somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার হজ্বের দিনগুলি- ১০ (হজ্ব ২০০৭)

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ

শয়তানকে মোট তিনদিন পাথর মারতে হয়। প্রথম দিন হচ্ছে ঈদের দিন। যেমন লিখেছিলাম আগের পোস্টে, সকালে অনেক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম। তাঁবুতে এসে দেখি, মোটামুটি সবাই চলে গেছে। আবার নিয়ম আছে মধ্যাহ্নের আগেই পাথর মারতে হবে। তাই তাড়াহুড়া করে রওনা দিলাম। আমাদের তাঁবু যেহেতু মুজদালিফায় ছিল, তাই প্রচুর হাটতে হল। মিনার পুরো ময়দান পার হয়ে তারপর একটা টানেল পার হয়ে তারপর জামারাত। মনে একটা ভয়ও ছিল এই পাথর মারতে গিয়েই অতীতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জামারাতের কাছাকাছি এসে যে মানুষের ঢল দেখেছিলাম দূর থেকে তা এক কথায় ভযংকর সুন্দর। বিশেষ করে যারা উপরের দুটো তলার দিকে যাচ্ছে (জামারাত মোট তিন তলা, পরে নাকি ১০ তলা হবে)। আমার সৌদী প্রবাসী এক বন্ধু আগেই টেকনিক শিখিয়ে দিয়েছিল, পিলারের একেবারে শুরুতেই পাথর না মেরে একটু সামনে এগিয়ে পাথর মারতে, সেখানে নাকি ভীড় কম থাকে। পাথর মারতে গিয়ে দেখি বন্ধুর কথা একদম ঠিক, খুব সহজে এবং কাছ থেকে পাথর মারলাম। আমি দোতালায় পাথর মেরেছিলাম, তবে নীচে বা তিন তলায় মারলে আরেকটু বেটার মনে হয়েছিল পরে (পরের দুদিনে)।

পাথর মেরে মিনায় ফিরলাম, আর কোন কাজ নেই। কোরবানী হয়ে যাওযার খবর পেয়ে এহরাম ভাংলাম এবং মাথা মুন্ডিয়ে ফেললাম। তাঁবুতে এই কাজের জন্য অনেকে ঘোরাঘুরি করে। ৫ রিয়াল লেগেছিল আমার, আগে দামাদামি করে নেয়া ভাল। পরদিন ক্বাবার তাওয়াফে যাব বলে ঠিক করলাম।

সকালে বের হলাম আমরা চারজন। রাস্তা ঘাট ইতিমধ্যে বেশ চেনা হয়ে গেছে। একটা রাস্তার উপর উঠে মক্কা যাওয়ার গাড়ী খুঁজতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর পেয়েও গেলাম কিন্তু ভুল হলো দামাদামী করে না উঠায়। ভাড়া দিতে হল ২০ রিয়াল, নর্মালি যা ৫/১০ রিয়াল হতে পারে। এই টাকার শোক কাটতে বহুদিন লেগেছিল। ক্বাবার তাওয়াফ এর মধ্যে বেশ ক'বার করেছি তাই হজ্ব উপলক্ষ্যে তেমন নতুন কিছু মনে হল না। তবে ভীড় ছিল অনেক, মনে মনে একটা শিহরণ অনুভব করছিলাম- এই কাজটা শেষ হলেই আমার হজ্ব কমপ্লিট হয়ে যাবে (কবুলের মালিক আল্লাহ)। প্রথমে একতলায় শুরু করেছিলাম, পরে চত্ত্বরে নেমে এলাম। এরমধ্যে যোহরের নামাজের সময় হল, নামাজ পড়ে নিলাম। তাওয়াফ এবং সায়ী শেষে খুব হালকা মনে হল নিজেকে।

দুপুরের খাওয়া আমাদের রুমে খেলাম। তারপর রেষ্ট নিয়ে ৩ টার দিকে আবার রওনা দিলাম মিনার দিকে। এবার আমরা উল্টো দিক থেকে জামারাতে যাচ্ছি, এদিক থেকে গেলে ৩ তলা দিয়ে পাথর মারতে হয়। মোট ২১ টি পাথরের একটা ছোট ব্যাগ মুজদালিফা থেকে আগেই পূর্ণ করে নিয়েছিলাম। পাথর মেরে তাঁবুতে ফেরত গেলাম। পরদিন শেষবারের মত পাথর মেরে আমরা সবাই মক্কা ফেরত গেলাম হেঁটে হেঁটে। প্রায় ১০ কিলো হাঁটতে হয় তবে গ্রুপে থাকার কারণে খুব একটা খারাপ লাগেনা। একটা মজার কথা এখানে বলে ফেলি, ডায়াবেটিস রোগীরা খুব সুবিধায় থাকেন হজ্বে গিয়ে। তাদের আগে থেকেই নিয়মিত হাঁটার প্র্যাকটিস থাকায় এ সবই তাদের কাছে ডালভাত।

হজ্বের শপিং
আমার মতে হজ্বের শেষ্ঠ শপিং হল জমজমের পানি আর খেজুর। পানি আপনি মক্কা বা মদীনা যে কোন জায়গা থেকে নিতে পারেন। যেখানে শেষে থাকবেন সেখান থেকে নিলেই বেটার। তবে খেজুর অবশ্যই মদীনা থেকে নিবেন। মদীনার রাস্তায় ফজরের পরে ভ্যানে করে খুব সস্তায় কিছু লোক খেজুর বিক্রি করে, এদের থেকে বেশ কিছু খেজুর কিনে রাখতে পারেন। আর দামী কিছু খেজুর অবশ্যই নেবেন, সেজন্য আপনাকে যেতে হবে খেজুরের মার্কেটে। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে, মসজিদের খুব কাছেই। আতর কিনতে চাইলে মদীনা থেকেই নিতে পারেন। কম্বল কিনে লাগেজ ভারী করা আমার একেবারেই অপছন্দ, আমাদের দেশে তেমন শীত আর কোথায় পড়ে আর পড়লেও কয়দিনের জন্য? ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে পারেন, আমাদের এখান থেকে প্রায় ৩/৫ হাজার টাকা কমে পাবেন। লাগেজের ওজন নিয়ে চিন্তা করবেন না, হজ্বযাত্রীদের লাগেজ কোন প্রকার চেকিং হতে আমি অন্ততঃ দেখিনি।

এই লেখাটা শেষ করার আগে সবাইকে অনুরোধ করতে চাই, সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই হজ্বে যাবেন। হায়াত মউতের কোন ঠিক ঠিকানা নেই আর শরীর অচল হয়ে যাবার আগেই যাওয়া ভাল। পরিচিত কেউ যদি হজ্বে যায় সামনে কখনো, তবে দয়া করে আমার এই লেখা অবশ্যই পড়তে দেবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:২৩
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×