাজ ব্যবস্থা বা নতুন ধর্ম প্রনয়ণ করেছেন তারা সবাই এই পন্থা অবলম্বন করেছেন ৷ এমনকি আমি অনেককেই বলতে শুনেছি যে,মুহম্মদ (স) যখন নতুন ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে বোঝাচ্ছিলেন তখন তিনিওতো পূর্বের ধর্মকে ভুল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ৷ রাজা রামমোহন রায় এইভাবেই সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করেছিলেন ৷

এবার মূল আলোচনায় আসা যাক ৷ ধর্ম মানুষকে দুইভাবে প্রভাবিত করে ৷ আধ্মাতীক এবং বাস্তবিক ৷ আধ্মাতিক বলতে এখানে বুঝাতে চেয়েছি বিশ্বাস এবং বাস্তবিক বলতে বুঝাতে চেয়েছি বাস্তব জীবনের কর্মকান্ড ৷ একজন মুক্তমনা কখনই কারো বিশ্বাসকে হেয় করার অধিকার রাখে না ৷ তবে সেই বিশ্বাস থেকে যে সকল কর্মকান্ড সংঘটিত হয় তার সমালোচনা করার অধিকার রাখে ৷ আর এই অধিকার আছে বলেই তারা মুক্তমনা ৷ আপনি যদি বলেন রাসুল খারাপ বা ভন্ড অথবা শ্রী কৃষ্ণ খারাপ বা ভন্ড,তাহলে সেটা অবশ্যই অন্যায় ৷ নামাজ পড়াকে ভুল অথবা পূজা করাকে ভুল বলাও অন্যায় ৷ আপনি বিশ্বাস নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার রাখেন ৷ আপনার অধিকার আছে বাস্তব জীবনের কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা করার ৷ আপনার মনে হতে পারে মুসলমানরা কোরবানীর নামে পশু হত্যা করছে ৷ সমালোচনা করুন ৷ আপনার মনে হতে পারে হিন্দুরা পাঠাবলির নামে পশু হত্যা করছে ৷ সমালোচনা করুন ৷ যুক্তি দিয়ে বুঝান পশু হত্যা অন্যায় ৷ যদি মানুষের বাস্তবিক কর্মকান্ডকে ভুল বা অন্যায় প্রমাণ করতে পারেন তাহলে মানুষের বিশ্বাসের পরিবর্তন অটোমেটিক হবে ৷ আর এভাবেই নতুন ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থা চালু হয়ে বিস্তার লাভ করে ৷ কিন্তু আপনারা মানুষের বাস্তবিক কর্মকান্ড নিয়ে যতটুকু না সমালোচনা করেন তারচেয়েও বেশী সমালোচনা করেন তাদের বিশ্বাস নিয়ে ৷ আর এটাকেই বলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা ৷ নাস্তিকতার সাথেতো কোনও ধর্মের সম্পর্ক থাকতে পারে না ৷ সম্পর্ক থাকবে বাস্তবতার সাথে ৷ সমালোচনাও হবে বাস্তব কর্মকান্ড নিয়ে ৷ ধর্মীয় কর্মকান্ড বা ধর্ম নিয়ে নয় ৷ তবে ধর্মীয় কর্মকান্ড যদি বাস্তবতায় প্রভাব ফেলে তাহলে সমালোচনা করতে পারবেন ৷ উদাহরণ স্বরুপ কোরবানীর কথা বলা যেতে পারে ৷

মুক্তমনা ব্লগের একজন লেখককে দেখান যিনি শুধু বাস্তব কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা করেছেন ৷ ধর্মকারী ব্লগ সম্পর্কে লিখতেও ঘৃণা করছে ৷ ধর্মকারী ব্লগের লেখকরা নিঃসন্দেহে মানবতার কলংক ৷ তারা কলংকিত করেছে মুক্তচিন্তাকে ৷ ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো একজন আস্তিকের কাছে কতোটা মূল্যবান সেটা নাস্তিকদের বোঝার কথা নয় ৷ ধর্মীয় চরমপন্থীতা সাধারণ বিষয় ৷ কারণ এক্ষেত্রে ধর্মব্যবসায়ীদের হাত আছে ৷ নাস্তিকতায় চরমপন্থীতা আমার কাছে অস্বাভাবীক মনে হয় ৷ তবে চরনপন্থী নাস্তিকদের ক্ষেত্রে কারও হাত আছে কিনা সেই প্রশ্ন মাঝেই মাঝেই মনের মধ্যে উঁকি দেয় ৷

আমি লেখক হিসেবে যথেষ্ট বাজে মানের ৷ মনের কথা বা অনুভূতি লিখে পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করতে পারি না ৷ আমার দৃষ্টিতে কোন বিষয় সমালোচনা করা যাবে আর কোন বিষয় যাবে না সেটা উল্লেখ করেছি ৷ একটু কষ্ট করে বুঝে নিবেন ৷ কারণ আমি পরিষ্কার ভাবে আপনাদের বুঝাতে পারিনি ৷ এটা আমার অপারগতা ৷

পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই,মুসলমান হই বা হিন্দু হই অথবা অন্য কোনও ধর্মেরই হই কিংবা আস্তিক বা নাস্তিক যাহাই হইনা কেন,পরস্পরের প্রতি কাঁদা ছুড়াছুড়ি বন্ধ করে আমরা কী বাংলাদেশী হতে পারি না? আমাদের হিংসা বিদ্বেষের কারণে দেশটা রসাতলে যাচ্ছে দেখে খুব খারাপ লাগে ৷ জঙ্গিবাদ বেড়েছে,সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়েছে,ইন্ডিয়াতো অনেক আগেই এদেশ গ্রাস করেছে ৷ এবার আমেরিকাও আসতে চাইছে ৷ দেশের ভবিষ্যৎটা নিয়ে একবার ভাবুন ৷ একজন ব্লগারকে দেখলাম প্রতিবাদের নামে ইসলাম ও মুসলমানকে যা ইচ্ছে তাই বলছেন ৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য নাকি মুসলমানরা দায়ী ৷ তার মানে আমিও দায়ী?তার প্রতি আমার অনুরোধ,দেশ থেকে সকল টুপি দাড়িওয়ালা এবং সকল মুসলমানদের আফগানিস্তান পাঠিয়ে দিন ৷ তাইলে দেশে শান্তি আসবে আর আপনি শান্তিতে থাকবেন ৷ গতরাতে ফেসবুকে একজন মেসেজ দিয়ে বলতেছে,"হিন্দু এবং নাস্তিকদের জন্য দেশের এই অবস্থা ৷ ইসলাম ধ্বংস করার জন্য এবং বিদেশীদের হাতে দেশ তুলে দেওয়ার জন্য এরা উঠে পরে লাগছে ৷ এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে"৷আমি ফিরতি মেসেজ দিয়ে বললাম,"তোরে সামনে পাইলে থাপড়ায়া জিহাদ শিখিয়ে দিতাম ৷ ইসলাম রক্ষা করার দায়ীত্ব তোর নাকি আল্লাহর" ? ফলাফল, ফেসবুকে আমাকে ইহুদীদের দালাল বানিয়ে প্রচার প্রচারণা চলছে ৷ কালকে একজন আমার লেখাতেও দালালের বাচ্ছা বলে আমাকে সম্বোধন করে মন্তব্য করেছে ৷ আমার এতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়না ৷কষ্ট তখনই হয়,যখন দেশটাকে নিয়ে ভাবি ৷
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:১২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×