somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞান ও ধর্ম দুটোই মানুষের কল্যানের জন্য, কিন্তু ধর্ম কেনো বিজ্ঞান কে শত্রু মনে করে

২১ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইহুদিরা উৎসব পালন করে "ঈদুল ফোসাখ" (Pesach) নামে। এইদিন মিশরের শাসক ফেরাউনের কাছ থেকে ইহুদিরা উদ্ধার পেয়েছিল। ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে নুহ , মুসা ,ইব্রাহীম , সোলায়মান সহ আরো অসংখ্য নবীদের ইতিহাস আছে। আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে ইহুদি ধর্মের উৎপত্তি। ইহুদীদের তোরাহ মতে পৃথিবীর বয়স ৬০০০ বছর ।
১৪৫০ এর দশকে যখন স্পেন ও ফ্রান্স থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করা হয়েছিলো তখন ওরা ইতালিতে আশ্রয় নিয়েছিলো।খ্রিষ্টানরা ইহুদিদের ধর্মপালনে বাঁধা দিতো, জোর পূর্বক তাদের ধর্মান্তরিত করতো, তাদের উপাসনালয় ভেঙে ফেলতো। তখন ওরা ধর্মের থেকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে ইউরোপীয় সমাজের আদলে নিজেদের গড়ে তোলা শুরু করলো। যে সেমটিক সভ্যতা থেকে ইহুদি ধর্মের উৎপত্তি তারা পার্সিয়ান , হেলনেস্টিক , রোমান , গ্রীক ও খ্রিষ্টান সবার সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে করতে একপর্যায়ে নিজেরাও অত্যাচারী হয়ে উঠেছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের ব্যাপকভাবে হত্যা করা হয়। এতোকিছুর পরও তারা জ্ঞান ও বিজ্ঞানে সবার থেকে এগিয়ে।কারণ ওরা পৃথিবীর সব নামিদামী সভ্যতার সাথে মাটি আঁকড়ে পথচলা শিখে গিয়েছিলো।
দাউদ নবীকে খ্রিষ্টানরা ডেভিড বলে ডাকে। আজ থেকে ২২০০ বছর পূর্বে এই পৃথিবীতে খ্রিষ্টান ধর্মের উৎপত্তি। এছাড়াও ইসলাম ধর্মের অনেক নবীর ইতিহাস তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলেও আছে। কিন্তু একপর্যায়ে পৃথিবীজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করতে খ্রিষ্টানরা অতিরিক্ত ধর্মান্ধ হয়ে নিজ ধর্মের মানুষদের উপরও অত্যাচার শুরু করে। ১৩ শতকে আজকের মুসলমানদের মত খ্রিষ্টানরাও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলো। খ্রিষ্টান ধর্ম ও খ্রিষ্টান ধর্মগ্রন্থের বাইরে তারা আর কিছুই মানতো না। কিন্তু ছাপাখানা আবিস্কারের পর ইউরোপের মানুষের চোখ তখন খুলতে শুরু করেছে। ধর্ম যাজকরা দিনের পর দিন তাদের কিভাবে বোকা বানাচ্ছিলো তা তারা বুঝতে শুরু করে। খ্রিষ্টানদের এসব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে মানবতার ডাক নিয়ে হাজির হলেন ফ্রান্সেস্কো পেত্রার্ক, তাকে ইতালীয় মানবতাবাদের জনক বলা হয়। বিজ্ঞানের কোন আবিস্কার খ্রিষ্টান ধর্মের বিরুদ্ধে গেলেই খ্রিষ্টানরা তাকে হত্যা করতো। নিকোলাস কোপারনিকাস, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি, ক্রিস্টোফার কলম্বাস, মিকেলাঞ্জেলো, গ্যালিলিও, ফ্রান্সিস বেকন সহ এমন আরও অসংখ্য মানুষের রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন ও বিজ্ঞানের এই আন্দোলন বদলে দেয় পুরো ইউরোপের চিত্র। যে খ্রিষ্টানরা একটা সময় জ্ঞান ও বিজ্ঞান বিরোধী ছিলো এবং যারা বিজ্ঞানীদের হত্যা করতো আজ তারাই সারা বিশ্বে রাজনীতি, সংস্কৃতি, দর্শন ও বিজ্ঞানের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আজ থেকে ১৪শ বছর পূর্বে ইসলাম নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২শ খ্রিস্টাব্দ মুসলমানরাও জ্ঞান ও বিজ্ঞানে সারা বিশ্ব শাসন করেছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্টেনলি বলেন, 'একটাসময় আরবের মসজিদগুলো ছিলো ইসলামের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে জ্ঞানপিপাসু ছাত্রদের শোরগোলে ভর্তি ছিলো। মসজিদের ভেতরে ধর্মীয় শরীয়ত, দর্শন , বিজ্ঞান , চিকিৎসা ও গণিত বিষয়ে পাঠদান হতো। জ্ঞান ও বিজ্ঞানে সারাবিশ্বে মুসলমান প্রায় ছয়শো বছর রাজত্ব করেছে। ইবনে সিনা, আল রাযী,
জাবির ইবনে হাইয়ান, খোয়ারিজমি, হাসান ইবনে হাইশাম ও আরো অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন। এদের মধ্যে কিছু বিজ্ঞানী মৃত্যুর পর পুনঃজন্মে বিশ্বাস করতেন না কিন্তু ধর্ম পালন করতেন এবং এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতেন। এদের অনেকেই তাই ইউরোপে সম্মানিত হলেও নিজ মাতৃভূমিতে সম্মান পাননি। অনেক মুসলমান এদের নাম পর্যন্ত জানেনা। জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সেই চর্চা এখন আর মসজিদে হয়না। বিজ্ঞানবিরোধী এক ধর্মান্ধ উগ্র জনগোষ্ঠী সেই খ্রিষ্টানদের মত ডালপালা গজিয়েছে মুসলিম সমাজে।জ্ঞান ও বিজ্ঞানে সারা বিশ্বে মুসলমান তাই অনেক পিছিয়ে পড়েছে। ধর্মান্ধতা সারাবিশ্বে মুসলমানদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ের জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আঁতুড়ঘর মিশর, সিরিয়া , ইরাক , তুরস্ক ও ইরান আজ নিজেদের মধ্যে ধর্ম ও জাতি নিয়ে বহুভাগে বিভক্ত। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে যারা স্বজাতির হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন তাদের অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রহমান , পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। সারা বিশ্ব যখন জ্ঞান ও বিজ্ঞানে উন্নতি লাভ করছে তখন ভাষা , সংস্কৃতি , পোশাক ও স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের জাতিকে বারবার বিভ্রান্ত করার চেস্টা হচ্ছে। প্রকৃতির অপূর্ব সুন্দর লীলাভূমি বাংলাদেশ কে আমরা সকল জাতি ও ধর্মের মানুষের জন্য সুন্দর এক দেশ তৈরি করতে ব্যার্থ হয়েছি।
ধর্ম হোক মানুষের জন্য, মানুষ হত্যা কিংবা জবরদস্তি করার জন্য নয়। পৃথিবীর এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে প্রচন্ডরকম ঘৃণা করে। এই নিয়ে পৃথিবীতে ধর্মে ধর্মে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। আমরা যারা শান্তির এক পৃথিবী চাই এই ঘৃণা তাদের কারোই কাম্য নয়। মানুষের উপরে পৃথিবীতে আর কোন বড় সত্য থাকতে পারেনা।
আমাদের শিশুরা যখন ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি সভ্যতার ইতিহাস, মানুষের ইতিহাস, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, নিজেদের সংস্কৃতির ইতিহাস, জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে জানা শুরু করবে তখন তারাও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।
সংগ্রীহিত ও পরিমার্জিত
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×