somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার হজ্বের দিনগুলি- ০৭ (হজ্ব ২০০৭)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মীনায় গমন

সকাল থেকেই এজেন্সীর লোকজন তোড়জোড় শুরু করলো তৈরী হবার জন্য। আমরা সবাই গোসল করে দু রাকাত নামাজ পড়ে এহরাম বাঁধলাম। ৯ টার দিকে বাসে উঠে বসে রইলাম। বাস ছাড়ার আর নাম নেই। এ আসে তো ও আসে না, আবার সবাইকে নিয়ে রওনা দেয়াও খুবই গরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক যে পায়ে হেঁটেও মীনা যাওয়া যায় কিন্তু গ্রুপে না গেলে মীনার লক্ষ লক্ষ তাঁবুর মধ্যে কোনটি আপনাদের তাঁবু এটা বের করা এক প্রকার অসম্ভবই বলা যায়। আর তাঁবু খুঁজে না পেলে স্রেফ রাস্তায় থাকতে হবে। মোবাইল আছে সাথে এই যা ভরসা।

বাস ছাড়ার পর দেখা দিলো আরেক বিপদ, বাসের ড্রাইভারটা হল মক্কায় নতুন। হজ্ব উজলক্ষে কিছু বাড়তি পয়সা কামাতে মিশর থেকে এখানে এসেছে। মীনার রাস্তা ঘাট সে কিছু চেনেনা। এদিকে আমাদের
এজেন্সীর লোকজন- যদিও আগে হজ্বে এসেছে তারাও পথঘাট কিছু চিনতে পারছেনা। শেষ বুদ্ধি করে ড্রাইভারকে বলা হলো আশে পাশের আরো অনেক গাড়ি মীনায় যাচ্ছে, তাদের পিছু নিয়ে আপনি চলেন। তো এই ভাবে বহুত ঠেলা ধাক্কা খেয়ে আমরা মীনায় পৌছলাম। একটা বড় ফ্লাই ওভার দেখলাম, ওটাকে বলা যেতে পারে মীনার কেন্দ্র।

এরপরের চ্যালেন্জ হলো নিজেদের তাঁবু খুঁজে বের করা। আগেই বলেছি মীনায় লক্ষাধিক তাঁবু রয়েছে- সবগুলোই স্থায়ী এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে নিজেদেরটা খুঁজে বের করা একটু সমযসাপেক্ষ্ ব্যাপারই বটে। মুয়াল্লিম অফিসে বেশ ক'বার ফোন করে করে আমরা প্রায় ১ ঘন্টা মীনা মুজদালিফায় ঘোরাঘুরি করে তাঁবু খুজে পেলাম। এই ফাঁকে একটা কথা বলে রাখি, দেশ থেকে একটা পকেট কোরআন শরীফ নিয়ে যেতে পারলে ভাল। অনেক সময় পথে বেশ লম্বা সময় কেটে যায়, তখন কোরআন পড়ে সময় কাটানো যেতে পারে।

মীনায় অবস্থান হচ্ছে হজ্বের প্রথম ধাপ। তারমানে আমাদের হজ্ব শুরু হয়ে গেল। প্রচুর ভীড় চারপাশে, তাঁবুর এরিয়ার মধ্যে আমরা সবাই ৭৮ নং মুয়াল্লিমের লোকজন (ইন্ডিয়ান-পাকি-বাংলাদেশী)। তাঁবুর বাইরে প্রচুর কালো আফ্রিকানদের দেখলাম। অনেকে রাস্তার পাশে বিভিন্ন খাবার জিনিস বিক্রী করছে। আসলে হজ্বে আসার আগে আমার ধারণা ছিল কালো আফ্রিকান মুসলমানদের সংখ্যা খুব বেশী নয় আর বেশী হলেও তারা খুব একটা ধার্মিক নয়। দুটো ধারণাই এখানে এসে মিথ্যা হয়ে গেল। আমাদের তাঁবু ছিল মুজদালিফায়, (মীনায় এখন সব হাজ্বীদের সংকুলান হয়না, তাই কিছু তাঁবু মুজদালিফায় স্থাপন করা হয়েছে) আশপাশের পুরোটা এলাকা জুড়ে কালোদের দাপট। মনে পড়ে, তাঁবুর খুব কাছেই বেশ উঁচু কয়েকটা পাহাড়।

মীনাতে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ হবে আপনার। হজ্বে আসার সময় দেশ থেকে যে টাকা পয়সা নিয়ে আসবেন, মীনা হচ্ছে সেটা খরচের একটা উপযুক্ত জায়গা। মক্কায় থাকার সময় এজেন্সীর পক্ষ থেকে দুপুরে আর রাতে খাওয়ানো হতো, কিন্তু এখানে রান্না নিষেধ বলে খাবার কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। যে কোন জিনিসের দাম মক্কার দোকানে যা দেখেছি তার চেয়ে ১/২ রিয়াল বেশী। চায়ের দাম ৩ রিয়াল, ১৮ টাকা করে ৫৪ টাকা। অবশ্য ততদিনে ৩ রিয়ালকে ৩ টাকাই মনে করতে শিখেছি। যখন ইচ্ছে হতো তখনি চা খেতাম।

মীনায় তাঁবু থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়, কমসে কম তাঁবুর কাছাকাছি থাকতে বলা হয়। কিন্তু আমরা ৪ জন পথম দিনই মীনার পথে বেরিয়ে পড়লাম। আমার সফরসংগীদের একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় না দিয়ে পারছিনা:

* তৌফিক- একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর মালিক, বয়স ৩৪
* আবু তাহের ভাই- জুট মিল কর্মকর্তা, বয়স ৫০
* মাওলানা আবু বকর- উয়ারী জামে মসজিদের প্রাক্তন ইমাম- বয়স ৬০

আমরা প্রায় সারাদিন মীনার বিশাল ময়দানের আনাচে কানাচে ঘুরে বেরিয়েছি। মসজিদে খাওফ (বা এরকম একটা বিখ্যাত মসজিদের) কথা শুনেছিলাম, ঠিক করলাম ওখানে যোহরের নামাজ পড়বো। কিন্তু লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে পথ ভুলে আরেক মসজিদে গিয়ে উঠলাম। সেখানে অনেক লোক রীতিমত বিছানাপাতি নিয়ে আস্তানা গেড়েছে। কয়েকজন বাঙালী পেয়ে গেলাম। তাদের সাথে আলাপ করে যেটা জানলাম যে এরা প্রায় সবাই সরকারী ব্যবস্থাপনার বাইরে (বা আইনতঃ অবৈধ ভাবে) হজ্জ্ব করতে এসেছে। তাঁবুতে যারা থাকে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ হাজার রিয়াল নেয় সৌদি সরকার। এরা সেই টাকা দেয়নি কাজেই মসজিদে আশ্রয় নেয়া। যারা মসজিদে জায়গা পায়নি তারা রাস্তায় বা আশেপাশের পাহাড়ের ঢালে ঠাঁই নিয়েছে।

দুপুরে খেলাম কাপ নুডলস, জীবনে প্রথম এই জিনিস খেলাম। দোকানদারই শিখিয়ে দিলো কিভাবে খেতে হয়। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ক্ষুধার্ত পেটে ঐ জিনিস অমৃত মনে হলো। আসরের পর আমাদের তাঁবুর দিকে রওনা দিলাম। কিন্তু মুজদালিফার কাছাকাছি এসে পথ হারিয়ে ফেললাম। কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না কোন খান দিয়ে এসেছিলাম। আমাদের সাথের তাহের ভাই আমাকে বকাবকি শুরু করলেন কারণ আমার উৎসাহেই তারা তাঁবু থেকে বের হয়েছেন। আমরা একে ওকে জিজ্ঞেস করি কিন্তু কনফিডেন্টলি কেউই বলতে পারেনা ৭৮ নম্বর মুয়াল্লিমের তাঁবু কোন দিকে। একজন আবার বললো মিনা আর মুজদালিফায় দুই রকম সিরিয়াল আছে তাঁবুর। আরো ঘাবড়ে গেলাম।

এমন সময় স্বর্গীয় দূতের মত একজন দেশী মানুষের সন্ধান পেলাম। সে আমাদের পথ দেখিয়ে অনেক দূর নিয়ে গেল। তারপর দূর থেকে ৭৮ নম্বর দেখিয়ে বিদায় নিলো। কিন্তু তবুও বিপদ কাটেনা ৭৮ এর এ,বি,সি,ডি ইত্যাদি.........আছে। আমাদের ছিলো ডি, সেই ডি আর খুঁজে পাইনা। তাহের ভাই রীতিমত ভয় পেয়ে আবার আমাকে বকাবকি শুরু করলেন। আবার আল্লাহর সাহায্য পেলাম, একটা তাঁবুতে উকি দিতেই আমার আগের কর্মস্থলের এক বিগ বসের সাথে দেখা। উনি খুশীতে একটা চিৎকার দিলেন, আরে **! তুমি এখানে? আমাদের একেবারে তাঁবু পর্যন্ত পৌছে দিলেন ভদ্রলোক। তারপর এশার নামাজ কোনমতে পড়েই ঘুম, মাঝরাতে রাতের খাবার খেয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×