somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব মন্দা পরবর্তী মেরুকরন এবং BRIC

১০ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহু বছর ধরেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তা সে অর্থনীতি হোক কিংবা অন্য কোন ইস্যুতে হোক একটা প্রথা প্রচলিত আছে আমেরিকার নীতিনির্ধারকেরা সেখানে বড় ভাইয়ের ভূমিকা পালন করবে বাকি দেশগুলি খালি তা শুনে যাবে এবং সম্মেলন শেষে আমেরিকান নীতিনির্ধারক গণ প্রত্যেকটা দেশকে পৃথক্‌ ভাবে সময় দিবে ব্যাপরটা অনেকটাই রাজা তার প্রজাগণকে তাদের দুঃখ দুর্দশা শুনার জন্য সময় দেওয়ার মতো । কিন্তু গত ডিসেম্বরে কোপেনহেগে হয়ে যাওয়া জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে গিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা নতুন করে উপলব্ধি করলেন আমেরিকার সেদিন আর নাই দিন বদলে গেছে ! সম্মেলনের শেষ দিকে এসে তিনি চিনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়া বাউয়ের সাথে পূর্বের প্রথা মতো দ্বিপাক্ষিক আলোচনার খায়েস প্রকাশ করলেও তার সে খায়েস আর পূরণ হয়নি তার বদলে তাকে চিন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের প্রতিনিধিদের মিলিত একটা গ্রুপের সাথে মিটিং এ বসতে হয় এসব দেশগুলির সরকারের দাবীর মুখে। চিন, ভারত, আফ্রিকা, ব্রাজিলের মতো দেশ যারা কিনা thrid world country নামে পশ্চিমা দেশগুলির কাছে করুনা পেতো এতোদিন তাদের হঠাৎ এধরনের স্বাধীনচেতা আচরণের কারণ জানতে হলে আমাদের BRIC(Brazil,Russia,India,China) নামে একটা নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে পরিচিত হতে হবে।



৮০-৯০ দশকে জার্মানির বার্লিন দেওয়াল ধসে যাওয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই বলা যায় সমাজতন্ত্র অর্থনীতিক ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্বে তার আবেদন হারায়। অনেকে বিশেষজ্ঞ এই বলেও আশংকা করছিলেন যে শীতল যুদ্ধ পরবর্তী এ সময়টাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো বিকল্প শক্তির অভাবে আমেরিকার প্রবর্তিত বিশ্ব ব্যাংক এবং আই এম এফ প্রণীত অর্থনীতিই অর্থাৎ মুক্ত বাজার অর্থনীতিই গরীব দেশগুলাকে গিলে খাবে তারা পরিণত হয়ে যাবে শিল্প উন্নত পশ্চিমা দেশগুলির করদ রাজ্য

এই সব বিশেষজ্ঞ এর ভবিষ্যৎবানী সেসময়ে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের অনেক লোকের ঘুম হারাম করলেও দেখা যাচ্ছে বিশ্বায়ন মুক্ত বাজার অর্থনীতির খেলা ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে খেলায় খালি গোল খাওয়া নয় বরং গোল দেওয়াও যায় যার আলামত চিন ভারত মালয়েশিয়ার মতো দেশ তা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে তাদের তাক লাগানো অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে।

যে ভারতের মুক্ত বাজার অর্থনীতি গ্রহণের পূর্বে বার্ষিক জিডিপি ছিল মাত্র ৩% যাকে অনেকে মজা করে বলত ‘Hindu Growth Rate’ বলে কারণ ভারতে হিন্দু জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার এবং জিডিপি সমান ছিল আজ ভারতের বার্ষিক জিডিপি হার ৮% উপরে এ বিশ্ব মন্দার ভিতরেও বিশ্বের ৫০০ বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানীর ৯৮ টি রিসার্চ কেন্দ্রের মধ্যে (R&D) মধ্যেও ৫৩ ভারতে তাদের গবেষণা কাজ পরিচালনা করে।

কমিউনিসট শাসিত চায়না মুক্ত বাজার অর্থনীতি গ্রহণ করার পর যে তেলেসমতি কাণ্ড করেছে যা দেখে পুঁজিবাদী জনক দেশগুলার অর্থনীতিবিদেরও মুখ হা হয়ে গেছে বলা যায় চিনের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২.৪ ট্রিলিয়ান (যা দিয়ে চিন চাইলে বিশ্বের বড় বড় বহুজাতিক কম্পানির ২/৩ ভাগ কিনে ফেলার ক্ষমতা রাখে!)। এছাড়া ১৯৯০ সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া যে গভীর অর্থনীতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল শূন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে যাত্রা করলেও আজ তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও বিশ্বায়নে অংশগ্রহণ করেও ভারত ,চিনে এবং রাশিয়ার মতো দেশ যে শুধু যে টিকেই আছে তা নয় বরং উন্নত ধনিক রাষ্ট্র বা OECD(Organization for Economic Co-operation and Development) যা অনেকের কাছে বড়লোকদের ক্লাব বলেও পরিচিত প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ারও সক্ষমতা রাখে যদি তারা মিলেমিশে কাজ করে সেই সাথে বর্তমানে প্রচলিত ঘুনে ধরা ( সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনীতিক মন্দা যা আমাদের এ ব্যবস্থার অন্ধকার দিকগুলি আমাদেরকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়েছে) পশ্চিমা প্রভাবিত বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন সাধন করতে পারবে এ ধরনের চিন্তা ভাবনা হতেই চিন, ভারত, রাশিয়া একটা অর্থনীতিক জোট গঠনে আগ্রহী হয় পরবর্তীতে এর দারিদ্রত দূরীকরণ এবং উন্নয়ন অভিমুখি কর্মসুচির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লাটিন আমেরিকার বড় দেশ ব্রাজিলও এ জোটে যোগ দেয় এবং BRIC নামে আত্মপ্রকাশ করে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকাও এতে অফিসিয়ালি যোগ দানে আগ্রহী হয়েছে।

BRIC ভুক্ত দেশগুলির তাদের বিশাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কারণে পশ্চিমা দেশগুলির বিশ্ব অর্থনীতিক মন্দার মোকাবেলা করতে গিয়ে যেভাবে বিশাল বাজেট ঘাটতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল সেরকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি বলা যায় বরং তারা বিশ্ব মন্দা পরবর্তী অবস্থায় আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের বিপরিতে প্রভাবশালী ঋণদাতা দেশ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সম্প্রতি BRIC আফ্রিকান দেশগুলিকে সহজ শর্তে ১০ বিলিয়ন ঋণ দিবে বলে ঘোষনা দিয়েছে।


BRIC এর সাফল্য নিয়ে যেমন অনেকে খুশি তেমনি জোটের ব্যর্থতা নিয়েও অনেকে সংশয় ব্যক্ত করেছেন বলা যায় কারণ BRIC দেশগুলির সবাই একই আদর্শ ধারণ করে না উদাহরণ ভারত বহুদলীয় গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করলেও চিনে একদলীয় শাসন বিদ্যমান যদিও চিন ও ভারতের মধ্যে অর্থনীতিক লেনদেন বর্তমান ৬০ বিলিয়নের উপরে দাঁড়িয়েছে তারপরেও তিববত, অরুনাচল নানা বিষয়ে তিক্ততার সম্পর্ক বিদ্যমান তেমনি জলবায়ু ইস্যু নিয়ে রাশিয়া ভারত চিনের অবস্থান বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এ সব ইস্যুর সঠিক সমাধানই BRIC এর ভবিষ্যৎ সাফল্য ব্যর্থতা নির্ধারণ করে দিবে বলা যায়

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত ভীষণভাবে মিডিল ইষ্টের শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেনস এবং ইউরোপ আমেরিকার পোষক রপ্তানীর উপর নির্ভরশীল। সময় এসেছে বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্ব মেরুকরনে BRIC ভুক্ত দেশ গুলার সাথে অর্থনীতিক সম্পর্ক জোরদার করা।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৭:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×