আজ খবরে শুনলাম সাময়িক ভাবে ছাত্র রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এ খবর দিয়েছেন।
আমার মতে ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে সমাজে ধনী আর গরীব শ্রেণীর মাঝে ব্যবধান আরো বড় করার পরীক্ষিত এবং কার্যকর একটা হাতিয়ার। ফকিরের পোলারা (এবং মেয়েরা) ছাত্র রাজনীতির নামে কামড়া কামড়ি করে মরে আর ধনিক শ্রেণীর আদরের দুলালরা নিরাপদে এবং দ্রুততার সাথে প্রাইভেটে বা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে দেশ ও জাতির 'খেদমতে' আত্ননিয়োগ করে। যারা ভাগ্যবান, আল্লাহর দেয়া জীবনটা বাচিয়ে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭/৮ বছরে পড়ালেখা শেষ করতে পারেন; তারা দেখেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নির্মম নিষ্ঠুর এক পৃথিবী।
মিছিল মিটিং করতে করতে ইংরেজীর ভিত কাঁচাই থেকে যায় অথচ ওটাই যে মাল্টি ন্যাশনালদের বড় দরকার! ফুরুত ফুরুত করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা আর বন্ধ করার রসিকতায় আয়ত্ত্ব করা হয়না মাইক্রাসফট অফিসের প্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন গুলো। কিন্তু চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে শুনতে হয় 'এক্সেল' কেমন পারেন? মরিয়া হয়ে যখন বলে 'মোটামুটি' তখন হাতে কলমে কম্পিউটারে দেখিয়ে দিতে বলে.......সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে যায়। অবশেষে ১ থেকে ৩ বছর ঘোরাঘুরি করে চাকরি যখন মেলে ততদিনে প্রাইভেটে পড়া স্কুলের সহপাঠী ৫ বছর চাকরী করে ২/৩টা প্রোমোশন বাগিয়ে ফেলেছে। সেমিবুড়ো হয়ে চাকরী আর আধবুড়ো হয়ে বিয়ে- এই হলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ফকিরের পোলাপানদের নিয়তি। আর এই নিয়তির পেছনে তথাকথিত ছাত্র রাজনীতির আছে 'অসামান্য' অবদান!
ফালতু একটা যুক্তি দেখানো হয়, ছাত্র রাজনীতি করে পরিপক্ক হয়ে ছাত্ররা মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করবে। আচ্ছা বলুন তো, বাংলাদেশের ৩০০ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী আর শিল্পপতির সংখ্যা কত? এক হিসেবে এ সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশী। দেশের নেতা হতে এখন আর রাজনীতি লাগেনা, টাকা আর অস্ত্রের জোর থাকলেই চলে। আর যারা এতদিন রাজনীতিবিদ ছিলেন তারাও আবদুল জলিলের মত খোলস পাল্টে শিল্পপতি-ব্যবসায়ী হয়ে যাচ্ছেন।
কথায় কথায় ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাসের কথা বলা হয়। অথচ '৬৯, '৭১, '৯০ এ ছাত্র সমাজ কোন ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে নয় বরং আপামর জনতার দাবীর সাথে একাত্ন হয়ে সব ভেদাভেদ ভুলে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। এটা ছাত্র রাজনীতি না থাকলেও হতে পারতো।
আমার প্রস্তাবঃ
সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণভোট নেয়া হোক ছাত্র রাজনীতির পক্ষে আর বিপক্ষে। দালাল বুদ্ধিজীবিদের (যাদের বেশীরভাগের পুত্র কন্যারা বিদেশে বা প্রাইভেটে পড়েন) চাইতে সচেতন ছাত্রসমাজই রায় দিক কোনটা তাদের জন্য বেশী ভাল।