somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার হজ্বের দিনগুলি- ০৯ (হজ্ব ২০০৭)

১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হজ্ব প্রতিবারই আসে, লক্ষ লক্ষ মানুষ হজ্বে যান। বাঁধাধরা কিছু নিয়ম কানুন পালন করে কিছুদিন পরে তারা আবার ফিরেও আসেন। কিন্তু এর মাঝেও কত ঘটনা দূর্ঘটনা ঘটে, কত সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তার খবর কে রাখে? আসলে এই সব ছোট খাট ঘটনা গুলো আমি আমার লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করছি। হজ্বের নিয়ম কানুন বা মক্কা মদীনার ইতিহাস- এসব আমি লেখার চেষ্টা করিনি। নেট ঘাটলেই এগুলোর উপর প্রচুর তথ্যবহুল লেখা পাওয়া যাবে। আমি যা লিখছি তা নিতান্তই পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্স।

মুজদালিফায় রাত্রিযাপন
আরাফাতে সারাদিন কাটানোর পর রাত্রিটা মুজদালিফায় খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হয়। তবে মুজদালিফায় আজকাল খোলা ময়দান আর নেই। মিনার স্থায়ী তাঁবু গুলো বাড়তে বাড়তে এখন মুজদালিফা পুরা করে ফেলেছে।

আগের লেখায় বলেছিলাম আরাফাত থেকে বাসের ছাদে রওনা দিয়েছিলাম। রাস্তা দিয়ে খুব ধীর গতিতে বাস যাচ্ছিল কারণ হাজার হাজার গাড়ী যাচ্ছিল একই পথে। আরাফাত থেকে মিনা পর্যন্ত কেবলই রূক্ষতা, মানুষের বসতি নাই বললেই চলে। মাঝে তায়েফ নামের এক ঐতিহাসিক জায়গা আছে যেখানে আজকাল প্রচুর শাকসবজী উতপন্ন হয়। পথে একটা দূর্ঘটনা ঘটলো। আমাদের ড্রাইভারটা ছিল মিশরী, রাস্তাঘাট কিছু চেনেনা। প্রতিটা মোড়ে, জংশনে সে দ্বিধা দ্বন্দে ভোগে। সাধারণ আই কিউ তেও তার ঘাটতি আছে মনে হয় কারণ আশেপাশের প্রায় প্রতিটা গাড়িই মিনায় যাচ্ছে। সেগুলোর যেকোন একটাকে ফলো করলেই তার কাজ সহজ হয়ে যেত। কিন্তু ওই যে বললাম আই কিউয়ের অভাব। মক্কায় ঢোকার মুখে (হজ্বের সময় মিনায় যেতে মক্কা ঘুরে যেতে হয়) এক জায়গায় রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। অমুসলিমরা মক্কায় ঢুকতে পারবেনা তাই তাদের জন্য আলাদা রাস্তা চলে গিয়েছে অন্য দিকে। আমাদের বোকা ড্রাইভার প্রথমে গাড়ি চালিয়ে দিল সেদিকে, সাথে সাথে ভূল বুঝতে পেরে আবার সঠিক রাস্তায় আসতে গিয়ে গাড়ির সামনের চাকা ডিভাইডারে ফেঁসে গেল এবং বার্স্ট হয়ে গেল। ভাগ্যিস গাড়ি আস্তে চলছিল নইলে উল্টে যেতে পারত।

আমরা গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর দুটো পিকআপ ভাড়া করা হলো। আমরা ওগুলোতে চড়ে বসলাম। আমাদের সাথে কয়েকজন বৃদ্ধ লোক ছিলেন। তারা বেশ সমস্যায় পড়লেন। পিকআপে উঠতে সমস্যা, তারপর বসার জায়গা নেই, একটু ব্রেক করলেই তারা হেলে পড়ে যান। কয়েকজন আবার তাদের ব্যাগ হারিয়ে ফেললেন তাড়াহুড়ায়। মাঝেমাঝে খুব অবাক লাগত এই সব অশীতিপর বৃদ্ধ, কোন আপনজন ছাড়া কোন সাহসে এই রকম বিদেশ বিভূঁয়ে এলেন। একটা কথা আছে না- যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছেন, এদের বেলাতেও মনে হয় এ কথাটাই সত্যি হয়ে ছিল। কারণ আমরাই পালাক্রমে কেউ না কেউ এদের দেখাশুনা করতাম।

মিনার কাছাকাছি এসে আমাদের নামিয়ে দেয়া হলো, বললো গাড়ি আর যাবেনা। আরেক বিপদ, এখন তাঁবু খুঁজে পাওয়াও তো বিরাট ঝামেলার কাজ। আমাদের যেহেতু আগেই মিনার রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতা আছে তাই সাহসে ভর করে আমরা চার জন বেরিয়ে পড়লাম। অন্যরা আমাদের এজেন্সীর লোকদের সাথে পরে রওনা হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো আমরা খুব সহজেই তাঁবুতে পৌছে গেলাম। গিয়ে দেখি তাঁবু একেবারে ফাঁকা। ক্লান্তিতে শরীরটা একেবারে ভেঙ্গে আসছিল, কিন্তু যেহেত খোলা আকাশের নীচে ঘুমাতে হবে তাই মক্কায় কেনা একটা প্লাস্টিকের পাটি হাতে বাইরে বেরিয়ে এলাম। সামনে একটা মোড়ের মত আছে, ওখানে ফুটপাথে পাটি বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমাদের মূল গ্রুপের তাঁবুতে ফিরে আসতে আসতে রাত ১২টা বেজে গেল। মনে করে দেখুন, আমরা আরাফাত থেকে রওনা দিয়েছিলাম সন্ধ্যা ৬ টার দিকে। নানা রকম ঘটনা আর দূর্ঘটনায় বেচারাদের এই ৬ টা ঘন্টা পথে পথেই কেটে গেল। গ্রুপে বৃদ্ধ, নারী আর শিশুও ছিল। সবাই একত্র্ হওয়ার পর এশার নামাজ জামাতে পড়লাম। তারপরই ঘুম, ঘুম ভাংলো একেবারে ফজরের আজানের পর। নামাজ পড়ে আমি পাশের পাহাড়ের দিকে চলে গেলাম। পাহাড়ের গায়ে পাটি বিছিয়ে আরেক দফা ঘুম দিলাম একদম সকাল ৯ টা পর্যন্ত। খুব মজা লেগেছিল, মুজদালিফার পাহাড়ে নিরবচ্ছিন্ন এই ঘুম আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা।

মুজদালিফায় রাত্রি যাপনের পর হজ্বের আর দুটো কাজ বাকী, ক্বাবার তাওয়াফ আর শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ। আগামী দুই পর্বে এ সম্পর্কে লিখব ইনশাআল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×