আশ্চর্য! ব্যাপারটা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ঘটেনি।
১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। সত্যজিৎ রায় মুক্তি দিলেন তার বিখ্যাত এবং পরে বেশ আলোচিত-সমালোচিত চলচ্চিত্র ‘দেবী’। দুই মাস পর সমসাময়িক শক্তিমান চলচ্চিত্রকার ঋতিক ঘটক বড় পর্দায় নিয়ে এলেন চূড়ান্ত মেলোড্রামা ‘মেঘে ঢাকা তারা’। সেবছরই পরের দিকে মৃণাল সেনের ‘বাইশে শ্রাবণ’ মুক্তি পায়। কী বলবো একে? কাকতাল? কিন্তু মিসির আলী তো বলছেন, ‘মানুষের ব্রেন মাঝে মাঝে আশ্চর্য এবং অত্যাশ্চর্যের উদাহরণ সৃষ্টি করে’। না হলে, একই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের তিন উত্তম পুরুষ ভাবছেন নারীর সামাজিক অবস্থান ও অধিকার নিয়ে। শুধু ভাবছেনই না ঘটনাপ্রবাহ তুলে নিলেন খেরোখাতায়। সেলুলয়েডে বন্দি হলো কালজয়ী তিনটি চলচ্চিত্র।
তিন কিংবদন্তির পর অচল সময়ে প্রচল ভাঙার আরেকটি দৃষ্টান্ত।
প্রায় ছয় দশক পর আবারও ‘দেবী’। পরিচালক ‘অনম বিশ্বাস হুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে গড়লেন দেবীকে। এক ঘন্টা ৪৪ মিনিটের নির্ঘন্টে সব পরিস্কার। ঋণাত্মক ধারার গল্প মহালয়ায় বোধন পায় এপর ২০১৮’র ১৯ অক্টোবর প্রাণ প্রতিষ্ঠা। প্যারা সাইকোলজি ও থ্রিলার গল্প বাংলা চলচ্চিত্রের মঞ্চে। গল্পের শেকড়টা হুমায়ূন আহমেদের হলেও শত শিল্পের মিশ্রিত রূপ বলা হয় যে চলচ্চিত্রকে, সেখানে ফুটিয়ে তোলার কঠিন চ্যালেঞ্জটা করে দেখালো টিম দেবী! নতুন পরিচালক, নতুন প্রযোজক জয়া আহসান, নতুন চরিত্রাভিনেতা শবনম ফারিয়া, এমনকি নির্বাহী প্রযোজক শিমুল বিশ্বাসেরও এটি প্রথম কাজ! তার বাইরে এই ছবির প্রচারণায় বৈচিত্র আর বাজারজাতকরণে মুন্সীয়ানা দেখা গেছে।
নতুন জোয়ার। সেই জোয়ারে কিছু কচুরিপানা ভেসে এসেছে, সত্যি। তবে তা মুভির নির্মাণ আর নান্দনিকতাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারে না। তা আমি করছিও না। সে যোগ্যতা আমার নেই। শুধু জানার ইচ্ছা, ব্যতিক্রম আর নতুন কাহাতক গ্রহণ করবে দর্শক? অন্তত দুই সপ্তাহ ? তিন, চার? দেবী কি পাবেন ভক্তের অঞ্জলি, নৈবেদ্য? নিক্তিপাল্লায় নয়, সময়ের আদালতে বিচারের সে ভার তোলা থাক। একালে এটুকু বলতে পারি কেবল, ছয় দশক আগে যে দেবীপক্ষের শুরু, তার কিন্তু নিরঞ্জন, ভাসান হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩