somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গনতন্ত্রের দুষমন জামাতশিবিরকে আমরা কিভাবে মোকাবিলা করবো...

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আকারে বড় হওয়ার কারনে এই পোষ্টটি ৩(তিন) পর্বে শেষ হবে, বাকী দুই পর্বের জন্য অপেক্ষা করেন]

সন্ধ্যায় হলে ফিরছি, সুর্যসেন হলের দোতলা- তালা খুলে ঘরে ঢুকতেই বিস্ময়। ১৭/১৮ বছরের এক ছেলে পরনে জোব্বা মাথায় টুপি- আমাকে দেখে হাতটা কপালে ছুইয়ে বললো- আস্লামালাইকুম ভাই...

অনেকটা হুমায়ুন আহমেদিয় নাটকের কৌতুক দৃশ্যের মতো- কিন্ত আমি মুগ্ধ হতে পারলাম না…… সারাদিন পরে আস্তানায় ফিরলাম, কিছু জরুরী কাজ সেরে- আবার সারা রাতের মত বাইরে যাব আড্ডা মারতে… এর মধ্যে এই উৎপাত কোথা থেকে।

আমি ছেলেটাকে খুটিয়ে দেখছিলাম- মফঃস্বল থেকে আগত অল্প বয়সের এক সুদর্শন কিশোর, এই মুহুর্তে খুব শান্ত ভাবে ঘরের এককোনে দাড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য করছে। চেহারায় তার চাঞ্চল্যের কোন লক্ষন নাই, একহারা নরম হালকা পাতলা চেহারা- যেন সে বহুদিন থেকে এই ঘরেই বসবাস করে এমন ধরনের সাবলীল তার চোখের দৃষ্টি। আমার মনে পড়ে গেল আজ সকালের ঘটনা......

সকাল থেকেই সেদিন ক্যাম্পাস জুড়ে তোলপাড়-- বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, সাইন্স এনেক্স থেকে শুরু করে শহিদ মিনার, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আউটডোর হয়ে বকশীবাজার পর্যন্ত পুরা এলাকা রনক্ষেত্র। সারা রাস্তায় অসংখ্য ছোট ছোট ইটের টুকরা, ভাঙ্গা গাছের ডাল, বিক্ষিপ্ত কিছু জুতা স্যান্ডেল- এখানে ওখানে ছড়ানো। সারা রাস্তা জুড়ে ছুটন্ত মানুষ, রাস্তা থেকে শহীদ মিনার, সিড়ির ধাপ পেরিয়ে-মিনারের লাল সুর্য পেরিয়ে এক পক্ষ ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছে অপর পক্ষকে, আবার পিছু হটছে পালটা ধাওয়া খেয়ে।

শহীদ মিনারের দিকে যারা- তারা জোটবদ্ধ ছাত্রদের সংগ্রাম পরিষদ আর বকশীবাজারের দিকে যারা তারা ছাত্র শিবিরের কর্মী। ঘটনাকাল ৮৩র ফেব্রুয়ারীর ছাত্র আন্দোলনের কয়েকমাস পরের- জান্তা বিরোধী আন্দোলন তখন মধ্য গগনে। শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে বেশ নিরীহ নির্দোষ গোছের একটা মিছিল বের করেছিল সেদিন শিবির এবং কলা ভবন পর্যন্ত মিছিল নিয়ে যাবার হিম্মতও দেখিয়েছিল।

শিকারী বেড়ালের ইঁদুরের সাথে খেলা করার মতো কৌতুকের দৃষ্টিতে আমরা মিছিলটা লক্ষ্য করছিলাম। ক্যাম্পাসে শিবিরের মিছিল!!! মরনের লাইগ্যা পাখনা গাজাইছে?

জগন্নাথ হল- পাশ দিয়ে সোজা গেলে টি এস সি- শিবিরের মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে…… রোকেয়া হলের গেট, পার হয়ে কলাভবনের দিকে যাওয়ার উদ্দ্যোগ নিতেই আমরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়িয়েছিলাম- ওক্কে, এনাফ ইজ এনাফ।

ঘন্টাখানেকের কিছু বেশি সময় লেগেছিল সেদিন শিবিরের পুলাপাইনরে আলিয়া মাদ্রাসার গেটের ভিতর ঢুকায়া দিয়ে আসতে। এর মধ্যে আহত জনা পঞ্চাশেক- আর ততোধিক আটক যুদ্ধ বন্দী হিসাবে। অধিকাংশদেরই পিটানি দিয়ে সাথে সাথে ছেড়ে দেয়া হলেও--কিছু যুদ্ধ বন্দীকে নিজ হলের নিজস্ব হিফাজতে আটক রাখাই ছিল রেওয়াজ। দিনের শেষে প্রতিপক্ষের সাথে দর কষাকষির অথবা বন্দী বিনিময়ের মতো কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে—সুবিধা জনক অবস্থানে থেকে প্রতিপক্ষের সাথে দরদাম করা যায়।

সন্ধ্যায় হলে ফিরে আমার ঘরের নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা সেদিনের যুদ্ধবন্ধী কিশোরের নিরুদ্বিগ্ন চেহারা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আমি তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম তার প্রতি এক ধরনের চমৎকৃত মনোভাব থেকে…… আমার মনে হচ্ছিল সারাদিনের লড়াইয়ে আমরা জিতেছি নিরঙ্কুশ সংখ্যাধিক্যে কিন্ত দিনের শেষে এই নবীন কিশোরই জিতে গেল মনোবল আর নৈতিকতার লড়াইয়ে……

হতে পারে মাথা ভর্তি তার ভুল রাজনীতি- চেতনা জুড়ে তার অগনতান্ত্রিকতার দর্শন। তার রাজনৈতিকতার অভিমুখ মানবতা বিরোধী এবং জনগনের বিপক্ষে যুদ্ধ অপরাধে…… লড়াইয়ের ময়দানে আজ তার অবস্থান আমার বিপক্ষে- কিন্ত একই সাথে তার এই ভুল পক্ষ বেছে নেবার প্রশ্নে আমি আমার দায় এড়াতে পারি না।

সন্দেহ নাই আমাদের রাজনীতিতে জামায়াত একটা চরম অগনতান্ত্রিক শক্তি- আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার রাজনৈতিক অবস্থান অতি অবশ্যই গনবিরোধী এবং আজ পর্যন্ত জামায়াত ১৯৭১ সালে নেওয়া তার রাজনৈতিক অবস্থানের কোন ব্যাখা দেয় নাই- এটা সে ঠিক মনে করে না ভুল মনে করে!! ২৫মার্চের রাত্রের নৃশংশতায় তার অবস্থান কি? এই গনহত্যা- মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ কি জায়েজ?? এমনকি পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্য তা হলেও??

প্রথম পর্ব সমাপ্ত- দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করেন......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২২
১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×